সময়কে বদলাতে হয় নিজের চেষ্টায়
আসসালামু আলাইকুম
আমার জীবনের গল্প শেয়ার করলাম । ভালোবেসে
সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো.....
সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর প্রতি। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন । সুস্থ জীবন দান করেছেন । শোকর আলহামদুলিল্লাহ!
দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি তার পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগনের প্রতি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর , পথপ্রদর্শক, শিক্ষক, লক্ষ তরুণ-তরুনীর স্বপ্নদ্রষ্টা Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে ভালোবাসার প্লাটফর্ম "নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন" তৈরি হয়েছে।
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি #নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প প্লাটফর্মের সকল দায়িত্বশীল ও আজীবন সদস্য প্রিয় ভাই-বোনদের প্রতি।
জীবনের গল্পঃ
একজীবনে মানুষের থাকে হাজারো লাখো স্মৃতি , থাকে অনেক অনেক দুঃখ - সুখের ঘটনা । সবকিছু যেমন বর্ণণা করা যায় না। সব গল্পগুলো ও গল্প হয়না।
গল্প সেটাই....
যে গল্প শুধু অশ্রুজলে সিক্ত নয় , প্রাচুর্য্যের অহমিকায় ভরপুর নয় , হার মেনে নেওয়া নয় , যে গল্পের বাঁকে বাঁকে থাকে লাখো লাখো মূহুর্তের সংগ্রাম , ত্যাগ , নির্মমতা । দুঃখ স্মৃতিকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা , মুক্তি , গৌরব , সাহসিকতা , সফলতা । সেটাই আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প ।
জন্ম ও শৈশব :
আমার জন্ম হয় নানাবাড়ি বিশ্বনাথ কান্দিগ্রাম জমিদার বাড়িতে । আমি মা - বাবার ১ম সন্তান এবং আমার ছোট পাঁচ ভাই ।
আমার নানুর ছিলেন তিনি মেয়ে । সেই কারণে আমার জন্মের সময় নানু ভীষণভাবে চাইছিলেন একটা নাতির মুখ দেখবেন । তবে নাতি না হলেও একারনে আমাকে আদর যত্ন করতে নানা - নানু কোনো কমতি রাখেননি । এবং বুঝতে শেখার বয়স থেকেই দেখেছি দাদাবাড়ির আত্নীয় স্বজনের কাছে ও আমি অনেক আদরের ।
আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন আমার খালামনি । জীবনের যেকোনো প্রয়োজনে আমি তাকে পেয়েছি একেবারে বান্ধবীর মতো ।
আমার আব্বা সরকারি চাকরি করতেন । মধ্যবিত্ত পরিবার । তবুও আব্বা কখনো আমাদের চাওয়া পাওয়ায় অভাব বা অপূর্ণতা রাখেন নি । বিলাসীতা নয় , প্রয়োজনীয় সব আবদার মিটিয়েছেন যথাসাধ্য ।
চারিদিকে এতো এতো ভালোবাসার ছড়াছড়ি এরপরও কেনো জানি আমার শিশুসুলভ মনে মা - বাবার আদর আরেকটু বেশী পাবার আকাঙ্ক্ষা হাণা দিলো এবং এই অভাববোধ ছোটবেলায় আমাকে তীব্রভাবে দুঃখী করে তুললো।
এবং একদিন এই অভিমানের জের ধরেই ভূল পথে পা বাড়ালাম। যে ভূল করার পর হয়তো চাইলে সহজে আর ফিরে আসা যায় না বরং মা বাবাকে কস্ট দেয়ার কারণে আজীবন অনুশোচনার আগুনে পোড়তে হয় ।
বিবাহিত জীবনঃ
১৯৮৭ সালের ১৬ই নভেম্বর বাবা মায়ের অমতে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেললাম বোম্বের নায়ক কুমার গৌরবের মতো দেখতে একজন"কে ।
আমি যখন ক্লাশ এইট / নাইনে পড়ি , দেখলাম আমার চাচাতো , ফুপুতো বোনেরা যাদের বিয়ে হয়েছে তারা সবাই অনেক সুখী । আমার আব্বা - আম্মাকে ও সবসময় খুশী থাকতে দেখেছি। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা , জটিলতা কোনোদিন দেখিওনি , শিখিওনি । ভাবলাম বিয়ের পর বোধহয় সবাই সুখীই হয় ।
বাস্তবের চিত্র সবসময় একরকম হয়না । সবার জীবন কখনোই স্বপ্নের মতো সুন্দর হয়না।অধিকাংশ মেয়েদের জীবনেই থাকে নানান ঘাত প্রতিঘাত । অনেক চড়াই উৎরাই পার করে তাদেরকে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে হয় ।
