স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন,লেগে থাকুন সফলতা আসবেই এই স্লোগান টি প্রমাণিত সত্যি।
🕋পরম করুনাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি🕋
✍️✍️আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহ,
✍️মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে সুন্দর এই পৃথিবীতে প্রেরন করেছন ও মুসলিম পরিবারে জন্ম দিয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ্।
🤲✍️সমস্ত প্রসংসা মহান রবের জন্য যিনি আমাকে পৃথিবীর বিভিন্ন মহামারি বালা মছিবতের মধ্যেও সুস্থ রেখেছেন।
🌹ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার প্রিয় মা -বাবার প্রতি। যাদের জন্য আমি পৃথিবীর মুখ দেখেছি। যাদের অফুরন্ত স্নেহ - ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছেন।
🌹🌹আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সেই মহান মানুষটির প্রতি যার জন্য আমি নিজের জীবনের গল্প লিখার সাহস এবং সুযোগ পেয়েছি, ভিন্ন পথে ভিন্ন ভাবে সফল হওয়ার পথ দেখছি! প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আপনার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
💐💐প্রিয় পাঠক বন্ধু আপনাদের জন্য এক গুচ্ছ লাল গোলাপ শুভেচ্ছা ও অফুরন্ত ভালোবাসা।
✍️আমার গল্প একান্ত আমার জীবনের।
বাবা, মা, দাদি আর আমি সহ চার ভাই বোন মোট সাত জনের পরিবার ছিল আমাদের।
আমার বাবা একজন সৎ সাহসী সত্যবাদি পর উপকারি আর প্রচন্ড রাগী মানুষ, আদর্শ ব্যাবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। গ্রামের মেম্বার আর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ায় খুব নাম ডাক ছিল ওনার।
আমার মা ও একজন পরিশ্রমী ও আদর্শ মা, স্ত্রী আর গৃহিণী ছিলেন।
বাবার সেই আদর্শে ছোট থেকে আমাদেরকে বড় করে তুলেছেন, কখনো অন্যায় অপরাধ করার সাহস ও পাইনি। যদি অন্য কেউ আমাদের সাথে অন্যায় করতো বাড়িতে এসে বললে উল্টো মার খেতে হত, আর বলত তোমরা উখানে কেন গিয়েছিলে?
✍️আমার শৈশব,
আমার শৈশবের জীবন খুব হাসিখুশি আনন্দেই কেটেছে। ছোট বেলা থেকেই আমার সব থেকে ভালো বন্ধু ছিল আমার মা।
ছোট থেকেই আমি একটু ধ্রত চতুর ছিলাম। নব্বই দশকের খেলার জগতে যত ধরনের খেলা ছিল, এমন কোনো খেলনা নেই যা ,,আমি খেলিনি।
তিন ছেলে আর আমি একটা মেয়ে, খুব ভালোবাসতেন বাবা -মা আমাকে। বাবার কলিজার টুকরা ছিলাম। আমার কথায় বাবার শেষ কথা ছিল। বাবার সিদ্ধান্ত বদলানোর ক্ষমতা সুধু আল্লাহ যেন আমার মধ্যেই দিয়েছিলেন । বড় ভাই ও ব্যাবসা করতেন। বড় ভাই যেখানে যেত সাথে আমাকে নিয়ে যেত। আমাদের গ্রামে খুব বড় মেলা হতো। বড় ভাই সাথে করে নিয়ে যেত মেলা দেখাতে। মেলায় এতো দোকান সুধু একটা দোকানেই নিয়ে যেত আর বলতো যা খুশি এই দোকান থেকে নিতে। আমার খুব নাগরদোলাতে উঠতে ইচ্ছে করতো কিন্তু ভাইয়া তো রাতে নিয়ে যেত যখন তেমন একটা মানুষ থাকেনা, তখন তো আর নাগর দোলনা চলেনা। তাই মায়ের থেকে টাকা নিয়ে চুরি করে মেলাই যেতাম দিনের বেলা। কিন্তু যেদিকেই যাই ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে যেতো।
