এফ এম রেডিওতে স্যারের জীবনী শুনে বদলে যাওয়া জীবনের গল্পঃ
এফ এম রেডিওতে স্যারের জীবনী শুনে বদলে যাওয়া জীবনের গল্পঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামুয়ালাইকুম
সর্ব প্রথম শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান আল্লাহ তাআলা দরবারে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন ও সুস্থ রেখেছেন এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষ উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন এজন্য আবারো শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ।
লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ও তাঁর পরিবারের উপর।
সর্ব প্রথম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার মা বাবার প্রতি যাদের উসিলায় আমি এতো সুন্দর পৃথিবীতে আগমন হয়েছি এবং আমি আমার মা বাবার সুস্বাস্থ্য ও নেক হায়াত কামনা করি এবং আমি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মা বাবার সেবা করবো ইনশাআল্লাহ।
আমার পরিচয়ঃ
আমি মোঃ রেজাউল করিম প্রামানিক। আমরা চার ভাই তার মধ্যে আমিই বড়। আমার ছোট এক ভাই শিশু অবস্থায় মারা যায় ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন) আর দুই ভাই মধ্যে একজন কলেজে পড়ে আর একজন হাফিজি মাদ্রাসায় পড়ে ও অনেক ছোট। আমি বোনের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত কারণ আমার বোন নেই। আমার অনেক কষ্ট হয় যখন কোন এক বোন আমার সামনে তার ভাই কে ভাই বলে ডাকে বা কোন এক ভাই তার বোনকে আপু বলে ডাকে এই কষ্ট বুঝানোর মতো না কষ্টটা এতো বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো আমার একজন ফুফি নেই।
আমার বাবা চাচা পাঁচ ভাই তার মধ্যে আমার বাবা তৃতীয়।
যাই হোক তার পরও আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন।
আমার শৈশব কালঃ
আমি আমার মা বাবার প্রথম সন্তান তাই মা বাবার আদর ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না।
আমার মা বাবা যেমন আমাকে আদর করত ভালোবাসতো ঠিক তেমনি আমার দাদির আদরের নাতি ছিলাম আমি।
জন্মের পর আমি আমার দাদাকে দেখেছি হয়তো বা আদর ভালোবাসা পেয়েছি কিন্তু তখন আমি বুঝতে শিখিনি। আমার এতো টুকু মনে আছে আমি যখন কিছুটা বুঝি তখন দেখি আমার দাদা অসুস্থ একজন প্যারালাইজ রোগী দাদা বিছানা থেকে উঠতে পারে না এমনকি কথা বলতে পারে না।যাই হোক দাদির আদর ভালোবাসা পেয়েছি অনেক দিন।
আমি ঢাকা থেকে যখন বাড়িতে যেতাম দেখতাম দাদি আমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে আমি কখন তার কাছে যাবো। আমি দাদির অনেক সেবা করতাম।
আজ পাঁচটি বছর আমি দাদিকে ছাড়া আজও অনেক মনে পড়ে দাদিকে।
প্রতিটি বছর আমি আমার দাদা দাদি ভাই ও চাচাতো বোনের কবর জিয়ারত করি হে আল্লাহ আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাত দান করেন আমিন।
আমাদের পারিবারিক সংসার জীবনঃ
আমার বাবা একজন কৃষক। ক্ষেতে খামারে কাজ করে বাবা। আমার বাবা ছোটবেলা থেকেই সংসারে কাজ করে। আমার বাবা একজন অক্ষরজ্ঞানহীন নিজের নাম লিখতে পারতো টিপসই ছিল তাঁর অমূল্য সম্পদ।
হঠাৎ কোন এক গণশিক্ষা কার্যক্রম এসে বাবার জীবনের একটু পরিবর্তন ঘটে তা হলো টিপসই এর পরিবর্তে নাম লেখা শিখতে পারা।
এই গণশিক্ষাই ছিল বাবার জীবনে প্রথমবারের মতো লেখাপড়া।
এই মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম আমার। আমি যখন ছোট ছিলাম দেখতাম আমাদের পারিবারিক জীবন খুবই ভালো ছিল কখনো কারো কাছে দেনা থাকতো না কিন্তু বাবার দুই দুটি একক ভুল সিদ্ধান্তে এলোমেলো হয়ে যায় বাবার সাজানো গোছানো সংসার।
