জীবনটা খুব অল্প সময়ের তাই একে জটিল না করে সহজ-সরল ভাবে জীবন যাপন করা উচিত।
☘আমার জীবনের গল্পের কিছু অংশ☘
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাকে এত সুন্দর করে তৈরি করেছেন এবং আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
আল্লাহর দেয়া সমস্ত নেয়ামত আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করছি যার জন্য আল্লাহর দরবারে জানায় লাখ লাখ শুকরিয়া।আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে আরো শুকরিয়া জানাই কারণ তিনি আমাকে এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্থ রেখেছেন।
ধন্যবাদ জানাই জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এত সুন্দর এবং চমৎকার একটা প্ল্যাটফর্ম আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন এবং জায়গা করে নিয়েছেন আমাদের মত লাখো লাখো মানুষের হৃদয়।স্যারের এই পরিশ্রমকে যেন আমরা সুন্দর ভাবে কাজে লাগাতে পারি এই চেষ্টা আমাদের সবার করা উচিত।স্যারের জন্য অনেক দোয়া করি আল্লাহ্ তায়ালা যেন উনাকে সুস্থ রাখেন এবং নেক হায়াত দান করেন।
আজকে আমি চেষ্টা করব আমার জীবনের কিছু অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পারবো জানিনা তবু চেষ্টা করব কারণ চেষ্টা করতে তো কোন দোষ নেই।
☘আমি ও আমার পরিবার:
আমার নাম রিফাত আমিন ঈশিতা।১৯৮৬ সালের ২৮ শে নভেম্বর ঢাকাতেই আমার জন্ম।আমার নিজ জেলা -ময়মনসিংহ, থানা-ফুলবাড়িয়া, গ্রাম -পাটিরা।তিন ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট।
আমি আমার নিজের কথা বলার আগে প্রথমেই আমার পরিবারের সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই।কারণ আমার পরিবার থেকেই আমার জীবনের শুরু।আমার দাদা ছিলেন একজন নামকরা কন্ট্রাক্টর।উনি উনার কর্মজীবনে প্রচুর অর্থ সম্পদ আয়ের পাশাপাশি আয় করেছিলেন অনেক সম্মানও।সব ধরনের মানুষের সাথে উনি খুব ভালো ব্যবহার করতেন এবং কাউকে কখনো ছোট করে দেখতেন না।
আমার দাদা এরশাদ সরকারের আমলে দুই দু'বার এমপি ছিলেন সেই থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ির নাম হয় এমপি বাড়ি।এখনো এমপি বাড়ি বললে সবাই চিনে।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে কারেন্ট ছিল।জমিজমা,কাজের লোক কোন কিছু কমতি ছিল না।সমস্ত ফসলের চাষাবাদ হত কোনো কিছুই আমাদেরকে কিনে খেতে হয় নি।ঢাকা শহরেও ছিল বাড়ি -গাড়ি।
এতটুকু পড়ার পর আপনাদের মনে হতে পারে তাহলে তো আমাদের জীবনে কোনো সমস্যাই নেই আমাদের তো সবকিছু আছে তাই না।
তবে হ্যাঁ ছোটবেলাটা আমার অনেক আদরে কেটেছে।আমি পুকুরে সাঁতার কেটেছি,মাছ ধরেছি,খড়ের পাল্লার মধ্যে ঘর বানিয়ে খেলেছি,আলু খেতে আলু পুরিয়ে খেয়েছি,ধান কেটেছি,বাড়ির সব ছোট রা মিলে ধান খেতে চড়ুইবাতি খেলেছি।শুধু গ্রামে না ঢাকায় ও পাড়ার সব বাচ্চারা বিকাল হলে বাড়ির পিছনের রাস্তায় খেলতে চলে যেতাম।কত মজা করেছি ছোট বেলায় যা আমার মেয়েরা কখনো চিন্তা ও করতে পারবে না।
যেহেতু আমি সবার ছোট ছিলাম এবং মাশাল্লাহ অনেক কিউট ছিলাম এজন্য সবাই আমাকে অনেক আদর করতো।
আমার দাদার সন্তান ছিলেন সাতজন।কিন্তু দুঃখের বিষয় উনার কোনো সন্তানই ওনার মতো হয়নি।আমার বাবা চাচাদের হয়তো ধারণা ছিল তাদের এত অর্থ কড়ি কোনদিন ফুরাবেনা।কিন্তু বসে বসে খেলে যে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায় এই উপলব্ধিটা হয়তো উনারা তখন করতে পারেনি।ধীরে ধীরে সমস্তকিছুই শেষ হতে থাকে।আর এইসব কিছু ধ্বংস হওয়ার পেছনে মূলত কাজ করেছে তাদের অহংকার।
তবে আমাদের জীবনে অনেক সহায়তা করেছেন আমার মামা,খালারা।বিশেষ করে আমার বড় মামা এবং আমার একমাত্র খালা এই দুইজন সবসময়ই বিপদে আপদে পাশে ছিলেন।আল্লাহ যেনো উনাদের সবসময় ভালো রাখেন এবং নেক হায়াত দেন।অনেক কৃতজ্ঞ আমি তাদের প্রতি।আমার বড় মামা এখন অসুস্থ সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ্ যেন উনাকে সবসময় ভালো রাখেন।
