আজ না হয় কলমকে এখানেই থামিয়ে দিলাম
🌹জীবনের গল্প 🌹
🙏আমার জীবনের গল্পটা পড়ার অনুরোধ রইল 🙏
🌼আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু 🌼
💙বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 💙
🤲🤲সকল প্রশংসা করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেনএবং সুস্থ রেখে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত করার সুযোগ দিয়েছেন।
🤲🤲লাখো কোটি সালাম জানাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প্রতি।
🍁🍁🍁
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করছি আমার প্রাণ প্রিয় পিতা ও মাতাকে।যাদের নিঃস্বার্থ মায়া- মমতা,আদর- স্নেহ ভালোবাসা এবং ত্যাগের ঋণ কখনো শোধ হবে না।
🙏🙏কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। যিনি তৈরি করেছেন মানবতার এক বিশাল পরিবার। এসময়ের লাখো লাখো তরুণ তরুণী প্রাণের স্পন্দন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, পদপ্রর্শক এবং স্বপ্ন দেখানোর অনুপ্রেরণা প্রদানকারী।
💟💟ভালোবাসা রইল #নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন এর সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের প্রতি।সকলের প্রতি ভালোবাসা জানাই এবং সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
🌹🌹জীবনের গল্পঃ-জীবন বয়ে চলা নদীর মতো।নদী যেমন বাঁক বদলিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রুপ ধারন করে। কখনো শান্ত আবার কখনো স্রোতের বিপরীতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব কিছু। ঠিক তেমনি জীবনের প্রতিটি মোড়েও রয়েছে ভালো - মন্দের সংমিশ্রণ। আমার জীবনও তার ব্যতিক্রম নয়।আজ আমি সংক্ষিপ্ত আকারে ভালোবাসার মানুষ গুলোর সাথে জীবনের কিছু অংশ শেয়ার করবো।
🍀🍀পারিবারিক পরিচয়ঃ-
১৯৮৮ সালের জুলাই মাসের ৬ তারিখে আমি জন্মগ্রহণ করি নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার সর্বলক্ষনা গ্রামে। আমি বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। আমার ছোট আর একজন ভাই রয়েছে।
🚴♂️🚴শৈশবের দিন🚴♂️🚴♂️
শৈশব কাল হচ্ছে সব থেকে সুন্দর সময়। মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে খুবই প্রশান্তিতে কাটে এই দিন গুলো। কিন্তু আমার শৈশবের দিন গুলো সবার মতে এতো আদরমাখা আর মধুর ছিল না। শৈশবে এক কঠিন অসুখ বাধা বাসে আমার শরীরে। আমার বয়স যখন ৭-৮ বছর তখন আমি খুবই অসুস্থ হয়ে যাই।আমার দু পা অচল হয়ে যায়।আমি চলা ফেরা করতে পারতাম না।বাবা- মা পরম যত্নে আমাকে আগলিয়ে রাখেন সে সময়।খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমি। বাবা- মা খুব কষ্ট করে আমার চিকিৎসা করান এবং আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমি সুস্থ হই।
✍️✍️আমার কথাঃ-
আমি নিতান্তই গরীর ঘরের সন্তান। শৈশবকাল থেকেই আমি পরিচিত হয়েছি কঠোর বাস্তবতার সাথে।আমার বাবা তেমন কর্মঠ ব্যক্তি ছিলেন না। একদিন কাজ করলে বাকি দুদিন কাজে যেতেন না।
🍀আমি ছোটবেলা থেকেই পড়া শোনায় মেধাবী ছিলাম।লেখা পড়া করার জন্য ছোট বেলা থেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে।সহপাঠীরা যখন খুব আনন্দ করে মা- বাবার হাত ধরে স্কুলে প্রবেশ করতো আমি তেমনটা পারতাম না। ভোরে উঠে রিকশা নিয়ে বের হতাম। পেডেল মেরে পেসেঞ্জার কে তার গন্তব্যে নামিয়ে দিয়ে নিজের গন্তব্য স্কুলে যেতাম। কতই বা বয়স ছিল আমার, সবে মাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি।সেই সময় এক হাতে ধরেছি সংসারের হাল অপর হাতে ধরেছি লেখার জন্য কলম।সহপাঠীরা নানান কথা বলতো।তাদের কথায় কষ্ট পেতাম খুব। কিন্তু এসবের পরেও জীবন যুদ্ধে আমি থেমে থাকিনি,লড়াই করে গেছি।৬ষ্ঠ,৭ম এবং ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত আমি রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করেছি। জনম দুঃখীনী মা আমার এত কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না, আর সে জন্যই নিজে পারি জমান দূর দেশে।বসত বাড়ি ছাড়া যে অবশিষ্ট জমি ছিল তা বিক্রি করে মা বিদেশে গেলেন।
