আমি পারব,আমাকে পারতেই হবে
বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম,
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সম্মানিত প্রিয় ভাই বোনেরা। আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে, আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে,পাওয়া না পাওয়ার সব কষ্ট ভুলে আজ আমি লিখতে বসেছি আমার জীবনের জয় পরাজয় এবং নিজের বলার মত একটি গল্প গ্রুপ থেকে অর্জন করা শক্তি সাহস মনোবল নিয়ে গুটিগুটি এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
ফাউন্ডেশনের প্রিয় ভাই বোনেদের প্রতি অনুরোধ একটু সময় করে পড়বেন প্লিজ।
আমার জীবনের গল্প 🌻🌻
আমার জন্ম ও পরিচয়🤔🤔
আমি মাহমুদা খাতুন। আট ভাই বোনের মধ্য সবার ছোট।বাবা ছিলেন একজন আদর্শ সরকারি চাকুরীজীবী। তাই দশ জনের সংসারে সচ্ছলতা তেমন ছিল না।বাবা মাকে অনেক বুঝেশুঝে সংসার চালাতে হত।কোন বিলাসিতা না থাকলেও আমাদের মানসিক শান্তির অভাব ছিলোনা।
আট ভাই বোনের সংসারে জন্ম নিলেও কোনদিন অবহেলিত ছিলাম না।সাত জনের পর আবার মেয়ে হওয়ায় আত্মিয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কটু কথা বললেও আমার বাবা কোনদিন সে কথায় কান দেননি।
পরিবারের সকলের আদর ভালবাসায় কেটেছে আমার ছেলেবেলা।
শিক্ষা জীবন✍️✍️✍️
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি গ্রামের স্কুল কলেজে শেষ করছি মায়ের আঁচলের নিচে থেকে মায়ের হাতের গরম ভাত খেয়ে। মা-বাবা, ভাই বোনের ভালোবাসায়, শাসনে, সোহাগে কেটেছে আমার শৈশব কৈশর।সাংসারিক জটিলতা, জগত সংসারের হালচাল, জটিলতা সবই ছিল অজানা।
অনার্স ভর্তি হওয়ার পর জীবনের প্রথম বাড়ির বাইরে পা রাখলাম। একটু একটু করে চিনতে শুরু করলাম বাইরের দুনিয়া।
আমার দশম শ্রেণি শুরুর আগেই বাবা চলে গেলেন।সংসারের দায়িত্ব নিল বড় ভাই।মা কিছু পেনশন পেতেন। বাবার রেখে যাওয়া কিছু সম্পত্তি বড় ভাই দেখা শোনা করতেন।মায়ের ইচ্ছা ছিল আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু আমার বাবা ছিল না।বড় ভাইয়ের পক্ষে নিজের সংসার খরচ ও আমার পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।বড় বোনদের সামর্থ্য ছিল।আমাকে সাহায্য করার মত মানসিকতাও ছিল।কিন্তু আমি কারো সাহায্য নিতে চাইনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি তাই একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতে শুরু করি। কিন্তু সেখান থেকে যা পেতাম তা ছিল খুবই সামান্য।
জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত বিয়ে🤔❤️❤️
কি করব ভেবে যখন হতাশাই দিন কাটাচ্ছি তখন আমার পরিচিত একজন আমাকে একটা ব্যবসার অফার দেয়। ওদের প্লান দেখে আমার ভালো লাগে, আমি রাজি হয়ে গেলাম।একটা কাজ সে সময় আমার জন্য জরুরি ছিল।কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম সেই পরিচিত ব্যক্তিটি আমাকে ভালবাসে।বিয়ে করতে চাই। আমি প্রথমে রাজি না হলেও নানান দিক বিবেচনা করে ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম এবং পরিবারের অমতে ওকে বিয়ে করে ফেললাম।কিছুদিন পর অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছে।
জীবনের জটিলতা শুরু😂😂😂
