জীবন মানে গল্প
..............জীবন মানে গল্প.........
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতু
সর্বপ্রথম আমি শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহর দরবারে।যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি।যার করুণায় আমারা সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ।
তারপর দুরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ)দরবারে।যিনি না থাকলে এই সমগ্র মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতো না।
ভালোবাসা ও শুকরিয়া আদায় করছি আমার মা-বাবার প্রতি।তারা না থাকলে আমার পৃথিবীতে আসা হতোনা হইতো।
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব" Iqbal Bahar Zahid "স্যারের প্রতি। স্যার নিঃস্বার্থ ভাবে আমাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানায় আমাদের নোয়াখালীর গর্ব আমাদের সকলের প্রিয় অভিভাবক Abdul Karim Munna ভাইয়ের প্রতি। তিনি সব সময় আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহস যোগান।
আমার জন্ম ও পরিচয়ঃ
আমি ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি।আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য ছিলেন। আমার মা একজন গৃহিণী। আমারা চার ভাই-বোন।আমি সবার বড়।আমার পরে আছে দুই ভাই ও এক বোন। আমার বড় একজন ভাই ছিল, সে জন্মের পারে মারা যাই।ঠিক সেই কারণে মা বাবা অনেক আদর পেয়েছি ছোট বেলায়। আমি পড়াশোনায় মোটামুটি ছিলাম। আমার এস এস সি ২০১৩ সালে। আর এইস এস সি ২০১৬ সালে।এক বছর ক্রস যায়।কারণ এইস এস সি পরিক্ষার আগে আমার বিয়ে হয়ে যাই।
আমার শৈশব ছিল অনেক সুন্দর ও মজার। শৈশবের একটা ঘটনা বলি, তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমি আর আমার এক আপু( জান্নাতুল ফেরদৌস) মিলে একটা সমিতি করেছিলাম।সেই সমিতিতে আমাদের বাড়ির ছোট বড় সবাই যুক্ত হয়েছিল। আমি ১০ টাকা করে জমা দিতাম সাপ্তাহিক । বাকি রা যে যার মতো করে দিতো। সমিতি ভেঙে আমি ২০০০টাকা পাই। এটি ছিল আমার জীবনের প্রথম সঞ্চয়।
আমি প্রথম ইনকাম করি ক্লাস নাইনে, টিউশনি করে।
আমার বাবা ছিলন অনেক রাগি মানুষ। খুব ভয় পেতাম। খুব প্রয়োজন না হলে ওনাকে কিছু বলতাম না।বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই।কারণ বাবার সাথে তেমন মিশতে পারিনি, আমাদের কাছে বাবা মানে একজন রাগি মানুষ।
...আমার মা...
মাকে নিয়ে বলে শেষ করতে পারবো না।আমার মা তার সারা জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে শুধু আমাদের মুখের দিকে চেয়ে।একজন রাগি মানুষের সাথে সংসার করে গেছেন আমার মা।একটা সময় এসে আমার বাবা ভাই- বোনের খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেয়,শুধু মাত্র আমার আম্মু প্রতি হওয়া অন্যয়ের প্রতিবাদ করাই।একা অনেক কষ্টে ওদের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।আমার আম্মু আমার শক্তি, আমার অনুপ্রেরণা, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমার আম্মু অনেক ছোট বেলেই মা হারিয়ে ছেন। মানে আমার নানু মারা গেছেন আম্মু ছোট থাকতে।আম্মুর জীবনে পাওয়ার চেয়ে না পাওয়ার তালিকায় বেশি।আম্মু তার সব স্বপ্ন,সুখ বিসর্জন দিয়েছেন আমাদের জন্য।আমি আল্লাহর কাছে সবসময় শুকরিয়া আদায় করি আমার আম্মুকে আমার জীবনে আমার মা করে পাঠানোর জন্য।