অবস্থা একটু ভালো হতে পারতো,কিন্ত না!! কথায় আছে--**বিপদ যখন আসে চারপাশ থেকেই আসে**। আমার মা বিদেশে যাওয়ার পড়ে সেখানে তার বিপদ হলো। অনেক কষ্টে মা সেই বিপদ থেকে মুক্ত হন।এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল।এস,এস,সি পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলাপ করে ছিলাম কিন্তু আমি আর পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমার বন্ধু আমাকে মিথ্যা বলে গাজীপুরে নিয়ে যায়। সে আমাকে বলে যে সেখানে গিয়েও পরীক্ষা দিতে পারব।এটাই ছিল আমার ভুল।মানুষ কে বেশি বিশ্বাস করতে হয় না।দিতে পারলাম না এস এস সি পরীক্ষা। জীবনটা যেন খুব এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।কোন কিছুই ভালো লাগতো না।
❤️🌹❤️বিয়েও জীবন সঙ্গীনিঃ- মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন পাকে এরশাদ করেছেন "আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় তৈরি করেছি"-(সূরা নাবা,আয়াত -১৫)
বিয়ের মাধ্যমে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ আমি পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো-উত্তম জীবন সঙ্গী পাওয়া।আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ এক নেয়ামত হলো আমার অর্ধাঙ্গীনি।আমার সকল কষ্টের দিনে সে আমার পাশে ছিল।সকল কিছুতে আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমি যখন তাকে বিয়ে করি তখন তার বয়স কেমল মাত্র তের কিবা চৌদ্দ। আমার এখনো মনে আছে এক নাগারে ৪৫ দিন সে শুধু ডাল আর আলুর র্ভতা দিয়ে ভাত খেয়ে কাটিয়েছে।আবার কত সময় যে না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছে তার হিসাব আমার জানা নেই। এত কিছুর পরেও তার আমার প্রতি কোন অভিযোগ ছিলনা। সুতার হ্যান্ডলুম কারখানায় কাজ করেছি,বাসের হেল্পারি করেছি,ড্রাইভারি করেছি।সকল অবস্থায় আমার ভালোবাসার মানুষ আমার পাশে ছিল।
👨👩👧বিয়ের ২ বছর পরে প্রথম কন্যা সন্তানের পিতা হলাম।আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ অনেক খুশি হয়ে কন্যা সন্তান দান করেন।আমরা দুজন থেকে তিন জন হলাম,আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু বেশি দিন সেই খুশি স্থায়ী হলো না।আমার রাজকন্যার বয়স যখন ৩ মাস, তখন তার মাথায় একটা ফোঁড়ার মত হয়☹️।এমনিতেই কষ্টের সংসার, তার উপর মেয়ের অসুখ।মেয়েকে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা আমার হাতে ছিল না।অনেকের হাত পা ধরেছি কিছু টাকা ধার দেওয়ার জন্য🙏। কারো সাহায্য পেলাম না।
কথায় আছে - রাখে আল্লাহ মারে কে🤲।আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত টাকার ব্যবস্থা হয় এবং মেয়েকে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যাই। কিন্তু সেখানে আশাতীত কোন চিকিৎসা পায়নি, তারা বলল ঢাকা নিয়ে যেতে।কিন্তু যে টাকা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসি সে টাকার প্রায় অর্ধেক খরচ হয়ে যায়।চিন্তায় মাথা কাজ করছিল না।অবশেষে আল্লাহর উপরে ভরসা করে ঢাকা যাই।এবং সেখান থেকে চিকিৎসা করে বড় মেয়ে সুস্থ হয়।
