আমি চেষ্টা না করে বিফল হয়ে হার মেনে নিতে পারবো না
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম
প্রথমে শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে তিনি আমাদের কে এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ভালো রেখেছেন সুস্থ রেখেছেন বিপদ মুক্ত রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
লাখো কোটি দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর যার কারণে শ্রেষ্ঠ ধর্ম পেয়েছি শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
____হাজার সালাম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আমার মা বাবার প্রতি তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ও ভালোবাসা দিয়ে আমাকে
বড় করেছেন, শিক্ষিয়েছেন ভালো ভাবে বেচে থাকতে বড় দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে,দোয়া করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বদা আমার মা বাবা সহ পৃথিবীর সকল মা বাবা কে ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক ও সুস্থতার সহিত নেক হায়াত দান করুন আমীন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি লাখো তরুণ তরুণীর স্বপ্নদ্রষ্টা আমাদের প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা উপহার পেয়েছি নিজের বলার মত একটা গল্প প্ল্যাটফর্ম সেই প্রিয় স্যারের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উনার হায়াতে বরকত দান করুন আমীন।
এই ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিনিয়ত কত কিছু শিখেছি ও এখনো শিখতেছি , সে শিক্ষাগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতেছি যতদিন সফল না হব থামবো না চেষ্টা করেই যাব ইনশাল্লাহ একদিন না একদিন সফল হবো আমি ।
প্রত্যেক মানুষের একটা গল্প থাকে ।সেটা দুঃখের ও হতে পারে আবার সুখের ও হতে পারে আবার সুখ দুঃখ মিলিয়েও একটা গল্প হয় আজকে আমার জীবনের সেই গল্পটাই আপনাদেরকে শোনাবো আমি ,
আজ আমি আমার ঊদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুনাবো
আমার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প আশা করি সবাই একটু সময় নিয়ে আমার জীবনের গল্পটা পড়বেন।
ছোট থেকে আমার মা আমাকে শিখিয়েছে নিজের উপর নির্ভরশীল হতে, আমি পরে গেলেও মা কখনো তুলতেন না কারণ আমি যাতে করে নিজে নিজে উঠে দাড়াতে পারি।
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, তাই ছোট থেকে অনেক টানাপোড়নের মধ্যেই বড় হতে হয়েছে।
অনেক কষ্টে পড়াশুনা করেছি বাবা কৃষি কাজ করতেন
বাড়তি কোন উপার্জনের উৎস ছিল না শুধু বাবা নিজে জমি চাষ করে আমাদের সংসার চালাতেন ।
আমরা তিন ভাই বোন সবার পড়াশুনা খরচ সংসার চালানো একটা মানুষ এর উপার্জন এর উপর দিয়ে চালানো অনেক কষ্টসাধ্য ছিল, অনেক কষ্টে পড়াশুনা করেছি,
অনেক সময় সঠিক সময়ে ক্লাসের ফিস দিতে পারিনি বলে, জরিমানা হিসেবে সঠিক সময় এ পরীক্ষার হলে বসতে দেয়নি ,
এই ভাবেই অনেক অভাব অনটনের মধ্যে পড়া শুনা চালিয়ে গেছি অনেক ইচ্ছে ছিল বাইরে পড়াশুনা করবো ইজ্ঞিনিয়ারিং পড়ার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা পড়া হয়ে ওঠেনি কারণ বাবার পক্ষে সম্ভব ছিলনা পড়া শুনার খরচ চালানো , তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইন্টারে ভর্তি হই ইন্টারে ভর্তি হওয়ার পড় টিউশনি শুরু করলাম আর যে টুকু টাকা পেতাম তা দিয়ে নিজের কলেজ যাওয়ার ভাড়া টা তো হয়ে যেতো
