বঞ্চিত শিশু থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
☘আমার বঞ্চিত শিশু থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প☘
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাকে এত সুন্দর করে তৈরি করেছেন এবং আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
ধন্যবাদ জানাই জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এত সুন্দর এবং চমৎকার একটা প্ল্যাটফর্ম আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন এবং জায়গা করে নিয়েছেন আমাদের মত লাখো লাখো উদ্যোক্তার হৃদয়ে। স্যারের পরিশ্রমকে যেন সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে পারি এই চেষ্টা করে যাবো সবসময় ইনশাআল্লাহ। স্যারের জন্য অনেক দোয়া করি আল্লাহ্ তায়ালা যেন উনাকে সুস্থ রাখেন এবং নেক হায়াত দান করেন।
আজকে আমি চেষ্টা করব আমার জীবনের অজানা কিছু অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পারবো জানিনা তবু চেষ্টা করছি।
☘আমি ও আমার পরিবার:
আমার নাম মোঃ সাইফুল ইসলাম। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে আমার জন্ম।
আমার নিজ জেলা - কুমিল্লা, থানা- বুড়িচং, গ্রাম - আরাগ আনন্দপুর। ১২ ভাইবোনের মধ্যে আমি ৫ম।
আমি আমার নিজের কথা বলার আগে প্রথমেই আমার পরিবারের সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। কারণ আমার পরিবার থেকেই আমার জীবনের শুরু।
আমার দাদা ছিলেন একজন মাওলানা এবং শিক্ষক। আমার বাবাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে শিক্ষকতা পেশাই বেছে নেন এবং তিনি ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক। আমার যখন ৬ বছর বয়স তখনই আমার মা মারা যান। আমার মা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা ২য় বিবাহ করেন। প্রথম পরিবারে আমরা ৮ ভাই এবং ২য় পরিবারে আমার ৪ বোন।
আমার মায়ের মৃত্যুর পর আমার নানুর বোন আমাকে পালক হিসেবে নেন এবং সেখান থেকেই আমার জীবনের গল্প শুরু।
গ্রামে জন্ম হলেও যেহেতু আমার সেই নানুর বাড়ি ঢাকার মগবাজারে তাই মগবাজারেই আমার বেড়ে ওঠা।
☘আমার শিক্ষা জীবন:
আমার প্রাইমারি শিক্ষা একটি এনজিওর স্কুল থেকেই শুরু, সেখানে সমাজের বঞ্চিত শিশুরাই ছিল বেশি। যেহেতু নিজে এতিম ছিলাম এবং আশ্রিত জীবন ছিল তাই ছোটবেলা থেকে বাস্তব শিক্ষাই ছিল আমার কাছে বড় শিক্ষা। এর মাঝেও এইচএসসি পাশ করে তিতুমীর কলেজে বি'কম ভর্তি হই এবং পাশাপাশি বড় ভাইয়ের আইটি ব্যবসার সাথে যুক্ত হই।
☘আমার কর্মজীবন:
যেহেতু ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে আলাদা তাই কখনো কারও কাছে কিছু চাইতে পারতাম না, তাই ছোটবেলার বেলার চাওয়া গুলো কখনো পাওয়া হয়নি। সেই না পাওয়া থেকেই বড় হয়ে কিছু করার স্বপ্ন মনের ভিতর বাসা বাঁধে ছোটবেলা থেকেই।
স্কুল জীবন থেকেই বন্ধুদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন মেলায় ছোট পরিসরে অংশ নিতাম এবং ভলেন্টিয়ার হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করতাম। পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকায় বি'কম পড়া অবস্থায় আমার বড় ভাই তার আইটি ব্যবসায় আমাকে যুক্ত করে। তবে ব্যবসায় আমি খুব মনোযোগী ছিলাম এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দায়িত্ব নিতে শুরু করি।
যেহেতু ছোটবেলা থেকেই আমি বঞ্চিত তাই বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করার চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরতে থাকে। সেই চিন্তা থেকেই আইটি ব্যবসার পাশাপাশি আমি নিজেকে একজন সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করছি এবং পাটপণ্য নিয়েও কাজ করছি।