প্রথমে আমাদের একটি ধান মাড়াই করা মেশিন কিনে যেটাকে আঞ্চলিক ভাষায় ধান ভাঙ্গানো মেশিন বলে।
মেশিনটি কেনার পর কাজ করার সময় বারবার নষ্ট হয়ে যেত তাই কম দামে মেশিন বিক্রি করে দেয়।
অনেক টাকা ৠন হয়ে যায় আমাদের একসময় ৠন পরিশোধ হয়ে যায় আমাদের।ৠন পরিশোধ হতে না হতেই বাবা আবারো একক ভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।বাবার স্বপ্ন ছিল গাভী পালন পালন করে সংসার চালাবে তাই বাবা জমি কট দিয়ে ৫ টি গাভী কিনে ৫ লক্ষ্য টাকা দিয়ে প্রতিটি গাভী ২-৩ কেজি দুধ দিত মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো বাবার মাথায় ভেঙ্গে যায় বাবা সব স্বপ্ন। গাভী গুলো কম দামে বিক্রি করে দেয়। সবমিলিয়ে ৠন হয়ে যায় ৮ লক্ষ্য টাকা ঘুম নেই বাবার চোখে অভাব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতো জড়িয়ে গেল আমাদের সংসার জীবনে।
দারিদ্র্যতার কোষাগারে বেড়ে ওঠা আমার।
বাবা নামক ব্যক্তিটি নিজেকে বিলিয়ে দেয় সংসারে ছেলে ও মেয়ের জন্য । বাবার কাছে কিছু চাইলে কখনো না করতো না। বাবার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা ভালোবাসা।
আমার কর্ম জীবনঃ
এইস এস সি পাশ করেই আমার কর্ম জীবন শুরু হয়।
আমার এক সিনিয়র বড় ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার উনি আমাকে একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকুরী নিয়ে দেয় চাকুরী অবস্থায় আমার ডিগ্ৰি লেখাপড়া শেষ করি।যে টাকা বেতন পেতাম সেখান থেকে কিছু বাড়িতে দিতাম আর নিজের লেখাপড়ার জন্য কিছু টাকা রেখে দিতাম। আবার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ সংসার থেকে দেওয়া হতো।ও নিজেও অন্যের কাজ করে টাকা জোগার করতো।
অল্প টাকায় সংসার চালানো বড় কঠিন কারণ দারিদ্র্যতা যেখানে বসবাস।
এভাবে চলতে থাকে আমাদের সংসার জীবন।
এরি মধ্যে আমার নানী আমাদেরকে একটি ভেড়া পালন করতে দেয় সেই একটি ভেড়া থেকে ধীরে ধীরে অনেক গুলো ভেড়া বেরে যায় এবং সংসারে কাজের জন্য মাঝে মাঝে বিক্রি করা হয়।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় এখন প্রায় ৫০ টি ভেড়া আছে বন্যার কারণে প্রায় ৩০টি বিক্রি করে দিয়েছে।
আমার সংসার জীবনঃ
কয়েক বছর পর আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে বাড়ি থেকে আমি না করে দেই কিন্তু বাড়িতে থেকে কিছুতেই মানতে রাজি না।রাজি হলাম বিয়ে করার জন্য। বাবার ইচ্ছে ছিল আমাকে অনেক টাকা নিয়ে বিয়ে করিয়ে সব ৠন পরিশোধ করে দিবে কিন্তু আমি তা চাই নি কারণ যদি মেয়েটি কখনো আমার বাবা কে আমার অনুপস্থিতিতে উঁচু গলায় কথা বলে কিন্তু বাবা বুঝতে রাজি না।যাই হোক বিয়ে হলো আমার নিজের পছন্দ মতে নতুন জীবনের পদার্পণ শুরু। বাবা শুরুতে মনোক্ষুণ্ন হলেও পরিশেষে বুঝতে পারে।
আমার বিয়ের চারটি বছর পুরণ হয়েছে। বিয়ের পর প্রতিটি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে স্বপ্ন মা বাবা হওয়ার তেমনি আমাদের হয়।
নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা কাছে প্রার্থনা করতাম।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাইতাম আলহামদুলিল্লাহ খুশির সংবাদ আসলো আমার কাছে আমি বাবা হবো আনন্দে আত্মহারা আমি। তার কিছু দিন পর বড় কঠিন ধাক্কা আসে আমার জীবনে। আমার স্ত্রীর প্যাকনেট আড়াই মাসের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় দিশেহারা হয়ে যাই আমি। কোনো কিছু ভালো লাগতো না আমার ঘুম হতো না রোজ কান্না পেতো আমার একা একা নিরবে কান্না করতাম।আজও কষ্ট হয় আমার।
আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন।
যাই হোক আল্লাহর রহমতে ভালো কাটছে আমাদের সংসার।
আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আল্লাহর রহমতে আমার বিয়ের চার বছর পর আমাদের ৠন প্রায় শেষের দিকে ৮ লক্ষ টাকা থেকে এখন মাত্র ২ লক্ষ টাকা আছে। অনেক ভালো কাটছে আমাদের পারিবারিক সংসার জীবন ।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শতাব্দীর ফেনী জেলার শ্রেষ্ঠ সন্তান,
আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের আইডল, বাংলাদেশের একজন অভিভাবক, স্বপ্ন পূরণ কারী মানুষ নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।যার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও ত্যাগের বিনিময়ে এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম যেখানে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা তথা বিশ্বের ৫০ টি দেশে নিজের বলার মতো একটা গল্প প্লাটফর্ম ছড়িয়ে আছে।
যার জন্ম না হলে এতো গুলো ভালো মানুষের সাথে পরিচয় হতো না,যার জন্ম না হলে আমরা পজেটিভিটি চিন্তা করতে পারতাম না স্যারের জন্য সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি এবং নেক হায়াত কামনা করছি।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে রেজিঃ
আমার একটা বাজে অভ্যাস ছিল সারা দিন অফিস করে এসে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমি এফএম রেডিওতে অনুষ্ঠান শুনতাম কারণ তখন আমার Android ফোন ছিল না যাই হোক আমি বিশেষ করে RJ Kibria 89.2 তে একটা অনুষ্ঠান হতো সেখানে মানুষ নিজের গল্প শুনানো হতো হঠাৎ একদিন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার অতিথি হিসেবে RJ Kibria 89.2 তে আসেন আমি খুব মনোযোগ সহকারে স্যারের কথা গুলো শুনলাম আমার খুব ভালো লাগলো।
স্যার যখন তাঁর নাম বলেছিল তাৎক্ষণিক আমি আমার ফোনে স্যারের নাম লিখে রেখেছিলাম। তার কিছু দিন পর আমি Android ফোন কিনে নিয়ে আসি ।হঠাৎ অনেক দিন পর দেখি আমার পরিচিত ভাই মোঃ মুকুল মিঞা একি সাথে চাকুরী করতাম উনি নিজের বলার মতো একটা গল্প প্লাটফর্মে পোস্ট করেছে আমি তাকে ফোন দিয়ে বললাম ভাই আমি এখানে যুক্ত হতে চাই তখন মুকুল ভাই আমাকে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের রেজিঃ করে দেয় ৯ম তম ব্যাচে।
ধন্যবাদ প্রিয় মুকুল ভাই কে আমাকে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের রেজিঃ করে দেওয়ার জন্য।
উদ্যোগঃ আলহামদুলিল্লাহ। আমি নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে এবং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগক্তা ভাই বোনদের গল্প শুনে আমি ছোট পরিসরে একটি খামার প্রতিষ্ঠান করেছি।
আমার প্রতিষ্ঠানের নাম মা বাবার দোয়া প্রামানিক দুগ্ধ খামার।
আপনারা সবাই আমার এবং আমার পরিবারের সবার জন্য দোয়া করবেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপনাদের প্রতি আমার জীবনের গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
ভুল ভ্রান্তিতে বরা মানুষের জীবন তাই আমার জীবন গল্প লেখার মাঝে কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৪৭
তারিখ ০৭- ০৮- ২০২২ইং
মোঃ রেজাউল করিম প্রামানিক
ব্যাচঃ ৯ম
রেজিঃ ৯৮৯২
জেলাঃ টাংগাইল
উপজেলাঃ কালিহাতী
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য।