আমার দাদা ( হাজী মুজিবুল হক)ততকালীন সময়ের বড় কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন।আমার দাদাকে এক নামে সবাই চিনতেন।আমারা বংশীয় ভাবে ব্যবসায়ী। আমার বাবা, চাচা, জেঠা, জেঠাতো ভাইয়েরা হাতে গনা কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাই ব্যবসায়ী।
এমন কি আমার ছোট ছেলে ও ব্যবসায়ী। ও আপনাদের তো বলা হয় নি আমার একটা ছোট্ট খুব আদরের ছেলে আছে। ওর নাম ফাহাদ চৌধুরী নুসাইর। ওর বয়স ৭ বছর,পড়ে ক্লাস ওয়ানে।ওর একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।এক বছর আগের কথা, একদিন এসে আমাকে বলে আম্মু আমি দোকান দিব,আমাকে কিছু মাল কিনে দাও।আমি পড়ে গেলাম বিপাকে কি কিনে দিবো ওকে।পরে ৫০০টাকার খাওয়ারের জিনিস কিনে দি।আমার ছেলে ওর এই ব্যবসা থেকে ৫০ টাকা লাভ করে।আমি এ থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।এক কথায় বলা যায় আমার ব্যবসায়ী জীবনের অনুপ্রেরণা আমার ছেলে।
একজনের কথা না বললেই নয়।সে হলো আমার ফেরদৌসী আপু( জান্নাতুল ফেরদৌস)।আমার জীবনের আরো একটি বড় পাওয়া হলো আমার ফেরদৌসী আপু।ও আমার জেঠাতো বোন। যেহেতু আমাদের যৌথপরিবার ছিল আমার সব সময় এক সাথে।আমি ওর হাত দরে হাঁটতাম সব সবসময়।প্রতিটি পদে আমাকে বলতো কিভাবে চলতে হবে।এমন কি আমি পরিক্ষায় কি লিখবো কিভাবে লিখবো তা ও শিখিয়ে দিতো। আপু সবসময় আমায় বলতো চল আমারা কিছু করি। যা দিয়ে আমরা আয় করতে পারবো। সবাই কে বলতে পারবো আমি এই কাজ টা করি।আজ আমি ব্যবসায়ী, হোক তা ক্ষুদ্র। সবাইকে বলতে পারি আমি কাজ করি।কিন্তু আপুকে বলতে পারিনি। আপু আমি কাজ করছি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।আপু কে বলার আগেই আপু যে না ফেরের দেশে চলে গেচ্ছে আমাদের ছেড়ে।কোভিড ১৯ কালীন করোনাই আক্রান্ত হয়ে প্রায় এক মাস মৃত্যুর সাথে লড়ায় করে২০২১ সালের১৭ই আগস্ট পরপারে গমন করে।আপুর মৃত্যুতে আমি অনেক ভেঙে পড়ি। খুব কষ্ট হয়ে ছিল এই শোক থেকে বের হতে।আল্লাহর কাছে সব সময়ই একটি দোয়া করি আল্লাহ যেন আপুর নামের ফজিলত ওকে দান করে।আমিন।
২০১৪ সালে বিয়ে হয়।সেই থেকে শুরু হয় আমার লড়ায়।এমন একজন মানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়, তার কাছে আমি মানুষের সম্মান টুকু পেতাম না। আমাকে নাকি বিনা টাকার কাজের লোক হিসেবে আনা হয়েছিল।আমি গ্রামের মেয়ে এটা বোধহয় আমার অপরাধ ছিল।যৌতুকের জন্য আমি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।তবে তা শারিরীক ছিল না ছিল মানসিক নির্যাতন।এমন অনেক দিন গেছে আমাকে আমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে দেওয়া হতোনা।যাও মাঝেমাঝে কথা বলতে দেওয়া হতো তাও কল রেকর্ডিং হতো। আমার প্রতি যে নির্যতন হতো তা বলতে ও পারতাম না।মানসিকভাবে আমি এতোটাই ভেঙে পড়ে ছিলাম যে, আর সারাক্ষণ মনে হতো আমি বোধহয় মারা যাবো।এই ছাড়া আমি মুক্তি পাবোনা। অনেক কষ্টে বের হতে পেরেছিলাম এই সেই সংসার নামক আজাব থেকে।সংসার জীবনের দুই বছরের মাথায় সেপারেশন,চলে আসি এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি।ফের পড়াশোনা চালিয়ে যায়।ভর্তি হয় বি.এস.এস.এ।বর্তমানে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করছি। ২০২০ সালে আমি ডিভোর্স দিয়ে মুক্তি পায় স্বামী নামক লোকটার হাত থেকে।