মেজো ভাই কারো সাথে খেলতে দিতনা বলতো খেলনা নিয়ে ঘড়ে খেলতে। মেজ ভাই বাড়ি থেকে বের হলেই আমিও বের হয়ে যেতাম আমার সমবয়সীদের সাথে। তারপর সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম, মাথায় প্যান্ট দিয়ে চুল বানিয়ে মাঠে ডিপ সেলোমেশিনে যেতাম গোসল করতে। সেলোমেশিনের ড্রেনে একজন বসে থাকতাম অন্যজন পা ধরে টেনে নিয়ে যেত।খুব মজা হতো। আর এদিকে আমার মা পাগলের মত সব জায়গায় আমাকে খুঁজে বেড়াতো। বাড়িতে গেলেই জরিয়ে ধরতো আর বলতো এবার যদি এমন করি আমাকে খুব মারবে কিন্তু আমি যানতাম এটা শুধুই আমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলতো। সব মিলিয়ে অসাধারণ ছিল আমার শৈশবটা।
✍️আমার লেখাপড়া ও বিয়ে,
প্রাথমিক বিদ্যালয়,
স্কুল টা ছিল গ্রামের মধ্যেই। মা খুব ভোরে উঠে নামাজ পড়েই রান্না করতেন আব্বু আর বড় ভাই আটটার মধ্যে বাজারে দোকানে চলে যেতেন। মেজ ভাই আর আমি স্কুলে যেতাম। আর ছোট ভাইটা বাড়িতে থাকতো।মা আমাকে ডিম সিদ্ধ করে দিতেন স্কুলে খাবার জন্য। আর আব্বু প্রতিদিন আমাকে টাকা দিতেন স্কুলে খাবার খাওয়ার জন্য। আমি সেই টাকা দিয়ে নিজের জন্য কিছু কিনতামনা বাড়িতে থাকা ছোট ভাইটার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেতাম। খুব খুশি হতো ও। স্কুলের সভাপতি ছিলেন আব্বু তাই সব সময় ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে চাইতাম যাতে আমার জন্য আব্বু কে ছোট হতে না হয়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
প্রথম দিন খুব কান্না লাগছিল, পরিচিত কোন বন্ধু বান্ধব নেই, সবাই অপরিচিত!
কয়েক দিন পরথেকে দেখলাম আমার প্রাইমারি স্কুলের অনেকই সেই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সেখানেও ভালো ভাবে পড়াশোনা আর ভদ্র থাকতে চেষ্টা করলাম কারন সেই স্কুলের সভাপতি ও আমার আব্বু ছিলেন।
ভালই চলছিল সব কিছু। তিনজন মনের মত বান্ধবী পেলাম। তাদের ছাড়া কিছু ভালোই লাগতোনা। একসাথে পড়াশোনা, টিউশনি, ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা, গান- বাজনা, কেনাকাটা সবই একসাথে করতাম চারজন। স্কুলের বেশিরভাগ মানুষই ডাকতে ফোর স্টার বলে। স্যার - মেডামদের ও খুব পছন্দের ছিলাম। পুরো ক্লাস যখন হৈচৈ শুরু হয়ে যেত আমরা চারজন তখন গান করতাম একসাথে আর সাথে সাথে পুরো ক্লাস চুপচাপ হয়ে আমাদের গানে মুখরিত হয়ে যেত।
এসএসসি পরিক্ষার পরে একসাথে একি কলেজে পড়ার হাজারো ইচ্ছে কে মাটি চাপা দিয়ে যার যার ভাগ্য অনুযায়ি পড়াশোনা চলতে থাকে।