তারপর ইন্টার পাস করার পড় হঠাৎ আমার বড় চাচা মারা গেল ব্রেইন স্টোক করে পরিবারে একটা শোক নেমে আসলো তার মৃত্যুর কয়েকদিন পর ন্যাশনাল র্ভাসিটির ভর্তি পরীক্ষা এই অবস্থায় তেমন পড়াশুনা করতে পারিনি তবুও পরিক্ষা দিলাম প্রথমে অয়েটিং এ ছিলাম পড়ে উদ্ভিদ বিদ্যাতে ভর্তির সুযোগ হলো ভর্তি হলাম তারপর গ্ৰাম ছেড়ে শহরে চলে এলাম পড়াশুনার জন্য ।
টিউশনি বন্ধ হয়ে গেল , মেসে থেকে পড়াশুনা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন তাই মেসে না থেকে খালার বাড়ি থেকে পড়াশুনা করতাম কিন্তু অন্যের বাড়ি থাকা বা তাদের মন যোগায়ে চলা অনেক কষ্টের তবুও আমাকে পড়াশুনা শেষ করতে হবে বাবার অনেক ইচ্ছে আমাকে মাস্টার্স পাস করাবে তাই সব কিছু মেনে নিয়ে সেখানে অনেক কষ্টে
পড়াশুনা করলাম আলহামদুলিল্লাহ পড়াশুনা টা ২১ সালে শেষ করেছি।
বাবার একটা ইচ্ছে পূরন করতে পেরেছি আর বড় সন্তান দের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয় আর বড় সন্তান এর দায়িত্ব অনেক তাই সব অবস্থাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতাম কিন্তু ছোট থেকেই কারও উপর নির্ভরশীলতা ভালো লাগতো না আমার, নিজে কিছু করার ইচ্ছে অনেক ছিল।
২০১৮ সালে আবার বাড়ি চলে আসলাম টিউশনি শুরু করলাম আলহামদুলিল্লাহ তখন ৩০ টা ছাত্র ছাত্রি পড়াতাম পরিসংখ্যানের একটা প্রজেক্ট এ কাজ করলাম ।পরিশ্রম করতে আমার কষ্ট হয়না আর আমি কাজ কে ভয় পাইনা কারন আমাকে সফল হতেই হবে এই একটা স্বপ্ন তাড়া করে সব সময় আমাকে ।
আমি বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করতে চাই তাদের ভরসা হয়ে উঠতে চাই তারা যেন আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে এই দোয়াই চাই বাবা মায়ের যোগ্য সন্তান হতে চাই ।
২০১১ সালথেকে টিউশনি থেকে যে টুকু উপার্জন করতাম সবটা শেষ হয়ে যাচ্ছিল তখন ভাবলাম এই টাকাকে কাজে লাগিয়ে আমি কিছু একটা করতে পারি। ২০২০ সালে মার্চে করোনা শুরু হলো মাস্টার্স পরিক্ষাটাও হলো না তখন ঘরবন্ধি জীবনে কিছু ঘটনা আমাকে মানসিকভাবে খুব কষ্ট দিচ্ছিল।
অনেক হতাশা হয়ে পড়লাম, মনে হচ্ছিল সব.....কিছু শেষ হয়ে গেছে ডিপ্রেশন আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোন কাজ ভালো লাগছিল না মন দিতে পারছিলাম না কোন কাজে ।
চিন্তা হতো অনেক না খেয়ে না ঘুমিয়ে বুকে খুব ব্যাথা হতো একদিন হাত পা কুকড়া হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম ডাক্তার বললো অতিরিক্ত চিন্তা করায় এমন হয়ছে তার কিছু কারণ ও ছিল, তারপর ওষুধ খেয়ে একটু সুস্থ হয়ে উঠলাম ভাবলাম এই ভাবে চলতে দেওয়া যাবেনা ঠিক করলাম আমি কিছু একটা করবো, নিজেকে প্রমাণ করবো নিজেকে অনেক ব্যাস্ত করে তুলবো।
বারবার চেষ্টা করতাম এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে, পারতাম না কিন্তু এইভাবে তো হেরে গেলে চলবে না।
আর অবসর সময় গুলো একদম কাটছিল না তাই অনলাইন ব্যবসা শুরু করলাম বিভিন্ন মানুষ এর সাথে পরিচয় হয়েছে সবার জীবন এর বদলে যাওয়ার গল্প পড়ে শুনে অনেক অনুপ্রেরণা পেতাম অনেক কিছু শিখলাম আর সবার সাথে কথা বললে কিভাবে সময় কাটে বোঝায় যায় না ।
আমার মতো পিছিয়ে পরা অসংখ্য মেয়ের এগিয়ে যাওয়ার গল্প গুলো পড়ে নিজেকে অনেক আত্মবিশ্বাসি করে তুলতে পেরেছি আমিও কিছু করতে পারি বা করবোই এই সক্ষমতা খুঁজে পেয়েছি নিজের মাঝে নিজেকে প্রমান করার একটা সুযোগ পেয়েছি।
