একটি বাক্যেই আমার জীবনের মোড় ঘুরে যায়,,,
☆বিসমিল্লাহির রহ-মানির রহিম☆
**আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ**
💐💐 আমার জীবনের গল্প 💐💐
💞প্রথমেই শুকরিয়া আদায় করছি আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এর প্রতি। সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে এবং আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত আমাদেরকে দান করেছেন।
সালাম এবং দুরুদ পাঠ করছি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সা:) এর প্রতি যার উম্মাত হবার পরম সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।
💞শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি প্রিয় বাবা-মা কে। যাদের উছিলাই এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছি। আল্লাহর রহমতে, তাদের অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা ও ভালবাসাই আমাকে বড় করে তুলেছেন। তাদের ঋণ কখনও কোনদিন শোধ হবার নয়। পৃথিবীর সকল বাবা-মায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইল।
💞কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সকল শিক্ষকদের প্রতি যাদের উছিলাই আজ দু অক্ষর লিখতে শিখেছি।
💞কৃতজ্ঞতা জানাই লক্ষ্যধিক তরুণ তরুণীর অইডল, প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal bahar zahid স্যারের প্রতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে আমারা পেয়েছি এই প্রিয় পরিবার "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন । লক্ষ্যধিক তরুণ তরুণীর হৃদয়ের স্পন্দন। ভাল মানুষ গড়ার কারিগর। বেকারত্ব দূরিকরনে যার অবদান প্রতিনিয়তই ক্রম বর্ধমান। স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। স্যারের সুস্বাস্থ এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
💞 জীবনে কখনও আমার জীবনের গল্প সম্পর্কে এভাবে লেখা হয় নি। আমাদের যশোর জেলা টিমের সকল প্রিয় আপু এবং ভাইয়া, আমাদের এই প্ল্যাটফর্ম, এই প্রিয় পরিবার, প্রিয় মেন্টর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ আমার জীবনের গল্প সম্পর্কে দু কলম লেখার সাহস পেয়েছি। স্যারের শিক্ষাকে যদি নিজের মাঝে ধারণ করতে না পারতাম তাহলে হয়ত কখনও আমার নিজের সম্পর্কে লেখাটাই হত না।
✍✍✍ .......জীবনের গল্প.......✍✍✍
🌿জন্ম ও পরিচয়:
১৯৯৬ সালের ৯ আগস্ট খুলনার রেলিগেট এ আমার জন্ম। পিতা মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাতা মোসা: সেলিনা বেগম। আব্বু প্রবাসী মা ব্যাবসায়ি। আমারা দুই ভাই বোন। ভাইয়া বড় আমি ছোট। খুলনাতে জন্ম হলেও পরবর্তীতে আমার দেড় বছর বয়সের সময় আমার পরিবারের সকলে আমাদের গ্রাম আলীগঞ্জ(ফেদী) , নড়াইল সদর, নড়াইল এ চলে আসে। আমার বেড়ে ওঠা ওখানেই। আর আমার শ্বশুর বাড়ি যশোর।
🌿আমার জন্ম যুদ্ধ:
মা, নানির থেকে শুনেছি, আমার জন্মের পর নাকি আমি কেঁদেছিলাম না। আর আমি না কেঁদেই নাকি বাড়ির সকলকে কাঁদিয়ে দিয়েছিলাম। নার্স আপা অনেক চেষ্টা করেছিলেন অনেক চড়, থাবা, ঝাকুনিও দিয়েছিলেন। আমার বেঁচে থাকার সম্ভবনা নাকি কমে গিয়েছিল। চেষ্টার পর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নার্স আপা। নার্স আপা এক বালতি হালকা গরম পানিতে কিছু মেডিসিন দিয়ে আমাকে চুবিয়ে রেখে দিয়েছিলেন দেড় থেকে দু মিনিটের মধ্যে মূখ থেকে বগলা দিয়ে লালা বের হয়। নার্স আপা সাথে সাথে বালতি থেকে তুলে নেই আমাকে এবং আমি কেঁদে উঠি। আর আমার কান্না থামিয়ে দিয়েছিল পরিবারের সকলের কাঁন্না। পরিবারের সকলে বলে, আল্লাহর অশেষ রহমতে, মৃত্যুর মূখ থেকে নাকি ফিরে এসেছিলাম সেদিন।
🌿আমার ছোটবেলা:
ভাইয়ার আট বছরের ছোট ছিলাম আমি আর একটা পুত্র সন্তানের পর কন্যা সন্তান। তাঁরপর আবার জন্মের পর সকলেকে কাঁদিয়ে দেবার জন্য। সবমিলিয়ে সকলের কাছে ছিলাম খুবই আদরের। ছোট থেকে আমি নাকি খুবই শান্ত এবং একটু নরম প্রকৃতির ছিলাম তবে নাকি খুব পাকা পাকা কথা বলতাম।
সবচেয়ে বেশি আদরের ছিলাম আব্বুর কাছে। আব্বুর সাথে কাঁটানো খুব বেশি স্মৃতি আমার মনে নেই। তবে অল্প কিছু মনে আছে। আব্বু যখন গাছ লাগাতো, আব্বু তখন আমাকে সাথে রাখতেন। তখনকার সময়ের একটু একটু মনে আছে আব্বুর কথা। আর মনে আছে। আমার যখন দুই বছর তিন মাস বয়স তখন আব্বু আকাশি রংয়ের একটা শার্ট পরে কালো রঙের একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটে হেঁটে কোথায় যেন যাচ্ছেন, বাড়িতে অনেক মানুষ, আর মা কাঁন্নাকাটি করছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন যে আব্বু কোথায় যাচ্ছে আব্বুতো আমাকে রেখে কোথাও যাইনা। আমি জানিনা ঘটনাটি কি আমার সত্যিই মনে ছিল নাকি সকলের মূখে শুনতে শুনতে মনে গেঁথে গিয়েছিল। সেদিন এর ঘটনাটা মনে খুব দাঁগ কেঁটেছিল হয়ত। আমি নাকি ঘুমের ঘরে প্রায় আব্বু আব্বু করে ডাকতাম আর চিল্লাতাম। যখন একটু বড় হলাম জানতে পেলাম আমার আব্বু বিদেশ থাকেন। প্লেনে করে চলে গেছে আবার প্লেনে করে আসবে আব্বু। তখন থেকে প্লেনের শব্দ শুনলেই দৌড় আব্বু আইছে আব্বু আইছে। প্লেন টা যখন আর নিচে নামতো না। তখন আবার কাঁধতে কাঁধতে বাড়ি ফিরে আসতাম। যাই হোক আসলে আব্বুকে নিয়ে বলতে গেলে হয়তো শেষ হবে না। আসলেই একজন প্রবাসী তাঁর পরিবারের কাঁছে অনেক আবেগের জায়গা। তাই হয়ত বেশি বলে ফেললাম।
ছোট বেলা খেলাধুলা করতাম প্রচুর পরিমাণে। আমাদের বাগিচাতে অনেকে আসতো খেলার জন্য। প্রচুর জাকজমক থাকতো বাড়িটা। ছোট বেলার বিভিন্ন ধরণের খেলার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল পুতুল খেলা। ভীষণ মজা করেছি ছোট বেলাতে। শুধু অভাব ছিল একটা জায়গাতেই আব্বুর উপস্থিতি।
🌿শিক্ষাজীবন:
প্রাথমিক,
আমাদের পাশের গ্রাম, শিবানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নড়াইল এ ভর্তি হয়। আমি ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় খুবই আগ্রহী ছিলাম। শিক্ষকরা খুবই ভালবাসতেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে, আমার শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপ, পি এস সি শেষ হয়।
মাধ্যমিক,
তারঁপর ভর্তি হয় আর, কে, কে, জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লোহাগড়া, নড়াইল। আল্লাহর রহমতে ভালই চলছিল পড়াশোনা। এবার আমি অষ্টম শ্রেণির পড়া শেষ করে নবম শ্রেণিতে বিভাগ নির্বাচন। এবার পড়লাম বিপাকে। বাড়ি থেকে বলেছিল কমার্স নিয়ে পড়তে। আর আমার ইচ্ছা ছিল সাইন্স নিয়ে পড়ার। কারণ ছিল আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে থেকে (১-৪০) রোল পর্যন্ত সকলেই নিয়েছিল সাইন্স। আমার অবস্থান ছিল তখন নবম। আমার মনে হয়েছিল চল্লিশ রোল পর্যন্ত সবাই সাইন্স নিচ্ছে। আর আমি নবম হয়েও সাইন্স নিব না। আর আমার কাছেতো। গণিত আর বিজ্ঞান বিষয়টা ভালোই লাগে তাহলে আমি কেন সাইন্স নিব না। বাড়ি থেকে প্রথমে রাজি হচ্ছিল না পরবর্তীতে রাজি হয় আর বলে যদি তুমি এ প্লাস না পাউ তাহলে কিন্তু তোমাকে পরবর্তীতে আর সাইন্স নিয়ে পড়তে দিবো না। আমি বলি ঠিক আছে। ভর্তি হলাম সাইন্স এ। অনেকের অভিভাবক রাজি না থাকার কারণে তাঁরা অন্যান্য বিভাগে ভর্তি হল। আমাদের ব্যাচ থেকে সাইন্স এ ভর্তি হলাম আমরা ৩৫ জন। নতুন বই প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু শেখা বেশ ভালোই চলছিল পড়াশোনা।