আমার সংগ্রামী জীবনের শুরু হলো বিয়ের পর। ভালোবেসে বিয়ে করলেও ভাগ্যে জুটলো প্রত্যাখান । আমার নিখাঁদ ভালোবাসা নিষ্পেষিত , কলঙ্কিত হলো প্রতারণার কালিমায় । আর্থিক দৈন্যতা , ভালোবাসার দৈন্যতা মাকড়শার জালের মতো আমাকে ঘিরে ফেললো । লেখা পড়া চালিয়ে যেতে চাইলেও সেটা আবেগর নির্বুদ্ধিতা কিংবা সাহসিকতার অভাবে হয়ে উঠলো না।
একে একে চাঁদের মতো সুন্দর ফুটফুটে চার মেয়ের মা" হলাম । নিজের জীবন যেমন তেমন করে কাটালেও মেয়েদের চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হলো ।
আমি খুব শৌখিন ছিলাম । নিজের শখ পূরণ করতে পারিনি কিন্তু মেয়েদের বেলায় কোনোরকম কম্প্রোমাইজ করতে আমি রাজী নই ।
বড়ো মেয়ের বয়স যখন দশ বছর ,তখন তাকে দেখতে যাতে সবার থেকে আলাদা লাগে এজন্য খালামনির কাছ থেকে সেলাই মেশিন চেয়ে এনে নিজেই নিত্য নতুন ডিজাইনের জামা সেলাই করে মেয়েকে পড়াতাম। যা দেখে একসময় এলাকার কিছু মহিলারা ও আমার কাছে অর্ডার দিতে শুরু করলো । আমার ও একটা আয়ের একটা উৎস বের হয়ে আসলো । কিন্তু কয়েকবছর পর এই চেষ্টায় পড়লো গুড়েবালি।
অসুস্থ হয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলে তিনি আমাকে সেলাই করতে নিষেধ দিলেন । আমার নাকি কিডনীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে । বাধ্য হয়ে সেলাইয়ের কাজ ছেড়ে দিতে হলো ।
জীবনে কখনো এমনো হয়েছে , মেয়েদের টিউশন ফি দেয়ার জন্য বাসার কাজের বুয়াকে ছাঁটাই করে আমাকে সেই কাজ করতে হয়েছে । না , আর্থিক দৈন্যতার কারণে নয় । আমি আমার মেয়েদের জন্য সব কস্ট সহ্য করতে পারি । এই দুর্বলতাকে শর্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো আমাকে কস্ট দেয়ার জন্য ।
নিজের গুরুত্ব বুঝতে বুঝতে জীবনের দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশটি বছর হারিয়ে বুঝতে পারলাম জীবনকে এভাবে ফুরিয়ে যেতে দেওয়া উচিত না । এরপর থেকেই আমার স্বপ্নেরা আবারো নতুন করে জাল বোনা শুরু করলো ।
বুঝতে শিখলাম শেখার কোনো বয়স নেই । মানুষ চাইলে যে কোনো বয়সে এসে যে কোনো কাজ করতে পারে। বয়স কোনো বাঁধা নয় , কেবল একটা সংখ্যা মাত্র।
উপলব্ধি করলাম জীবনে নিজেকে ভালোবাসার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী । না " বলার প্রয়োজনকে কখনো তুচ্ছ করা উচিত নয়। স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই টিকে যায় অস্তিত্ব । অভিযোগের চেয়ে স্কিল ডেভোলপ করা হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা ।
উদ্যোক্তা জীবনঃ
২০১৮ সালে আমার মেজ ভাই কর্নেল মাসুদ পারভেজ চৌধুরীর বউ রিমি" আমার হাতে বিশ হাজার টাকা তোলে দিয়ে বললো দিদি" শুরু করেন এখনই । সেদিন হুটহাট করে শুরু করলেও কোন ধরনের প্লানিং , বিজনেস আইডিয়া না থাকায় এ যাত্রায় আমাকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হলো । এভাবে শুরু এবং থেমে যাওয়ার একপর্যায়ে আর আগাতে পাচ্ছিলাম না । নিরুপায় হয়ে একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম উদ্যোগ বন্ধ করে দেয়ার ।
প্রিয় গ্রুপে যুক্ত হওয়া :
খুব সম্ভবত দশ / এগারো মাস আগে ইউটিউব এ একদিন হঠাৎ ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটা সেসনের ভিডিও দেখে আকৃষ্ট হয়ে যুক্ত হলাম ভালোবাসার গ্রুপে । মূলতঃ অনুভব করলাম "নিজের বলার মত একটা গল্প" এই নামের প্রতিই রয়েছে আমার একটা বিশেষ ধরনের দুর্বলতা ।
স্যারের যে কথাগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে
*জীবনে বলার মতো একটা গল্প থাকা দরকার।
*স্বপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন এবং লেগে থাকুন...... সাফল্য আসবেই।
স্বপ্ন দেখছি , লেগে আছি । বিশ্বাসে স্হিরতা এসেছে , পরিশ্রম সফলতা বয়ে আনবে এই বিশ্বাসে এগিয়ে যাচ্ছি । ইনশাআল্লাহ!