পাশে পাওয়া মানুষ গুলো
আমার জীবনে আমি অনেক খারাপ সময় পার করেছি।অনেক কষ্ট সহ্য করেছি।যাকে আমার পাশে পাওয়ার কথা ছিলো তাকে পাইনি।তবে আমার জীবনে এমন কিছু মানুষ পাশে পেয়েছি যারা আমাকে আমার জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করেছে।আমার একজন ফ্রেন্ড এর কথা না বললেই নয়,তার মানসিক সাপোর্ট ছাড়া আমি আমার জীবনটা এতো সুন্দর করে উপভোগ করতে পারতাম না।আমার জীবনের ভালো সময়ে , খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিলো সব সময়। আমি চাই সে সব সময় সাপোর্ট কোরুক,আমার সফলতায়, ব্যর্থতায়,আমার পাশে থাকুক,যেমন আমার মা, আমার ভাই - বোন আমার পাশে ছিলো সব সময়।
ব্যবসায়ী হওয়ার পিছনের গল্প
আমি আগেই বলে ছিলাম ব্যবসায়ী হওয়ার পিছনে অনুপ্রেরণা আমার ছেলে।এই অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে আমরা তিন বান্ধবী মিলে শুরু করি আমাদের অফলাইন ছোট্টো বিজনেস। অল্প অল্প করে পরিচিতি লাভ করতে থাকি সকলের কাছে।
ভালোবাসার গ্রুপে আসা
ভালোবাসার গ্রুপে আসতে পেরেছি আমার প্রিয় বান্ধবী বর্তমান সূবর্ণচর উপজেলা এম্বাসেডর Farjana Farju মাধ্যমে। ও যদি গ্রুপ সম্পর্কে আমাকে না বলতো,তাহলে হইতো কখনো ই আমি এই ভালোবাসার পরিবারে আসতে
পারতাম না।তাই ওকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাবো আমাকে গ্রুপে যুক্ত করার জন্য।
গ্রুপ থেকে যা পেয়েছি
আমি এই গ্রুপ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।বিশেষ করে Romana Akter ও Warda Sultana আপুর থেকে।পেয়েছি কিছু ভাইয়া প্রতিনিয়ত পথ দেখাচ্ছেন কিভাবে চলতে হবে।
পেয়েছি স্যারের দেওয়া শিক্ষা। যা নিয়ে আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমি একজন ভালো মানুষ। শিখেছি উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশল।
আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা
প্রত্যেকের মতো আমার ও ভবিষ্যত নিজের ছোট ব্যবসা কে বড় করার পরিকল্পনা আছে। কাজ করার ইচ্ছা আছে অবহেলিত, নির্যাতিত বোনদের সাথে।যাতে করে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে।
সর্বশেষ কথা
জীবনে পাওয়া না পাওয়ার তালিকায় না পাওয়ার সংখ্যা বেশি। তবে যা পেয়েছি তা নিয়ে খুশি আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার পাশে থাকা মানুষ গুলোকে নিয়ে সফলতা অর্জন করতে চাই।
আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আপনার এতোটা সময় নিয়ে আমার জীবনের গল্প টুকু পড়েছেন।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৩
তারিখ ০৪-১১-২০২২ইং
পরিচয়ঃ নুসাইবা নুসাইর
ব্যাচঃ১৮
রেজিঃ৯৬৯২৭
জেলাঃ নোয়াখালী
উপজেলাঃ সূবর্ণচর
কাজ করছি মেয়েদের সকল প্রকার ড্রেস নিয়ে।আমি অফলাইনে ড্রেস সেল এবং সেলাই করছি।খুব তারাতারি অনলাইনে আসবো ইনশাআল্লাহ।।।