নবম শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষার মাঝামাঝি সময় থেকে হঠাৎই শুরু হয় মাথাই যন্ত্রনা। দিন যাচ্ছিল আর ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল মাথাই যন্ত্রনা। এবার বাড়ি থেকে বলে মানা করেছিলাম সাইন্স নিওনা। সাইন্স এ অনেক পড়াশোনা করতে হয়। এই পড়াশোনার চাপে এখন তোমার মাথাই যন্ত্রনা শুরু হয়ে গেল। কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হল শ্বাস-কষ্ট। হোমিওপ্যাথি, এ্যালোপাথি কোন ওষুধেয় ঠিক হচ্ছিল না। ডাক্তার বলতো মাইগ্রেন এর সমস্যা আর যে ওষুধ দিত ওষুধ খেলে শুধু ঘুম আসতো। ঘুমিয়ে থাকলে ভাল থাকতাম আর জেগে থাকলে আবার যা তাই। ধীরে ধীরে পড়ালেখাতে অবনতি হতে লাগলো। যখন মাথাই যন্ত্রনা হত দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরে পড়তাম। নবম শ্রেণির শেষে রোল হয়ে গেল এগারো। সকলেই যেখানে স্বস্তিতে পড়াশোনা করছিল আমার জন্য হয়েগিয়েছিল কষ্ট কর। কিছু করার ছিল না। মাঝে মাঝে কান্না কাটি করতাম আর পড়তাম। দশম শ্রেণির মাঝামাঝি সময়ে খুলনাতে ডাক্তার দেখলাম সেখানে ধরা পড়লো আমার দুই নাকেই পলিপাস এর সমস্যা। আর তা আনুমানিক চার থেকে পাঁচ বছর আগের বলে ধারণা করা হয়। এই দীর্ঘদিনে চিকিৎসা না হওয়াই নাকের পলিপাস অনেক বড় হয় গিয়েছে এর জন্যই এখন মাথাই যন্ত্রনা ও শ্বাস-কষ্ট হচ্ছে। পলিপাস এর প্রধান শত্রু হল ধূলাবালি। আর আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠে ঘাস ছিলনা ছিল প্রচুর ধূলাবালি যার জন্যই আরও বেশি সমস্যা হচ্ছিল। ডাক্তার ওষুধ দিল ওষুধ খেলে শুধু ঘুম আসে। পড়াশোনা ঠিক মত করতে পারছিলাম না। একদিন প্রচন্ড রাগারাগি করেছিলাম বাড়িতে। দুমাস পর আমার টেষ্ট পরীক্ষা এরকম আমি ঘুমিয়ে থাকলে আমি কি করে পড়াশোনা করবো। আমি এই ওষুধ খাব না। সব ওষুধ নষ্ট করে ফেলেছিলাম। মা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক খোঁজার পর একজন ডাক্তারের সন্ধান পান তিনি তখন আমাদের নড়াইল এই রুগি দেখতেন। ডাক্তার বলেছিলেন তোমার দীর্ঘদিন চিকিৎসা না হবার কারণে অনেক বেড়ে গিয়েছে সমস্যাটি। তোমার সামনে পরীক্ষা তাই এই ওষুধ গুলা দিলাম কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করে ফেললে ভাল হবে। আর বললেন যে আমি আর চার মাস আছি বাংলাদেশে তাঁর পর আমি বিদেশে যাব ট্রেনিং এর জন্য। যদি আপনারা অপারেশন করাতে চান তাহলে এই দু মাসের মধ্যে জানাবেন।
অবশেষে আমার টেষ্ট পরীক্ষার শেষের দিন আমার অপারেশন হল। অপারেশনের পর এক মাস সম্পূর্ণ বেড রেস্ট। টেষ্ট পরীক্ষার রেজাল্ট এ ৬ষ্ঠ হয়েছিলাম। স্যারেরা বলেছিলেন রাখি সুস্থ থাকলে ও আরও ভাল রেজাল্ট করতে পারত। যাই হোক, সুস্থ হবার আশায় অপারেশন অথচ এক মাস পড়াশোনা স্কুল সব বন্ধ। এক মাস পর একটু একটু করে আবার পড়াশোনা শুরু করলাম কিন্ত এই এক মাসে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। পরীক্ষা দিলাম তেমন আশানুরূপ পরীক্ষা হচ্ছিল না। মোটামুটি একটা পরীক্ষা হল। রেজাল্ট তেমন ভাল হল না।
উচ্চ বিদ্যালয়,
পরিবারের শর্ত অনুযায়ী, এ প্লাস না হওয়াই এইচ এস সি তে গ্রুপ পরিবর্তন করতে হল। আল্লাহর রহমতে তখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আর্টস এ ভর্তি হলাম। আমাদের গ্রামের কলেজ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়, নড়াইল এ। এইচ এস সি পরীক্ষার এক মাস পূর্বে মা অসুস্থ হয়ে পড়লো। মাকে নিয়ে ২১ দিন ছিলাম খুলনা আড়াইশ বেড এ। পরীক্ষার এক সপ্তাহ পূর্বে আমাদের বাসায় একটা বোন থাকতো তাকে হাসপাতালে রেখে এসে পরীক্ষা দিলাম। সারাক্ষণ মন থাকত মায়ের কাছে। এইস এস সি শেষ হল।
জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয়,
এবার অনার্স এ ভর্তির সময় বাড়ি থেকে বলে হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে অনার্স করতে। আর আমার ভাল লাগার বিষয় ছিল অর্থনীতি। আমি চেয়েছিলাম অর্থনীতি নিয়ে পড়তে। কিন্তু এর পূর্বে যেহেতু নিজের ইচ্ছাতে সাইন্স নিয়েছিলাম এবার আর হবে না এবার হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে বললাম ঠিক আছে। অনার্স এ সাবজেক্ট ও আসলো হিসাববিজ্ঞান। নড়াইল ভিক্টরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে।
