আমার জীবনটা এভাবে পাল্টে দেওয়ার জন্য।
⏳⏳⏳আমার জীবনের গল্প⏳⏳⏳
হাতে বিয়ের মেহেদি শুকানোর আগেই
বাবা এক হাসপাতালে, মা আর এক হাসপাতালে।
প্রবল ঘুর্ণিঝড়ের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত আমার জীবনে এক টুকরো আশার আলো হয়ে এসেছিলো আমার উৎদ্যোগ " Miss Bekary"
আমি নারী,আমি জয়ী
আমি দৃঢ় প্রত্যয়ি প্রচেষ্টার
আমি যদি চাই সফলতার স্বাদ
কে আছে মোর পথ রুখবার
আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় প্লাটফর্মবাসি।আশাকরি সৃস্টিকর্তার অশেষ কৃপায় সকলেই ভাল আছেন,সুস্থ আছেন,প্রাণবন্ত আছেন।
আসলে উৎদ্যোক্তাদের জীবন বলতেই এমন।চ্যালেঞ্চিং আবার ইন্টারেস্টিং। উৎদ্যোক্তাগণ এতটাই প্রফুল্ল ও এনার্জেটিক থাকে যে,তারা 9-5 কাজ করেই ক্লান্ত হয়না।এরা 24 ঘন্টা কাজ করেও প্রাণবন্ত থাকে।কেননা তারা কাজ করে স্বমহিমায়, আত্মতৃপ্তিতে।ভাললাগার কাজগুলো ভালবেসে স্ব- উৎদ্যোগে গ্রহন করে,নিজের পরিচিত তৈরী করাটার শিক্ষাটা পেয়েছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব " ইকবাল বাহার জাহিদ " স্যারের মাধ্যমে।
তার প্রতিটা সেশন, ১৪ টি স্কিলস, প্রপার গাইডলাইন ফলো করেই আজ আমার উৎদ্যোক্তা জীবনের পথচলা।তাই আজ প্রিয় স্যারের এক অনবদ্য সৃষ্টি " নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন, উৎদ্যোক্তা তৈরীর কেন্দ্র " প্লাটফর্মে চলে এসেছি আমার "জীবনের গল্প " অর্থাৎ আমার " উৎদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটি সেয়ার করার জন্য।আশাকরি সকলেই শেষ অবধি সাথে থাকবেন।
আমার পরিচয়ঃ
আমি জেসমিন আক্তার। পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান। ৫ ভাইবোন মা ও বাবা নিয়ে আমাদের সংসার।
বড় হওয়ার সুবাদে, ছোট থেকেই দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ জন্মায়।বয়সের তুলনায় হটাৎ করেই যেন বেশি বড় হয়ে গেলাম।
যেন পুতুল বউ রেখে সময়ের আগেই বড় হতে হয়েছে।পড়াশুনা করার তাগিদে যেন স্কুলেই নিজের শিক্ষক হতে হয়েছে।কারন তখন যে সে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড়।
আদরের দোলায় ভাসলেও সবার আগে নিজের চেয়ে ভাইবোনদের কথা ভাবতে হত।আর বাবা মা যেখানে স্বর্গ সেখানে সবটুকুই যেন ঐ পায়ে নিমজ্জিত।
বিবাহিত জীবনঃ
প্রত্যেকটা মেয়ের মতই আমারও বেশকিছু রঙিন স্বপ্ন ছিলো।ইচ্ছা ছিল পড়াশুনা শেষ করে নিজের পায়ে দাড়াবো।নিজের চাকরি করব।একটা আলাদা পরিচয় হবে।। পরিবারের দায়িত্ব নিবো।
কিন্তু স্বপ্ন পূরন হবার আগেই হাজারো নারীদের মত বিয়ের পিড়িতে বসতে হল আমাকেও।শুরু হলো আমার নতুন পথচলা।
নারীরা কন্যারুপে বাবার সংসারে মায়ায় জড়িয়ে থাকে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নারীরা কারো ঘরের গৃহিণীতে রুপান্তিত হয়।মা বাবার মায়ার বাধন ছিড়ে দিন বদলের মত চলে তখন ঘর বদলের পালা।যেন এক রক্তের সম্পর্কের সাগর পারি দিয়ে আর এক অচেনা মানুষদের আপন করার আপ্রান প্রচেষ্টা।
সেখানে চেষ্টার কোন কমতি না থাকলেও প্রতি পদে পদে থাকে এক নারীর ভাঙ্গা আর গড়ার খেলা।
আর আমার ভাঙ্গা গড়ার খেলা তো ছোটবেলাতেই শুরু হয়েছে যখন পুতুল খেলার সময় টাও পার হয়নি।
তাই নিজেকে সবসময়ই স্ট্রং রেখে নতুন জীবনে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাই করছিলাম তখন।
