আমি আমার মা-বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে পেরেছি
"আসসালামু আলাইকুম"
🌷আমার জীবনের গল্প🌷
👉 আমি প্রথমে স্মরণ করি মহান আল্লাহ তায়ালা কে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অনেক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার মা-বাবার প্রতি,হাজারো কষ্টের মধ্য দিয়ে আমাকে লালন-পালন করেছেন। অনেক ভালোবাসি আমার মা বাবাকে। সেই সাথে ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা ও বাবা 🤲
❤️অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই,, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের মেন্টর জনাব "ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যার কে এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য।
🌹জীবন এমনি এক বৈচিত্রময় গল্প যেখানে কখনো ছন্দের মিল থাকে আবার কখনো থাকে না। যা লিখতে চাইলে কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে তবু জীবনের গল্পটা শেষ হবে না, সে তো ফুরিয়ে যাবারও নয়।🌹
🧍আমি রুবেল রানা, উপজেলা পাংশা,জেলা রাজবাড়ী। ১৭ তম ব্যাচ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮৪৫৩৩।
👉 আমি অত্যান্ত দরিদ্র পরিবারের একজন সন্তান।আমার বাবা পেশায় একজন কৃষক। আমাদের নিজস্ব কোন জমি জমা নেই।আমার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করে। মা,বাবা আমি ও আমার বোন নিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার। আমি দেখেছি জীবনে কষ্ট কত প্রকার ও কি কি? আমরা ছোটবেলায় শীত ও খাবারের জন্য অনেক কষ্ট করছি 😢 সকালে যদি একদিন পেট ভরে খাবার খেতাম,হয়তো দুপুরের পেট ভরে খাইতে পারিনি। আমার মনে পড়ে আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। আমাদের ঘরে চাউল নেই।
আম্মুর সাথে গম নিয়ে গেছি মিলে গম ভাঙ্গানোর জন্য,যাওয়ার পর দেখি বিদ্যুৎ নেই। সেই গম নিয়ে আম্মুর সাথে আবার বাড়ি চলে এসেছি। পেটে ক্ষুধা কি আর করবে আম্মু!পরে দেখি আম্মু গমের খিচুড়ি রান্না করছে। সেই খিচুড়ি খেয়ে আমরা সবাই পেটের ক্ষুধা নিবারণ করি। ঈদ মানে খুশি,ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।আমরা গরিব হওয়াই কখনো ঈদে নতুন কাপড় আমাদেরকে কিনে দিতে পারেনি। সবাই ঈদে নতুন জামা কাপড় পড়ে, ঈদগাহ যাইতো। তখন আমরা মন খারাপ করে,কান্না করতাম। আব্বু আম্মু বলতো সামনের ঈদে নতুন জামা কাপড় কিনে দিবো।কিন্তু সেটা সেটা আর কখনো আমাদের কপালে জুটতো না 😥😥
👉সব থেকে বড় কথা পেট ভরে তিন বেলা খাবার খেতে পারেনি,নতুন জামা কাপড় কিভাবে পাব। এভাবেই হজারো কষ্টের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে আমাদের দিনগুলো 😞
আমার আজও মন পড়ে সেই রাতের কথা, যে রাতের জন্য কত দিন ও রাত সবাই অনেক কষ্ট করেছি। বলি এবার সেই রাতের কথা :-
একদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি বই পড়ছি । হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হল,তখন আমার একটু ভয় করছিল এটা ভেবে যে, আমাদের ঘরটা পড়ে না যায়। গ্রাম্য ভাষায় বলে আমাদের দু চালা বাংলা টিনের ঘর,যা বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি করা। এটা ভাবতে ভাবতে কিছু সময়ের মধ্যে আমাদের স্বপ্নের ছোট ঘরটি ভেঙে পড়ল,সবাই চিৎকার করছে😓😓 ঘরের ভেতর থেকে কিভাবে বের হবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ভাঙ্গা ঘরের কি আর পথ খুঁজে পাওয়া যায়। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দাদিদের ঘরে আশ্রয় নিলাম। আম্মু খুব কান্না করছে,এটা দেখে আমিও কান্না করছি😓😓
ঝড় বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে ভাঙ্গা ঘরে যেয়ে দেখি আমাদের ঘরের প্রায় সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। আমার অধিকাংশ বই খাতা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তখন নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মনে হয়েছিল। ঐ রাতে সবাই মিলে ঘর থেকে সবকিছু বের করি, রাতের সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা এখনো আমার চোখে ভাসে, দুঃখ কষ্ট নিয়ে ওই রাতে সবাই মিলে দাদির ঘরে কাটালাম।
সকালে আমার স্কুল।কিভাবে কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না,প্রায় সব বই তো নষ্ট হয়ে গেছে। আমি কিভাবে লেখাপড়া করব, আর হয়তো আমার লেখাপড়া করা কখনোই হবে না। আব্বু আম্মুকে বা কিভাবে বলবো বই কিনে দেওয়ার কথা। নিজেদের নেই থাকার জায়গা বই কেনা সেতো বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নেই। ঐ ভাবেই কিছুদিন স্কুলে যাওয়া আসা করতে থাকলাম। ক্লাসের বন্ধু বান্ধবীদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তাম। কখনো আবার তাদের বাড়ি গিয়ে খাতায় লিখে নিয়ে আসতাম। এভাবে চালিয়ে যেতে থাকলাম আমার লেখাপড়া ✍️✍️
