মানুষের জীবনে দুঃখ দুর্দশা থাকবেই
#বিসমিল্লাহির_রাহমানির_রাহিম
আমার জীবনের গল্প
💜ভালোমানুষের পরিবার নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রত্যেক আজীবন সদস্যকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইলো
💜আমার সালাম নিবেন.....
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছেন এবং নিরাপদে আছেন।
আমাদের মেন্টর এই প্লাটফর্ম গড়ে দিয়েছেন এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সৃতিচারণ গল্প আকারে লিখার জন্য। আমিও তার ব্যতিক্রম নয়।
নিচে নিজেকে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা মাএ,
আশা করি আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে লেখাটি পড়বেন,
💜💜 আমার জীবনের গল্প 💜💜
💜শুরু করছি পরম করুনাময় মহান আল্লাহর নামে। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এবং সুস্থ ও সুন্দর একটি জীবন দান করেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি এখনি অবধি আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি।
💜শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার বাবা-মাকে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ভালোবাসায় আজকের আমি। যাদেরকে ছাড়া আমার পৃথিবীটাই অন্ধকার।
💜 বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি লাখো তরুনের স্বপ্ন দ্রষ্টা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যিনি আমাদের জন্য এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন। যার অনুপ্রেরনায় আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি অদম্য শক্তি নিয়ে।
💜 অনেক অনেক শুভকামনা এবং ভালোবাসা প্রিয় প্লাটফর্ম এর সকল আজীবন সদস্য ভাই-বোনদের প্রতি। যারা সবসময় একে অপরের পাশে থাকেন।
💜আমার পরিচয়ঃ-
আমি মোহাম্মাদ ফখরুল ইসলাম সবুজ।আমার জন্ম সিলেট জেলা,
গোয়াইনঘাট উপজেলা,
১০ নং পশ্চিম আলীর গাঁও ইউনিয়ন
রাউত গ্রামে।
💜আমরা ৫ ভাই ৫ বোন। ভাই বোনের মধ্যে আমি তিন নাম্বার। আর বাকি সবাই ছোট। আমি সহ আমরা ৫ ভাইবোন লেখাপড়া করতাম। ৫ ভাই বোনকে লেখা পড়া করানো বাবার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। একা এক জনের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই বড় ভাই আমাদের সবার কথা চিন্তা করে, লেখা পড়া না করে নেমে গেলেন মাঠে বাবার সাথে কাজ করবেন বলে।
💜 আমার বাবা ছিলেন একজন কৃষক আর মা ছিলেন গৃহিণী। বাবা কৃষি কাজ করে আমাদের পরিবার কোনো ভাবে চালিয়ে নিয়েছেন অনেক সময় বাবা মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে পরিবারের জন্য ও আমাদের লেখা পড়া খরচ চালাতেন।
💜অনেক দিন আমরা রাতে না খেয়ে থাকতাম, বাবা খাবার জোগাড় করতে পারেন নি বলে। তবুও আমাদের লেখা পড়া করাতেন, অনেকে বলতো লেখাপড়া বাদ দিয়ে ওদের কাজে লাগান, ভালো হবে পরিবারের জন্য,পরিবারের সচ্ছলতা আসবে,
💜বাবা কার ও কথা শুনেননি। বাবা সব সময় বলতেন, যেভাবে পারি ওদেরকে লেখা পড়া করাবো ইনশাআল্লাহ,
💜 আমার সংগ্রামী শিক্ষা জীবনঃ-
💜আমি ষষ্ঠ শ্রণিতে উঠে গেছি। আমার স্কুলের বেতন, টিউশন ফ্রি সব মিলিয়ে খরচটা আগের থেকে বেড়ে গেছে। আমি যে স্কুলে যেতাম, সেটি ছিলো আমার বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ দূরে। টিফিন তো দূরের কথা এমন কি গাড়ি ভাড়া সব সময় বাবার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিলোনা। বিরতির সময় ক্লাসমেট সবাই ক্যানটিনে গিয়ে নাস্তা করতো, আর আমি ক্লাস রুমে নিরবে বসে থাকতাম।
💜তাই একদিন ভাবলাম আমার তো দিন দিন খরচ বাড়তে আছে কি করা যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম লেখা পড়ার পাশাপাশি একটা টিউশনি করাবো।পাশের বাড়িতে ছয় জন ছোট বাচ্চাদের কে পড়াতাম আসরের টাইমে, যাতে রাতে আমার পড়ার ক্ষতি না হয়।এভাবে চলছিল ছয় মাস।ছয় মাস পর দেখা যাচ্ছে স্কুলের ঠিকমত বেতন দেয়া যাচ্ছেনা। আবার সিদ্ধান্ত নিলাম স্কুল ছুটির ফাঁকে ফাঁকে অন্যর জমিতে কাজ করব। ২০০ টাকা রোজে কাজ করার সুযোগ হয়,
💜 আলহামদুলিল্লাহ আমার রুজের টাকা দিয়ে আমি ভালোই পড়াশোনা করতেছিলাম।অনেক সময় অনেকে বলত তুই লেখাপড়া করিস, তাহলে কাজ করস কেন। কার ও কথা শুনতাম না, আমি আমার মত করে চলতাম।
💜২০১৫সালে এস এস সি পরীক্ষা দেই। আলহামদুলিল্লাহ রেজাল্ট ভালো আসে, সিদ্ধান্ত নেই কলেজে ভর্তি হবো। কলেজে ভর্তি ফ্রি ২,৫০০ টাকা এতো টাকা কোথায় পাবো একসাথে,তার পরে আবার বই কিনতে হবে।আমাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, এক কথায় পানি বাদে বাকি সব কিনে খাওয়া। শত কষ্টে করে আমি নিজে কাউকে না বলে একা টাকা ম্যানেজ করি।ভর্তি হই কলেজে। তার মধ্যে পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে প্রবাসে যেতে হবে। আমি ও পরিবারের কথা চিন্তা করে বললাম ঠিক আছে তোমাদের সুখে আমার সুখ।
💜💜 মা হারা সন্তান আমি.