আমাদের বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার ভ্যানে বা অটোতে করে যেতে হতো আর বাকি পাঁচ কিলোমিটার বাসে। বাস জার্নি করতে পারতাম না বমির সমস্যা ছিল। ছ মাস সকালে না খেয়ে যেতে যেতে এসিডিটির সমস্যা শুরু হল। আস্তে আস্তে জার্নিতে অভ্যস্ত হলাম। এর পর কষ্ট হলেও প্রথমের মত অতটা হতনা। আর পরিবার ছেড়ে থাকতে পারবো না বিধায় মেস্ এ ও যাই নি। প্রথম বর্ষ শেষ হল। ২য় বর্ষ শুরু হল। প্রথম বর্ষে পড়াশোনা তেমন একটা করতাম না। দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতেই মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার দু মাস আগে আমার বিয়ে হয়ে যাই।
🌿বিবাহিত জীবন:
বিয়ের পর আমি বাপের বাড়িতেই থেকে যাই। যেহেতু দু মাস পর ই ছিল আমার পরীক্ষা। তাই অভিভাবকরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন আমার অনার্স পরীক্ষা শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত আমি বাপের বাড়িতেই থাকবো আর পরীক্ষা শেষ হলে বা সময় সুযোগ বুঝে অনুষ্ঠান করে মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। আমার শ্বশুর বাড়ি যশোর। কর্ম সূত্রে স্বামী ঢাকা থাকেন। ২য় বর্ষের পরীক্ষা শেষে ঢাকা বেড়াতে এসেছিলাম সেখান থেকেই সোজা শ্বশুর বাড়িতে চলে যেতে হয়। নতুন শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছি নতুন সংসার, নতুন মানুষ। কিন্তু আমার শ্বশুর বাড়ির সকলে আমাকে অল্প দিনেই অনেক আপন করে নিয়েছিলেন। আমার শ্বশুর বাড়ির সকলেই আমাকে এখনও ভীষণ ভালবাসে।
গ্রামের মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই আমি যখন শহরের দেয়ালে ঘেরা একটা বদ্ধ ফ্ল্যাটে আসলাম। খুব কষ্ট হয়েছে এই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে। শ্বশুর বাড়ি থেকে যখন বাপের বাড়িতে যেতাম মনে হত যে একটা খাঁচাতে আটকে রাখা পাখিকে কিছু সময়ের জন্য খোলা আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর জন্য।
আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ গুলো থেকে পেয়েছি অনেক ভালবাসা। ওখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও। মানুষ গুলোর সাথে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পেরেছি। কেমন যেন একটা মায়ার বন্ধন তৈরি হয়ে গিয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে, স্বামী হিসাবে এমন একজন মানুষকে পেয়েছি আসলে তাঁর সম্পর্কে যতই বলিনা কেন কম হয়ে যাবে। সারাক্ষণ পরম যত্নে আগলে রেখেছেন আমায়। আমার উদ্যোক্তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাকে প্রতিনিয়তই সাহস দিয়ে এবং সহযোগিতা করে চলেছেন।
🌿বিবাহ পরবর্তী সংসার ও শিক্ষা জীবন :
সবই ঠিক ছিল কিন্তু শুধু পড়াশোনা টা করতে পারছিলাম না। কিছু দ্বায়িত্ব কর্তব্যের বেড়া জালে আটকে পড়েছিলাম। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার এক মাস একুশ দিন পূর্বে আবার সুযোগ পাই পড়াশোনার। বাপের বাড়িতে আসি এবং পড়াশোনা শুরু করি। আমার কাছে এই এক মাস একুশ দিনের জীবনটা ছিল রীতিমত একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। যারা হিসাববিজ্ঞান নিয়ে অনার্স করছেন অন্তত তাঁরা বুঝতে পারবেন যে আসলে সম্পূর্ণ নতুন বই হাতে নিয়ে মাত্র এক মাস একুশ দিনে কি হয় পড়াশোনার। আর ৩য় বর্ষটা একটু কঠিন হয়ে থাকে সাধারণত।
