ইচ্ছাশক্তির কাছে সবকিছু তুচ্ছ।
আমার কর্ম জীবনের প্রায় ৪৩ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের লেখা।
🟢 আসসালামু আলাইকুম 🟢
সকল প্রসংশা মহান সৃষ্টিকর্তার যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন ও সুস্থ রেখেছেন।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছি আমার পিতা-মাতার প্রতি, যাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন এবং আদর, যত্ন, মমতায় এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আমাকে মানুষের মতো মানুষ করে লালন -পালন করে বড় করেছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা পেয়েছি এই ভালবাসার প্লাটফর্ম । নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন। ভালো মানুষ গড়ার কারিগর। পথহারা বেকারদের পথের দিশারি।
আমাদের সবার অভিভাবক প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। স্যার এর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এমন একটা প্লাটফর্ম এ যুক্ত হতে পেরে।
আমি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান।
আমার জন্মস্থান ....... নড়াইল...............।
আমি ১৯৮১ সালে মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করি। আমি কামিল পাস করে ঢাকায় চলে আসি চাকরির জন্য। অনেকদিন খোঁজাখুঁজির পর যখন চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন আমি গ্রার্মেন্টস এ চাকরির জন্য চেষ্টা করি।
আলহামদুলিল্লাহ আমি গার্মেন্টস এ একটা চাকরি পেয়ে যাই। এ চাকরি পাওয়ার পরে খুবই আনন্দিত হই। কারণ একটা চাকরির আমার প্রয়োজন ছিল খুব। আমি চাকরিটা পাওয়ার পরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলাম।
কিন্তু মাস শেষে যখন বেতন পেলাম মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।
বেতন মাত্র ২৫০ টাকা এই বেতন দিয়ে কিভাবে চলবো ?
আমাকে চিন্তিত দেখে আমাদের অফিস এর জিএম সেলিম স্যার আমাকে ওনার রুমে ডেকে নিয়ে গেলো।
জিএম সেলিম স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলো মোস্তাফিজ তোমার কি মন খারাপ ?
যদিও আমি বললাম জি না স্যার !! কিন্তু তিনি বুঝে গিয়েছিলেন কেন আমার মনটা খারাপ।
সেদিন স্যার আমাকে একটা কথা বললেন যেটা আমার জীবনের ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিলো।
তিনি বলেছিলেন - দেখো, "কখনো টাকার পিছনে দৌড়াবে না। এমন ভাবে নিজেকে তৈরী করো দেখবে টাকা তোমার পিছনে দৌড়াবে"।
স্যার এর কথাটা শুনে আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত হলাম। আমি আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলাম ভীষণ মনোযোগ দিয়ে।
আলহামদুলিল্লাহ পরের মাস থেকে দেখলাম আমার প্রমোশন ও বেতন বৃদ্ধি হয়েছে।
তখন থেকে মনে খুব আনন্দ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলাম নিষ্ঠার সাথে। সাথে সাথে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখে যাচ্ছিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ বছর শেষে আমার বিভিন্ন প্রমোশন এবং বেতন বৃদ্ধি হয়ে আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোডাকশন ম্যানেজার এ পদোন্নতি পাই।
তারপর ১৯৮৬ সালে জার্মান টেকনিক্যাল গার্মেন্টসের উপরে একটি ট্রেনিং নেই।
সেখান থেকে আমার চোখ খুলে যায়। অনেক কিছু শিখি সেই ট্রেনিং থেকে। সেখানে আমি শিখি কিভাবে স্মার্ট ওয়ার্ক করা যায়। কিভাবে গার্মেন্টস এর কাজগুলোকে আরো ডিজিটাইজ করা যায়।
কিন্তু কাজের পরিবেশ না পাওয়ার কারণে সেভাবে কাজ করার সুযোগ হয়নি। কারণ আমি চাকরি করি তাই মালিকপক্ষ আমার সব কথা শুনতে রাজি নন।
আমি আমার মত করে চেষ্টা করে গিয়েছি।
এভাবেই চলছিল। কিন্তু নিজে কিছু করার স্বপ্ন আমাকে পিছু ছাড়লো না। সবসময় ভাবতাম চাকরির পাশাপাশি এক্সট্রা কি করা যায়! এরপর আমরা সবাই মিলে একটা সমিতি করলাম চাকুরীর পাশাপাশি কিছু একটা করব এই ভেবে।
আমার বস তাকে দায়িত্ব দিলাম আমাদের সমিতির ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য।
আমি গার্মেন্টস এ চাকরি করার পাশাপাশি সমিতির থেকে একটি ব্যবসা শুরু করার প্ল্যান করলাম।
তার কিছুদিন পরে আমরা একটি ছোট ওয়াশিং ফ্যাক্টরি করি। সেই ১৯৮৭ সালের কথা। এভাবে ব্যবসার পাশাপাশি গার্মেন্টসে চাকরি করি।
২০০২ সাল থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমি ব্যবসার ভিতরে পুরোপুরি ঢুকে যাই। পুরোটা সময় ব্যবসার কাজে ব্যয় করি।
সেই থেকে অদ্যবধি ওয়াশিং ব্যবসা নিয়ে আছি। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনার কারণে ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দিতে হয়। ফাক্টরিটি এখনও বন্ধ আছে। তবে ইনশাআল্লাহ আপনাদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে অবশ্যই ঘুড়ে দাড়াবো।