২০০৯ সালে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন আমার মা। সেই সময় আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। মনে পরে বার বার মাকে, মাকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে গেলে আমি থাকতাম সাথে সব সময়। মাকে খুব ভালোবাসতাম, মা ও আমাকে খুব ভালোবাসতেন। মা আমাকে একা রেখে কোথায় যেতেন না। অনেক ডাক্তার দেখানো হলো কিছুতে ভালো হচ্ছেন না, যে যেখানে বলছে সেখানে ডাক্তাররে কাছে বাবা নিয়ে গেছেন। তবু যদি ভালো হয়ে যান। কিছু সম্পদ বাবার ছিল সেটুকু বিক্রি করা হয়েছে শুধু ডাক্তার দেখানোর জন্য তবু ও বাঁচাতে পারলেন না মাকে। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন ২০১০ সালে। এমন কষ্ট কেউ বুঝবেনা মা হারা সন্তান সারা।যাদের মা বাবা বেঁচে নেই, আল্লাহ তাদের মাবাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুক।আর যাদের মা বাবা বেঁচে আছে,তাদের মা বাবাকে শত বছর বেঁচে রাকুক এই কামনা করি।
✈প্রবাস জীবন ঃ
২০১৭ সালের মে মাসে ১০ তারিখে মরুভূমির দেশ ওমানে আসি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ৪লক্ষ টাকা লোন এর বোঝা মাথায় নিয়ে প্রবাসে আসা,
💜যে বয়সে হাতে খাতা কলম থাকার কথা,সেই বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে ওমানে আসা, মাতৃভূমির মাতৃভাষা ও পরিবার রেখে দূরে আমি একা, কি আর করব, পরিবারের সবাইকে সুখে রাখতে গেলে, নিজের দুঃখকে সুখটা মনে করতে হবে।
💜মাত্র ১৪ হাজার বেতনের চাকরি, তার মধ্যে নিজের খাওয়া, ফোন বিল এসব খরচ করে ১০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। কি আর করব ভাবে পাচ্ছিনা, চাকরি করব না দেশে চলে যাবো ভাবতে থাকি।তবে দেশে গিয়ে কি করব সেটা ও ভাবি।সব কিছু বাদ দিয়ে কাজে মন দিলাম। কারন ৪লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা,
১৪ হাজার বেতন দিয়ে দেকি কিছু করতে পারি কিনা।আলহামদুলিল্লাহ যা করেছি অনেক করেছি, ২বছরের ভিতরে সবার পাওনা টাকা শোধ করে আরো ২ টা বোন বিয়ে দিতে পেরেছি। কষ্টে করেছি প্রচুর কষ্ট। দিনে রাতে অভার টাইম করেছি। সারা দিন ডিউটি করে রাতে সবাই আরাম করে, কেউ আবার খেলাধুলা করে,কেউ টেলিভিশন দেখে, বাড়িতে ফোন করে আমার কাছে তখনও স্মার্ট ফোন ছিলোনা ইচ্ছে করলেই কিনতে পারতাম তা করিনি,
💜টাকা কিভাবে ইনকাম করতে হয় প্রবাসে না আসলে বুঝা যায়না।আর প্রবাসে আসতে পেরে বা এখানে থাকতে পেরে পরিবারের সবাইকে সুখে রাখতে পেরেছি,ও ছোট ছোট ভাই বোনদের কে লেখাপড়া চালাইতে পারতাছি।
💜আলহামদুলিল্লাহ ৩ বছরের শুরুতেই একটা স্মার্ট ফোন কিনি, নিজের উপার্জনে কিছু করতে পারছি।
এখন দিন রাত কষ্ট করে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে পারি পরিবারের জন্য আলহামদুলিল্লাহ । পরিবারের সবার সুখ মানে আমার সুখ।ভালো থাকুক আমার পরিবারের সবাই। ভালো থাকুন সকল প্রবাসী ভাই ও বোনেরা।
💜 "৫ বছরের প্রবাস জীবন""
মরুভূমি দেশ ওমানে আছি আজ ৫ বছর থেকে। ওমানের তাপমাত্রা বর্তমানে সকালে থাকে ৩৬-৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস।এসব সহ্য করে আছি শুধু পরিবারের কথা চিন্তা করে।পরিবারের সবাইকে সুখে রাখতে। দেশে একবার ও ছুটিতে যাইনি। দেশে গেলে আমার উপার্জন বন্দ হয়ে যাবে বলে। পারিবারের জন্য আরো অনেক কিছু করতে চাই। সুখে দুঃখে পরিবারের পাশে থাকতে চাই। দোয়া করবেন আমার জন্যও পরিবারের সবার জন্য।সবাইকে সুখে যেন রাখতে পারি।