২০১৩ সালের জুন মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার প্রতি তার ভালোবাসা এবং রহমত নাজিল করেছিলেন। আমি ২য় কন্যা সন্তানের পিতা হই।এবং আমি নতুন চাকরী পাই।আমার পরিবারে অবস্থা ভালো দিকে আসা শুরু হয় আলহামদুলিল্লাহ। যে আমি দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতাম সেই আমার ঘরে এখন আর খাবারে অভাব নেই। আলহামদুলিল্লাহ।আমি চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে আসি এবং তার পরে আমি আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের ও ঢাকায় নিয়ে আসি।আমার বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে আর ছোট মেয়ে ৪র্থ শ্রেনীতে।
💫💫প্রিয় ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়াঃ- আমার বন্ধু সবুজ নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য, তার কাছে আমি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম যে,আমি অনলাইনে বিজনেস করবো, কিভাবে কি করা যায়?তখন আমার বন্ধু আমাকে প্রিয় প্লাটফর্ম #নিজের_বলার_মতো_গল্প_ফাউন্ডেশনের খোঁজ দিল এবং তার মাধ্যমেই আমি ১৮ তম ব্যাচের শুরুর দিকে রেজিষ্ট্রেশন করাই এবং সেই থেকে ভালোবাসার প্লাটফর্মের সাথে পথচলা শুরু হয়।ফাউন্ডেশনের পথচলায় আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন আমার নিজ জেলা নরসিংদী টিম ও উত্তরা টিম সহ পুরো ফাউন্ডেশনবাসী।
আমি কৃতজ্ঞ জাগো নরসিংদী জেলা টিমের সকল লিডারদের প্রতি। নিয়মিত সেশন চর্চায় যুক্ত হয়ে নিজের ভিতরের জড়তা কাটানোর চেষ্টা করছি। এজন্য আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই Mostak Ahmad Mridha ভাইয়ার প্রতি।
💦💦উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নঃ-
*স্বপ্ন * এমন একটি শব্দ যা মৃত প্রাণেও সজীবতা সঞ্চার করে।প্রাণ প্রিয় মেন্টরের অমৃত বাণীঃ
🔹 স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
লেগে থাকুন 🔹
এই একটি লাইন যা আমাকে নতুন করে চলার অনুপ্রেরণা দান করেছে।এই অনুপ্রেরণাকে বুকে ধারণ করেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাটছি।
👑👑একজন সফল উদ্যোক্তাঃ-
*বললাম আর উদ্যোক্তা হয়ে গেলাম *এমন কিন্ত বিষয়টা না। ধৈর্য্য, ইস্পাত কঠিন মনোবল, স্থির লক্ষ্য এবং অটুট বিশ্বাস এই গুণ গুলো যে নিজের মধ্যে ধারণ করবে এবং জীবনে চলার পথে সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে সেই সফলতার উচ্চতম আসনে আরোহন করতে পারবে।
জীবন- সংগ্রামে টিকে থাকার চেষ্টা করবে সেই হবে একজন সফল ব্যক্তি, সফল উদ্যোক্তা।কবির ভাষায় তাই বলতে হয়ঃ-
পারিব না একথাটি বলিও না আর,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।
🌺🌺আমার উদ্যোগঃ-আমি কাজ শুরু করেছি কাঠের ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তৈল,মধু,,ঘি এবং মেয়েদের সকল ধরনের পোশাক ( শাড়ি, থ্রি পিস,ওড়না) নিয়ে।আমার স্বপ্ন আমি একজন সফল উদ্যোক্তা ও মানবিক মানুষ হবো এবং আমার কাজের মাধ্যমে সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিব।
🧡🧡পরিসমাপ্তিঃ-
আজ না হয় কলমকে এখানেই থামিয়ে দিলাম, কিন্তু জীবনের গল্পটা এখনো শেষ পৃষ্ঠায় পৌছায়নি।একদিন সফলতার গল্প নিয়ে হাজির হবো প্রিয় স্যারের সামনে। সরাসরি কথা বলবো আমার প্রাণ প্রিয় মেন্টর এর সাথে।সেই পর্যন্ত সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
🍁🍁সকলকে আন্তরিক ভাবে জানাই ভালোবাসা এবং ধন্যবাদ যারা এতক্ষণ সময় নিয়ে ধৈর্য সহকারে আমার জীবনের গল্পটি পড়েছেন।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯০৪
তারিখ ২০-১১-২০২২ইং
🥀🥀🥀ধন্যবাদান্তে 🥀🥀🥀
নামঃ- আর এম মোকলেছুর রহমান ।
ব্যাচঃ-১৮
রেজিঃ- ৯৯৮৩৩
জেলাঃ-নরসিংদী
বর্তমান অবস্থানঃউত্তরা,ঢাকা