আপনার সন্তান ভালোবেসে যে কাজটি করছে বা করতে চাইছে তা যদি পজেটিভ হয় তাহলে তাকে আটকাবেন না।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম,
আসসালামু আলাইকুম,
🙏 পুরো লেখাটা পড়ার জন্য অনুরোধ করছি
🌷আশা করি প্রিয় ফাউন্ডেশনের সকলেই যার যার জায়গায় সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
🌷 আজকে আমি আমার জীবনের গল্প লিখব। তার আগে শত কোটি শোকরিয়া মহান আল্লাহ পাকের দরবারে, যিনি এখন পর্যন্ত আমাকে সুস্থ রেখেছেন, আমার রিযিকের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ।
🌷 কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় বাবা এবং মায়ের কাছে যারা আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখাতে এই পৃথিবীতে এনেছেন, পরম স্নেহ আর ভালোবাসার শাসনে এত বড় করে তুলেছেন। যাদের ঋণ শোক করার কথা ভাবাটাও বোকামি। যারা এখনও আমার প্রতিটি বিপদে ভরসার হাত দিয়ে আমার আগলে রাখছেন। বিশেষ করে আমার বাবা। আর আমার প্রতিটি বিপদে, প্রতিটি খারাপ পরিস্থিতিতে আমার ছোট দুই বোন ছায়ার মতো পাশে থেকে মনে সাহস আর উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভালোবাসা বোনদের প্রতি।
🌷 কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি আমাদের সকলের প্রিয় আইকন, সকলের সম্মান আর শ্রদ্ধার একজন মানুষ, লাখো তরুণ তরুণীকে নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা এমন একজন মানুষ জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যিনি না থাকলে হয়তো আজকে আমার এই লেখাটাই হতো না। এত এত ভাই বোনদের ভালোবাসা পেতাম না।
👉👉 জীবনের গল্প লিখতে গিয়ে হাত কাঁপছে। কোথা থেকে শুরু করব আর কোথায় গিয়ে শেষ করবো নিজেও বোঝতে পারছি না। জীবনের এতটুকু সময়ে যুদ্ধটা করে ফেলেছি খুব বেশি। চরম কঠিন বাস্তবতা বারবার সামনে এসে পরীক্ষা নিয়েছে ধৈর্যের। ঠিকে থাকার লড়াইয়ে পাশাপাশি বেঁচে থাকার লড়াইটা কখনও কখনও খুব বেশি কঠিন মনে হতো। জীবন এমনই একটা বৈচিত্র্যময় গল্প যেখানে কখনও ছন্দের মিল থাকে আবার কখনও কখনও থাকে না। সময় ছুটে চলে আপন গতিতে। ঝর্ণা যেমন চলার পথে কোথাও বাধা পেয়ে তৈরি করে সরোবর আবার কোথাও গহীন অরণ্য। সৃষ্টি করে গভীর খাদ,তেমন মানুষও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলার পথে জেনে না জেনে, বোঝে না বোঝে তৈরি করে কতইনা গৌরবময় সৃষ্টি, আবার কখনও কুৎসিত কদাকার বীভৎস রুপ। তেমনি কিছু সুন্দর আর বীভৎস রুপের গল্পে ভরা জীবন থেকে সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
🌷 আমার পারিবারিক জীবন ঃ- তিন বোন আর দুই ভাই, বাবা মা নিয়ে আমার পরিবার। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আমি ছিলাম সবার বড়। দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। অনেক চিকিৎসার পরে উন্নতি হয়নি তেমন। বাবা এক সময় দেশের বাহিরে ছিলেন, তারপর ধান পাটের ব্যবসা করতেন। কিন্তু কোথাও তেমন সফল হতে পারেন নি। আমার বাবার চার ভাই তিন বোন। তাদের মধ্যে আমার বাবা ছিলেন সবার বড়। আমার দাদা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিক। কোনো একটা কারনে আমার দাদা সংসারে খরচ দিতো না। তাই আমার বাবার কাঁধেই ছিলো পুরো সংসারের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার বাবা জীবনে সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনি। বিনা স্বার্থে সবার খোঁজ খবর নেয়া, খাবার সংগ্রহ করা, পড়াশোনা সবকিছু বাবা সামলেছে। বিনিময়ে এখন যা পাচ্ছে তা গল্পের মাঝখানে আনার চেষ্টা করব।
🌷 আমার পড়াশোনা ঃ- আমরা কখনও বিলাসিতা জীবন যাপন করিনি কিন্তু অভাবেও থাকিনি। সাধ্যের মধ্যে সবটুকু দিতেন আমার বাবা। পড়াশোনার প্রতি আমার বাবা বেশ দুর্বল ছিলেন। তিনি সবসময়ই চাইতেন আমরা যেনো ভালো পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। ওনি চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি আমাদের। গ্রামের একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম আমি। ছাত্রী হিসেবেও বেশ ভালো ছিলাম। কিন্তু যখন পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলাম তখন মাইগ্রেন সমস্যা বেড়ে গেলো। ঐভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে গেলাম। কমার্স নিয়ে এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট এবং বিকম করলাম।
🌷 আমার কর্মজীবন ঃ- আরও একটা বিষয় না বললেই নয়, সেটা হলো আমার বাবা অনেক বয়স হয়ে বিয়ে করেছিলেন। সঠিক সময়ে বিয়ে করলে আজকে আমার বয়সের নাতি নাতনি থাকতো 🤔। যাই আমি বড় মেয়ে হওয়ার সুবাদে আমার ছোট কাকা যিনি বি এসসি ইন্জিনিয়ার।তিনি বাড়িতে আসলেই আমাকে বলতেন, আমাকে কিছু করতে হবে, ছেলের মতো সংসারের হাল ধরতে হবে বাবার অনেক বয়স হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন থেকেই কিছু করার ইচ্ছে মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিলো। বি কম ২ য় বর্ষে পড়া অবস্থায় পরিচিত একজন কাকার হাত ধরে ইউনিসেফের ওয়াটার এন্ড স্যানিটেশন প্রোগ্রাম এর একটা প্রোজেক্ট অফিসে, অফিস সহকারী কাম একাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরি পেলাম। যদিও সেলারি খুব বেশি ছিলো না কিন্তু আমি খুশি ছিলাম কারন এতটুকুই আমি বাবাকে সাপোর্ট দিতে পারছিলাম। পড়াশোনা আর চাকরি দুইটাই সুন্দর করে মেইনটেইন করতাম। প্রাইভেটগুলো রাতে পড়তাম, বাবা গিয়ে একবার দিয়ে আসতো আবার নিয়ে আসতো। চাকরির জায়গায় বয়সে সবার ছোট হওয়ার সুবাদে সবার কাছে খুব স্নেহের ছিলাম। ওখানে নিজের কাজগুলো শেষ করে সবার কাজে সহযোগিতা করতাম কারন আমি সবসময় শিখতে চাইতাম।
🌷 আমার বিবাহিত জীবন ঃ- অবশেষে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পালা। যতকিছু বাবা মা বা স্কুল কলেজে শিখতে পারিনি বা শেখায় নি, এবার তো সেগুলোও শিখতে হবে 😢।। ২০১০ সালে বি কম ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি, চাকরিও করছি এর মধ্যে আবার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে দিলেন। আপত্তি ছিলো আমার। যদিও আমার তেমন ভালো রেজাল্ট ছিলোনা কিন্তু আমি পরিশ্রম করে এগুতে চাইছিলাম। বাবাকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছিলাম পুরো পরিবার মিলে। বিয়ে দিয়ে দিলেন আমাকে। কিন্তু পড়াশোনা আর চাকরি দুটোই নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার সাপোর্ট আমার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ছিলো। ওরা কখনও বাধা বা কোনো আপত্তি করেনি।
