নিজের জীবনের না বলা কিছু কথা গল্পে গল্পে বলার চেষ্টা
بسم الله الرحمن الرحيم
السلام عليكم ورحمة الله 💮
🌹🌹নিজের জীবনের না বলা কিছু কথা গল্পে গল্পে বলার চেষ্টা 🌹🌹
🌹🌹সর্বপ্রথম আমি শুকরিয়া আদায় করছি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি, যিনি আমাদেরকে এই সুন্দর পৃথিবীতে সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে এখনো পর্যন্ত সুস্থ এবং নিরাপদ রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ !
🌹🌹শ্রদ্ধাও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করতে চাই, আমার মমতাময়ী আম্মুওআব্বুর প্রতি, যাদের দোয়ায় আমি এখনো সুস্থ আছি।আর সেই সাথে তাদের মন খুলে বলতে চাই আব্বু আম্মু আমি তোমাদের অনেক বেশি ভালোবাসি যত টা বলতে পারছি তার চেয়ে ও অনেক বেশি ভালোবাসি।তাদের জন্য আমি সুন্দর পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখেছি এবং মহান সৃষ্টিকর্তার সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ।
🌹🌹সেই সাথে শ্রদ্ধার নিয়ে স্মরণ করছি আমাদের সকলেরই প্রিয় মেন্টর ও শিক্ষক এবং তরুণ প্রজন্মের আইডল-আইকন, লক্ষ লক্ষ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর যিনি স্বপ্ন হারা মানুষদের স্বপ্ন দেখান সবার প্রিয় মুখ মাননীয় Ikbal Bahar Zahid স্যার,, যার সুন্দর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা মনমুগ্ধকর একটা প্ল্যাটফর্ম উপহার হিসেবে পেয়েছি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি রয়েল ডিস্ট্রিক নোয়াখালী জেলার সকল দায়িত্বশীল ও আজীবন সদস্যদের প্রতি এবং প্রিয় স্যারের ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য ও দায়িত্বশীলদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করছি।
🌹🌹নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সকল প্রিয় দায়িত্বশীল ভাই-বোনদের জীবন গল্প পড়ে এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের না বলা গল্প লিখতে সাহস করেছি।
আমরা তিন ভাই ছয় বোন।বোনদের মধ্যে আমি ছোট আর আমার ছোট আমার এক ভাই আছে।
🌹🌹আমার শিক্ষা জীবন🌹🌹
আমি প্রাথমিক শিক্ষা "মধ্য পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়" থেকে সম্পূর্ণ করি।
এর হাইস্কুল জীবন পার করি "চর বাটা আার,জি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এর পর সৈকত সরকারি কলেজ থেকে ইন্টার ও অনার্স।
🌹এবার একটু আমার আব্বুর লড়াই টা বলবো🌹