তারপরও এই পরিস্থিতিতে কি করা যায় ভাবছি। কারন সবকিছু থেমে গেলেও জীবন তো আর থেমে নেই। জীবন নদীর স্রোত এর মতোই বহমান। সকল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার নামই জীবন। আমি থেমে যেতে শিখি নাই।
আমি জানি বর্তমান অনলাইন এর যুগ। সবকিছুই এখন অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। আর ভবিষ্যতে এই অনলাইন প্রযুক্তিই এতটাই বাজার দখল করে নিবে যে যারা অনলাইন এ নেই বলা যায় তারা হারিয়ে যাবে।
তাই আমি নতুনভাবে মদিনার মার্ট নামে একটি অনলাইন শপ চালু করি। অনলাইন এ আমি আমার ব্যবসায় পরিচালনা করছি।
আমার একটা স্বপ্ন আছে গার্মেন্টস এর কাজগুলো অনলাইন ভিত্তিক করবো। যদিও আগের তুলনায় এখন গার্মেন্টস এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর পরিধি অনেক বেড়ে গেছে।
অনেক গার্মেন্টস প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিজের অবস্থান ভালো ভাবে করে নিয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক গার্মেন্টস আছে যারা এখনও পিছিয়ে রয়েছে।
যদিও আমার সে স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়ন করতে পারি নাই।
তবে আমি জানি অনলাইন এর গুরুত্ব কি।
আমার ফ্যাক্টরিতে জার্মানি থেকে একটি ইটিভি মেশিন আমদানি করে সেই মেশিনটা ইন্ডিয়ান থেকে অপারেট করে থাকে অনলাইন এর মাধ্যমেই এবং আমি দেখেছি সেখানে অনলাইনের কারণে সবকিছু ১০০% আউটপুট দিচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক গার্মেন্টস এ এখনও সেরকম ভাবে অনলাইন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না। সব কিছুই ম্যানুয়ালি করা হচ্ছে এমন গার্মেন্টস অনেক আছে এখনও। এজন্য দেখা যায় ২৫ থেকে ৫০ পার্সেন্ট ফ্যাক্টরিতে ওয়েস্টেজ হচ্ছে, শুধুমাত্র অনলাইন সিস্টেম ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এর অভাবে।
আমরা যদি অনলাইন এর মাধ্যমে গার্মেন্টস পরিচালনা করি তাহলে ওয়েস্টেজের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। এর কস্টিং চার্জ ও কমে যাবে অনেকাংশে। কাজের গতি বেড়ে যাবে ও সাথে সাথে অনেক সময় বাঁচবে। কর্মীদের থেকেও কাজের ভালো আউটপুট পাওয়া যাবে।
যার ফলে গ্রামেন্টস সেক্টর এ ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।
একটা সময় ছিল আমাদের দেশে যখন অনলাইন ব্যাংক ছিল না। তখন ম্যানুয়ালি কাজ করাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। কিন্তু বর্তমান ব্যাংক এর সকল কার্যক্রম অনলাইন হওয়ার কারণে ব্যাংকের টাকা যে কোন জায়গা থেকে জমা দেয়া যায় ও যে কোনো ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন সহজ হয়ে গেছে। আর আমরা সহজেই এর সুবিধা ভোগ করছি।
সেরকম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গুলোকেও অনলাইন করা সম্ভব। আর অনলাইন করতে পারলে এইভাবে সময় বাঁচানো যাবে এবং কাজ সহজ হয়ে যাবে। একাউন্টটিং সফটওয়্যার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো কাজকে সহজ করে দিচ্ছে। যা অনেক গার্মেন্টস বা ফাক্টরি এখনও ইউজ করছে না।
বর্তমানে আমি অনলাইনে একটি টিমের সাথে কাজ করছি কিভাবে ফাক্টরিগুলোকে অনলাইন করা যায় সেগুলো নিয়ে । আলহামদুলিল্লাহ এ বিষয়ে আমার ট্রেনিং আছে ও আছে বাস্তব কাজ করার অভিজ্ঞতা।
আপনি যদি আপনার ফ্যাক্টরিকে অনলাইন ভিত্তিক ও ডিজিটালাইজ করতে চান,তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি আপনাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
এছাড়াও আমার অনলাইন এ বিজনেস আছে মদিনা মার্ট নামে। আমি বিজনেস করছি গার্মেন্টস প্রোডাক্ট ও বাচ্চাদের ড্রেস নিয়ে। আমার প্রোডাক্ট এর মধ্যে রয়েছে বাচ্চা দের সুন্দর সুন্দর ড্রেস , ডেনিম প্যান্ট ও বেবি ফ্রক নিয়ে।
সবার জীবনেই স্বপ্ন থাকে নিজে কিছু করার। কিন্তু এই নিজেকে কিছু করতে হবে এই ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। কাজ করতে গেলে বোঝা যায় নিজের একটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কত কষ্ট করতে হয়। আপনাকে লেগে থাকতে হবে। ইচ্ছাশক্তির কাছে সবকিছু তুচ্ছ। একটু পরে না হয় আগে ভিতরে ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনে সফলতা আসবেই। সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।
যাইহোক আমার সংক্ষিপ্ত কিছু কথাবার্তা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রিয় ভাই বোনেরা এতক্ষণ যারা কষ্ট করে আমার লেখাটি পড়লেন সকলের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও অবিরাম ভালোবাসা। সবাই ভালো থাকবেন। আর অবশ্যই লাইক ও কমেন্ট করে মতামত জানাবেন।
সবাই নিরাপদে থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৫৪
তারিখ ১৭-০৮-২০২২ইং
ধন্যবাদান্তে,
কাজী মুস্তাফিজুর রহমান
ব্যাচ : ১৭
রেজিস্ট্রেশন: 91819
জেলা : নড়াইল
বর্তমানঃ উত্তরা, ঢাকা।
ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/modinamartbd/
ওয়েবসাইটঃ https://www.modinamartbd.com/