উচ্চমাধ্যমিক,
কলেজর দিন গুলো ছিল অনেক অনেক বান্ধবী তে পরিপূর্ণ। তাদের সাথে আড্ডা দেওয়া ক্লাস করা বিনোদন সব কিছুই ছিল মোটামুটি ভালোই
ভালো ভাবে কেটে যাচ্ছিল দিন গুলো।
এরি মধ্যে আমার বিয়ে হয়ে যায়।
পড়াশোনা,, সংসার একসাথে।
মা আর শাশুড়ী সে সময় আমাকে অনেক টা সাহায্য করে। ভালে ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করি। উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার ফলাফল দেওয়ার সময় আমার কোল জুড়ে আসে আমাদের প্রথম সন্তান। আর এই অজুহাতে আমার স্নাতক ডিগ্রী পড়াটা হুমকির মুখে পরে যায়। পরম বন্ধু আমার মায়ের জন্য আমি স্নাতক পড়ার সুযোগ পায়। স্নাতক ভর্তি হবার সব টাকা মা দেই আর বলে আমি যেনো এই টাকাটা নষ্ট না করে তার সঠিক ব্যবহার করি। আমি কখনো ক্লাস করতামনা সুধু বাড়িতে পড়তাম। আর পরিক্ষার সময় বাবার বাড়ি গিয়ে পরিক্ষা দিয়ে আসতাম। পরিক্ষা চার ঘন্টা হতো আর আমার যাওয়া আসা দুই ঘন্টা, মোট ছয় ঘন্টা। এই ছয় ঘন্টা আমার ছেলে কে আমার মায়ের কাছে রেখে যেতাম পরম নিশ্চিন্তে। দুনিয়ার আর কোথাও রেখে এতো নিশ্চিন্তে আমি পরিক্ষা দিতে পারতামনা।
মা আমাকে খুব বেশি সাহায্য করেছেন। মাকে ছাড়া ঔ সময় কোন ভাবেই এইটুকু বাচ্চা কে রেখে পড়াশোনা করা সম্ভব ছিলনা।
✍️মা'কে হারিয়ে ফেলা
(১৭-০৯-২০১৮) মঙ্গলবার। এই দিনে আমার বাবা -মা সব ফুপি আর চাচি মোট ২৫ জন মতো আমার শশুর বাড়িতে আসে।
মা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
তার মায়া ভরা চাউনিতে ছিল আমার সাথে একটু সময় কাটানো,আমি যখন মায়ের দিকে তাকাই দেখি মায়ের মুখটা কেমন যানি হলুদ হয়ে গেছে ( গায়ে রক্ত না থাকলে যেমনটা দেখা যায়) মা'কে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম মা তোমার মুখ এতো ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কেন। মা বলে আস্তে আস্তে কততা হবেনে আর কতো দিন বাঁচবো। আমার বুকের ভেতরটা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। আমি মাকে থামিয়ে বলি এসব আর বলবানা। যাবার সময় সবাই গাড়িতে উঠে মা আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করছিল ( এটাই শেষ আমার ছেলের তার নানুর থেকে পাওয়া শেষ আদর) আর বলছিল তুমি আব্বু আম্মুর সাথে এসানে।
গাড়ি ছেড়ে দেয় আমি ঘরে এসে খুব কান্না করি। মায়ের সাথে একটু সময় কাটাতে পালামনা। সাথে যেতেও পারলামনা। মনে হচ্ছিল আর কখনো হয়তো দেখাও হবেনা।
সাথে সাথে দেখি আব্বু ফোন দিয়েছেন রিসিভ করতেই আব্বু বলে তোমার মা কান্না করছে কথা বলো, আমিও যে মায়ের জন্য একটা অজানা কারণে কান্না করছি সেটা না বুঝতে দিয়েই ভালো ভাবে কথা বলি আর কয়েক দিনের মধ্যেই আমি মায়ের কাছে যাবো সেটা বলি।