🌷 আমার জীবনের প্রথম খারাপ লাগা বা কষ্ট পাওয়া ঃ-- বিয়ের পর ৬/৭ মাসের মত চাকরি করতে পারলেও পরে আর সম্ভব হয়নি। আমার স্বামীর বদলি হলো শেরপুর এবং আমার দেবর তখন এসএসসি পাশ করলো। তখন আমাকে শেরপুর চলে যেতে হলো। আমার দেবরকে ওখানকার একটা কলেজে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিলো আমার স্বামী। আমি প্রথমে মানতে পারিনি কারন প্রতিটি মেয়ের নতুন বিয়ের পর তার কিছু প্রাইভেসি থাকে, নিজের মতো করে আলাদা কিছু সময় অতিক্রম করতে চায় সেই জায়গায় আমি জেলাস ফিল করছিলাম। আরও মানতে পারিনি কারন আমার দেবর বেশ উশৃংখল ছিলো, পড়াশোনায় ও ভালো ছিলো না। সব মিলিয়ে আমি মানতে পারিনি, হয়তো এটা আমার সমস্যা ছিলো। তাকে সেখানে ভর্তি করানোর পর আমি স্বাভাবিক ছিলাম কারন আমি বোঝতে পারছিলাম আমি যত যাই করি না কেনো আমার এতটুকুও দাম নেই তাদের কাছে। তাই আমি চুপ থাকার চেষ্টা করতাম। ওদের অনেক অন্যায় মুখ বোঝে সহ্য করতাম। আমার স্বামী ওর প্রতিটি কথায় আর আচরণের মধ্যে বোঝিয়ে দিতো আমি তাদের কাছে কিছুই না, ওর ভাইয়ের সমস্ত আবদার গুলো পূরন করতো, সেটা যদি কোনো ভুল বা অন্যায় আবদারও হতো তবুও পূরন করতো। উদ্দেশ্য একটাই আমাকে হেয় করা। আমার দেবরের কাছে বারবার বোঝানো হতো, আমি কিছুই না। এতে আমার মানসিক সমস্যা আরও বেড়ে যেতে থাকলো আমি আরও বেশি কষ্ট পেতে থাকলাম। রাতভর শুয়ে কাঁদতাম। কিন্তু লাভ নেই। ১০ /টাকার জায়গায় ৫০/ টাকা আর ৫০/- টাকার জায়গায় ১০০/- টাকা ওর হাত খরচ দিতো। । আমি বোঝাতাম ওটা ওর জন্য খারাপ হচ্ছে, যতবার পজেটিভ ভাবে বোঝাতে চাইতাম ততবার সে আমাকে ভুল বোঝতো, আমি নাকি ওর ভাইকে দেখতে পারিনা। কিন্তু এটা বোঝাতে পারিনি ঐ অতিরিক্ত টাকা সে ভুল পথে ব্যয় করছে। একসময় আমি ক্লান্ত হয়ে চুপসে গেলাম। আমার স্বামী যখন বোঝতে পারলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে, কিছুই করার নেই। তিনবারেও এইসএসসি পাশ করতে পারেনি, টাকার বিনিময়ে বিজিপিতে পাওয়া সরকারি চাকরিটাও চলে গেছিলো আমার দেবরের। শুধু অন্যায় আর ভুল কাজের জন্য। বেশি আদর আর বেশি হাত খরচের প্রতিদান ছিলো এটা। সব অন্যায় মেনে নেয়ার খেসারত ছিলো এটা। আমার সাথে থাকা আমার দেবরের তিনটা বছর আজও আমাকে কষ্ট দেয়, কোনোদিন ভুলবো না তিনটা বছর। আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম তিনটা বছর খুবই দুর্বিষহ করে দিয়েছিলো ওরা দুইজন মিলে। আমার তিনটা ননদও কোনোদিন আমাকে এতটুকুও কষ্ট দেয়নি যতটা আমার দেবর আমাকে দিয়েছিলো। এর জন্য দায়ী চিলো আমার স্বামী।