বিয়ের কয়েক মাস পরে ওর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। শুরু হলো জীবনের জটিলতা। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি তাই মা ভাই বোনের কাছে সমস্যার কথা বলতে পারিনি।তখন শশুর শাশুড়ি সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করেছে। নিজের বাবা মায়ের চেয়ে কম ছিলেন না তারা আমার কাছে।
কিন্তু আমি কারো বোঝা হতে চাইনি কোনদিন। তাই স্বামীকে নিয়ে পাড়ি জমালাম ঢাকা শহরে।সে গার্মেন্টসে টাইম সেকশনে চাকরি নিল। আমি কিন্ডারগার্টেনের পাশাপাশি টিউশনি করি। কিছুদিন পর আমার স্বামী মার্কেটিং এ চাকরি নিল।
সংসার জীবনের ভাল মন্দের দিন😍😂
বেশ ভালোই কাটছিল দুজনের সংসার। কিন্তু কিছু দুঃস্বপ্ন আমাকে তারা করে বেড়াত সবসময়। পড়াশোনা শেষ করতে পারলাম না,মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না।সব সময় টেনশন হতো।চাকরি,বাধা ধরা জীবন আমার ভালো লাগতো না কোনদিন।
স্বপ্ন দেখতাম নিজের জন্য ও পরিবার পরিজন, আশেপাশের মানুষ গুলোর জন্য কিছু করব।
এরমধ্যে একাডেমীক ও হোমিওপ্যাথি কোর্স শেষ করলাম। চাকরি ছেড়ে চেম্বার দিলাম।
ওর ডিউটি ছিল আনলিমিটেড।সকাল আটটায় যেত কখন ফিরে ঠিক ছিলো না।আমার এরকম জীবন একদম ভালো লাগতো না। ওকে সবসময় বলতাম চাকরির পাশাপাশি একটা ব্যবসা করো।কয়েকবার টাকাপয়সা জোগাড় করে ব্যবসা শুরুও করেছে।কিন্তু লস করে আবার চাকরিতে মন দিয়েছে।
নতুন ঝুঁকি ও জীবনের নতুন বিপর্যয়🤕🤣
এবার ওর এক আত্মিয়ের পরামর্শে চাকরি ছেড়ে দিল। এত বছরের জমানো সব টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করল।আমি নিষেধ করলাম চাকরি ছাড়তে।কিন্তু আমার কথা না শুনে হুট করে চাকরি ছেড়ে মার্কেটিং এর ব্যবসা শুরু করল।কিন্তু ভালো করতে পারল না।দু জন ডেলিভারি ম্যান,গোডাউন ভাড়া,বাসা ভাড়া সহ অনেক খরচ।নিজের পুঁজি শেষ করে আত্মিয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিল,ব্যাংক লোন করল।কিন্তু ব্যবসা এগিয়ে নিতে পারল না।তখন আমাদের অবস্থা শোচনীয়।
আমার রান্নার প্রতি ঝোঁক ছিল, তাই ভাবলাম চেম্বারের পাশাপাশি অনলাইনে হোমমেইড খাবার ও পিঠার ব্যবসা করব।কিন্তু আমি ব্যবসা ভালো বুঝিনা তাছাড়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেটাও সম্ভব হয়নি।তখন আমার স্বামী "নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনে ১১ ব্যাচে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আমি অন্য কোন দিকে মনোযোগ দিতে চাইনি কারণ আমি নিজের চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেয়েছি।
কিন্তু আমার নতুন চেম্বার। ইনকাম খুব বেশি না।এদিকে ওর ইনকাম একেবারে নেই বললেই চলে।এরমধ্যে বিশ্বে করোনা মহামারির দূ্র্যোগ শুরু হলো।
কি করব কুলকিনারা না পেয়ে প্রায় খালি হাতে গ্রামে চলে এলাম।সে সামান্য কিছু জমানো টাকা ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করল।এবারও লস হলো।কোথা থেকে লোন শোধ করব কিভাবে সংসার চালাবো কিছু বুঝতে পারছি না।আমার চেম্বার থেকে যে সামান্য ইনকাম তাতে এই ব্যয় ভার বহন করা সম্ভব নয়।
আরো কঠিন সময় নেমে এলো জীবনে।পড়ে গেলাম অথৈ সাগরে।
ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়া💥😍🌻