পরের দিন থেকে শুনি মা অসুস্থ। তখন বড় ভাই আর ছোট ভাই দেশের বাইরে ছিল। ওদের মনের মধ্যে ও কিছু চলছিল তাই ওরা বার বার আমাকে ফোন দিয়ে মায়ের কাছে যেতে বলে। কিন্তু কিছু সমস্যার জন্য আমি আজ নই কাল এই ভাবে ঘুরতে থাকি। বড় ভাই আমার পা পর্যন্ত ধরতে চাই শুধু মায়ের কাছে যাবার জন্য। মাকে দেখতে কম বেশি আত্মীয় রা গেছে আমি যেতে পারিনি। সবাই আমাকে ভুল বোঝে। সময় তখন আমার অনুকুলে ছিলনা সেটা কেউ বোঝেনি আর আমি বোঝাতেও চাইনি। যার জন্য তাদের কাছে এখনো আমি অপরাধি।
রবিবার রাত পৌনে একটা। ঘুম আসছিলোনা, মায়ের জন্য ছটফট করছিলাম। এতো রাতে ফোন দেওয়া ঠিক হবেনা তবুও ফোন দেই। মা জেগে ছিল।মা বলে মোটা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে এতো জ্বর এসেছে। কিছু খেতে ও পারছেনা। আব্বু বলে ডক্টর দেখানো হচ্ছে তুমি চিন্তা করোনা অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমাও।মায়ের সেই কার্তরানো গলাই কথা গুলো শুনে আমি ঘুমাতে পারিনি। কয়েকজন ডক্টর কে ফোন দেই সেই রাতে কেউ সেই সময় যেতে রাজি হয়নি পরে একজন রাজি হয়েছিল।
অবশেষে (২৪-০৭-২০১৮) মঙ্গলবার। আমার শশুরের সাথে বাড়ি থেকে রওনা দেই। রাস্তা যেন আর শেষ হয়না। ফোনটা ব্যাগের মধ্যে ছিল তাই আব্বুর দেওয়া ২৫ টা কল বুঝতেই পারিনি।মা হয়তো শেষ বারের মতো আমার সাথে কথা বলতে চেয়ে ছিলো।
মাকে ওইদিন প্রথমে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় কিন্তু সেখানকার কর্মরত ডক্টররা যশোর সদর হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করার পরামর্শ দেই। আমি যখন চৌগাছা পৌঁছে যায় তখন মাকে নিয়ে আব্বুরা যশোরের উদ্দেশ্যে বের হয়। ওখানে ও মায়ের সাথে দেখা হলোনা। আমাকে দেখে ফুপ্পি এগিয়ে এসে বলে তোর মা হয়তো আর বাঁচবে না। দেখতে চাইলে এখনি সদরে যা। কথা টা শোনার পরে যারা এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তারাই বুঝতে পারবেন আমার অনুভতি টা। আমি আর কোন দিকে তাকাই নি সোজা সদর হাদসপাতালে গেছি। রাস্তায় বার বার আল্লাহ কে বলেছি আমি সুধু আমার মায়ের জীবিত মুখটা দেখতে চাই। আমার সব আয়ু নিয়ে হলেও আমি যেন আমার মায়ের সাথে শেষ দেখাটা করতে পারি। এতে যদি আমার জীবন টাও চলে যায় যাক আমি তবুও একবার মায়ের জীবিত মুখটা দেখতে চাই। এসব বলতে বলতে হাসপাতালে গিয়ে এদিক সেদিক ছুটতে থাকি শুধু জীবিত মুখটা দেখার জন্য। আব্বু কে ফোন দেই। আব্বু মাকে রেখে আমাকে নিচে নিতে আসেন। আব্বুকে দেখে ভাবলাম মা ঠিক আছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে আব্বুর সাথে মায়ের জীবিত মুখটা দেখার আশায় যেতে লাগলাম।