🌷 জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধঃ-- ২০১০ থেকে ২০১৩ অবদি ছিলো একরকম যুদ্ধ। ওটা শেষ হওয়ার পর ২০১৬ অবদি মোটামুটি ভালোই কাটছিলো কিছু পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যেই। ২০১৭ সাল জানুয়ারি মাস। আমি তখন আমার স্বামীর সাথে বি বাড়ীয়া নবীনগর থাকি। আমার ছোট ভাই শেরপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেছে। ওর নেশা একটাই খেলাধূলা। পাড়ায় বা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্রিকেট, ফুটবল যেই খেলা তাকে ডাকতো।ও খুব ভালো খেলতো, কম্পিউটারে বেশ পারদর্শী, ছোটখাটো যে সমস্যা সে সমাধান করতে পারতো। মেয়েদের সাথে কথা বলা তো বহুদূর ছায়াও দেখতে পারতো না এখনও না। যাই হোক ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে বিএসসি ভর্তি হবে ঠিক তখনই ওর মানসিক সমস্যা দেখা দিলো। হুট করেই একদিন আমাদের বাড়িতে কোনো ঝগড়া বিবাদ ছারাই ২/৩ জনকে সামান্য একটু আঘাত করলো। যাদের আঘাত করলো তাদের সাথে আমার ভাইয়ের জীবনে ২/৪ বার কথা হয়েছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু ওরা ফাকা বাড়ি পেয়ে সুযোগ পেয়ে আমার ভাইটাকে গরুর মতন মারলো। ওর শরীরকে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো, ওর মাথায় প্রচন্ড জখম করলো যেখানে ১২ টা সেলাই লেগেছিলো। কেউ এগিয়ে আসেনি, কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। কুকুরের মত মেরে ড্রেনে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রাখলো। আমার মা যখন গিয়ে তাকে টেনে তুললো তখন ওর গায়ের পাঞ্জাবিটা নাকি রক্ত মাখানো ছিলো। আমার মা তাকে বাড়িতে আনতে চাইলো কিন্তু সে বলল তার কিছুই হয়নি বলে সে সোজা দক্ষিণ দিকে চলে গেলো। এদিকে বাবা বাজারে দোকানে ছিলো। এই খবর বাবার কানে আসলো এবং যাকে মেরেছিলো তার একভাইও তখন বাজারে ছিলো সে আমার বাবাকে নিয়ে বাড়িতে গেলো। দূর থেকে শোনছিলাম আর ছটফট করছিলাম, কি করবো কিছুই বোঝতে পারছিলাম না। আমার ভাইকে তখন ঈদগাহ মাঠের এককোনায় পড়ে থাকতে দেখে একজন নিজের বাড়িতে নিয়ে একটা গামছা দিয়ে মাথাটা বেধে দিলো। জানিনা তখন আমার বাবা আর মায়ের মনের মধ্যে কি হচ্ছিল। বাবার আমার ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেলাই করিয়ে আনলো। তখন পরিচিত একজন ডাঃ বলেছিলো একটা সার্টিফিকেট নিয়ে মামলা করার জন্য। কিন্তু বাবা সেটা করেন নি।
😢😢 এখানেই শেষ নয়, ভাইয়ের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় ঐ রাতেই তাকে একটি মানসিক ক্লিনিকে ভর্তি করা হলো। বাবা আর মা পাগল প্রায়। আমার ছোট বোন পরদিনই ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসে এদিকে আমি ছটফট করছি। এই ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রতিপক্ষরা আমার চাচাতো দাদার সাথে জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে ২৬ এর একটি মামলা দায়ের করে দিলো।সবার মাথায় তখন আকাশ ভেংগে পড়লো। আমি ছাড়া তখন আর কেউ নেই ভরসা দেয়ার। আমার বাবার ভাইয়েরা তখন চুপ। সহযোগিতা তো বহুদূর বরং আমাদের উপড় আরও বিভিন্ন বিষয় তখন চাপিয়ে দিলো। আমি বাড়িতে আসলাম মামলা হওয়ার দুদিন পর। আমার বাবা বাড়িতে থাকতে পারছে না, আমার ভাই ক্লিনিকে একা। কোথা থেকে শুরু করবো কার কাছে যাবো মাথায় কিছু আসছে না। কিন্তু এগুলো থেকে বের হতে হবে সত্যি বের করতে হবে এটাই একমাত্র লক্ষ্য