কিন্তু সেখানেও যেন কালো মেঘের ছায়া ঘিরে ধরলো আমার জীবন।হাতের মেহেদির রং শুকানোর আগেই বাবা এক হাসপাতালে,মা আর এক হাসপাতালে ভর্তি।
নতুন বউয়ের কি আর সে সামর্থ আছে যে যোগ্য হাতে দুই সংসারের হাল টা ধরবে।চারদিকে ঘোর অমানিশা আচ্ছাদনে আমি পুরোই দিশেহারা। তবুও
কি আর করার মেঘের মাঝে লুকিয়ে থাকাই অজস্র কান্নাগুলো চেপে শুরু হল কাজের সন্ধান করা।
আমার নতুন পথচলাঃ
হঠাৎ করেই সবকিছু যেন উলটপালট হয়ে গেলো আমার জীবনের।চারদিকে যখন অন্ধকার দেখছিলাম ঠিক তখনই
আল্লাহ্ যেন আধারেও আশার আলোর বর্তিকা দেখান।তাইতো বাল্যবান্ধবির সহায়তায় নাম উঠল উদ্যোক্তার খাতায়।
শুরুটা রিসেলার হলেও লক্ষ্যটা ছিল অটুট,চিন্তাটা ছিল সৎ।তাইতো মাথা নত না করেই এক হাতে সেই অবলা নারী নতুন সংসারের হাল। মেয়ে হয়েও হয়েছে বাবার খারাপ সময়ের এক মাএ সম্বল।মেজ বোনটাও যেন কোন অংশে কম না।কেনই বা হবে না।চোখে যে দেখেছে হাসি কান্নার ছায়া।তাই দুই বোন মিলে শুরু করলাম যতটা সম্ভব নতুন এক লড়াই।
নতুন নতুন অভিঞ্জ উদ্যোক্তাদের পোস্ট , ভাইয়াদের গাইডলাইন ফলো করতাম ।পন্যের ছবি তোলার ধরন দেখতাম।সংসার ও উদ্যোগ এতকিছুর পরও কেন যেন আমার কাজের ভাল লাগাটা কখনও বন্ধ হয় না।
আমার উৎদ্যোগ গ্রহণঃ
রিসেলার হয়ে কাজ করার সময় অনেক বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় আমায়।তখন বুঝতে পারি,আমাকে নিজে কিছু করতে হবে।এমন কিছু যেটাতে আমার ভাললাগা আছে এবং যেটা দিয়ে আমি এগিয়ে যেতে পারবো এবং নতুন পরিচয় তৈরী করতে পারবো।
যদিও সংকোচ হচ্ছিলো " আমি পারবো তো" তবুও মনোবল টা ছিল অটুট।
মাটির ব্যাংকে থাকা মাএ ১০০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম আমার উৎদ্যোগ,আমার প্রথম পদচলা।
আমি চক্ষু লজ্জায় হাজার সমস্যা হলেও কখনও কারো কাছে হাত পেতে বসিনি।সবসময়ই নিজের মত করে চলার চেষ্টা করেছি।শুধুমাএ কাজ শেখার জন্য কতশত আপু ও ভাইদের কটু কথা শুনেছি কিন্তু কখনও মন খারাপ করিনি।
চেষ্টা ছিল আমাকে আরও নতুন রেসিপি ও রান্না শিখতে হবে।উদ্যোগের কাজ বুঝতে হবে।একটানা কাজের ফলে অসুস্থতায় কয়েকদিন কাজ বন্ধ রাখি।।সুস্থ হয়ে আবারও কাজটা করি।কেননা আলাদা রকম একটা ভাললাগা শুরু হয়ে গেছিলো কাজটার প্রতি।
এরপর বুঝতে পারলাম,আসলে শুধুমাত্র চেষ্টা করলেই হবে না আমাকে কিছু প্রশিক্ষন নিতে হবে।।এরপর অনলাইনে বেকিং এর উপর ট্রেনিং,পন্যের ফটোগ্রাফির উপর ট্রেনিং নেই ।
এরমধ্যেই নানান যায়গা থেকে অর্ডার আসা শুরু হয়।।তখন মনে হচ্ছিল আল্লাহর রহমতে হয়ত একসময় এটা দিয়েই ভাল কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।
তাইতো সপ্ন দিয়ে সাজালাম Miss Bakary এবং Faijan, s dream।যেখানে একটাই লক্ষ সাধ্যের মধ্যে প্রানপ্রিয় ক্রেতার প্রয়োজন পূরন।
প্রিয় প্লাটফর্মের যুক্ত হওয়াঃ
প্রিয় বান্ধবীর পরামর্শে যুক্ত হলাম নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন - উদ্যোক্তা তৈরির কেন্দ্র প্লাটফর্মে।যেখানে দেখলাম কিভাবে নিঃস্বার্থভাবে দেশের তরুন তরুণীদের জন্য আমাদের প্রিয় " ইকবাল বাহার জাহিদ " স্যার চেষ্টা করছেন।স্যারের জীবনের গল্প শুনে মনে হল স্যার পারলে আমরা কেন পারব না।শুরু করলাম সেশন র্চচা,ইংলিশ ক্লাস।যখন যা হত যুক্ত থাকার আপ্রান চেষ্টা করতাম।