যেহেতু দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতেই ভাল পড়াশোনা শুরু করেছিলাম তাই, কোচিং এর টিচার ও আমার ফ্রেন্ডদের কাছে অনেক পরিচিতি পেয়েছিলাম। যার কারণে এই শেষ মুহূর্তে এসেও সকলেই আমাকে ভীষণ সহযোগিতা করে। আমার চারটা ফ্রেন্ড এবং টিচারা যে ভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছে আসলেই বলার বাইরে। আমার ফ্রেন্ড গুলো সমস্ত ম্যাথ সাবজেক্ট গুলোর সূত্র একসাথে করে একটা সিট বানিয়ে দিয়েছিল, ক্লাস এর পূর্বে এবং পরে ওরা আমাকে ম্যাথ বুঝিয়ে দিত, বাড়িতে ম্যাথ করতে যেয়ে না পারলে ওরা মোবাইল এ ছবি দিত ফোনকলে মূখে মূখে বুঝিয়ে দিত। অনেক সাহস দিত। টিচাররা অনেক সময় ফ্রি থাকলে ম্যাথ বুঝিয়ে দিতেন। আর ঐ স সব কিছু মিলিয়ে অন্তত প্রতিটি ম্যাথ সাবজেক্ট এ (৪০-৬০) নম্বর এর একটা প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়। আর রিটেন সাবজেক্ট গুলো শুধু পরীক্ষার আগের দু দিন তিন দিন যে ছুটি ছিল ঐ সময়ে পড়ে পরীক্ষা দেয়। অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে, রেজাল্ট এ পাশ করি সকল বিষয়ে। আমার একটা বিষয় খুব ভাল লেগেছিল যে। আমি ৬০ নম্বর এর প্রস্তুতি নিয়েও সে বিষয়ে পেয়েছিলাম (৫৫-৫৯) নম্বর এর মধ্যে।
শুরু হল চতুর্থ বর্ষের পড়াশোনা। এবারও একই সমস্যা। তবে এবার সুযোগ পেলাম পরীক্ষার পূর্বে তিন মাস। আবার বাপের বাড়ি নড়াইল এ আসলাম। বই কিনে পড়াশোনা শুরু করলাম। কিন্ত এক মাস পর হঠাৎই কোচিং বন্ধ হয়ে গেলো। সরকার থেকে নির্দেশ এসেছে সকল কোচিং বন্ধ রাখার। এবার তো পড়ে গেলাম চরম বিপাকে। কি করবো কি করবো করতে করতে অবশেষে নিজে নিজে শুরু করলাম যে দেখি ম্যাথ গুলো পারি কিনা। সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায় অনেক চেষ্টা করতে থাকি কিন্তু পারি না ফ্রেন্ড রা ছবি দিচ্ছে, বলে বুঝিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কত ওরা কত বুঝিয়ে দিবে। একটা ম্যাথ নিয়ে তিন দিন চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। একদিন তো রাতের বেলা বই খাতা চেলে ফেলে দিয়েছিলাম ঘরের মধ্যে। আর প্রচুর কেঁদেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় ভাবি আমি কাঁদছি কেন কাঁন্না করলেই কি আমি পরীক্ষাতে পাশ করে যাবো। না তা তো হবে না। আমার হাতে এখনও সময় আছে। আমি কেঁদে কেন সময় নষ্ট করছি। আমাকে মাথা ঠান্ডা করে আবার চেষ্টা শুরু করতে হবে। এবং আবার ম্যাথ করতে শুরু করি। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন রাত 12 থেকে শুরু করে 1:45 এ যেয়ে আমি অংকটা করতে পারি। আসলে সেদিন যে আমার কি আনন্দ হয়েছিল তাঁর ভাষা নেই। একটা আত্মবিশ্বাস জাগলো আমি পারবো, আমাকে চেষ্টা করতে হবে। নিজের মাস্টার নিজেকেই হতে হবে। পরবর্তীতে সময় লাগতো অনেক কিন্তু পারতেছিলাম। ধীরে ধীরে সময়টাও কম লাগতো। ফ্রেন্ডদের সহযোগিতা আর চেষ্টায় অবশেষে এবারও (৫০-৮০) নম্বর এর প্রস্তুতি সম্পন্ন হল। পরীক্ষা শেষ হল করোনা কালীন সময়ের মধ্যেই। আল্লাহর অশেষ রহমতে মোটামুটি একটা রেজাল্ট নিয়ে পাশ করলাম। অনার্স কমপ্লিট হলো।
🌿জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন: একদিন সপ্তম শ্রেণিতে একটা ক্লাসে টিচার সকলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে আজ আমরা সকলের জীবনের লক্ষ্য জানবো। তো সকলেই বলছিল এবার আসলো আমার পালা আমি তো দাঁড়িয়ে আছি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। ফ্রেন্ড রা বললো আরে কিছু একটা বলে দে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা টিচার। তখন আমি বলেছিলাম। ডাক্তার বা টিচার। এস এস সি তে ভাল রেজাল্ট না হবার কারণে ডাক্তার হবার স্বপ্নটা আর হল না। আমার নার্সিং পেশাটা খুব ভাল লাগতো , নার্সিং এ পড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু সে সুযোগটাও হল না। ইন্টারমিডিয়েট এ পড়া কালিন সময়ে আব্বু বলেছে টিউশনি