মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায় না।
🌹🌹জীবনের গল্প..... 🌹🌹
গল্পটা পড়ার অনুরোধ রইলো।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা তুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
🤲সকল প্রসংশা মহান রব্বুল আলামিনের প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে এবং একটি সুস্থ জীবন দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ ।
🤲দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার পরিবারের প্রতি।
🤲শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি প্রিয় বাবা-মাকে। যাদের উছিলায় সুন্দর এই পৃথিবীতে এসেছি। বড় হয়েছি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসায়। যাদের ঋণ কখনো শোধ করার মতো নয়।
🌹কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর , শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক, শিক্ষক, লক্ষ তরুণ-তরুনীর বেকারদের পথের দিশারি জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে ভালোবাসার প্লাটফর্ম "নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন" তৈরি হয়েছে।
🌹শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি প্রিয় প্লাটফর্মের সকল দায়িত্বশীল ও আজীবন সদস্য ভাইবোনদের প্রতি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
🌹🌹জীবনের গল্পঃ👇
আমার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এসব নিয়েই জীবনের কিছু সংক্ষিপ্ত গল্প আজ লিখবো।
🏵️🏵️জন্ম ও পারিবারিক অবস্থানঃ
আমার জন্মস্থান বোয়ালখালী উপজেলা ঘোষখীল গ্রামে।আমরা পাঁচ বোন চার ভাই। মেয়ের মধ্যে মা-বাবার ৩য় সন্তান। মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও আমরা ছিলাম একান্নবর্তী পরিবার ।আমার বাবারা তিন ভাই দুই বোন। আর আমরা ভাই-বোন, আম্মু- আব্বু, বড় চাচা-চাচীর তিন ছেলে এক মেয়ে। মেজ চাচার চার ছেলে এক মেয়ে এই ছিলো আমাদের পরিবার। দাদা দাদী ইন্তেকাল করেন অনেক বছর আগেই। আমার বাবার সাত বছর বয়সে আমার দাদী ১৩ বছর বয়সে আমার দাদাভাই ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া লিল্লহি রাজিউন)।
বাবার মুখ থেকে শোনা।
এভাবে মিলেমিশে একসাথেই দুই চাচার পরিবার সহ আমার বেড়ে উঠা।
বড় ও মেঝ চাচার পরিবার যে যার মতো করে আলাদা হয়ে আমাদের পরিবার সহ হয়ে গেল তিন পরিবার।
🌹🌹আদর্শ বাবাঃ
আমার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। পাড়া প্রতিবেশীর কাছে বাবা একজন সম্মানী লোক ছিলেন। এমনকি প্রতিবেশীর ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খবর ও রাখতেন কে কিভাবে পড়াশুনা করতেছে।এমনকি স্কুল কলেজে গিয়ে ও খবর নিতো রেজাল্ট কেমন হয়েছে, বেতন ঠিক ভাবে দিয়েছে কিনা। বাবার কড়া শাসনের লোক হওয়াতে সবাই ভয় পেতো ওদের মা বাবারা ও বাবাকে বলে দিবে বলে ভয় দেখাতো।বাবা অফিস থেকে আসতেছে শুনলে যে যার মতো দৌড়ে পালিয়ে এমনকি কাদা মাখা পা নিয়ে পড়তে বসে যাইত।
বাবা ইন্তেকাল করেছেন অনেক বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো বাবার কথা সবার মুখে মুখে।
আমার প্রতিবেশি চাচা চাচী ও ভাই বোনদের থেকে বাবার নীতির কথাগুলো শুনি সবসময়।
কারণ বাবা সবসময় এককথার মানুষ ছিলেন তারজন্য বাবা সবার প্রিয় ছিল।
বাবা ছিলেন পরোপকারী। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যেতো। এটাতে বাবা বেশী আনন্দ পেতো।
🌺🌺 শৈশবঃ
শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নানাবাড়িতে কারন , আমার তিন মামা এবং তিন খালা তাদের মধ্যে আম্মু সবার ছোট । আম্মু ছোট বলে সবার চোখের মণি, খুব আদরে একমাত্র জুরিয়র সদস্য ছিল।