আমার স্বপ্ন আমি যেনো একদিন দেখতে পারি প্রতিটা নারী নিজেকে জয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে ও স্বাবলম্বী হওয়া শিখেছে ।
প্রিয় গ্রুপ থেকে প্রাপ্তিঃ
#নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে পেয়েছি ।
✓ভালোমনের অনেক ভাই ও বোনদেরকে
✓একে অপরের সহযোগী হয়ে চলতে শিখেছি।
✓একজন ভালোমানুষ হয়ে বেঁচে থাকার আগ্রহ বেড়েছে ব্যাপকভাবে ।
গল্পের শিক্ষাঃ
★মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায় না। মা-বাবার দোয়া সবচেয়ে বড় রহমত ও বরকত।
★জীবনে বড় হতে হলে ত্যাগী ও পরিশ্রমী হতে হবে।
★চাইলেই যেকোন খারাপ অবস্থা থেকে নিজেকে তুলে আনা যায়, দরকার শুধু নিজের সাথে কমিটমেন্ট।
কেনো নিজের জীবনের গল্প বলাঃ
কারোর কাছে বেশী প্রত্যাশা করা উচিত নয় । এতে নিজেকে অনাদর , অবহেলা , তুচ্ছ জ্ঞান করা হয় । নিজেকে ভালো রাখার জন্য , পরিস্থিতি বদলানোর জন্য দরকার শুধু একটুখানি সাহস। ভয়কে জয় করার দৃঢ় মনোবল আমাদেরকে অতোটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে যা হয়তো আমরা কোনোদিন স্বপ্নে ও কল্পনা করিনি ।
একসময় একই শহরে বাবার বাড়ি থাকার পরেও আমি মাসের পর মাস বেড়াতে যেতে পারতাম না। আব্বা -আম্মাকে একনজর দেখার জন্য ছটফট করতাম । সংসারের শতো নিয়ম - নিষেধ , শাসন- বারণ ,আমাকে শৃঙ্খলিত করে ফেলেছিলো । আত্নীয় - স্বজন , বন্ধু - বান্ধব সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলাম ।
আজ আমার জীবনে এসেছে স্বাধীনতা , এসেছে মানসিক মুক্তি , প্রশান্তি । আমি একা একা ঢাকায় গেলে আসার সময় আমার হাসব্যান্ড আমাকে রিসিভ করতে সিলেট এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকে । মিট আপ এ যাবো বললে নিজে গিয়ে দিয়ে আসে । এমনকি এবার আমার উদ্যোগের ইনভেস্ট এর টাকাটাও তার কাছ থেকেই লোন হিসেবে নিয়েছি । এই স্বাধীনতা আমার অর্জন , জীবনের গৌরবময় প্রাপ্তি।
সময়কে বদলাতে হয় নিজের চেষ্টায়। ঘড়ির কাঁটা থেমে গেলে আমরা যেমন ব্যটারি চার্জ করি তেমনি প্রতিদিন নিজেকে ও চার্জ দেওয়া দরকার। নিজে ভালো থাকলেই ভালো থাকবে সবকিছু ।
আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা সময় নিয়ে ধৈর্য্য ধরে আমার গল্পটা পড়ার জন্য । আশা করছি পাশে থাকবেন
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৭৫
তারিখ ২৫-০৯-২০২২ইং
আমি ফারহানা চোধুরী
কাজ করছি নিজের ডিজাইন করা শাড়ি , থ্রিপিস , ব্লকের বেডশীট , পাকিস্তানি ড্রেস এবং হোমমেড ফুড নিয়ে ।
পেজঃ House of Norah &
Mom's kitchen Table
ব্যাচ:১৭
রেজি:৯১৫১৪
জেলা : সুনামগঞ্জ