হঠাৎ দেখি আব্বু আমাকে রেখে দৌড়াচ্ছেন। সামনের দিকে তাকাতেই দেখি কিছু লোকজন চিৎকার দিয়ে উঠেছে। আব্বু কেন সেদিকে যাচ্ছে? সামনে এগিয়ে যেতেই দেখি ওই মানুষ গুলো আমার আত্মীয়। মা শুয়ে আছে আর চার পাশে তারা কান্নাকাটি করছে। এটা দেখার পরে মনে হলো আমার কলিজাটা কেউ টুকরো টুকরো করে কাটছে। মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের বুকে মাথা রাখলাম মায়ের হার্টবিট শোনার জন্য। তখন আমার এক ভাই একহাত দিয়ে আমাকে টেনে সরিয়ে দিল আর অন্য হাত দিয়ে মায়ের চোখ বন্ধ করে দিলো।আমি যেনো বরফের মতো জমে গেছি। তবুও আমি ডক্টরের কাছে দৌড়ে গেলাম আমার মাকে দেখতে বললাম। ডক্টর এসে ইসিজি করলো আর আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো বেঁচে আছে। আমি যেন আশা ফিরে পেলাম, চিৎকার করে বললাম আল্লাহ আমার আমার জীবনের বিনিময়ে আমার মা কে বাচিয়ে দেন। আমার ভাইয়েরা এর মধ্যে ফোন দিতেই আছে আমাকে। আমি ফোন না ধরাতে তারা আব্বু কে ফোন দেই, আব্বু ফোনটা রিসিভ করেই বলে তোমার মা মারা গেছে দ্বিতীয় আর কোন শব্দ বের হয়নি মুখ দিয়ে। এটা শুনেই আমি মায়ের দিকে তাকায়, মা বলে ডাকি কোন উত্তর নেই। এই তো সেই মুখ আমি দেখতে পারছি কিন্তু জীবিত নই। গত মঙ্গলবারে দেখা সেই ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া মুখটা। কত অভিমান বুকে নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে আমি তাকে একবার দেখতে আসিনি বলে।হয়তো আমাকে বলার মত তার কিছু না বলা কথা নিজের সাথেই নিয়ে গেছে, আমি তাকে বলার সুযোগ দিতে পারিনি বলে। কপালে একটা চুমু দিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে পরবো বলে বানানো জামার উরনা দিয়ে মাকে ঢেকে দিলাম। মাথা থেকে বালিশটা নিজ হাতে সরিয়ে দিলাম। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে পারিনি, তাই ছুটে যাচ্ছিলাম নিচতলাই। তারপর কিছু মনে নেই যখন জ্ঞান ফেরে দেখি আমাকে দরে আমার ছোট ফুপ্পি সিড়িতে বসে আছে। আমাকে নিয়ে এম্বুলেন্স এ তোলে যেখানে মা কে রাখা হয়েছে। মায়ের হাতটা ধরলাম কিছুক্ষণ পরে হাতটা নড়াচড়া করে উঠলো। আমি সাথে সাথে বিপি পরিক্ষা করলাম কিন্তু না বিপি চলছিলনা। গাড়ির ঝাঁকিতে হাতটা নড়াচড়া করে উঠেছে। মা চেয়েছিল গত মঙ্গলবারে আমাকে গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে যেতে আজ তার ইচ্ছে টা পুরন হচ্ছে কিন্তু তাতে তার কিছু যায় আসেনা। তার আর কোন কিছুতেই কিছু যায় আসেনা। চৌগাছা থেকে পুরো রাস্তা মানুষের ঢল আমার মা কে দেখার জন্য। বাড়ির উঠানে গাড়ি দাঁড়ালো মাকে শুয়ানোর জন্য সব ব্যবস্থা করা শেষ। পা রাখার জায়গা নেই বাড়িতে এতো মানুষ কিন্তু তারপর ও আমার মনে হচ্ছিল এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সবাই বুকে টেনে নিচ্ছিলো এসবে আমার দম বন্ধ লাগছিল। হঠাৎ দেখি আমি আমার মেজো ভাইয়ের বুকের মধ্যে আর ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছিল আর বলছিল কাদিস না আমি তোকে দেখবো, আমি আছি তোর সাথে। এভাবে আমি ওকে