♦️শিক্ষার হাতে খড়ি বড় ভাইয়ার কাছে । প্রথম বই টা হাতে তুলে দিয়েছিলো আমার বড় ভাইয়া । আর জীবনের লাস্ট একাডেমিক পরীক্ষার সেন্টারে ও বড় ভাইয়ার হাত ধরেই গিয়েছিলাম। তাই বাবার পরে দ্বিতীয় ভালোবাসার জায়গাটা বড় ভাইয়ার জন্য ই।
🌺🌺শিক্ষা জীবনঃ
আমাদের গ্রামের স্কুল ঘোষখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। বাসায় ভাই বোন সবার টিউটর ছিলেন আম্মা এস এস সি পরীক্ষা পর্যন্তই আমদের কোন ভাইবোনদের বাইরের টিউটরের কাছেই দেয়নি। কারন আম্মাও শিক্ষিত ছিল।কিন্তু সকুলে পরীক্ষা দিয়ে আসলে ও বাবা আবার বাসায় পরীক্ষা নিতো।খুব কড়াকড়িতেই ছিল ভাই বোন সবাই এমনকি কাজিনদের থেকেও। আল্লাহর রহমতে এখন ভাইবোন সবাই স্টাবিলিস্ট।ছাত্রী হিসাবে মেধাবী ছিলাম।স্কুলের স্যার ও ম্যাডামরা খুব আদর করত।স্যার ও ম্যাডামদের ভালোবাসায় প্রাইমারী শেষ করলাম।
প্রাইমারী শেষ করে হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। যথারিতি ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলাম হঠাৎ বাবা স্টোক করে মারা যায়( ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)
আল্লাহর রহমতে নানার পরিবার যথেষ্ট সাবলম্বী হওয়াতে বটগাছ হয়ে ছায়া দিল।
তবে নানা-নানি, মামা-মামীর আদরের কোন কমতি ছিল না কোন অবস্থাতেই।
প্রাইভেটের তুলনায় সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন কম।
এদিকে বাবা হঠাৎ মারা যাওয়া, তারমধ্যে ভাইবোন সবাই পড়ালেখা অবস্থায়। এক থেকে দেড় বছর খানিক এক দুর্বিসহ অবস্থা আমাদের। এ অবস্থা টা সাময়িক ছিল। ইনশাআল্লাহ বাবার পেনশনের টাকা আর এককালীন টাকা গুলো যখন পেলো আল্লাহর রহমতে তখন আর সমস্যা হয়নি।
🌺🌺আমার স্বপ্নঃ
সপ্ন ছিল বড় দুই বোনের মতো উচ্চ পদস্থ কোন চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে গেল। কারণ পি ডি পি তে চাকরি হওয়ায় সত্ত্বেও করতে পারিনি। শুধু কুমিল্লা পোস্টিং দেওয়াতে আম্মা যাইতে দিল না মেয়ে বলে।
তবুও আমি আপ্রান চেষ্টা করেছি নিজেকে গড়ে তোলার। এভাবে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়ে ইন্টার পাস করলাম।
তারপর যখন ডিগ্রী ফাইনাল ইয়ারে উঠলাম পরিবারের পছন্দে বিয়ে হয়।বিয়েতে আমার একটা শর্ত ছিল যে আমার পড়ালেখা যেন চালিয়ে ফাইনাল পরীক্ষা টা দিতে পারি। কিন্তু আমার হাসবেন্ডের সম্মতি থাকলে শশুর শাশুড়ির উপরে কথা বলতে পারতেছেনা মুরুব্বির মনে কষ্ট পাবে। ডিগ্রী পরীক্ষা আর দিতে পারলাম না। এদিকে আমার ভিতরে আমি নাই। জীবন্ত লাশের মতো বেচে ছিলাম।সারাক্ষন অস্থিরতায় কাজ করত।কেন আমাকে পরীক্ষা দিতে দিচ্ছে না নিজে নিজে কান্না করে তারপর সবার সামনে স্বাভাবিক হয়ে আসতাম। এই জেদ আমার ভিতর থেকে যায়নি।
🌺🌺গ্রাম থেকে শহরে আসাঃ
২০০৫ সালে শহরে এসে ছেলেমেয়েদের স্কুলে এডমিশন দিলাম।২০১২ তখন বড় ছেলে এস এস সি পরীক্ষার জন্য কোচিং এ পরতেছে। একদিন বাসায় এসে আমাকে বলতেছে আম্মু স্যারে আজকে জিগ্যেস করেছে বাসায় তোমাকে কে পড়ায়, আমি বলেছি আম্মু স্যার বলল, তোমার আম্মু কতটুকু পড়েছে। ছেলে বলেছে এইচ এস সি, ছেলে বলতেছে তখন আম্মু আমার অনেক লজ্জা লাগলো শুধু আপনি ইন্টার পাস এটা বলতে।
শহরে আসার পড়ে ছেলে মেয়েরা উৎসাহ দিল আম্মু আপনি পারবেন ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে ফেলেন।তাদের কথা মতো আবার ঐদিকে আমার জিদ ও ছিল সব মিলিয়ে পুনরায় রেজিষ্ট্রেশন করা।
এদিকে তো আমার পুরানো রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ ও শেষ আবার আমি ১২ বছর পরে নতুন করে ডিগ্রী এডমিশন নিলাম। আল্লাহর রহমতে ডিগ্রী কমপ্লিট করলাম।
আবার মাস্টার্স এ এডমিশন নিয়ে প্রিলি ও শেষ। কিন্তু ফাইনাল শেষ করতে পরিনি সিরিয়াস অসুস্থ পরীক্ষার সময় টাইফয়েড এ ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়েছে।
🌺🌺আমার উদ্যোক্তা জীবনে আগমনঃ