আমার স্বামী যেহেতু গ্রুপে যুক্ত ছিল তাই মাঝেমাঝে সেশন পোস্ট, ভিডিও দেখতাম। স্যারের কথা গুলো ভালো লাগতো। কিন্তু হোমিওপ্যাথি চেম্বার দেয়ার পর অন্য কোন ব্যবসা শুরু সে কথা কখনো ভাবিনি।
কিন্তু বারবার স্বামীর ব্যর্থতায় কি করব কোন ডিসিশন নিতে পারছিনা।মাথার উপরে অনেক লোনের বোঝা
দিনদিন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম।
তখন আমার মনে পড়ল এই ফাউন্ডেশনের কথা। ফাউন্ডেশনে জয়েন্ট করলাম। নিয়মিত সেশান ক্লাস করতে শুরু করলাম। প্রতিদিন স্যারের সেশান ক্লাস, ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হতে শুরু করলাম। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখলাম,উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।যুক্ত হলাম নাটোর জেলা টিমে।গ্রুপের ভাই বোনদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আজ আপনজনদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে শ্রদ্ধেয় স্যার এবং ফাউন্ডেশনের সকল ভাই বোনেরা।💝💝💝
শ্রদ্ধেয় স্যার সবসময় বলেন যে যে কাজ ভালো পারে, ভালো বুঝে তাই নিয়ে কাজ শুরু করতে।ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। আমার যেহেতু রান্না করতে ভালো লাগে তাই স্বামীর সাথে আলোচনা করে ডিসিশন নিলাম হোমমেইড খাবার নিয়ে কাজ করব।
কিন্তু গ্রামে হোমমেইড খাবার চলবে কিনা বুঝতে পারলাম না। আর আমার স্বামী যেহেতু মার্কেটিং বুঝে তাই কাজ শুরু করলাম হোমমেইড চিড়াভাজা, চানাচুর নিয়ে।
বর্তমান অবস্থা 💥😍🌻
এবছর কুরবানি ঈদের কয়েকদিন আগের কথা-
হাতে তখন মাত্র হাজার দুয়েক টাকা অবশিষ্ট আছে। এক কেজি চিড়া, বেসন, তেল, মশলা কিনে আমি চিড়াভাজা ও অনভিজ্ঞ হাতে চানাচুর তৈরি করলাম। যার ফিডব্যাক মোটেই ভালো ছিল না।ধীরেধীরে চানাচুরের মান ভালো হতে শুরু করল।
এখন প্রতিদিন ১০-১৫কেজি চানাচুর সেল হচ্ছে অফলাইনে ও অনলাইনে।
কয়েকজন সহযোগী নিয়েছি প্যাকেট করার জন্য।
দিনদিন সেল বাড়ছে আলহামদুলিল্লাহ।পন্য চিড়া,চানাচুরের পাশাপাশি ঝুরিভাজা, ডাল,ডাবলী ভাজা, বুদিয়া , রেডিমিক্স বুদিয়া মার্কেটিং করছি। কিন্তু ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য নানান প্রয়োজনীয়তার সৃষ্টি হচ্ছে ।
👉যেহেতু ফুড আইটেম নিয়ে কাজ করছি বি এস টি আই করা জরুরি। এবং
👉বি এস টি আই করতে হলে পন্য গুলো প্রস্তুতের জন্য উন্নত মানের সেড করা দরকার ।
👉এছাড়া ভালো মানের প্যাকিং প্রয়োজন, সেল বাড়ানোর জন্য।
👉এসব করতে উৎপাদন ও বাড়াতে হবে।তার জন্য কিছু মেশিনারিজ প্রয়োজন। ধীরে ধীরে সব কিছু যুক্ত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
বারবার মনে ভয় হয় এই যুদ্ধে আমি জয়ী হতে পারব তো!কিন্তু বিশ্বাস আছে নিজের উপরে,শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের শিক্ষার উপরে, প্রিয় স্যারের শিক্ষা বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি,
আমি পারব,আমাকে পারতেই হবে।ইনশাল্লাহ।
দোয়া করবেন সবাই আমি যেন সব দূ্র্যোগ কাটিয়ে তৈরি করতে পারি নিজের বলার মতো একটা গল্প।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৮৭
তারিখ ১৬-১০-২০২২ইং
আমি মাহমুদা খাতুন
জেলা-নাটোর
ব্যাচঃ১৮
রেজিঃ১০১৬১৪
পেজ- Suddhy seba