কখনো কাঁদতে দেখিনি। আমিও তখন ওর সাথে মন খুলে কাঁদতে থাকি কিন্তু আমাদের কান্না থামানোর জন্য আলাদা করে দেই। সামনে তাকাতেই দেখি আমার স্বামী সেও মেজো ভাইয়ের মতো আমাকে জড়িয়ে মন খুলে কেঁদেছিল আর আমাকে কথা দিয়েছিল সে আমাকে সারা জীবনে আর কখনো কষ্ট দেবেনা আজকের এই কষ্ট সারা জীবনের সব কষ্ট মিলেই আমি পেয়েছি। কিছুক্ষণ পরে মাকে গোসল করাতে নিয়ে যায় মা শুয়ে আছে। আমি মায়ের চুলে সাবান দিয়ে দিলাম ঠিক মা আমাকে যেভাবে ছোট থেকে বিয়ের পরেও দিয়ে দিত। মায়ের হাত ধোয়ার সময় হাতটা ধরলাম ঠিক যেভাবে মা আমাকে ছোট বেলাই হাত ধরে রাস্তা পার হতো। হাতটা শক্ত হয়ে গেছে, একটু আগেও যে হাত ধরে এম্বুলেন্স এ করে আসলাম সেই নরম হাত এখন শক্ত। মাকে মন ভরে দেখলাম আর পরম যত্নে গোসল করালাম ঠিক আমি কনসেপ্ট করার পরে মা আমাকে যেভাবে গোসল করাতো। মায়ের কপালে আর একটু চুমু খেয়ে কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম নিজের হাতে। মা'কে আড়কোলা করে খাটিয়া তে শুয়ে দিলাম নিজের হাতে। আর বার বার ভাবতে লাগলাম মায়ের সাথে আমিও একি কবরে থাকবো। কিন্তু মায়ের সাথে আমাকে যেতে দেইনি। রাতে সবাই সবার বাড়ি চলে যায়, আমি বসে থাকি মা'য়ের কাছে। কাফনের কাপড় টা সরিয়ে মুখ টা দেখি, মা ঘুমিয়ে আছে। আমি ম বলে ডাকি আর বলি, গত মঙ্গলবার আমাকে নিশ্চয়ই কিছু বলতে চাইছিলে তখন সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি কিন্তু মা দেখো এখন তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আজকেই তোমার সাথে কাটানো আমার শেষ রাত মা, তোমার যা বলতে ইচ্ছে হয় বলো আমি সব শুনবো। মা কিছুই বলেনি, এতো বার ডেকেছি একবার আমার দিকে দেখেও নি। মন ভরে মায়ের মুখটা দেখলাম। জানাজার জন্য যখন মা'কে নিয়ে যাচ্ছিল আমি পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে গেছিলাম মায়ের সাথে থাকবো বলে কিন্তু আমাকে যেতে দেইনি। এটা যে অসম্ভব।
মা নেই ভাবতেই কলিজাটা ছিড়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তারপর মা' কে খুব বেশি মনে পড়ে এখন। যখন দ্বিতীয় বার কনসেপ্ট করি মাকে ছাড়া যে আমি কতটা অসহায় হয়ে পরি সেটা সুধু আমিই যানি। আমার স্বামী মায়ের অনুপস্থিতিটা পুরন করার জন্য তার ১০০% টাই আমাকে দিয়েছে। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। সে ছাড়া সত্যি আমি খুবই অসহায়।
মায়ের চলে যাবার পরে আমার স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের জন্য অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ মায়ের সেই টাকাটা আমি নষ্ট হতে দেইনি। আমি স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছি, যেটা আমার মা চেয়েছিল।
✍️ উদ্যোক্তা জীবন
আমি সংসার আর লেখা পড়া নিয়ে এতোটা বছর পার করেছি, আমার ইচ্ছে ছিল একটা চাকুরি করবো, নিজের পায়ে দাড়াবো,সাবলম্বি হবো।