২০১৭ সাল থেকে অফ লাইনে হোমমেড ফুডের বিজনেস শুরু করি।তখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা ছিল না।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আমি অনলাইনে কয়েকটা ক্যাটারিং কোর্স করি। তারপর অনলাইনে বিজনেস শুরু করি।
শুরুতে তেমন কোন মুলধন ছিলো না। প্রথম অর্ডারের কাজ শুরু করে ছিলাম নিজের কিছু জমানো টাকা দিয়ে। আমার উদ্যোগ টা আমি তিল তিল করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ।
🌺🌺প্রিয় গ্রুপে যুক্ত হওয়াঃ
নিজের বলার মতো একটা প্ল্যাটফর্মের একজন গর্বিত সদস্য আমার এক কাজিনের মাধ্যমেই তের তম ব্যাচে যুক্ত হয়েছি। অনলাইন ব্যবসার সুবাদে অনেক আগে থেকে এই ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হয়ে সবার পোস্ট পড়তাম কে কিভাবে পরিচিত হচ্ছে দেখতাম। শুধু লাইক কমেন্ট করতাম। পোস্ট কিভাবে করবো বুঝতে পারতাম না। "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তাদের অনেক অনুপ্রেরণামুলক পোস্ট পড়ে আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে পোস্ট করা শুরু করি। তখন আমি স্যারের বেশ কিছু পোষ্ট পড়ি।
🌺🌺 স্যারের শিক্ষনীয় কয়েকটা কথা মনে গেথে যায়
👉জীবনে বলার মতো একটা গল্প থাকা দরকার।
👉স্বপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন এবং লেগে থাকুন...... সাফল্য আসবেই।
👉সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে সততা ও কমিটমেন্ট।
👉বৃষ্টি সবার জন্যই পড়ে তবে ভিজে কেউ।
👉মানুষের জন্য কাজ করলে, জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না। এই কথাটাও আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে।
চাকরি করবো না, চাকরি দেবো। এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে নয়, নিজের পরিচয়ে বাঁচবো ইনশাআল্লাহ।
🌺🌺প্রিয় গ্রুপ থেকে প্রাপ্তিঃ
নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প এই প্লাটফর্মে যুক্ত হবার পর যে শিক্ষা নিয়েছিঃ
🌱নিজেকে এবং অন্যকে ভালবাসতে শিখেছি।
🌱একজন পজিটিভ মানুষ হবার শিক্ষা পেয়েছি।
🌱কিভাবে একে অপরের সহযোগী হয়ে চলা যায় তা শিখেছি।
🌱কিভাবে সেল বাড়ানো যায়। কিভাবে কাস্টমারদের সাথে কথা বলতে হয় তা শিখেছি
🌱আত্মবিশ্বাস বেড়েছে নিজের পায়ে দাঁড়াবার।
🌱একজন ভালোমানুষ হয়ে বেঁচে থাকার আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
🌱ভুল ধারণা ও সংশয় গুলো কেটে গেছে
মনের ভিতর সাহস ফিরে পেয়েছি
🌹ভালোবেসে লেগে আছি প্রিয় ফাউন্ডেশন এর সাথে, থাকবো একজন সফল উদ্যোক্তা না হওয়া পর্যন্ত এবং নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরি না করা পর্যন্ত। ইনশাআল্লাহ্।
সকলের দোয়া, ভালোবাসা ও সহযোগিতা কামনা করছি।আশাকরি সবাই সহযোগী হয়ে পাশে থাকবেন।
🌺🌺গল্পের শিক্ষাঃ
★মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায় না। মা-বাবার দোয়া সবচেয়ে বড় রহমত ও বরকত।
★জীবনে বড় হতে হলে ত্যাগী ও পরিশ্রমী হতে হবে।
★চাইলেই যেকোন খারাপ অবস্থা থেকে নিজেকে তুলে আনা যায়, দরকার শুধু নিজের সাথে কমিটমেন্ট।
👌আবারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সময় নিয়ে, ধৈর্য্য ধরে গল্পটা পড়ার জন্য।
অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন
ভালোবেসে পাশে থাকবেন।
🌺🌺কাজ করছি অর্গানিক পণ্য -
🥀কাঠের ঘানিতে ভাঙা খাঁটি সরিষার তেল,
🥀বিভিন্ন ফুলের মধু
🥀হোমমেড ফুড ও ফ্রোজেন ফুড,
🌺🌺নতুন সংযোজনঃ - মেয়েদের সকল প্রকার ড্রেস, কাশ্মীরি ও উলের শাল, জামদানী শাড়ি ও থ্রীপিস,পাঞ্জাবী, বেবি ড্রেস নিয়ে।
🌹🌹পেইজঃ 🌹🌹
(১)স্বপ্ন-কারু
(২)শখের সখী
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯০
তারিখ ২২-১০-২০২২ইং
🌹শুভেচ্ছান্তে-
নামঃ শিরিন আকতার
প্রমোশন টিম সদস্য
এসো কোরআন কাফেলার ৬ষ্ট ব্যাচের ছাত্রী
ব্যাচঃ১৩
রেজিঃ৫৯৪৮২
জেলাঃ চট্টগ্রাম।
বর্তমান অবস্থানঃ মুরাদপুর, চট্টগ্রাম।