আপু ও ভাইয়াদের জীবনের গল্পগুলো আমাকে আরো বেশি অনুপ্রাণীত করতো।তাইতো প্রিয় প্লাটফর্মের প্রতি আলাদা ভাললাগা জন্মাতে শুরু করে।আরো অনেক বেশি জানার ও শিখার উদ্দেশ্যে এবং নিজের ব্যান্ডিং করতে অনেক বেশি সময় দিতে লাগলাম এই প্লাটফর্মে।আলহামদুলিল্লাহ আমার উৎদ্যোগ এখন প্রসারতা লাভ করছে এখান থেকেই।
প্রিয় স্যার সম্পকে আমার অনুভুতিঃ
কিভাবে বিনাস্বার্থে অন্যের জন্য কাজ করা যায়,সেটা প্রিয় স্যারের সাথে পরিচিত হওয়ার পরই দেখেছি।এদেশের লক্ষাধিক বেকার তরুনদের নিয়ে স্যারের চিন্তাধারা,তাদেরকে বিনামূল্যে ট্রেনিং দিয়ে উৎদ্যোক্তা তৈরী করা।তাদের পন্য কোথায় কিভাবে সেল হবে সেটারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সন্তানদের মত এই প্লাটফর্মের প্রতিটা সদস্যকে গাইড করে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরী করে দিয়েছেন। এ যেন এক অবিস্বরনীয় ইতিহাস বাংলাদেশ।।
প্রিয় স্যারের প্রতি এভাবেই ভাললাগা,সম্মান ও শ্রদ্ধা কাজ শুরু করে।প্রচন্ড ইচ্ছে ছিলো প্রিয় স্যারকে সামনে থেকে দেখবো এবং আমার তৈরী করা খাবার স্যারকে খাওয়াবো।আর সেই অধরা স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে কেরানীগঞ্জ জোনের উৎদ্যোক্তা মেগা সম্মেলনে।
খুব নিকট হতে স্যারকে দেখার সুযোগ পাই।স্যার নিজে হাতে আমার তৈরী করা কেক কেটে খান সেদিন সকলের সামনে।এমনকি উৎদ্যোক্তা স্বীকৃতি সরুপ ক্রেস্ট তুলে দেন আমার হাতে।এ যেন এক অমায়িক মুহুর্ত ছিলো আমার জীবনে।
আমার এগিয়ে চলাঃ
কাজ ভাল হোক বা খারাপ।।আমার কাজে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। আমি যেন তৃপ্তি পেতাম । সকল কিছু ভূলের থাকার মাধ্যম যেন আমার এই কাজ।এটাই এখন আমার খুশি।আর যখন পোস্ট লিখতাম তখন নিজের মনের ভাব,সব নিজের মত করে লিখতাম।কাজকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতাম,আর এটা নিয়েই এখন খুশি আমি।।
যদিও শুরুর দিকের সেই ব্যর্থতা, হেরে যাওয়া,অবহেলা,নিন্দা,কটু কথা,ইত্যাদি গুলো নিয়ে এখন আর ভাবিনা।তবে মনে মনে বলি,আসলেই ওটা ছিলো আমার জন্য শিক্ষা । হোকনা সেটা কষ্টের কিংবা বেদনার ।
আলহামদুলিল্লাহ এখন ভাল আছি সবকিছু নিয়ে, এটাতেই ভাললাগা।আর বতর্মানে আমার অনেকটা আত্ববিশ্বাস, মনোবল ও এগিয়ে চলা এ সবকিছুই প্রাপ্তি প্রিয় প্লাটফর্ম থেকে।।।স্যারের শিক্ষা ও কিছু ভাল মানুষের সঠিক গাইডলাইনের ফলেই আজ আমি এতদুর আসতে পেরেছি।
ভাবতেই অবাক লাগে,যেই আমি ভাবতাম,আমার জীবনের আর কিছুই বাকি নেই,চারদিক অন্ধকার ,সবকিছু শেষ,সবসময় অন্ধকার একটা ঘরের কোনে বসে থাকতাম।সারাদিন কোনরকম হলেও ,রাতের নিজেকে একা ভাবতাম।
সেই আমি এখন নিজ উৎদ্যোগ পরিচালনা করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রচাস্টারত।এখন আর হেরে যাওয়ার ভয় করিনা।বরং স্বপ্ন দেখতে পারি সফলতার।
আর এই স্বপ্নটা দেখিয়েছেন প্রিয় " ইকবাল বাহার জাহিদ " স্যার।কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া প্রিয় স্যারের প্রতি,,,আমার জীবনটা এভাবে পাল্টে দেওয়ার জন্য।
আমি এই পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই এবং এই ভালো মানুষের ভীরে নিজেকে একজন ভালো মানুষ ও সফল মানুষ হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই।সবাই দোয়া করবেন।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৬৭
তারিখ ০৭-০৯-২০২২ইং
জেসমিন আকতার।
ব্যাচ-১৮
রেজি-৯৭৫৮৯
জেলা-ঢাকা
থানা-কেরানিগঞ্জ
পেজ- https://www.facebook.com/jasmin3d1b/