☘আমার পরিবার এবং বিয়ে পরবর্তী জীবন:
সমাজের বঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল বলে বিয়ে নিয়ে কখনো ভাবতাম না। ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে আমার সামাজিক সংগঠন " শিশুর হাসি রাখিব নির্মল- শিহরন"
শিহরনই আমার প্রথম পরিবার, তবুও সবার চাপে পড়ে ২০১৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং বর্তমানে একজন কন্যা সন্তানের পিতা।
বিয়ের পর সংসারের দায়িত্ব বেড়ে গেলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমার কাছে মনে হয় যেহেতু নিজে বঞ্চিত শিশুদের একজন তাই আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই সমাজের বঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করে যাওয়ার একান্ত চেষ্টা।
☘️ জীবনে কি করতে চাই এবং কেন করতে চাইঃ
একটি এতিম শিশু যখন মা বাবা ছাড়া বড় হয় তখন সেই শিশু ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারেনা তার মনের অবস্থা।
খাবারের পাশাপাশি আদর ভালবাসাও একটি শিশুর মৌলিক চাহিদা। কিন্তু এ সমাজ কি বোঝে একটি এতিম শিশুর মনের আর্তনাদ!! হয়ত চাইলেই কেউ কারো বাবা হতে পারেনা বা মা হতে পারেনা কিন্তু চাইলেই ভালবাসা দিতে পারে পাশে দাড়াতে পারে। আমি এমন অনেক কিছুর অপূর্ণতা নিয়েই বড় হয়েছি তাই অসহায় শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়।
আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি আগামী প্রজন্মের জন্য ভাল কিছু করে যেতে চাই এবং আমার সংগঠন "শিশুর হাসি রাখিব নির্মল- শিহরন" কে একটি স্বনির্ভর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যেন তা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারে।
যেহেতু আমি একজন বঞ্চিত শিশু ছিলাম তাই অসহায় শিশুর মনের অবস্থা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারি। আমি মনে করি এ কারনে আমার দায়বদ্ধতাও বেশি, সেই দায়বদ্ধতা থেকেই শিশুদের জন্য ভালো কিছু করে যেতে চাই।
☘️ ব্যর্থতাঃ
আমার বড় ভাইয়ের আইটি ব্যবসায় পার্ট টাইম সময় দিতে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো ব্যবসার দায়িত্ব নিতে হয় বড় ভাইয়ের বিদেশ চলে যাওয়াতে। আমি দায়িত্ব গ্রহন কালে ব্যবসায় লোন ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা! এই লোন সহ ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকলাম কিন্তু এক পর্যায়ে এসে আর পারছিলাম না। অবশেষে একসময় আইটি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায় এবং আমি হই ব্যর্থ।
☘️আমার ব্যবসায়িক উদ্যোগঃ
দেশীয় পন্যের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেশি তাই আইটি ব্যবসার পাশাপাশি ২০১৬ সালে পাটপণ্যের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করে ছোট পরিসরে একটি পাটের ব্যাগের কারখানা করি এবং বর্তমানে তিনজন পার্টনার মিলে বড় পরিসরে কাজ করে যাচ্ছি যাহার বর্তমান মূলধন প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
☘️ আমার সামাজিক উদ্যোগঃ
আমার সামাজিক উদ্যোগ "শিশুর হাসি রাখিব নির্মল- শিহরন" ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমানে আমরা প্রায় ৩০ জন সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি।
আমরা আমাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামাজ কর্ম করে নিজেদের ব্যবসায়িক পরিচিতি বাড়াতে পারি ও সমাজ পরিবর্তনে ভুমিকা রাখতে পারি।
সেই লক্ষ্য সামনে রেখে নিজস্ব ইনকামের মাধ্যমে শিহরন'কে একটি স্বনির্ভর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে ও শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।
