টাকার অভাবে দরখাস্ত করা হত না বই কেনা তো পরের কথা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
💘"আমার জীবনের গল্প"💘
🏵️প্রথমে শুরু করছি মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহর নামে যার অপার কৃপায় এই পৃথিবীতে এসেছি। সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। লাখো কোটি দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর প্রতি ।
🏵️কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার মা ও বাবার প্রতি, যারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, লালন পালন করেছেন এবং শিক্ষিত করে পৃথিবীর বুকে বড় করে তুলেছেন।
🏵️ সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানুষ, লাখো তরুণ তরুণীর আইডল প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের মতো একটা সুবিশাল প্লাটফর্ম ।
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহী ওয়া বারকাতুহু
🌷 আজ একটা গল্প শোনাব। আশা করি সময় করে সবাই ধৈর্য্য ধরে শুনবেন ও পড়বেন।
🌷 এটা ঠিক গল্প নয় আমার জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
🙇ছেলেবেলাঃ
আমরা ৪ ভাই বোন তিন বোন এক ভাই। বাবা মা দাদা দাদি নিয়ে বেশ বড় একটা সংসার বাবার একার আয় আর সবার পড়াশোনা খাওয়া পরার খরচ বেশ কষ্টকর হয়ে যায় আব্বুর পক্ষে। কিন্তু আমাদের পড়াশোনা, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে আব্বু আমাদের কষ্ট দিতেন না।ছোট বেলায় গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি।কিন্তু যত বড় হয় ততই খরচ আরও বাড়তে থাকে। কারণ আমরা চার ভাই বোন প্রায় সবাই বিভিন্ন ক্লাসে পড়াশোনা করতাম। এভাবেই চলে ছেলে বেলা।
🌷 শিক্ষা জীবনঃ
প্রাইমারি পাশ করে হাইস্কুলে উঠি পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো ছিলাম। আর আমাদের গ্রামের স্কুলে একটু পার্সিয়ালিটি চলত শিক্ষকদের মধ্যে তাই আব্বু সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে ঝিকরগাছা মফস্বলের স্কুল সম্মিলনীতে ভর্তি করে দেয় তখন খরচ আরও বেড়ে যায়। আমার একা একা গ্রাম থেকে বাসে স্কুলে আসতে একটু অসুবিধা হত তখন আব্বু আমার একটা সাথি করার জন্য গ্রামে অনেকের বলে তাদের মেয়েকে এই স্কুলে ভর্তি করতে কিন্তু কেউ রাজি হয় না। তখন আব্বুর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার কোন সন্তান ছিল সেই আংকেল বলে মেয়ে আমার বাসায় রেখে পড়ান। তখন ঐ কাকার বাসায় থেকে পড়াশোনা শুরু হয়।তখন আব্বুর একার আয়ে সবার পড়াশোনার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হত কোন রকম দুই টা ড্রেস আর একটা স্কুল ড্রেস পরে কাটাতে হত।প্রাইভেট পড়ার মত সাধ্য ছিল না। নিজের চেষ্টায় সায়েন্স নিয়ে মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করে এসএসসি পাস করে স্মমিলনী কলেজেই ভর্তি এইচ এস সি ভর্তি হয়।