ব্যর্থতা থেকেও শেখার থাকে অনেক কিছু
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
🌷আমার জীবনের গল্প🌷
🌷 আল্লাহর নামে শুরু করছি,যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। যার অপার কৃপা ও রহমতে আমি এই পৃথিবীতে এসেছি।
🌷সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। লাখো কোটি দুরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি🌷
🌷কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার মা ও বাবার প্রতি, যারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, লালন পালন করেছেন এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে পৃথিবীর বুকে বড় করে তুলেছেন,এবং প্রিয় শিক্ষকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
🌷আমার ছোটবেলাঃ🌷
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া গ্রামে একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে ১৯৯০ সালে আমার জন্ম। আমরা চার ভাই, এক বোন।আমি পরিবারের সবার বড়। আমার আব্বু একজন আলেম ও কোরআনে হাফেজ।অত্যন্ত দায়িত্বশীল একজন ঠান্ডা মাথার মানুষ তিনি।কিন্তু নিয়মনীতির ব্যপারে অনেক কঠোর। অনিয়মকে তিনি কোন অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেননা।বাবার কড়া শাসনে ছোট বেলা থেকেই মানুষ হতে থাকি। আমার যতোটুকু মনে পড়ে,আমরা তখন যৌথ পরিবারে ছিলাম। আমার দাদী ও চাচা-চাচী সহ সবাই একসাথে থাকতাম।তাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ম মেনে সকল কাজ ও চলাফেরা করতে হত।
🌷 প্রাথমিক শিক্ষা জীবন ও পরিবারের দুঃসময়।
গ্রামের মক্তবে আরবী শিক্ষার পাশাপাশি খাগরিয়া মজিদের পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার শিক্ষা জীবন শুরু। শিক্ষাজীবন শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই কিছু বিষয় লক্ষ করলাম।আমার আব্বুর পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া একটি দোকান ছিল বান্দরবান জেলার অদূরে থানচি উপজেলার বলিপাড়া এলাকায়।আব্বু সেখানে ব্যবসা করতেন। প্রথমদিকে সুন্দর চললেও পরবর্তীতে কিছু প্রতারকের কারনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। এরপর থেকেই আমাদের পরিবারে দুঃসময় চলে আসে।এই সময়ে আমাদের পরম মমতায় আগলে রেখেছেন আমার নানু। ছোটবেলায় আমরা বেশিরভাগ সময় নানাবাড়ীতে কাটিয়ে দিতাম।আব্বুর জন্য দাদীর আন্তরিকতা ছিলো চোখে পড়ার মতো।সার্বক্ষণিক দোয়া করতেন আব্বুর জন্য।বলা হয়ে থাকে, দাদীর দোয়ার বরকতে আব্বু দ্রুত সময়ে দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। পরক্ষণে আব্বু একটি মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে আমাদের আর তেমন সমস্যা না হলেও,১৯৯৭ সালের বন্যা পরবর্তী আমাদের মাটির ঘর ভেঙে গেলে আরো একটি অসময় পার করতে হয় আমাদের।যৌথ পরিবারে আব্বুর উপর খরচের চাপ ছিলো প্রচুর।পরে দাদী সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার পরিবার আলাদা আলাদা করলে আমরা মোটামুটি কিছুটা স্বস্তির জীবনযাপন করতে সমর্থ হয়।এসব ঘটন-অঘটনের মধ্যেই আমার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করি।
🌷খেলাধূলা ও দুরন্তপনা।
পড়ালেখার পর আমাদের অন্যতম কাজ ছিলো খেলাধূলা। লাটিম খেলা,মার্বেল খেলা,হাডুডু, ক্রিকেট, ফুটবল কি ছিলোনা আমাদের খেলার লিস্টে।ফুটবল নিয়ে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে দুই কিলোমিটার দূরে সাংগুনদীর তীরে যাওয়া ছিলো আমাদের বিনোদনের অন্যতম অংশ। তাছাড়া, কনডেন্স মিল্কের কোটা নিয়ে হারিকেন বানিয়ে রাতের বেলা মসজিদে যাওয়া ছিলো খুব আনন্দের। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা এই জিনিসগুলো খুব মিস করে।
🌷পরবর্তী শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবনে নানারকম সময়-অসময়🌷