তারপর আমার বান্ধবীর সাথে শেয়ার করলাম কথাগুলো, সিদ্ধান্ত নিলাম দুজন মিলে অনলাইন ব্যবসা শুরু করবো। ১৩৫০ টাকা দিয়ে কিছু কাঠের বেস আনলাম কিন্তু দুজনের মতভেদের কারণে আর শেয়ারে ব্যবসা হলো না। কিন্তু আমি যখন ভাবি কিছু করব,সেটা আমাকে করতেই হবে,আবার কাঠের বেস অনলাইন থেকে নিলাম। প্রথমে ৯০০ টাকার পণ্য আনলাম কিন্তু সেখানে মালা বানানোর মত পর্যাপ্ত পণ্য আমি পাইনি, যার থেকে নিয়েছি সে ঠকিয়েছে। তখন যা ছিল তা দিয়ে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কষ্টে মালাগুলো বানালাম কিন্তু প্রথম দিকে একটা মালাও বিক্রি করতে পারিনি।হতাশ হয়ে পড়লাম বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেখে আস্তা বাড়লো আমার।
পেজ খুললাম ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে, উদ্যোক্তা গ্রুপে আগে থেকেই যুক্ত ছিলাম প্রথম পোস্ট দিলাম ২৩ অক্টোবর, ।প্রথমে বাড়ি থেকে কোনো সাপোর্ট পাইনি আর যেহেতু প্রাইভেট পড়াতাম তাই এই টাকা দিয়ে পণ্য আনছিলাম। পাশে পাইছিলাম আমার ছোট খালাতো ভাইকে, ও-ই অনেক সাহায্য করত পণ্য আনতে।
তখন গরমের সময় ছিল ভাই আমাকে ১১০০ টাকার টপস এনে দিল তারপর ১৮ পিস টপস এর মধ্যে ১১টি টপস বাড়ি থেকেই সেল হলো। তখন অনেক ভরসা পেলাম তারপর ঢাকা থেকে আমার বান্ধবীর কাছে কিছু মেটাল গয়না নিলাম। কিন্তু কিছু লোক তো বলবেই আমি এই কাজটা করছি তা নিয়ে কত মানুষের কত কথা, আমি বিয়ে করিনি আমার এত টাকার কি দরকার বয়স হয়েছে বিয়ে করছিনা এই কাজ গুলা অনেক নিম্ন কাজ।
বারবার উপেক্ষিত হয়েছি সবার কাছে কিন্তু মনের জোরটা হারাইনিআমি তখন একটা কথাই বলতাম যে, কে কি ভাবলো, বললো, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার কাছে আমার লক্ষ্য ও স্বপ্নটাই বড়।
সত্যিই আগে এইসবের পরোয়া করতাম এখন করিনা।
কারণ আমি যা করছি অন্যায় করছি না। এখন আমি এই ধৈয্যর ফল হিসেবে পেয়েছি অনেক মানুষ এর ভালোবাসা বিশ্বাস আগে আমি আরশি কেউ চিনতোনা এখন অনেকে চিনে ভালোবেসে ভরসা করে ।
আমি নিজের খরচ নিজে চালাই অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়না এই টুকু প্রাপ্তির হাসি হয়তো কখনো পাওয়া হতো না যদি ধৈয্য ধরে অন্তরের দেওয়া আঘাত গুলোকে উপেক্ষা না করে পিছুটান গুলো ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম না করতাম।
মেয়েরা সমাজের চোখে অনেক অবহেলিত অন্যের করুণা অনুগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকতে হয় যা আমি মেনে নিতে পারিনা। যখন আমি নিজে কিছু করতে পারব তখন কেন অন্যের গলগ্রহ হয়ে বাচঁবো। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক সাড়া পাচ্ছি। যাদের জন্য পিছিয়ে পড়া মানুষ গুলো একটু হলেও নিজের সামর্থ্যকে প্রমাণ করতে পারছে আর প্রতিনিয়ত যারা পোস্টে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।।
আমি কোনো সফল উদ্যোক্তা নয় কিন্তু আমি চেষ্টা না করে বিফল হয়ে হার মেনে নিতে পারবো না। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।আমি জান্নাত আরশি, কাজ করছি হ্যান্ড পেইন্ট বিভিন্ন ড্রেস মাস্ক ও থ্রিপিস পাঞ্জাবী নিয়ে। ভুল ত্রূটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
পেজ:Jannat online shopping
এতো সময় যারা আমার জীবনেহর গল্পটা পড়লেন আপনাদের সবার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদের সবার স্বপ্ন পূর্ণ করুন আমীন।
🤗আমি কাজ করছি হ্যান্ড পেইন্ট পোশাক, থ্রি পিস,শাড়ি, পাঞ্জাবি ,জুয়েলারি নিয়ে....
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৪৩
তারিখ ০৩-০৮-২০২২ইং
আরশি মোস্তাকিম
ব্যাচ:১৭
রেজিস্ট্রেশন:৯২৫৭০
জেলা:নওগাঁ
উপজেলা :ধামইরহাট
বর্তমান অবস্থান:ফার্শিপাড়া ধামইরহাট নওগাঁ
👉পেজ লিংক:https://www.facebook.com/Jannat-Online-Shopping-112376287286797/