আমার আব্বু কে নিয়ে যতই বলবো ততই কম মনে হবে।আমার দাদু ছিলেন প্রধান শিক্ষক চর বাটা মধ্য পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ১৯৭০ এর বন্যায় দাদিকে হারায় আব্বু আর আমার বড় পুপু।আব্বু ছিল বড় সন্তান। তার পর আমাদের নতুন দাদি।আব্বুর আর পড়া হয় নাই।কারন দাদুর এজমা সমস্যা ছিল।আর দাদি আর আব্বুরা ৫ ভাই বোন রেখে দাদু মারা যায়।পরিবারের পুরো দায়িত্ব নিল আব্বু একা। সবাইকে পড়ানো খাওয়ানো সব আব্বু করতো তার একটা দোকান এর আয় দিয়ে।এরই মঝে এলো আমার মমতাময়ী মা।দুজনেই ধরলো সংসারের হাল।আব্বু পুপুদের বিয়ে দিল কাকাকে ও পড়াশোনা শিখিয়ে চাকরির ব্যাবস্থা করে দিল।সবই সম্ভব হয়েছে তার অক্লান্ত পরিশ্রমে। সব কিছু চালিয়ে নিতে বিক্রি করতে হয়েছিল আব্বুর সকল জমি।এরই মাঝে আমাদের আপুরা ৪ জন পড়তেছিল।আব্বু সব মিলিয়ে হিমসিম খেতে লাগলো।এসএসসি পরিক্ষার পর বড় আপুর বিয়ে হয়।তার পর আমরা ভাই বোন ৫ জন পড়তেছি।সবার খাওয়া, পড়া সব দিতে আব্বু আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করলো আমাদের বোনেরা ৫ জন এর পর ভাইয়ারা।তারপর আমি ও ছোট ভাই।বোনেরা বেশি অনেক কথাই শুনতে হত আমাদের পরিবারকে।আমার আম্মু সাপোর্টে সবাই পড়তে লাগলো, কিন্তু আব্বু আর পারতেছিল না।তখন আমার মেজ আপু একটা সংস্থায় চাকরি পেল। আপুর তখন এসএসসি শেষ। এদিকে মেয়ে মানুষ কাজ করে এটা নিয়ে ও কম কথা শুনতে হয়নি আব্বু আম্মুকে।এর পরই আব্বুর মুদি দোকানে আগুন লেগে যায়। পরে আর দাড় করাতে পারে নাই আব্বু। মরার উপর খরা হয় আমাদের একটা জমি বেদখলে চলে যায় কাগজ পত্রের জামেলার কারনে।আব্বু তো একদম হতাশ হয়ে যায়। কি করবে কিছু বঝতে পারছিল না।তখনি আম্মু তার গহনা বিক্রি করে একটা চায়ের দোকানের ব্যাবস্থা করলো।এর পর আব্বু আর আপু মিলে আমাদের জন্য লড়তে লাগলো।এর পর বাকি আপুদের বিয়ে হয়।আর আমরাও পড়তে লাগলাম।আব্বু কে দোকানে সহায্য করতো ভাইয়ারা।এই ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়া অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় তাদের পড়া।
🌹🌹 আমার জার্নি 🌹🌹
আমার যার্নি টা শুরু হয় হাইস্কুলে যাওয়ার পর। তখনো আমরা ৪ ভাই বোন পড়ি। সবার খরচ চালাতে আব্বুর কষ্ট হচ্ছিল।আমি নিজের খরচ চালাতে শুরু করলাম টিউশনি।কিন্তু গ্রামের দিকে তারও খুব একটা ভ্যালু ছিল না।যাই হোক নিজের চেষ্টা এবং আব্বু, আপুর চেষ্টায় এসএসসি শেষ করলাম। এরপর শিখলাম সেলাই। এরই মাঝে ভর্তি হলাম ইন্টারমিডিয়েট এ। কিন্তু কলেজ যাওয়া আসার খরচ ও দেওয়া আব্বুর পক্ষে সম্ভব ছিল না।তাই আব্বু পড়তে নিষেধ করে।কিন্তু আমার স্বপ্ন হচ্ছে বড় তাই পড়তে হবে।নিজে পায়ে হেঁটে কলেজ যেতাম। আর আনুষঙ্গিক খরচ টিউশনি করে চালিয়ে নিলাম।ফাইনাল এক্সাম এর পর লোভ হল ভার্সিটির। কি করবো, কি ভাবে পিপারেশান নিব কিছু বুঝতে পারছিলাম না....। তারপর আমার ভালো রেজাল্ট এর জন্য সাগরিকা সংস্থা থেকে বৃত্তি পেলাম।ঐটা দিয়ে শুরু করলাম নতুন লড়াই। আম্মু একটা মেশিন কিনে দিল।সাথে শুরু করাম সেলাই। কিন্তু ভাগ্য সহায় হল না।