ছিলো আমার। বাবার বয়স ৭০+ দুইটাই ছেলেই থেকেও নেই এটা ভেবেও ঐসব অমানুষেরা ক্ষমা করেনি আমাদের। জানিনা কতবার ঈশ্বরগঞ্জ থানা, হাসপাতাল, ময়মনসিংহ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ কোর্ট চত্বরে আনাগোণা করেছি। শুধুমাত্র মামলার কাগজে উল্লেখ করা মিথ্যা গুলো বের করার জন্য। ঐদিকে বাবা বাড়ির বাইরে থেকেও প্রতিনিয়ত এটা ভাবছে, আমরা ঠিক আছি কিনা, আমরা খাওয়ার কষ্ট যেনো না করি। বাবা এটা তোমার পক্ষেই সম্ভব।
😢😢 এভাবে ১০/১৫ দিন ছুটোছুটির পর একটু আশার আলো দেখতে পেলাম। আর ঐ কঠিন সময়ে আমার স্বামীর ভূমিকা বিশাল ছিলো। আমার একজন বোন পুলিশের এসআই , তার পরামর্শে প্রতিনিয়ত আমরা কোথায় যাবো, কার সাথে দেখা করবো, কি তথ্য সংগ্রহ করবো, সবকিছু অনেক কষ্টে সব তথ্য সংগ্রহ করে এ বোনের হাতে তুলে দিলাম। প্রতিপক্ষ ২৬ আনার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছিলো কিন্তু আমরা সত্যের পথে হাটছিলাম। অবশেষে সত্যির জয় হলো। মাত্র দুইটা হাজিরা দিয়েই মামলা ডিসমিস করে দিয়েছিলো। দিনগুলো চলে গেছে, কিন্তু ঐ সময়ে দেখেছি আমার বাবার ভাই আর বোনদের চরম নিষ্ঠুরতা। ঘরে টাকা আছে কিন্তু বাজারের মানুষ নাই। টাকা তো দূরের কথা একটাবারেরও জন্য তারা খোঁজ নেয়নি আমার বাবা আর ভাইয়ের। তোমাদের মতোন আত্নীয় দরকার নেই আমাদের। আজকাল সম্মোধন করেও কার সাথে কতা বলিনা। মামলা শেষ হওয়ার পর ভাইকে সুস্থ করার হাজারও চেষ্টা। কতবার নিরবে কেদেছি,কতবার চিৎকার করে কেদেছি হিসাব নেই। বাবার অসহায় মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। কিন্তু এর বেশি আমরা আর কি করতাম। দুই বোন মিলে অনেক চেষ্টা করেছি বাবার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনার কিন্তু সবকিছু তো আমাদের সাধ্যের মধ্যে নেই। বলতে কষ্ট হচ্ছে, যারা আমাদের এত হয়রানি করেছিলো, তারা আর আমরা একই বংশের, একই রক্তের। দিন চলে গেছে, কিন্তু ভাইয়ের দিকে তাকালে আজও মনে পড়ে সেইসব ভয়ংকর দিন আর রাতগুলো। ঐ মানুষগুলো সারাজীবন আমাদের মনে সবথেকে বেশি ঘৃণার জায়গাজুড়েই থাকবে কারন ওরা আমার বাবাকে কষ্ট দিয়েছিলো বিনা কারনে। আট মাস পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমি ফিরে গেলাম স্বামীর কাজের জায়গায়। সেখানে গিয়ে দেখি আমার জন্য আরও একটা যুদ্ধ তৈরি হয়ে আছে 😢
😢😢 সুখ যদি কপালে না থাকে ঃ-- বি বাড়িয়া ফেরত আসার পর বোঝতে পারছিলাম আমার স্বামী অফিসিয়ালি কোনো সমস্যায় আছে কিন্তু কি সমস্যা সেটা জানতে পারছিনা। বারবার প্রশ্ন করলেও সে এড়িয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টার পর জানতে পারলাম যে, তার কিছু সদস্য তাকে ধোঁকা দিয়েছে। বলা হয়নি, আমার স্বামী গ্রামীন ব্যাংকে জব করতো। কিছু সদস্যকে খোঁজ না নিয়েই টাকা বিতরন করেছিলো। যেই টাকা প্রায় ৮ লাখের কাছাকাছি। এবং ঐ টাকা তাঁকেই শোধ করতে হবে, না করলে চাকরির সমস্যা হবে। মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো, পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যাচ্ছিলো, অল্পক্ষণের মধ্যে মনে হচ্ছিল প্রাণটা বের হয়ে যাবে। কোনোভাবে নিজেকে স্থির করলাম কারন এই কথাগুলো হচ্ছিল আমার স্বামীর বসের সাথে। কোনকিছু না ভেবেই পুরো টাকা ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলাম। স্যারকে বললাম আমার দুটো মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমাকে যেনো একটা মাস সময় দেয়া হয়। তিনি রাজি হলেন। তারপর শুরু হলো টাকা মেনেজ করার মতো আরও একটা কঠিন যুদ্ধ। স্বামীর সাথে পুরো টাকার কথা বলতেও পারচিলাম না কারন সে বলেনি ঐটাকার কথা। আমি অন্যভাবে জেনেছি ওটা জানলেও সে রাগ করবে। বলবে, আমি ঘোড়া ডিংগিয়ে ঘাস খাই। তার কিছু থাকুক না থাকুক ঘিলু ভর্তি ইগু আছে বেশ। তাছাড়া আরও একটা বিষয় নিয়ে ঐ সময়ে ডিপ্রেশনে ছিলাম যা আমি বলতে চাইনা। সবমিলিয়ে আমার পরিস্থিতি বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যাই হোক একটু একটু করে ছোট হাজবেন্ডের থেকে শুরু করে সকল আত্নীয় মিলিয়ে এক মাসের মধ্যে মোটামুটি পুরো টাকাটা মেনেজ করে দিলাম। সময়টা মোটেও অনুকূলে ছিলো না, নানান বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছিলো, টাকাও দিচ্চিলাম। শরীর থেকে এক এক করে সমস্ত গয়নাগুলোও অবশেষে খুলে দিলাম। চাওয়া একটাই ছিলো হয়তো বদলাবে আমি যেইটা চাইছি। বদলায়নি কোনোকিছু কিন্তু পুরুষ্কার হিসেবে পেয়েছি অগণিত টাইটেল। যা ভেতরে আজও আছড় কাটে।সব টাকা দেয়ার পর পর আর সহ্য করতে পারছিলাম না, বাবার বাড়িতে চলে আসলাম। এখানে এসে বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দিলাম। বাবার বাড়ি থেকেই আমার বাবা মেয়েকে নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে থাকলো। ২০১৯ এর মাঝামাঝি অবদি অতিক্রম করলাম এই কঠিন পরিস্থিতি।এর মধ্যে আমার বর পেনশনের আবেদন দিয়ে সব ঘুছিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ চলে আসলো, বাসা ভাড়া নিলাম। সে বেকার আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছিলাম দিন দিন। ওদিকে যাদের থেকে টাকা হাওলাত করেছি তাদেরকে ফেরত দিতে হবে, প্রতিমাসে বাসা ভাড়া, সংসার খরচ, প্রতিমাসে ১৬ হাজার টাকার কিস্তি। জানিনা কোথা থেকে কিভাবে সামলেছি।
😢😢 বাস্তবতা যখন চরম পর্যায়ে ঃ-- ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে আমার স্বামী র পেনশনের টাকা আসলো। কোনোকিছু না ভেবেই পুরো খরচের কথা চিন্তা করে সব টাকা আমার ছোট ভগ্নিপতির ফ্যাক্টোরিতে বিনিয়োগ করলাম। অনেক আশা নিয়ে, এবার দিন বদলাবে আস্তে আস্তে।আমার বর তখনও বেকার ছিলো। মার্চ মাসে করোনায় পুরো দেশ যখন লকডাউনে তখন ফ্যাক্টোরি বন্ধ। কিন্তু আমার ভগ্নিপতি জানতো যে সে দিলেই আমি খেতে পারবো, চলতে পারবো। কিন্তু তারও কোনো উপায় ছিলো না। খাওয়ার কষ্ট করেছি অনেক কিন্তু সে প্রতি মাসেই ১৫/২০ হাজার টাকা দিতো। এটা দিয়ে আমার চলতে কষ্ট হতো কারন ঋণের চাপ ছিলো প্রচুর। এক নির্মম কঠিন সময়, যা সওয়া আর বলা কোনোটাই সম্ভব ছিলো না। একটা বছর কেটে গেলো এভাবেই। ২০২০ সালটাও জীবনে ভুলার মত না, ভুলা সম্ভবও না।