স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর চলে যায় মাদ্রাসায়। বাকি শিক্ষা জীবন মাদ্রাসাতেই শেষ করি ফাজিল পর্যন্ত। এইসময়ের মধ্যেই অবুঝ মনের কারণে এক আপন লোকের মারফতে যুক্ত হয়ে যায় একটি এমএলএম কোম্পানিতে।বিশাল বিশাল স্বপ্ন দেখিয়ে তারা আমার অনেকগুলো সময় নষ্ট করে।বাবার অনেকগুলো টাকা নষ্ট করে ফেললাম। পড়লাম চরম হতাশায়। হতাশা কাটিয়ে উঠতে এক বন্ধুর মারফত যুক্ত হয় পাহাড়ি এলাকার কিছু মৌসুমি ব্যবসায়।চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন হয় এই ব্যবসা থেকে।পাহাড়ি অঞ্চলে ঘুরাঘুরি, মাইলের পর মাইল পাহাড়ি পথ হেটে পাড়ি দেওয়া জীবনের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছিল।সুন্দর ভাবে চলা এই ব্যবসায় আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়ায় পাহাড়ি কিছু চাদাবাজ সিন্ডিকেট। তাদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় এই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।ব্যবসা বন্ধ করে দিলেও এই ব্যবসা থেকে অনেক লাভবান হয়েছিলাম।পরবর্তীতে লেখাপড়ার কারণে গ্রামীণ জীবন ছেড়ে স্থায়ীভাবে শহরে চলে আসি।শহরে আসার কিছুদিন পর পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি।শেয়ার মার্কেটের তেমন কিছু বুঝলেও এক পরিচিত লোক মারফত নিজের কিছু এবং আব্বুর থেকে কিছু টাকা নিয়ে পার্টনারশিপে বিনিয়োগ করি।প্রথম দিকে কিছুটা প্রফিট আসলেও পরে ধুরন্দর প্রকৃতির ওই লোক প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে আমাকে অনেক টাকা লসের মধ্যে পেলে সব হিসাব নিকাশ ক্লোজ করে। জীবনে আরো একবার হতাশা। এসবের মধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করি।
🌷চাকুরী জীবন ও একমাত্র ছোটবোনের বিয়ে নিয়ে কিছু স্মৃতি🌷
২০১২ সালে মামার মারফত একটি ক্যারিং এজেন্ট কোম্পানিতে চাকুরীতে যোগদান করি।স্বল্প বেতনের চাকরি হলেও সম্মানজনক একটি অবস্থান ছিলো। চাকরি জীবনের মাত্র ছয় মাসের মাথায় একমাত্র আদরের ছোটবোনের বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হয়। এর মাত্র বছর দেড়েক পূর্বে আমাদের পুরোনো বাড়ি ভেঙে বিল্ডিংয়ে রুপান্তর করতে গিয়ে আব্বুর জমানো সব টাকা শেষ হয়ে কিছু কর্জ হয়ে যায়। আব্বুর হাতে টাকা নাই,এদিকে আমার নতুন চাকুরীজীবন, সবমিলিয়ে বোনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সামলানো অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছিল।আল্লাহর গায়েবি সাহায্যে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শে কোনরকম চিন্তা ছাড়াই অনাড়ম্বর ভাবে বোনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আব্বু-আম্মু চরম শূন্যতা অনুভব করতে লাগলেন।আমরা ভায়েরাও শূন্যতা অনুভব করতে লাগলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ,ভগ্নিপতি চমৎকার মিশুক টাইপের মানুষ হওয়ার সেই শূন্যতা আমাদের বেশিদিন অতিবাহিত করতে হয়নি।বর্তমানে ছোটবোনের একছেলে ও একমেয়ে আমাদের পরিবারের অক্সিজেন।
🌷আবারো ব্যবসা শুরু🌷
এক চাকরি দেড় বছর আরেকটি ১ বছর করার পর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে স্বল্প পরিমান কাজ নিয়ে পণ্য পরিবহন ব্যবসা শুরু করি।পরবর্তীতে ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করি।আলহামদুলিল্লাহ খুব অল্পসময়ে মোটামুটি একটা অবস্থান তৈরি হয়েছিল আমার।
🌷জীবনে আরো একবার ধাক্কা খেলাম🌷
২০১৬ সালের শেষের দিকে কয়েকজন বন্ধু মিলে মোটা অংকের একটি এমাউন্ট বিনিয়োগ করলাম একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে।এই কোম্পানি যে সাইনবোর্ড সর্বত্র ছিলেন সেটা আমরা বুঝতে পারিনি।যে জায়গার কথা বলে আমাদের থেকে বিনিয়োগ নিয়েছিলেন সেটা তারা গোপনে বিক্রি করে চম্পট দেয়।বিশাল একটি ধাক্কা খেয়ে গেলাম আমরা। বিশাল একটি এমাউন্ট হারিয়ে আমি প্রায় দিশেহারা।এদের পিছনে ঘুরাঘুরি করতে করতে প্রায় এক বছরের বেশি সময় নষ্ট করে ফেললাম। বিনিয়োগ কমিয়ে ফেলার কারনে আমার ক্যারিং এজেন্ট ব্যবসাও প্রায় বন্ধের পথে।
🌷 আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা🌷