আমার ভার্সিটি এক্সাম এর কয় দিন আগেই আব্বুর ব্রেইন স্টোক হয়।সব থমকে গেল নিমিশেই।আব্বুর শরিলের এক অংশ অকেজো হয়ে যায়।এত দিনে যখন আমরা একটু গোছাতে লাগলাম তাও শেষ। আব্বুর চিকিৎসা আমার এক্সাম ফ্যামিলির খরচ সব এলোমেলো। তার মধ্যে আর এক্সাম দেওয়া হয়ে উঠেনি।নিজেই ভর্তি হলাম সৈকত সরকারি কলেজ এ সমাজতত্ত্ব বিষয়ে অনার্সে।এর পর আস্তে আস্তে আব্বু ও কিছুটা সুস্থ আর আমিও সেলাই টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতে লাগলাম।এর মাঝে আমাদের এক মাত্র কাকা ও ক্যান্সারে মরা যায়।আব্বু নানা চেষ্টা করে পারেনি তাকে বাঁচাতে। এখন তাদের পরিবার ও আমাদের আর একটা পরিবার হলো।সবাইকে নিয়ে আজও যুদ্ধ করে যাচ্ছি আমরা সবাই।এখন আমার একটা কিন্ডারগার্টেন এ জব হয়েছে।আমি সেলাই শিখাই করার পাশাপাশি টিউশনিও আছে আলহামদুলিল্লাহ।
🌹🌹আমার ফাউন্ডেশনে আসা🌹🌹
আমি সব সময় নিজে কিছু করার চেষ্টা করতাম।তাই আমার মেজ আপুর সহযোগিতায় অল্প কিছু জামা কাপড় বিক্রি করতাম।কিন্তু একদিন Md Rashedul Hasan ভাইয়া আমাকে এই ফাউন্ডেশনের কথা বলে।তার পর নিজে ফাউন্ডেশন গুরে দেখলাম,স্যার এর বিড়িও দেখলাম।আমার আত্নবিশ্বাস বেড়ে গেল।স্যারের কথায় নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।
স্যার কে অনেক বেশি কৃতজ্ঞতা জনাই আমাদের মত স্বপ্নবাজদের নতুন করে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য। ভাইয়ার সহযোগিতায় রেজিষ্ট্রেশন করলাম।@Nasrin sultana আপু এড দিল জেলা মেসেঞ্জার এ। কৃতজ্ঞতা জানাই আপু ও ভাইয়া কে।তার পর পেলাম নতুন একটি পরিবার।সবাই আপন করে নিল।নিজেকে একদিন এমন জায়গায় নিতে চাই যে জায়গা থেকে আব্বু আম্মু কে সাপোর্ট দিতে পারি।নিজের একটা পরিচয় বানাতে চাই।তাই স্যারের শিক্ষায় নতুন করে আবার শুরু করলাম।সকলের দোয়ায় একদিন আমিও সফলতার ছোঁয়া পাব ইনশাআল্লাহ।এই ফাউন্ডশনে এসে নতুন জীবন পেলাম মনে হচ্ছে।সকলের থেকে অনেক কিছু শিখতেছি।আর সবচেয়ে বড় কথা এক জন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা পেলাম।নিজেকে অনেক ধন্য মনে করতেছি আজীবন সদস্য হতে পেরে।মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়াও যাদের মাধ্যমে এই নতুন জীবন পেলাম তাদের জানাই কৃতজ্ঞতা।
🌹🌹সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার কথা গুলো ধৈর্য ধরে শুনার জন্য। আমার একটা পেইজ আছে স্বপ্ন ছোঁয় নামে। সবাই ভালোবাসে পাশে থাকবেন ইনশাআল্লাহ.... আপনাদের সপোর্ট আমাদের কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা জোগায়....
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৪২
তারিখ ০২-০৮-২০২২ইং
ফারজানা ফারজু
পিতাঃ মোঃহেলাল উদ্দিন (কৃষক)
মাতাঃতাছলিমা বেগম(গৃহিনী)
গ্রামঃহাজী পুর
উপজেলাঃ সূবর্নচর
জেলাঃনোয়াখালী