১৫ দিনের ভিতরে ৮/৯ লাখ টাকা কিভাবে যোগাড় করবো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আঅলাইকুম,,
শুরু করছি পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করে।আমি কৃতজ্ঞ আমার বাবা মায়ের প্রতি যাদের জন্য আমি সৃষ্টির সেরাজীব হিসেবে পৃথিবীতে বেঁচে আছি।আলহামদুলিল্লাহ্
যার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও শেষ হবেনা।আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া, তারুণ্যের আইডল,লাখো প্রাণের স্পন্দন জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
আমি আমাকে আবিষ্কার করেছি প্রিয় ফাউন্ডেশনের সংস্পর্শে এসে। যেখানে শেষ সেখান থেকে শুরু করার প্রয়াস পেয়েছি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে।
আজকে আমি আমার জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।। সকলে ভালোবেসে আমার পাশে থাকবেন।
আমার জন্মজেলা প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাটে।বাবামা ভাইবোনের ভীষণ আদরের ছিলাম।
👨👩👧👦ছেলেবেলা,,,,
আমার ছোট বেলা খুব সুন্দর ছিল।২ ভাই আর ৩ বোন আমি দ্বিতীয়। ছেলেবেলা ভালোই কাটছিল আমার। তখন আমার বয়স ৭ বছর।হঠাৎ একদিন খেলার ছলে গাছ থেকে পড়ে যেয়ে বাম হাতটা ভেঙ্গে যায়।সাথে উপরের দাঁত গুলো পড়ে যায়।(দুধ দাত ছিল বলে দাতঁ গুলো আবার উঠে) ঠোঁট কেটে যায় থুতনী থেতলে যায়🥺।যখন আমার এই এক্সিডেন্ট হয় সবাই ভেবেছে হয়তো আমি আর বাচঁবোনা।কারণ মুখ ভরে রক্ত আসছিল,সবাই ভয় পেয়ে যায়।তারপর নরসিংদী সদরে নিয়ে যায়।সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়।হাত ব্যান্ডেজ করে দেয় যে কয়টা দাঁত নড়ভরে ছিল সেগুলোকে স্টিল দিয়ে বেঁধে দেয়।এই ভাবে কেটে যায় আমার জীবনের প্রথম বীভৎস সময়।
👨👦বাবার খুব আদরের মেয়ে ছিলাম আমি। বাবা সব সময় আমায় একটু এক্সট্রা আদর করেন।
ছোট থেকেই দেখতাম মা একটা চাকরী করতো ইউনিসেফ এর,বাবার একটি বড় ব্যবসা ছিল।ব্যবসা ও মায়ের চাকরীর উপার্জনে আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছিল সংসার জীবন। হঠাৎ দোকানে চুরি হয়, নেমে আসে বাবার চোখে হাহাকার।এর পর সংসারে নেমে আসে অভাব।বাবা আবার চেষ্টা করে ছোট একটি ষ্টেশনারী দোকান দেয়।মা চাকরীর পাশাপাশি লুঙ্গি সেলাই করতো সাথে বড় বোনও করতো।হাসিখুশি জীবন কিভাবে চোখের সামনে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আমি ছোট ছিলাম। ফ্যালফ্যাল করে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিলনা।
বড় বোন ছিল আমার জীবনের আশির্বাদ ☺️যাকে এক কথায় বলে বিধাতর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।আমার সবচেয়ে আপন আর সবচেয়ে প্রিয়।মায়ের পরে যার স্থান আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি। মায়ের মত আদর স্নেহ, শাসনে রাখত।
সময় এভাবেই পেরিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বড় বোনটার বিয়ে হয়ে যায়👰। ছাত্রী হিসাবে আমি ভালোই ছিলাম।S.S.Cতে 4.61 নিয়ে কাদির মোল্লা সিটি কলেজে ভর্তি হই।এত ব্যয় বহুল খরচ নিয়ে পড়াশোনা সম্ভব হচ্ছিল না। ফাস্ট ইয়ার শেষ করার পর ট্রান্সফার হয়ে মাধবদী মহাবিদ্যালয়ে চলে আসি এখানে H.S.Cপরিক্ষা দেই।
পরীক্ষায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো ফলাফল পেয়েছি।