তখন কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়তাম। কলেজের চেয়ারম্যান এক্স মন্ত্রী রফিকুল ইসলাম আব্বুর সাথে রাজনীতির সুত্রে ভালো সম্পর্ক ছিল তাই হোস্টেলে শুধু খাওয়া খরচ টুকু দিতে হত।যেহেতু আমার কাছ থেকে কোন খরচ নিতে পারত না তাই হোস্টেল সুপার আমাকে একটু বাকা নজরে দেখতেন। যত খারাপ বেডটা আমাকে দিত এসব দেখে খুব কষ্ট হত কিন্তু কিছু না বলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। সায়েন্স নিয়ে পড়তে হলে টিউশনি তো পড়তেই হয় আর বই গুলো তো কিনতে হয় আবার লেখার কাগজ কলম বেশি লাগে কিন্তু এত টাকা পাব কই।তাই লেখার থেকে পড়া অভ্যাস করতাম। আর আমার মেধা দেখে কলেজের স্যাররা আমাকে বই আর ফ্রি পড়াতেন বিশেষ করে আমার কেমেস্ট্রি ম্যাডাম খুব সাহায্য করতেন। একবার তো মনের কষ্টে সায়েন্স ছেড়ে দিতে চাই কিন্তু ম্যাডাম আমাকে ছাড়তে দেয়নি বলেন তোমাকে আমি সব ধরনের সাহায্য করব। তুমি অনেক ভালো স্টুডেন্ট।
🌷 অভাবের দিন গুলোঃ
এইচএসসি পাস করলাম যদিও খুব ভালো রেজাল্ট হল না এর মাঝে অনেক বাঁধা আসে জীবনে যেটা এখন লেখা সম্ভব না। যাইহোক মোটামুটি এইচএসসি পার করলাম এবার ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু আব্বু বলল কোন ভার্সিটিতে যদি চান্স পাও আমি খরচ চালাব কি করে আর পরীক্ষার ফর্ম যাতায়াত খরচ ইত্যাদি অনেক এত টাকা এখন কিভাবে জোগাড় করব।এসব শুনে অভিমানে কোন ফর্ম ওঠালাম না।যদীও মেডিকেল ফর্ম তোলার মত রেজাল্ট ছিল তখন। যাইহোক সিদ্ধান্ত নিলাম মফস্বল কলেজে বিএসসি পড়ব। কিন্তু আমার এক বান্ধবী বলল তুই ভুল করিস না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দে ওর কথা শুনে পরীক্ষা দিই এবং বেশ ভালো ফল পায়।এবার শুরু সাবজেক্ট চয়েস। কোন সাবজেক্টে পড়লে টিউশনি পড়া লাগবে না।বই কম কিনলে হবে এসব চিন্তা করে প্রানিবিদ্যায় ভর্তি হয় এবং একটা খুব নরমাল মেচে থেকে টিউশনি করে থাকতে শুরু করি।ফাস্ট ইয়ারে হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পায় কিন্তু ভাগ্য বয়রি হঠাৎ ব্রেনের সমস্যা ধরা পরে। আমার ব্রেন খারাপ হয়ে যায়। মনে হল আর হয়তো পড়াশোনা হবে না এরপর অনেক চিকিৎসা করে মোটামুটি ভালো হয়ে যায় আবার পড়াশোনা শুরু করি কিন্তু ফাস্ট ইয়ারে আশানুরূপ ফল করতে পারি না কোন রকম সেকেন্ড ক্লাস পায়।এরপর সেকেন্ড ইয়ারে ফাস্ট ক্লাস এভাবেই অনার্স শেষ করি।
🌷চাকরী জীবনঃ
অনার্স তৃতীয় বর্ষে যখন উঠলাম আমাদের বিভাগীয় প্রধান একদিন ক্লাসে বললেন তোমরা এখন থেকে বিভিন্ন চাকরির ট্রাই কর।স্যারের কথা আমার মাথায় গেঁথে যায়। আমি বিভিন্ন চাকুরির পত্রিকা কিনতে শুরু করি এবং দরখাস্ত করতে শুরু করি।আমার আব্বু বলে তোমার মাথার সমস্যা তুমি দুটো এক সাথে পারবা না আগে লেখা পাড় শেষ কর।কিন্তু আমি আব্বুর কথা না শুনে নিজের খরচের টাকা জমিয়ে কয়েকটা দরখাস্ত করি।একটা প্রাইমারি,হেল্থে,মৎস্যে আর প্রানিসম্পদে এর মধ্যে প্রথমে প্রাইমারি পরীক্ষা হয় আমি টিকে যায় এবং ভায়ভাও খুব ভালো হয়।