🌷🌷 উদ্যোগতা জীবনে পা রাখা ঃ-- ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে আমি উদ্যোগতা জীবনে পা দিয়েছি। সফল হতে পারিনি কিন্তু হতাশ হইনা কখনও। সংসার দুই মেয়ে সামলে নিজের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এই জায়গায় আমি আমার স্বামীর কাছে কৃতজ্ঞ, কারন সে আমার কাজের জায়গায় শতভাগ পজেটিভ এবং সাপোর্ট দিচ্ছে। সাথে আমার পরিবার, আমার ছোট দুই বোনের উৎসাহ আর ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সব সামলানো যখন কঠিন মনে হচ্ছিল তখন আমার বরকে বলেছিলাম কাজটা ছেড়ে দিবো। তখন সে বলেছিলো, অনেক কষ্ট করে একটা পরিচিতি তৈরি করেছো, হুটহাট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিও যা ক্ষতির কারন হয়। আমার সেদিন মনে হয়েছিলো আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ।
🌷🌷 প্রিয় ফাউন্ডশনে যুক্ত হওয়া ঃ-- নিজের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক ভাইয়া এবং আপুর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার।আমার খুব প্রিয় একজন আপু Maksuda Akter আপুর কাছে প্রথম এই ফাউন্ডেশনের নাম শুনি। তারপর আর একজন ভাইয়ার মাধ্যমে প্রিয় ফাউন্ডেশনে রেজিষ্ট্রেশন করে নেই।
🌷🌷 প্রিয় ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্তি ঃ-- ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্তির হিসাবটা বেশ বড়। এত এত ভালোবাসা আর সহযোগিতার হাত পাবো এটা কল্পনাও করিনি। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো, যখন ডিপ্রেশনের চরম সীমানায় পৌছালাম তখন রহমতের দূত হয়ে আসলো আমার ফাউন্ডেশনের একজন প্রিয় মুখ Siddekun Simla আপু। আপুর কাছে সারাজীবন ঋণী থাকবো কারন তিনি যে আমার জীবনকে কতটা পজেটিভলি পরিবর্তন করে দিয়েছেন সেটা কল্পনার বাইরে। কৃতজ্ঞতা আরও অনেক ভাই এবং আপুর কাছে, যাদের কাছে প্রতিনিয়ত শিখছি একজন মানুষ কিভাবে হতে হয়, নিজের কাজ নিয়ে কিভাবে সামনে যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ফাউন্ডেশনের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
🌷🌷 আমার বর্তমান পরিস্থিতি ঃ-- আমার বর্তমান পরিস্থিতি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আল্লাহ পাক মানুষকে সবসময় কষ্টে রাখেন না। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের জুলাই অবদি তিনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন, অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন, বারবার মচকে গেছি কিন্তু ভেংগে পড়িনি কখনও। কষ্ট পেতে পেতে, কান্না করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। কিন্তু ভরসা ছিলো আল্লাহর উপড় আর বিশ্বাস ছিলো নিজের উপড়। আমার স্বামী এখন গার্মেন্টস এক্সোসরিজ নিয়ে বিজনেস করছে,নিজের দুইটা মেশিন আছে।সে এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক পজেটিভ। একসময় অল্পতেই কান্না করতাম, টেনশন করতাম, হতাশ হতাম। কিন্তু বর্তমানে কোনো হতাশা বা টেনশন আমার আশেপাশেও আসতে পারেনা। নিজেকে আর নিজের কাজকে ভালোবাসি। নিজের সিদ্ধান্তকে বেশি গুরুত্ব দেই।