করাতে কিন্তু আমার একটু ইগো সমস্যার কারণে পড়াই না। আব্বু বার বার বোঝাতে থাকে আমি তোমাকে টাকার জন্য পড়াতে বলছিনা এতে তোমার মেধার বিকাশ ঘটবে। আব্বুর অনেক বোঝানোর পর শুরু করি পড়ানো। ক্লাস টু এর এক জন ছাত্রী দিয়ে। লোকে অনেক কথা বলতে শুরু করে। যে তোদের কি অভাব আছে নাকি, যে আবার প্রাইভেট পড়াচ্ছিস। টাকার দরকার পড়ল নাকি, শেষ পর্যন্ত সিদ্দিকের মেয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু বরাবরই এ ধরণের কথা তে খুব একটা কান দেই না। ধীরে ধীরে ভালোই সুনাম পেলাম। এমন একটা পর্যাই দাঁড়ালো যে স্টুডেন্ট ও স্টুডেন্টদের অভিভাবক এর রিকোয়েস্ট ফেলতে না পেরে। আমার পাঁচটা ব্যাচ পড়ানো শুরু করতে হল। গরমের সময় সকাল ৫:৩০ থেকে শুরু হত পড়ানো মাঝে কলেজ আবার বাড়ি ফিরে পড়াতাম। এই থেকে তৈরি হল শিক্ষক হবার প্রতি ভাল লাগা। সিদ্ধান্ত নিলাম আমি শিক্ষক হব, ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু বিয়ের পর সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটলো। যখন প্রতিনিয়তই নিজের মধ্যে নিজের পড়ালেখার অবনতি দেখছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল এভাবে চলতে থাকলে ভাল রেজাল্ট তো হবেই না আর নিজের ক্লাসের পড়াই পড়তে পারছি না তাঁর উপর আবার চাকরির পড়া কখন পড়বো। বর্তমান চাকরির বাজার এর যে অবস্থা। আমার যে চাকরি হবেই তাঁর কি নিশ্চয়তা আছে, আর তা যে যশোর এই হবে তাঁরই বা কি নিশ্চয়তা। আর আমি যে যশোরেরই থাকবো তাঁরই বা কি নিশ্চয়তা আছে। চিন্তা শুরু হয়। কি করা যাই? কি করা যাই?
এবার অনার্স শেষ হল আর এত যুদ্ধ পেরতে গিয়ে রেজাল্ট তেমন একটা ভাল করতে পারলামনা। যেখানে স্বপ্ন ছিল ভাল একটা রেজাল্ট করার শেখানে পাশ মার্ক তুলতে যেয়েই এত যুদ্ধ। চিন্তা করছিলাম এ পর্যন্ত পুরা জীবনটাই শুধু পড়াশোনার পেছনেই ছুটে বেড়ালাম কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে ফলাফলটা তো আশানুরূপ হল না। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বরাবরই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কোন লাভ হয়নি। তো আর এই পড়াশোনা আমি করবো না।" নিজের বলার মত একটা ফাউন্ডেশন " এ জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম। এখন আমি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা তৈরি করবো, ইনশাআল্লাহ। তাই এবার আর মাস্টার্স এ ভর্তি না হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনার্স কমপ্লিট করেছি , আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আর করবো না এই পড়াশোনা। কারণ এই পড়াশোনার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
🌿 ব্যাবসায়িক ও উদ্যোক্তা জীবনের শুরু:
আমার তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হল। পরীক্ষা শেষের পরের দিন মায়ের কাছে যেয়ে বল্লাম মা আমার তো এই বারের মত পরীক্ষা শেষ আসো তোমার সাথে একটু গল্প করি।
মা সেদিন গল্প করতে করতে কেঁদে দেয় বলে, আমি আর মনে হয় বেশি দিন বাঁচবো না। আমার এই জীবন আর ভাল লাগে না। তোর আব্বুরও বয়স হয়েছে। মানুষটা আর কত কষ্ট করবে এখনও বাড়ি আসলো না। শুধু দুশ্চিন্তা মাথাই আসে। আর চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থতাও যেন পিছু ছাড়ছে না একটার পর একটা লেগেই আছে। তখন মায়ের ঐ কথাটি আমার মনে খুব কষ্ট লাগে। আমার মনে আছে আমি সে দিন সারা রাত ঘুমোতে পারছিলাম না। যে মা আমাদের জন্য এত কষ্ট করলো আজ সেই মা মৃত্যু কামনা করছে। আমাকে কিছু একটা করতে হবে যাতে আমার মা বলে যে আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই তোদের নিয়ে।