☘️প্রিয় ফাউন্ডেশনে যোগদানঃ
শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আমার প্রিয় একজন মানুষ, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রিয় ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত ছিলাম অনেকদিন আগে থেকেই কিন্তু ৯০ দিনের কথা চিন্তা করে ট্রেনিং করার কথা ভাবতে পারছিলাম না। পরবর্তীত Saifunnesa Ibrahim Khan আপুর সাথে কথা বলে মনে সাহস পাই এবং আপুর পরামর্শে ১৯ তম ব্যাচের সাথে ওয়ারী জোনে যুক্ত হয়ে ভালবেসে প্রিয় ফাউন্ডেশনের সাথেই আছি।
☘️ প্রিয় ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আয়ঃ
সরাসরি পন্য বিক্রি করে যেমন আয় হয় তেমনি প্রচারণার মাধ্যমে অর্ডার সংগ্রহ করেও বেশি আয় করা সম্ভব। আলহামদুলিল্লাহ প্রিয় ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আমার আয় আগের থেকে বেড়েছে এবং আগামীতে আরও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।
☘️প্রিয় ফাউন্ডেশনের কাছে চাওয়াঃ
শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার একজন উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর। স্যারের সংস্পর্শে এসে অনেকের জীবন বদলে গিয়েছে। উদ্যোক্তার পাশাপাশি কিভাবে একজন মানবিক মানুষ বা ভালো মানুষ হওয়া যায় সেই শিক্ষা স্যার সবসময় দিয়ে থাকেন।
স্যারের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমি নতুন করে শুরু করতে চাই এবং প্রিয় ফাউন্ডেশনের সবার সাথে যুক্ত থাকতে চাই।
পাশাপাশি ওয়ারী জোনের সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে সবসময় সহযোগিতা করার জন্য। আশাকরি ভালবেসে সবাই সাথে রাখবেন।
☘️ আগামী পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাইঃ
শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি প্রতি বছর কি পরিমাণে শিশু পড়াশোনা থেকে ঝরে যায়। শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পরার অন্যতম কারণ হচ্ছে বাবা মা মারা যাওয়া বা এতিম হয়ে যাওয়া। তাই আমার চেষ্টা থাকবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি স্কুলে সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে এতিম শিশুদের বিনাবেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেয়া এবং আমার ব্যবসায়িক মুনাফার একটি অংশ দিয়ে শিহরনের মাধ্যমে এতিম শিশুদের স্কলারশিপ দেয়া।
এর মাধ্যমে নিজেকে একজন সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে দেশ ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই।
আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে এবং আমরা চেষ্টা করলে নিজেদের ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি।
শিশুদের কল্যাণে আমার উদ্যোগ সফল করতে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের শিক্ষা এবং ট্রেনিং আমাকে আরও বেগবান করবে বলে আমি আশাবাদী।
☘️আমার গল্প হয়ত অনেকের জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে তাই সকলের কাছে প্রত্যাশা আসুন আগামী প্রজন্মের জন্য ভাল কিছু করে শিশুর হাসিকে নির্মল করি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৯৬
তারিখ ০৯-১১-২০২২ইং
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা
☘️ সাইফুল ইসলাম
ব্যাচঃ ১৯
রেজিষ্ট্রেশন নম্বরঃ ১০৫৮৬৬
নিজ জেলাঃ কুমিল্লা
বর্তমান অবস্থানঃ ডেমরা থানা, জোনঃ ওয়ারি
সামাজিক উদ্যোগঃ শিহরন- শিশুর হাসি রাখিব নির্মল
ব্যবসায়ীক উদ্যোগঃ ভারটেক্স ক্রাফট
পেইজঃ www.facebook.com/shihoron.org
www.facebook.com/vertexcraft