এরপর আসে মৎসের কার্ড কিন্তু কম্পিউটার পরীক্ষা থাকায় সেই পরীক্ষা দিতে পারলাম না। এরপর শুরু হয়ে যায় আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা এরমধ্যে কার্ড আসে এই প্রানিসম্পদের মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় এত কষ্টের টাকা দিয়ে দরখাস্ত করি আর একটা পরীক্ষাও দিতে পারব না।😪হঠাৎ খবর আসে পরীক্ষা ১৫ দিন পিছিয়ে গেছে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি একাডেমিক বই ছুড়ে ফেলে দিয়ে শুরু করি চাকুরির পড়া এবং যাথারিতি ১৫ দিন পরে রোজার মধ্যে পরীক্ষা দিলাম আলহামদুলিল্লাহ এটাও রিটেনে টিকে গেলাম এবং ভায়ভা খুব ভালো দিলাম হয়ে গেল চাকরি সাথে ফাইনাল পরীক্ষাও শেষ। আর কার্ড আসল এপয়েন্টমেন্টের আমি তো মহা খুশি যোগদকরি ময়মনসিংহে এক বছর সেখানে ভাল ভাবে প্রশিক্ষন নিয়ে এর মধ্যে মাস্টার্স ভর্তি হয় তারপর চাকুরির এক বছর পরে মাস্টার্স পরীক্ষা হয় আলহামদুলিল্লাহ ফাস্ট ক্লাস পেয়ে পাস করি।কিন্তু দুঃখের বিষয় মনে মনে করতাম চাকুরি পেয়ে টাকার অভাব ঘুচবে আর ভালো ভালো চাকুরির বই কিনে পড়ব আর ভালো চাকুরির পরীক্ষা দিব।কিন্তু আমার পুরা পরিবারের দায়িত্ব যেন তখন আমার মাথায় একটা পরীক্ষাও আর দেওয়া হল না টাকার অভাবে দরখাস্ত করা হত না বই কেনা তো পরের কথা।
🌷 আমার স্বপ্নঃ
আমার স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকুরি মানে অন্তত একটা অফিসের বস হব কিন্তু সেটা আর হল না কারণ চেষ্টায় তো করতে পারলাম জীবনে ভাগ্যের কি দোষ দিব।আলহামদুলিল্লাহ এখন একটা সেকেন্ড ক্লাস চাকুরি করি সরকারি। আর স্বপ্ন ছিল একজন উদ্যোক্তা হব আমার একটা কোম্পানি থাকবে যেখানে ইচ্ছা মত কিছু মানুষের চাকুরি দিব।ছোট বেলায় একবার শুরু করি কিন্তু সাকসেস হয়নি সুযোগের অভাবে এখন তাই আবার শুরু করেছি ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ চেষ্টা করব করছি যদিও স্বামী সাপোর্ট করে না।
🤴👸সংসার ও চাকুরী জীবন:
চাকুরি পাওয়ার পরে মাস্টার্স কম্পিলিট করলাম তারপর চিন্তা করলাম ছোট বোনদের মানুষ করে ওদের আগে বিয়ে দিয়ে নিজে আর একটু ভালো চাকুরির জন্য চেষ্টা করে তারপর বিয়ে করব কিন্তু সেটা আর এ সমাজ হতে দিল না।প্রতিদিন অফিসে, বাড়িতে সব জায়গায় বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। না বললে নানান কথা শুনতে হয়েছে কেন বিয়ে করছি না। মেজ বোনের বিয়ে দিতে চাইলে সবাই বলতে থাকে বড়টা রেখে কেন ছোট টা বিয়ে দিবে। আমার ডাইরেক্টর স্যারও ঘটকালি শুরু করে শামীমা ছেলে আছে ভালো বিয়ে করবা? আমি না বললে উনি খুব রেগে যায় আর আমার কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয়।যাইহোক অবশেষে বিয়ে করে ফেললাম তারপর মেজ বোনকে বিয়ে দিলাম। ছোট বোন এখনো বিয়ে দেয়নি এবার মাস্টার্স শেষ করেছে আমিই পড়াশোনা করিয়েছি। ভালই কাটছিলো চাকুরী সংসার, প্রথম মেয়ে নিয়ে। আমার স্বামী বিআরডিবিতে আছে উনার কাজের খুব চাপ। কাজের চাপে সংসারে সময় দিতে পারে না এবং নিজের যখন কষ্ট প্রেসার বেশি হয় সেই রাগ সংসারেও তার প্রভাব পড়ে। তাই চিন্তা করলাম আবার উদ্যোক্তা হয়ে একটা বিজনেস শুরু করলে যদি ভালো কিছু করতে পারি তাহলে উনার চাকুরী ছেড়ে বিজনেসে যোগ দিতে বলব।