কয়েক দিন ধরে চিন্তাই চিন্তাই অস্থির হয়ে পড়ি। হঠাৎই একটা কথা মাথাই আসে যে আমার বিয়ের কিছুদিন পর আমার স্বামী আমাকে বলেছিল যে তুমি পোষাক সেল এর বিজনেস শুরু করতে পারো। কিন্তু তখন আমি রাজি হয়নি। একটু ইগো সমস্যা এবং আমার কখনও স্থিরভাবে কোথাও থাকা হত না। প্রয়োজন এর দাগিদে কখনও নড়াইল কখনও যশোর কখনও ঢাকা থাকতাম। যার জন্য কিছু শুরু করতে পারছিলামনা। এবার আমার স্বামীকে বলি যে আমি বিজনেসটা করতে চাই। তারপর কিছুদিন পর মেয়েদের পোষাক নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। এবং আমি চিন্তা করলাম যে দেখি মা যদি আমার অবর্তমানে এই বিজনেসটা ধরে রাখতে পারে তাহলে আমার মা কাজের মধ্যে থাকতে পারবে এবং আমার মায়ের মন ভাল থাকবে। যদিও বা ভীষণ টেনশনে ছিলাম মায়ের বয়স এবং অসুস্থতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তবে অনেক ভেবে চিন্তেই রিস্কটি নিয়েছিলাম।
এ সময়ে আমি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর সাথে যুক্ত কিন্তু তখনও রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। কিন্ত স্যারের সেশন গুলো, সেশন ভিডিও গুলো, Utv live এর "ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প" গল্প গুলো দেখতাম অনেক ভিডিও দেখেছি। তবে আমি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম Julekha Khatun Suma আপুর গল্প থেকে। আপু পর্দার আড়াল থেকে কত সুন্দর ভাবে আপু আপুর উদ্যোগ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। প্ল্যাটফর্ম এর প্রতি দিন দিন ভালবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
উদ্যোগ শুরু করি মাত্র ১১,১৩৫ টাকা নিয়ে 04.03.2021 তারিখ থেকে। শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না কিন্তু আল্লাহর রহমতে এক পর্যায়ে ভালই সেল হতে থাকে। রোজার ঈদ পর্যন্ত আমরা মা মেয়ে মিলে বিজনেস টা চালিয়েছি। স্বামীর কর্ম সূত্রে ধামরাই,ঢাকা চলে আসায়। রোজার ঈদের পর থেকে আমার মাই সম্পূর্ণ ভাবে একাই অফলাইনে সেল করছেন পোষাক। ইনশাআল্লাহ, খুব শীঘ্রই অনলাইনেও শুরু করবো।
রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে ভালবেসে প্রিয় প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হয়। স্যারের ৯০ টি সেশন নিয়মিত চর্চার মাধ্যম নিজের মধ্যে আসে আমূল পরিবর্তন। "স্যারের একটা কথা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করে যে একটা কাজ করার জন্য আপনার জন্ম হয়নি।" সাহস করে শুরু করি আরও একটি উদ্যোগ নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে উৎপাদিত মোজারেলা চীজ এর।
🌿প্রিয় এই পরিবার/প্ল্যাটফর্ম "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর সাথে যুক্ত হওয়া:
পড়াশোনার যখন বেহাল দশা। তখন খুবই চিন্তাই পড়ে যাই। কি করা যাই? এই নিয়ে ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখতাম। অনেক মোটিভেশনাল বক্তব্য শুনতাম। আনুমানিক ২০১৮ অথবা ২০১৯ সাল হবে। আমার সমনে জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটা ভিডিও আসে। যে আপনারা কীভাবে রিপিট ক্রেতা পেতে পারেন। স্যারের কথাগুলো আমার ভীষণ ভাল লাগে। একটা কথা মনে গেঁথে আছে যে আপনার প্রডাক্ট যারা কিনছে তাঁদের নাম এবং সম্ভব হলে তাঁদের ফোন নাম্বারটা নিয়ে আপনারা একটা ডাইরিতে লিখে রাখবেন। যখন আপনি আবার প্রডাক্ট আনবেন ছোট করে তাঁদেরকে একটা এস এম এস এ জানিয়ে দিবেন আপনি প্রডাক্ট এনেছেন। আর মাঝে মধ্যে তাঁদের একটু খোঁজ খবর রাখবেন যদি সম্ভব হয়। এই কথা গুলো আমার ভীষণ ভাল লাগে। যে, মানুষটা অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বললেন তো। এবার আমি লাইক দিয়ে রাখলাম আর স্যারের আরও ভিডিও দেখতে লাগলাম। এক পর্যায়ে জানতে পেলাম। একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে। ফেসবুক গ্রুপেও যুক্ত হলাম। পোস্ট গুলো দেখতে দেখতে হঠাৎই স্যারের একটা পোস্ট সামনে আসে।
স্বপ্ন দেখুন,
সাহস করুন,
শুরু করুন,
লেগে থাকুন,
সফলতা আসবেই,
ইনশাআল্লাহ।
এই কথাটি আমার ভীষণ ভাল লাগে। এবং সেদিন থেকেই নিজের সাথে মেলাতে শুরু করি। যে আমি স্বপ্ন দেখি, সাহস ও আছে কিন্তু শুরু করবো কীভাবে? অনেক অনেক আইডিয়া খুঁজতে থাকি তাঁর মাঝেই মাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে একটা পোষাক এর বিজনেস শুরু করি। আমি তখনও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে সে বিষয়ে তেমন একটা জানি না পরবর্তীতে বুঝতে পারি। আমার অনার্স পরীক্ষা শেষ হয়। এবার চিন্তা করি বিজনেসটা নিয়ে এবার অগ্রসর হওয়া দরকার। পরিচয় হয় আমাদের যশোর ডিস্ট্রিক্ট এম্বাসেডর Jesmin Rose আপুর সাথে। আপুর সহযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন করে এই প্রিয় পরিবার এর সাথে যুক্ত হয় ১৮তম ব্যাচ থেকে। আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি Jesmin Rose আপুর প্রতি। আপুর মাধ্যমে আমি এই ভাল মানুষের পরিবারে যুক্ত হতে পেরেছি। আপু আমাকে যশোর জেলা মেসেন্জার গ্রুপে যুক্ত করে দেন। এর পর যুক্ত হয় সেশন চর্চা ক্লাসে।
🌿নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে আমার পাওয়া:
এই পরিবার থেকে প্রাপ্তির সংখ্য অনেক। যা পেয়েছি তা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে প্রাপ্তির ঝুড়ি থেকে কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
১৷ আমার উদ্যোক্তা জীবনের একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পেয়েছি। যা আমার পরম সৌভাগ্য।
২৷ প্রিয় স্যারের মত একজন ভাল এবং মানবিক মানুষ পেয়েছি।
৩৷ আমি পেয়েছি বিশাল বড় একটা পরিবার। আর এই পরিবারের লক্ষ্য লক্ষ্য ভাই বোন।
৪৷ নিয়মিত সেশন চর্চা ক্লাসের মাধ্যমে নিজ জেলার ভাই বোনদের সাথে পরিচিত হওয়া এবং একটু একটু করে কথা বলার জড়তা দূর করতে পারছি প্রতিনিয়তই।
৫৷ প্রিয় প্লাটফর্মে বিভিন্ন জেলাসহ নিজের জেলার কিছু প্রিয় ভাই ও বোন পেয়েছি যারা সবসময়ই পাশে থাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে।
৬৷ হতাশা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। নিজের মাঝে আমার এই নতুন আমিটাকে আবিস্কার করতে পেরেছি।
৭৷ নতুন করে জীবন কে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি ও সাহস অর্জন করতে পেরেছি।
৮। প্লাটফর্মে স্যারের সেশন ও ১৬ টি স্কিলস অর্জন করার সুযোগ পেয়েছি।
৯৷বাবা-মাকে ভালবাসা ও বাবা-মায়ের প্রতি যত্নশীল হবার শিক্ষা পেয়েছি।
১০৷ সর্বোপরি একজন ভাল মানুষ হবার শিক্ষা পেয়েছি।
💞সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে, ধৈর্য্য সহকারে আমার জীবনের গল্পটি পড়ার জন্য। আমার লেখার মাধ্যমে যদি আমার অজান্তেই আপনাদের কারো মনে কোন কষ্ট দিয়ে থাকি তা হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের কাছে ক্ষমা এবং দোয়া প্রার্থী।
💞আল্লাহর রহমতে, আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব, Iqbal bahar zahid স্যারের শিক্ষাকে যেন আমি প্রতিনিয়তই নিজের মাঝে ধারণ করে একজন ভাল মানুষ হতে পারি দোয়া করবেন সবাই। প্রিয় প্লাটফর্মের সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। সবসময় একে অপরের পাশে থেকে আমরা এগিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৪
তারিখ ০৬-১১-২০২২ইং
🪴ধন্যবাদান্তে,
🌸নাম: Mst Rakhi Khanam
🌸ব্যাচ: 18
🌸রেজিস্ট্রেশন নং: 96948
🌸জেলা: যশোর
🌸উপজেলা : যশোর সদর
🌸বর্তমান অবস্থান: ধামরাই, ঢাকা
🌸প্রমোশন টিম মেম্বার
আমি কাজ করছি নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে উৎপাদিত মোজারেলা চীজ এবং মেয়েদের পোষাক নিয়ে।
পেইজ নাম: Destination.bd.in