কিন্তু স্নাতক শেষ করি করোনার মধ্যে, বিশ্বের চাকুরির বাজার দেখে আমি হতাশ। কে কাকে চাকুরী দিবে,তাছাড়া আমার স্বামী আমাকে আমাকে চাকুরী করতে দিতে চাইনি কখনো, সে আমাকে বলা শুরু করলো নিজে কিছু করার চেষ্টা করো, আমি সার্বিক সহোযোগিতা করবো,কিন্তু আমি এই কথাটার অর্থ বুঝতে পারতাম না,রেগে যেতাম। কিন্তু একদিন সে আমাকে প্রিয় প্লাটফর্মের বেশ কিছু ভিডিও দেখাও সেখানে আপুদের ঘুরে দাড়ানোর গল্প শুনি,স্যারের সেশন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কিভাবে তারা ঘুরে দাড়িয়েছে সফল হয়েছে এটা আমাকে বেশ নাড়া দেয়।
এরপর ১৫ তম ব্যাচে আমার স্বামী নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে দেন এবং নিজেই আমার আইডি থেকে পোস্ট করেন। তাকে খুশি করতেই মিটআপ, সেশন এসবে মনোবিকাশ করা কারণ আমি চাকুরী করতে চাইছিলাম। কিন্তু কিছু দিন স্যারের সেশন গুলো পড়ে আমি ধ্যান ধারণার পরিবর্তন হয়েছে স্যারের ওই স্লোগান আমার মাথায় ঘুরপাক খায় #চাকুরী করবো না চাকুরী দিব। তাই নিজেই উদ্যোগতা হবার স্বপ্ন দেখি। আর সেটা বাস্তবে রুপ দিয়েছি আমার স্বামির সার্বিক সহোযোগিতায়।
স্বামীর অনুপ্রেরণায় অনলাইন - অফলাইন ব্যাবসা শুরু করেছি। খুব অল্প সময়ে আমার সেল বেশ ভালোই হচ্ছে, প্রতিদিন অর্ডার পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
এখন আমার মনের মধ্যে এই বিশ্বাস দানা বেঁধেছে আমি পারবো, চাকুরী করবো না চাকুরী দিব ইনশাল্লাহ, সকলের কাছে দোয়া প্রার্থি।
🤲আর আমি মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর ভালো মানুষ গড়ার কারিগর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি, তার জন্যই আজ আমার এই পরিবর্তন, আল্লাহ প্রিয় স্যারকে দীর্ঘ হায়াত ও সুস্বাস্থ্য দান করুন আমিন।
💞স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন,লেগে থাকুন সফলতা আসবেই এই স্লোগান টি প্রমাণিত সত্যি।
📌লেখার মাঝে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, লাইক কমেন্ট করে আমার পাশে থাকবেন এটাই প্রত্যাশায়!
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৪
তারিখ ০৬-১১-২০২২ইং
ধন্যবাদন্তে 🌿
❣️আমি সুমি ইমরান
❣️ব্যাচ ১৫
❣️রেজিষ্ট্রেশন নং ৭৪২৯৪
❣️জেলা যশোর।
💞একজন আজীবন গর্বিত সদস্য নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
💞কাজ করছি মেয়েদের সকল প্রকার পোশাক, জুতা, জুয়েলারি, ছেলেদের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, খাঁটি মধু, ঘী, আর খুলনার বিখ্যাত চুই ঝাল নিয়ে।
আর শীত স্পেশাল কুমরার বড়ি, যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুর ও পাটালি নিয়ে।
ঠিকানা নওয়াপাড়া, অভয়নগর, যশোর।
যোগাযোগ ০১৭৬৫২৭০০৭৮