এর মধ্যে করনা ভাইরাস শুরু হল এবং অফিস বন্ধ হয়ে গেল তখন থেকে মাথায় উদ্যোক্তার ভুত চেপে বসল।ভালোই ফল পেতে শুরু করি এর মধ্যে মেয়ের অটিজম ধরা পড়ে ডাক্তার ওকে অনেক সময় দিতে বলে।মনটা খারাপ হয়ে যায়। তারপর আমি আবার কনসেপ্ট করি এসব কারণে গত একবছর মোবাইলে মনের কষ্টে হাত দেয়নি।
আল্লাহ হয়তো পরিপূর্ণ সুখি কারও করে না কারণ তাহলে আমরা আল্লাহকে ভুলে যাব একেবারে। এখন মেয়েকে থেরাপি দিয়ে সময় দিয়ে একটু সুস্থ চিন্তা করছি খুব তাড়াতাড়ি ইন্ডিয়া নিয়ে যাব চিকিৎসা করতে। আবার একটা ছেলে হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ ছেলের বয়স ছয় মাস পার হল।
আবার নতুন করে শুরু করেছি উদ্যোগের কাজ স্বামী বেশি একটা সাপোর্ট করে না।রাগ করে এত মোবাইলে সময় দিলে কিন্তু মন থেকে ছাড়তে পারিনি ভালবাসার কাজ তাই। চেষ্টা করছি সাকসেস হলে আমি জানি সেও খুশি হবে ইনশাআল্লাহ। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।
🌷এ গ্রুপের সাথে জয়েন করি ২০ তম ব্যাচে।ঝিকরগাছার একটা মিটআপে ফাতেমা আজাদ এবং রোজ আপুর সাথে পরিচয় হয় এবং আপুদের সাহায্যে এ গ্রুপে রেজিষ্ট্রেশন করেছি। খুব ভালো লাগছে এগ্রুপের নিয়ম গুলো। অনেক কিছু শিখতে পারব ইনশাআল্লাহ এ গ্রুপ থেকে।
🌷 সংসার জীবনের অনেক কথা অনেক না পাওয়ার বেদনা যার কিছুটা শেয়ার করলাম।
সবাই দোয়া করবেন
🌷 অনেকক্ষন আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
🌷 পরিশেষে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা যারা এতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার লেখাটা পড়েছেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি স্বপ্ন দেখি আমার পাশের মানুষ গুলোকে নিয়ে, যারা আমার সুখে দুঃখে পাশে ছিলো
আমার বাবা মা ভাই বোন সন্তান স্বামী সবাইকে নিয়ে সবার পাশে থাকতে পারি।
🌻আমার জীবন চলার পথে আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতা আমার ভীষণ প্রয়োজন, আশা করছি ভালোবেসে পাশে থাকবেন সবসময়, সবশেষে আপনাদের সবার সুখি ও সুন্দর জীবন কামনা করি, সুন্দর হোক আপনাদের সবার আগামী জীবনের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ, শুভ কামনায় আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি, ভালোবাসা অবিরাম...
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৩
তারিখ ০৪-১১-২০২২ইং
🌹🌹ধন্যবাদান্তে 🌹🌹
--------------
শামীমা নাসরিন
ব্যাচঃ ২০
রেজিঃ নং ১০৮৫৯৫
জেলাঃ যশোর
বর্তমান অবস্থানঃঝিকরগাছা
কাজ করছি যশোরের হাতের কাজের থ্রিপিচ,শাড়ি, বেডশিট, নকশিকাঁথা, এক কালার উলের শাল,খেজুরের গুড়,অন্য দেশি থ্রিপিচ নিয়ে।
প্রতিনিয়ত আপনাদের সাহসে এগিয়ে যাচ্ছি
❤️আমার ভালোবাসার ছোয়ায় তৈরি :ছোহা কারুকার্য ❤️