👰বিবাহিত জীবন👰
একই গ্রামে বিয়ে হয় আমার।পছন্দ করতাম একে অপরকে।পরীক্ষার ফলাফলের দেড় মাস পর আমাদের পারিবারিক সম্মতিতে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।সংসার জীবন শুরু হয় আমার।
🤰মাতৃত্ব🤰
১৫ মাস পর একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হই আমি।কিন্তু সে ৪ দিন আই সিউ তে থেকে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে হেরে যায়😭😭।জীবনের প্রথম বুঝলাম কোন আপনজন মারা গেলে কেমন কষ্ট হয়। তাও আবার নিজের নাড়ী ছেড়াধন। এর আগে বুঝতামনা মানুষ মারা গেলে কেমন কষ্ট হয়।কারণ দাদা মারা গিয়েছিল আমার জন্মের আগে।আর দাদী মারা যায় আমি যখন খুব ছোট।নিজ সন্তানকে হারিয়ে আমি পাগলপ্রায়।আমার নাড়ী ছেঁড়া ধন, আমি মা হয়েও মায়ের স্বাদ নিতে পারলাম না। সন্তান হারানোর বেদনা আমায় খুব কষ্ট দিত।
🏵️অবসর সময়🏵️
নিঃসঙ্গতা ছেয়ে ফেলে আমার পুরো সময়জুড়ে।তখন সময় কাটানোর জন্য নিজের টাকা দিয়ে একটা সেলাই মেশিন কিনে সেলাই করে সময় কাটাতাম।যখনই মনে হতো সন্তানের কথা তখনই কাদঁতে থাকতাম😭।সন্তান হারানোর ব্যাথা কাউকে বুঝানোর মত না। ২ বছর পর আল্লাহ আমাকে আবার ২য় কন্যা সন্তান দান করেন। আলহামদুলিল্লাহ☺️😊।এর মধ্যে আমি সেলাই কাজ টা ছাড়িনি। মনে হত জীবনে কিছু একটা করতে হবে।
💔জীবন বড়ই দুর্বিঃষহ💔
হাজবেন্ড ঢাকায় চাকরী করতো কনস্ট্রাকশনের । মোটামুটি ভালো দিনকাল কাটছিল আমাদের। কিন্তু করুনার কারনে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলো,,, স্তব্ধ হয়ে গেলাম বুঝতেই পারছিলামনা কি করবো। করুনার প্রভাব কিছুটা কমলেও জীবনে কষ্টের প্রভাব কমছিলনা।
জীবন তো থেমে থাকেনা,পেটের তাগাদায় সংগ্রাম করতে তে হবেই।অবশেষে কিছুদিন ভালোই যাচ্ছিল।
🍁
🍁🍁অভাগা যেদিক তাকায়---
সাগর সেদিকে শুকিয়ে যায়🍁🍁
দ্বিতীয় কন্যার পর ২০২১ ইং তৃতীয় বার একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বাচ্চাটার ওজন কম ছিল, ১৭৫০ গ্রাম।জন্মের সাথে সাথে তাকে এন আই সিওতে থাকতে হয় ২ দিন।ওর ছিল জন্ম গত ভাবে হার্টে ফোটা😭
শুরুহলো আমার নতুন লড়াই। তাকে নিয়ে এই হাসপাতাল ঐ হাপাতাল দৌড়াই।ঢাকায় মাতুয়াইল, হৃদরোগ, হার্ট ফাউন্ডেশন, ল্যাবএইড, ইউনাইটেড হাসপাতালে। সবাই একই কথা বাচ্চার সার্জারি লাগবে। এত ছোট বাচ্চাকে কিভাবে এমন সার্জারি করাবো যেখানে বাংলাদেশে ৫০% চান্স বলে।শেষে ডা: নুরুনাহার ফাতেমা মেম বলে ১৫ দিনের ভিতরে বাচ্চাকে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যান বাচ্চাটা ভালো হবে বাচঁবে।এমন কথা শুনার পর কি কোন মা থেমে থাকতে পারে 😢
মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল।১৫ দিনের ভিতরে ৮/৯ লাখ টাকা কিভাবে যোগাড় করবো।এত টাকা যোগাড় করা আমার জন্য সহজ ছিল না। এক প্রকার দিশেহারা হয়ে অল্প জমি বিক্রি করে এবং আরো কিছু টাকা ম্যানেজ করে চলে গেলাম ইন্ডিয়াতে ২০২২ জানুয়ারির ২০ তারিখে।তখন নতুন করে করোনার প্রভাব।বড় কন্যাকে রেখে যাই দেশে।মনে অনেক সাহস আর কষ্ট নিয়ে যাচ্ছিলাম। কলকাতা যাওয়ার পর সেখান থেকে ৩৬ ঘন্টা জার্নি ছিল ব্যাংগালুর নারায়না হাসপাতালে। অবশেষ হাসপাতালে যাই এবং ডা: দেবি শেঠিকে দেখাই উনি সমস্ত পরিক্ষা করিরে রিপোর্ট দেখে বলে বাচ্চার ওপেন হার্ট সার্জারি লাগবে।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না বাচ্চার বয়স তখন ৮ মাস। এমন একটা দুধের বাচ্চা হাসপাতালে ডা: দের কাছে আর বড় বাচ্চাটা দেশে আমি হোটেলে তখনকার পরিস্থিতি বলে কাউকে বুঝানো যাবেনা💔। অবশেষে বাচ্চাটার অঅবশেষে বাচ্চাটার অপারেশন সাকসেসফুল হয় আলহামদুলিল্লাহ। ফেব্রুয়ারির ২২- ২০২২ তারিখে আমরা বাংলাদেশে আসি।