২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঢাকায় চলে যায়।পণ্য পরিবহন ব্যবসায় আবারো সময় দিয়ে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করি।প্রথমে খুব কষ্ট পেলেও ধীরেধীরে একটা অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়। কিছুটা সময় খুব সুন্দর চলে।দেখতে দেখতে চলে আসে ২০২০ সালের মার্চ মাস।কোভিট১৯ এর হানা বিশ্বব্যাপী। ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ রেখে আবারো হতাশায় নিমজ্জিত। ঢাকা ছেড়ে চলে আসলাম চট্টগ্রামে।
🌷করোনা পরবর্তী সময়।
২০২০ সালের শেষের দিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবারো ব্যবসায় স্থীর হতে চেষ্টা করি। এরইমধ্যে এক বন্ধুর মধ্যস্ততায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক টাকা ফেরত পেতে সক্ষম হয়। চট্টগ্রামে থেকেই সল্প পরিমানে পন্য পরিবহন ব্যবসা চালাতে থাকি। এরই ফাকে চট্টগ্রাম শহরে একটি কাপড়ের দোকান ও ছোট একটি জুতার দোকান নিই। আলহামদুলিল্লাহ এখন সবমিলিয়ে ভালো আছি।
🌷শুভবিবাহ🌹
২০২১ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ আমি যুগল জীবনে পদার্পণ করি।আলহামদুলিল্লাহ মা-বাবা ও পরিবারের সবার পছন্দে চমৎকার মনমানসিকতার একজন জীবনসঙ্গিনী পেয়েছি আমি। বাকী জীবন সুন্দর হওয়ার জন্য সবার দোয়া কাম্য।
🌷 প্রিয় ফাউন্ডেশনের সন্ধান 🌷
গত রমজানের পর থেকে চেষ্টা করতেছি জুতা সেন্ডেলের একটি ব্রান্ড তৈরি করতে। পণ্যের সোর্স নির্বাচন ও অন্যান্য প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করি।মার্কেটিং বিষয়ে বেশি অভিজ্ঞতা না থাকায় একটু সময় নিতে থাকি।তারই ধারাবাহিকতায় গত দুইমাস পূর্বে ইউটিউবে পণ্য মার্কেটিং এর উপর ধারনা নিতে একটি ভিডিও সার্চ করি,পেয়ে গেলাম আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটি ভিডিও। যদিও এর আগে স্যারের নামটি কখনো শুনিনি।ভিডিওটা আমাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।মানুষকে বুঝানোর সে কি সম্মোহনী শক্তি।একের পর এক ভিডিও সেশন গুলো দেখতে থাকি।একদিনেই ২০ টি ভিডিও সেশন দেখে ফেলেছিলাম।এখান থেকেই পাই আমাদের প্রিয় ফাউন্ডেশনের সন্ধান।
🌷 আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা🌷
বিভিন্ন জায়গায় শপিং করতে গেলে আমরা প্রায়সময় বিদেশি পণ্য খুজতে থাকি।আমার দোকানে এক কাস্টমার এসে একজোড়া জুতা হাতে নিতেই বলল,এটাতো বাংলা মাল,আমি চায়না জুতা খুজতেছি।অথচ প্রোডাক্টটি যথেষ্ট ভালো মানের ছিলো।দেশি পণ্যের এই অবজ্ঞা আমি স্বাভাবিক ভাবে দেখতে পারিনি। তখনই সিদ্ধান্ত নিই সম্পুর্ণ দেশীয় তৈরি জুতা সেন্ডেলের একটি ব্রান্ড তৈরি করবো। প্রিয় স্যারের শিক্ষায়,অন্তত একজন মানুষের ভাগ্য বদলাতে চেষ্টা করতেছি ইনশাআল্লাহ।
🌷আমার জীবন থেকে নতুনদের জন্য পরামর্শ🌷
জীবনে কোন উদ্যোগ নিতে গেলে সেটার আদোপান্ত জেনে নেওয়া খুব বেশি প্রয়োজন। না জেনে না বুঝে কোন কাজে হাত দেওয়া উচিত নয়।অন্যজনের পরামর্শে কিছু করা সবসময় ঠিক না।নিজের বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগানো উচিত। জীবনে সব উদ্যোগ সফল হয়না,তাই বলে হতাশ হওয়া ও হাল ছেড়ে দেওয়া একদম উচিত নয়।আমাদের মনে রাখা দরকার,ব্যর্থতা থেকেও শেখার থাকে অনেক কিছু।
🌷 অনেকক্ষণ ধরে আমার জীবনের কথা গুলো পড়ার জন্য আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা দোয়া করবেন, আমি যেন জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারি এবং সমাজ,পরিবার ও দেশের জন্য কিছু একটা করতে পারি।
🌷আমার জীবনের চলার পথে আপনাদের সাহায্য, সহযোগিতা, ভালোবাসা, দোয়া প্রয়োজন। আশা করছি আপনারা ভালোবেসে পাশে থাকবেন সব সময়। সবশেষে আপনাদের সুখী ও সুন্দর জীবন কামনা করি।
সুন্দর হোক আপনাদের আগামীর পথ চলা। এই কামনায়..........
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৫৬
তারিখ ১৯-০৮-২০২২ইং
এবিএম জুনাইদুল হক
ব্যাচ নং-১৮
রেজিনং- ১০১৯৪৯
জেলাঃ চট্টগ্রাম
বর্তমান অবস্থানঃচট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর এলাকা