"💜ফ্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ"
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি প্রিয় স্যারের প্রতি আমাদের কে এতো সুন্দর একটি ফ্লাটফর্ম উপহার দেওয়ার জন্য।২০২০ সাল থেকে স্যারের সেশন গুলা প্রতিদিন ফলো করে আসছি।যুক্ত হবো হবো বলে প্রায় দুই বছর চলে গেলো।আর স্যারের যেতো সেশন দেকি তত আমি মুগ্ধ হই,মনের মধ্যে উৎসাহ যাগে আমি এখানে যুক্ত হবো।১৭ তম ব্যাচের শেষ দিকে তাহেরা জেবিন আপুর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করি। আপু বললেন আমাকে একটা পরিচিত পোস্ট করার জন্য,আর বলবেন আমি সিলেট মেসেন্জার গ্রুপে যুক্ত হওয়ার জন্য।আমি আপুকে বললাম না আপনি আমাকে সিলেট মেসেন্জার গ্রুপে যুক্ত করিয়ে দিন। শেষ পর্যন্ত আমাকে যুক্ত করে দিলেন। ধন্যবাদ প্রিয় আপু আমাকে সহযোগীতা করার জন্য। এর পর চিন্তা করি ওমান মেসেঞ্জার গ্রুপে কিভাবে যুক্ত হবো।কিছুদিন পর দেকি এক ভাই মেইন গ্রুপে কমেন্ট করছেন ওমান থেকে, ভাইয়ের সহযোগীতায় যুক্ত হলাম আত্মবিশ্বাসী এন আর বি ওমান মেসেন্জার গ্রুপে।সেই ভাই আমাদের সবার পরিচিত,তিনি হলেন নুরুজ্জামান মুন্না ভাই, ধন্যবাদ প্রিয় ভাই আমাকে সহযোগীতা করার জন্য, এখানে যুক্ত না হলে বুঝতে পারতাম না এখানে সবাই ভালো মানুষ।ভালোবাসি প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে, বিশাল একটি বড় পরিবার উপহার দেওয়ার জন্য।ভালোবাসি প্রিয় ফ্লাটফর্মকে,ভালোবাসি ফ্লাটফর্মের আজীবন সদস্য সবাইকে।যুক্ত হয়ে শিখতে পারছি স্যারের সেশন থেকে অনেক কিছু।শেখার কোনো শেষ নেই, তাই এখানে শিখতে এসেছি।একটিভ আছি সব সময়।সবার ভালোবাসা চাই।আশা করি ভালোবেসে পাশে রাখবেন সবাই।
"""💜 উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা "
💜স্যারের সেশন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি এখন ওমানে ছোট আকারে একটি ছাগলের ফার্ম খামার করেছি। খামার টা করেছি অনেক রিক্স নিয়ে, দেকি কিছু করা যায় কিনা। একদিন ছোট খামার থেকে বড় খামার করব ইনশাআল্লাহ । ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবে লেগে আছি। সবার দোয়া চাই।
💜আমার স্বপ্নঃ-
আমার স্বপ্ন একজন ভালোমানুষ এবং সফল উদ্যোক্তা হবো। নিজের জেলা সর্বোপরি নিজের দেশের পণ্যকে বিশ্বের বাজারে পরিচিত করব। অসহায় ও নিপিড়ীত মানুষকে সাবলম্বী হতে সাহায্য করব। নিজের প্রতিষ্ঠানে একজনকে হলেও চাকরির সুযোগ দিয়ে বেকার সমস্যা হ্রাসে অংশগ্রহণ করব।
💜মানুষের জীবনে দুঃখ দুর্দশা থাকবেই। এসব কিছু উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। তাই হতাশ না হয়ে ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে হবে। অন্ধকার শেষে আলো আসবেই ইনশাআল্লাহ।
💜মা-বাবাকে ভালোবাসুন। পৃথিবীতে বাবা-মাই হলেন স্রেষ্ঠ নিয়ামত। ভাই-বোনের সম্পর্ক অটুট রাখুন। দিন শেষে তারাই আপনার পাশে থাকবেন।
💜অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে ধৈর্য্য ধরে আমার জীবনের গল্প পড়ার জন্য। আমার বাবা-মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আরো অনেক বছর যেন তাদের ছায়াতলে থাকতে পারি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৮৪৫
তারিখ ০৪-০৮-২০২২ইং
ফখরুল ইসলাম সবুজ
ব্যাচ নং১৭
রেজিষ্ট্রেশন নং ৯৩৫৬০
নিজ জেলা সিলেট
উপজেলা গোয়াইনঘাট
বর্তমানে মাস্কাট ওমান