🌷🌷 আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঃ-- নিজের বিজনেস নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। একজন ভালো আর পজেটিভ মানুষ হতে চাই। এক সময় সুইসাইড করতে চাইতাম। সুইসাইড করতে যাওয়া মেয়েটাই সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ টিমের সাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। এটা সবচেয়ে বড় পাওয়া। মানুষের জন্য কাজ করতে, মানবতার কল্যানে নিজেকে শামিল করতে চাই।
🌷🌷 সবার জন্য তিনটা বার্তা ঃঃ
👉 ১/ সকল বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে -- আপনার সন্তান ভালোবেসে যে কাজটি করছে বা করতে চাইছে তা যদি পজেটিভ হয় তাহলে তাকে আটকাবেন না। আমার ভাই খেলতে ভালোবাসতো কিন্তু আমার বাবা শুধু পড়াশোনা জন্য পাগল ছিলো যার রেজাল্ট ভালো হয়নি।
👉 ২/ সকল বড় ভাইদের উদ্দেশ্যে ঃ-- আপনার বউ কেমন সেটা আপনি ভালো বোঝবেন। আপনার বউ যদি আপনার পরিবারের কারও সাথে ঝগড়া অশান্তি না করে, বেয়াদবি না করে, আপনার আর্থিক বিষয়ে কথা না বলে বলে, সর্বপোরি সে যদি পজেটিভ হয় তাহলে তাকে রেসপেক্ট দেয়ার চেষ্টা করুন। তার সাথে পাংগা দিতে গিয়ে, তাকে ছোট বা হেয় করতে গিয়ে আপনার ছোট ভাই বা বোনকে এতটাও প্রশয় দিবেন না যে, তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়। সে সম্মান করতে ভুলে যায়, সে কোনো অন্যায় কাজ করতেও দ্বিধা করে না ।
👉👉 ৩/ সকল স্বামীদের উদ্দেশ্যে ঃ-- আপনার বউ কিসে খুশি আর কিসে অখুশি সেটাও আপনার থেকে ভালো আর কেউ জানবে না। সে যদি টাকা বা গয়নার পাগল হয় সেটা যেমন আপনি বোঝবেন, তেমনি সে শুধু অল্প কিছু পেয়ে খুশি কিনা সেটাও আপনি বোঝবেন। আপনার পাশের বাসার বউটা শ্বশুর, শ্বাশুড়ি দেখতে পারে না, দেবর ননদ দেখতে পারে না, সংসারে খরচ দেয়া দেখতে পারে না, সেইটা দেখে আপনার বউও এমন করতে পারে বা হতে পারে এটা ভেবে তেমন কিছু আচরণ করবেন না, যাতে তার সুন্দর মনটা নষ্ট হয়ে যায়।
🙏কেউ আমার কথাগুলো অন্যভাবে নিবেন না। জীবনের প্রতিটি ধাপে শিখেছি এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েই শিখেছি তাই শেয়ার করা।
🌷 বিদায় নিচ্ছি সবার থেকে। আমার লেখায় কোথাও কোনো ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যদিও লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেছে তবুও সবার কাছে অনুরোধ পুরোটা পড়বেন। হয়তো একঘন্টায় লিকে ফেলেছি কিন্তু সময়গুলো তখন খুবই কঠিন এবং নির্মম ছিলো।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৭৩
তারিখ ১৯-০৯-২০২২ইং
🌷🌷 আমি জাফরিন সাথী
🌷🌷 ব্যাচ নং --১৬
🌷🌷 রেজিষ্ট্রেশন নং -৭৯৪২৭
🌷🌷 নিজ জেলা ময়মনসিংহ
🌷🌷 উপজেলা ঈশ্বরগঞ্জ
🌷🌷 ব্লাড গ্রুপ এবি পজেটিব
🌷🌷 কাজ করছি সব ধরনের পোশাক আইটেম নিয়ে।
👉👉আমার পেইজ Afra fashion ghor