শিক্ষাজীবন :আমি ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো ছিলাম।আমি গরীব ঘরের সন্তান হওয়ার জন্য স্কুলের শিক্ষক এবং এলাকার অনেকেই আমাকে ভালোবাসতো।আমি যদি কখনো আমার আব্বু আম্মুর কাছে খাতা-কলম কেনার জন্য টাকা চাইতাম। বলতো মনি আজকের দিন কি যাবে না,দুইদিন পরে কিনলে হয় না।মাঝে মাঝে ক্লাসে লেখার জন্য অন্য কারো কলমের অপেক্ষায় থাকতাম,কারো লেখা শেষ হলে কলমটা নিয়ে আমি লিখব।✍️✍️
অনেকেই দেখছি নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে, আমারও মন চাইতো প্রাইভেট পড়ার জন্য। কিন্তু আর্থিক সংকটের জন্য নিয়মিত প্রাইভেট পড়া হয় নাই। আমার আম্মু কাঁথা সেলাই করতো,আর সেই টাকা দিয়ে পরীক্ষার আগে কিছুদিন প্রাইভেট পরতাম। কিছু দুঃখ কষ্ট সুখের মধ্য দিয়েই চলে গেল জীবনের কিছু দিন গুলি।
আমি ক্লাস পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিলাম। সবাই অনেক খুশি, অনেকে বলেছিল গোবরের ভেতর পদ্ম ফুল ফুটছে। পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। কিছুদিন লেখাপড়া করলাম,সবাই স্কুল ড্রেস পড়ে বিদ্যালয়ে আসে। এগুলো দেখে আমার খুব মন খারাপ থাকতো, আমি আব্বু আম্মুকে বললাম আমার একটা স্কুলড্রেস দরকার,স্কুলে সবাই স্কুল ড্রেস পরে আসে। অনেকে বিভিন্ন রকম কথা বলে,আমার এই গুলো শুনতে একদম ভালো লাগেনা।কিছুদিন পর একজন দর্জি আমার পোশাকের মাপ নেওয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে এসে,পোশাকের মাপ নিয়ে গেল। হঠাৎ অনেকদিন পর আমি আমার নতুন পোশাক পেলাম,স্কুল ড্রেস পেয়ে আমি তো অনেক খুশি। 🤗🤗
✍️ এভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর। এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, সবার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে পাস করলাম। আর্থিক সংকটের কারণে এসএসসি পাস করার পর থেকে আমি বাড়িতে টিউশনি শুরু করলাম। হাঁস মুরগি কবুতর পালন, বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম, মায়ের ভালোবাসা ও সবার সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবার সচ্ছলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি ও মাঝে মাঝে অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম।একসাথে এতকিছু করতে নিজের অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু কখনো হাল ছাড়িনি-গরিব বলে কথা।
✍️ টেস্ট পরীক্ষা নেওয়ার সময় হয়ে গেল। সবাই নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে শুরু করে দিল। আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না, তখন আম্মু বলল কিছু দিন প্রাইভেট পড়তে। আমি বললাম আম্মু কলেজে প্রাইভেট পড়তে অনেক টাকা প্রয়োজন, তারপরেও ১৫ দিনে মাস হয়। মা বললো ভাল রেজাল্ট করতে হলে প্রাইভেট পড়তে হবে। আমিও মনোযোগ দিয়ে প্রাইভেট পড়া শুরু করে দিলাম। কিছুদিন পর টেস্ট পরীক্ষা হল, টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। উত্তীর্ণ হওয়ার পর জানতে পারলাম ফরম ফিলাপ এর জন্য অনেকগুলো টাকা প্রয়োজন।এত টাকা কোথায় পাব,কিভাবে জোগাড় করবো টাকা।অবশেষে কিছু কবুতর ও মুরগি বিক্রি করে এবং পরিবার থেকে কিছু টাকা নিয়ে ফরম ফিলাপ করি।তারপর কেটে গেল কয়েকটি মাস, এইচ এস সি পরীক্ষা দিলাম সকলের দোয়া নিয়ে।পরীক্ষা শেষ হল, টিউশনি আবার শুরু করে দিলাম। হঠাৎ একদিন রেজাল্ট দেবে শুনতে পেরে মনে অনেক ভয় কাজ করতেছিল। আমি কি ভালো রেজাল্ট করতে পারবো কিনা।বিকালে জানতে পারলাম আমি গোল্ডেন এ ৫+ প্লাস পেয়েছি।আমি তখন অনেক খুশি। আমার আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিল,সাথে আমিও। আমি আমার মা-বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে পেরেছি 🤗
✍️ আর্থিক সংকটের কারণে অনার্সে ভর্তি হতে পারেনি।তবে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাই। সকলের ভালোবাসা ও দোয়ায় এবং নিজের চেষ্টায় ডিগ্রি পাস করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
👷 কর্মজীবন :বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সদস্য। বর্তমানে রমনা থানায় কর্মরত আছি। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে চাকুরীটা পেয়েছিলাম।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৮০
তারিখ ০২-১০-২০২২ইং
🌷 নাম:রুবেল রানা
🌷 এগ্রো ফোরাম সদস্য
🌷 ব্যাচ:১৭
🌷 রেজিস্ট্রেশন :৮৪৫৩৩
🌷 উপজেলা :পাংশা
🌷 জেলা:রাজবাড়ী
🌷 বর্তমান অবস্থান :রমনা-ঢাকা