আলহামদুলিল্লাহ।
এখন আমার ছোট কন্যা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে সুস্থ আছে।
এর মধ্যে জীবন যুদ্ধে আমি ক্লান্ত হইনি। হাজবেন্ড নতুন করে ব্যবসা শুরু করে।হঠাৎ করে হাজবেন্ড অসুস্থ হয়ে যায় কিডনিতে ও প্রসাবে ইনফেকশন। এই দুই মাস,যাবত অসুস্থ ব্যবসা ঠিক মত করতে পারছেনা। আমিও হাল ছাড়িনি নতুন করে বাঁচার জন্য ভীষন ভাবে সেলাই সহ টুকটাক কাজ আকড়ে ধরে রেখেছি।
এবং আমাদের এই প্রাণের ফাউন্ডেশনে অনলাইনে বিজনেস করে জীবিকা নির্বাহ করছি।
💖💝ফাউন্ডেশন 💝💖
ইন্ডিয়া থেকে আসার কিছু দিন পর আমি জানতে পারি এই প্রিয় ফাউন্ডেশন এর কথা, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। আমার প্রিয় আপু, যাকে আমি গড গিফট বলি Tania Islam Dalia আপু ও আমার ছোট ভাই Faysal M S এদের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনে আসা।আমাকে এতে যুক্ত হতে সাহায্য করেছেন Tajrin Chowdury Champa আপু।ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আস্তে আস্তে জানতে পারি সপশন চর্চা সম্পর্কে Mostak Ahmad Mridha ভাইয়া সহ প্রাণের ফাউন্ডেশনে পেয়ে যাই অসংখ্য ভাই বোন।নিজের পরিবারের বাইরে আরেকটা পরিবারের সন্ধান পেয়েছি ফাউন্ডেশনে এসে।আপনাদের সবার কাছে আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। থেকে আসার কিছু দিন পর আমি জানতে পারি এই প্রিয় ফাউন্ডেশন এর কথা, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। আমার প্রিয় আপু, যাকে আমি গড গিফট বলি @তানিয়া ইসলাম ডালিয়া আপু ও @সাইফুল ইসলাম ফয়সাল আমার ছোট ভাই এদের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনে আসা।আমাকে এতে যুক্ত হতে সাহায্য করেছেন @তাজরিন চৌধুরী চম্পা আপু।ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আস্তে আস্তে জানতে পারি সপশন চর্চা সম্পর্কে @mostak ahmed mridaভাইয়া সহ প্রাণের ফাউন্ডেশনে পেয়ে যাই অসংখ্য ভাই বোন।নিজের পরিবারের বাইরে আরেকটা পরিবারের সন্ধান পেয়েছি ফাউন্ডেশনে এসে।আপনাদের সবার কাছে আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।
🌺ভবিষ্যত পরিকল্পনা 🌺
আমার স্বপ্ন আমি আমার কন্যাদের কে পৃথিবীর সমস্ত সুখ দিতে চাই। নিজের একটা পরিচয় গড়তে চাই।লেগে থাকব আজীবন নিজের বলার মতো একটা গল্প ।প্রিয় মেন্টর আমাাকে যে সাহস উদ্দীপনা জন্ম দিয়েছে,তা বাস্তবায়ন করব। ।আমার স্বপ্ন গড়তে আপনাদের সাহায্য ও পরামর্শ আমার একান্ত প্রয়োজন , সবাই আমাদের এবং আমার দুই কন্যার জন্য দোয়া করবেন।
আমার স্বপ্ন আমি যেন স্যারের সামনে Utv Live এ নিজের জীবনের গল্প তুলে ধরতে পারি।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার জীবনের গল্প টা পড়ার জন্য।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৪
তারিখ ০৬-১১-২০২২ইং
সুমাইয়া সিনহা
ব্যাচ -১৮
রেজিষ্ট্রেশন নং-৯৮৮৭০
নিজ জেলা নরসিংদী
শেখেরচর, বাবুরহাট।