☘আমার শিক্ষা জীবন:
যেহেতু আমার ঢাকায় জন্ম ছোটবেলা থেকে ঢাকায় পড়াশোনা করেছি।আমার খুব শখ ছিল আমি সিটি কলেজে পড়বো এবং চান্স পেয়েছিলাম।কিন্তু সিটি কলেজে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি ছিল তাই শখ টা বাদ দিতে হয়েছে।বাবা-মাকে প্রেসার করলে হয়তো আমি পারতাম কিন্তু এই প্রেশারটা আমি আমার বাবা মাকে দিতে চাইনি।যাইহোক আমি ইডেন কলেজ থেকে একাউন্টিং এ আমার অনার্স,মাস্টার্স কমপ্লিট করি।
☘আমার কর্মজীবন:
কেন জানিনা ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল আমি কখনো চাকরি করব না। ব্যবসা করব এই মন মানসিকতা নিয়েই আমি বড় হয়েছি।
এস.এস.সি পর থেকে শুরু করেছিলাম টিউশনি।
অনার্স পড়ার সময় চার বান্ধবী মিলে একটা ব্যবসা শুরু করেছিলাম,কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।কারণ তখন তো আর স্যারের সেশন ছিল না তাই জানতাম না পার্টনারশিপে কিভাবে বিজনেস করতে হয়।তাছাড়া২০১৮ সালেও আরেকটা পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেছিলাম সেটাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
☘আমার প্রেম,বিয়ে ও এর পরবর্তী জীবন:
আমাদের প্রেম টা মূলত শুরু হয় এইচএসসি পর থেকে কিন্তু ক্লাস টেন থেকে আমরা একজন আরেকজনকে চিনি।একই স্কুল একই কোচিং এ পড়াশোনা।পরবর্তীতে আমি চলে গেলাম ইডেন কলেজে আর ও চলে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।তাই বলে কিন্তু প্রেম বন্ধ ছিল না সপ্তাহে তিন চারদিন বাইরে দেখা হতো আমাদের। তখনও আমাদের কাছে ছিল না স্যারের সেশন গুলো তাহলে হয়তো প্রেম করে সময়টা নষ্ট করতাম না প্রেমের পাশাপাশি কাজও হয়তো করতাম বা চেষ্টা করতাম।
যদিও আমাদের প্রেম ছিল কিন্তু বিয়েটা আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিক্রমেই হয়।২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
শুরু হয় আরেকটা নতুন জীবন।২০১২সালে আমরা দুইজন মিলে নতুন করে একটা বিজনেস শুরু করি।যদিও বিয়ের দুই বছর আগে থেকেই ও একটা নতুন বিজনেস শুরু করে।কিন্তু ঐ বিজনেসটা তে ও তেমন সুবিধা হয় নি।আমাদের নতুন বিজনেস ভালোই চলছিল।আর তার সাথে চলছিল সাংসারিক জীবনের ঝুট-ঝামেলা।
আসলে সাংসারিক জীবনের এই ঝামেলাটা আমার মনে হয় সবারই কমবেশি হয়ে থাকে,আমিও এর বাইরে ছিলাম না।এভাবেই সবকিছু চলছিল।
২০১৪ সালে জন্ম নেয় আমার বড় মেয়ে।
ওর জন্মের পর আমাদের সমস্যাগুলির পরিমাণ আরও কিছুটা বেড়ে যায়।তো যাই হোক ভালো-মন্দ মিলিয়ে চলছিল।কিন্তু২০১৬ সালে কাছের মানুষ দিয়ে এমন ধরা খেলাম বিজনেস একদম শূণ্যতে নেমে আসলো।মন খারাপ ছিল,হতাশ হয়েছিলাম তারপরও আমরা সেই ধকলটা কাটিয়ে উঠি।
আবার নতুন করে শুরু করলাম।কিন্তু ধীরে ধীরে সব কিছুর দাম বেড়ে গেলো।লেবার কস্টিং বাড়তে থাকে,মালের রেট কমে আসে,মার্কেট থেকে ঠিকমতো পেমেন্ট পাওয়া যেত না।তো সব মিলিয়ে কোনরকম চলছিল।
২০১৯সালে আমার ছোট মেয়েটা জন্ম নেয়।
তারপর থেকে আবার শুরু হলো করোনা।
করোনায় বিজনেসের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।তাই ২০২১ সালে এই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।তাছাড়া ঐ বছরই আমরা করোনায় আমাদের অনেক কাছের মানুষকে হারিয়েছি।ঐ সময় টা সব কিছু মিলিয়ে অনেক খারাপ ছিল।তারপরও জীবন জীবনের মতো চলছিল সাথে আমরাও চলছিলাম।
জীবনের এই কষ্টগুলো জীবনেরই একটা অংশ।কারো কষ্টের পরিমাণ বেশি কারো কম।তবে সব কষ্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।কিছু কষ্ট মনের মধ্যে আছে ঐগুলো মনের মধ্যেই থাক।
☘আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর বিষয়:
আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে যখন আমি দেখেছি মানুষ টাকা দিয়ে সম্পর্কের মূল্যায়ন করে।ছোটবেলা থেকেই এই জিনিসটা আমি দেখে আসছি এবং এটা এখনো দেখছি।
কারো টাকা আছে বলে তার দাম বেশি আর যার টাকা নেই তার দাম কম এটা কি ধরনের চিন্তাভাবনা মানুষের আমি বুঝিনা।তবে আমি এটা ঠিক করে রেখেছি আমার যদি কখনও টাকা হয় তখন ওই মানুষগুলোর সাথে আমি আরো বেশি নম্র-ভদ্র এবং বিনয়ী হবো।
যাতে তারা বলতে পারে আমার যখন টাকা ছিলনা আমি তখন যেরকম ছিলাম যখন আমার টাকা আছে তখন আমি সেরকমই আছি।
☘প্রিয় প্লাটফর্মে যোগদান:
আসলে আমার জানা ছিল না যে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে ভালোমানুষের চর্চা করা হয়।আমার এক পরিচিত ভাই উনার নাম Akm Faisal Sujon ।ভাইয়ার সাথে আমার অনলাইনে পরিচয় এবং ভাই অনেক ভালো একজন মানুষ।যখনই ভাইয়ার কাছে কোন হেল্প চেয়েছি ভাইয়া চেষ্টা করেছে হেল্প করতে।
ভাইয়ের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম ভালো কোন গ্রুপের কথা।আসলে ভালো মানুষ দেখেই হয়তো উনি এই চমৎকার প্ল্যাটফর্মের লিংকটা আমাকে শেয়ার করেছিলেন।যার নাম হচ্ছে👇
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
☘আমার জীবন থেকে আমার শিক্ষা:
১.আমার জীবন থেকে বিশেষ করে আমার পরিবার থেকে আমার শিক্ষা অহংকার যারা করবে তাদের পতন অবশ্যই হবে।
২.
জীবনে কখনো কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতে নেই সে যত কাছের মানুষ হোক বা রক্তের সম্পর্কের মানুষই হোক।
৩.
প্রতিটা সম্পর্কই অনেক মূল্যবান তাই টাকা দিয়ে সম্পর্কের মূল্যায়ন করা ঠিক না।
৪.
প্রেম করেন তাতে সমস্যা নাই কিন্তু প্রেমের পাশাপাশি সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত।
৫.
নিজের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ সবসময় নিজের কাছে রাখা উচিত।
৬.
জীবনটা খুব অল্প সময়ের তাই একে জটিল না করে সহজ-সরল ভাবে জীবন যাপন করা উচিত।
☘সর্বশেষ কথা:
আসলে জীবনে চড়াই-উৎরাই থাকবে এটাই স্বাভাবিক।কখনো সুখ আসবে কখনো দুঃখ আসবে এর নামই জীবন।এর মাঝেই চেষ্টা করতে হবে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার।
হয়তো জীবনে এখনো নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি তবে চেষ্টা করছি।অনেকবার হতাশ হয়েছি,আবার নতুন করে শুরু করেছি,লেগে আছি এবং চেষ্টা করছি।তবে আমার জীবনে আমার প্রতিটা কাজে সবচাইতে বেশি সাপোর্ট দিয়েছে আমার হাসবেন্ড।যখনই আমি হতাশ হয়েছি মন খারাপ হয়েছে তখনই ও আমাকে সাপোর্ট করেছে।এমন অনেকেই দেখেছি যারা বলে কিছু করতে চাই কিন্তু তারা তাদের পরিবার বা হাসবেন্ড থেকে সাপোর্ট পায় না।সেক্ষেত্রে আমি আসলেই অনেক লাকী কারণ ও আমাকে অনেক সাপোর্ট করে।
আর আমি আরো বেশি ভাগ্যবান কারণ আমার মা-বাবা,শ্বশুড়-শাশুড়ি আল্লাহ্ রহমতে সবাই আছেন এবং সুস্থ আছেন।আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ্ তায়ালা যেন উনাদের সবসময় সুস্থ রাখেন এবং নেক হায়াত দান করেন।
বর্তমানে আমি একটা চমৎকার প্ল্যাটফর্মে আছি,ভালো মানুষদের সাথে আছি,ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে ইনশাল্লাহ্।
আর সবকিছু মিলে আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।সবকিছুর জন্য আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন।
💜যেতে যেতে আরেকটা কথা বলে যাই -স্যারের ঐ কথাটা আমার খুব পছন্দের -বৃষ্টি পড়ে সবার জন্য কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।সেই বৃষ্টিতে ভেজা কেউ কেউ এর আমি ও একজন হতে চাই।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৩
তারিখ ০৪-১১-২০২২ইং
👉রিফাত আমীন
👉রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার :৯৪৬৯৬
👉ব্যাচ নং:১৮
👉নিজ জেলা:ময়মনসিংহ
👉বতর্মান অবস্থান :রমনা জোন।