আমার চাকরির সুবাদে কয়েকটি দেশে যাওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে মালয়েশিয়াতে আছি দীর্ঘ ৬ বছর |
জীবনের গল্প
❝বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম❞
আসসালামু আলাইকুম
সবার জীবনের একটা গল্প থাকে তা হয় সুখের কিংবা দুঃখের
আজ আমি আমার জীবনের গল্পটি আপনাদের শোনাবো আশা করি একটু সময় নিয়ে সবাই পড়ে দেখবেন।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের প্রতি । যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি তাঁর পরিবার, পরিজন এবং সাহাবীগণের প্রতি।
মা বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করছি। যারা আমাকে এত সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন এবং আদর, ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর, শিক্ষক,লাখ লাখ তরুণ তরুণীর আইডল Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে ভালোবাসার প্লাটফর্ম " নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন " তৈরি হয়েছে।
আমার জীবনের গল্পটা পড়ার অনুরোধ রইলো
শৈশব কালঃ-
আমরা দুই ভাই বোন। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করি। মা বাবা অনেক আদর যত্ন করে আমাদের বড় করেছেন। দুঃখ কষ্ট কি তা বাবা মা আমাদের কখনো বুঝতে দেননি। ছোট থেকেই আমি খুব চঞ্চল এবং দুষ্ট ছিলাম। খেলাধুলা খুব পছন্দ করতাম। স্কুলে সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতাম।
আমার পরিবারে চারজন সদস্য ছিলাম তবে আমাদের অভাবের সংসার ছিলো। আমার বাবা মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন । তবুও কখনো আমাদের কষ্ট বুঝতে দেয়নি। এমনকি আমাদের জন্য আমার বাবা বাজার থেকে প্রতিদিন চাল ক্রয় করে আনতেন সেই চালে আমাদের রান্না হতো। আমার বাবা একজন কৃষক মধ্যবিত্ত পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। আমার বাবা-মা আমার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আমার বাবা কখনো আমাকে কষ্ট পেতে দেননি। তিনি শত কষ্ট করে আমার সকল স্বপ্ন গুলো পূরণ করার চেষ্টা করছেন। আমার বাবা মা নিজের জন্য কখনো চিন্তা করতেন না। আমি এবং আমার আপু কিভাবে আমরা ভালো থাকবো সেই চিন্তা সব সময় করতেন। এভাবে কষ্টের জীবনগুলো পেরিয়ে এসেছি।
প্রাথমিক স্কুল জীবনঃ-
আমি খুব ছোট। আমার বোন যখন স্কুলে যেত তখনই আমি কান্না শুরু করতাম ওর সাথে স্কুলে যাবার জন্য। উপায় না দেখে ৩ বছর বয়সে আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। আমার প্রথম শিক্ষক হলেন আমার মা। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ তাআলা উনাকে নেক হায়াত দান করুক।
আমিন।
হাইস্কুল জীবনঃ-
আমি যখন ৫ম শ্রেনীতে পড়তাম, আমার মা, বাবা সব সময় বলতো ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে তাদের স্বপ্ন পূরন করতে হবে। আমাকে সব সময় তারা ভরসা দিতেন ও লেখাপড়া ভালো ভাবে করার জন্য উৎসাহিত করতেন৷
প্রাইমারি শেষ করে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে তিলনা মাল্টিমিডিয়া হাইস্কুলে ভর্তি হলাম । প্রতিদিন সময় মত আমার মা স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করে দিতেন । বাড়ি থেকে স্কুল অনেক দূরে প্রতিদিন পায়ে হেটে স্কুলে যেতাম।আবার মাঝে মাঝে আমার বাবা সাইকেলে করে স্কুলে রাখে আসতেন এভাবে কেটে গেলো ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। আমার যাওয়ার সমস্যার জন্য আমার বাবা আমাকে তিলনা মাল্টিমিডিয়া হাইস্কুল থেকে শিশা হাইস্কুলে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন । আমার বাড়ি থেকে শিশা হাইস্কুলে যেতে ৫ মিনিট সময় লাগতো। শিশা হাইস্কুলে ৯ম শ্রেনী থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি ।
আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছিলাম ।আমার ইচ্ছা ছিলো আমি ভালো কলেজে লেখাপড়া করবো । বাবা মা অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে শহরে পড়াশোনা করাবেন ।তখন আপু সিদ্ধান্ত দিলো রাজশাহীতে লেখাপড়া করার জন্য ।
কলেজ জীবনঃ-
জীবনে কখনো বাইরে চলাফেরার অভিজ্ঞতা ছিলো না । নওগাঁ থেকে রাজশাহী গিয়ে একটা ম্যাচে উঠেছিলাম সেখানে বড় ভাইদের সাথে অনেক পরিচিত হয়েছিলাম এবং এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হওয়ার জন্য সাফল্য কোচিং এ ভর্তি হলাম। এবং পলিটেকনিক্যাল এর এডমিশন দেওয়ার জন্য আমি রাজশাহী পলিটেকনিক্যালে অ্যাপ্লিকেশন করলাম। করার পরে আমি রাজশাহী থেকে বাড়িতে চলে আসেছিলাম। কারন আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না যার কারণে বাসায় চলে আসেছিলাম। অনেক দিন পরে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছিলো আমি ইলেকট্রনিক্স সাবজেক্ট এ পড়াশোনা করার সুযোগ পেলাম এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি ইলেকট্রনিক্স সাবজেক্ট নিয়ে ৪ বছর এর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি । তারপর বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ঢাকাতে আসলাম। লেখাপড়ার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে লাগলাম । ঢাকা থাকা অবস্থায় একজন বিমান বাংলাদেশ কর্মকর্তার সাথে আমার পরিচয় হয় । এবং অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। ভাইয়ার কাছে চির কৃতজ্ঞ ভাইয়ার জন্য আমার সুন্দর একটা চাকরি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভাইয়ার দীর্ঘ হায়াত দান করুক আর আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভাইয়ের জন্য দোয়া করি ।
আমার চাকরির সুবাদে কয়েকটি দেশে যাওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে মালয়েশিয়াতে আছি দীর্ঘ ৬ বছর । আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করতে পেরেছি । আমি আমার পরিবারকে অনেক আনন্দে রাখছি। এবং মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে আমি চেষ্টা করতে লাগলাম অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য কিছু করার। ৬ মাস পরে আমি সাফল্য অর্জন করলাম। এবং সেই থেকে Free Motion by Nahid নামে একটা পেজ চালু করলাম, আমার সকল কর্ম জীবন পেজে পোস্ট করা শুরু করলাম।
প্রবাসে চাকরি জীবনঃ-
জীবনে চলার পথে এতো কষ্ট তা আগে জানতাম না'' যদি বাবা মা এর ছায়া থেকে বেরিয়ে প্রবাসে না আসতাম'' এখন আর নবাবের মতো ঘুমানোর সুযোগ হয় না'জীবন টা রোবটের মতো হয়ে গেছে ' টাইমের সাথে মিলিয়ে চলতে হয় প্রতিটি মুহুর্তে ''
এখন আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে টেবিল ভর্তি খাবার পাওয়া হয় না' কাজ শেষে বাসায় ফিরে নিজেকেই রান্না করে খেতে হয়'
সামান্য একটু জ্বর হলে ' আম্মু পাগলের মতো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতো সারা রাত জেগে মাথায় পানি পট্টি দিতো'আর এখন দিনের পর দিন অসুস্থ শরীর নিয়েও কাজ করতে হয়''
আসলে প্রবাসী মানুষ গুলোর মতো কষ্টের জীবন হয়তো স্বাভাবিক মানুষদের নেই'
স্থান না বদলালে জীবন কত মূল্যবান 'আর সময়ের কত দাম বুঝতাম না ''
'সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বন্ধু-বান্ধব কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি না বলে 'সবাই ভাবে আমার অহংকার বেড়ে গেছে' এখন ওদের গুরুত্ব আমার কাছে নেই''
কিন্তু আমি ওদের কে কিভাবে বুঝাই যে আমি ওদের সাথে কথা বলতে পারি না বলে 'আমি কতটা কষ্ট পাই!
যা-ই হোক সব শেষে সবার জন্য মন থেকে দোয়া করি 'ভালো থাকুক সবাই !!
মানব সেবাঃ-
পৃথিবী জুড়ে আজ হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই আছে। মানবতা আজ বিপন্ন, একদিকে ক্ষুধার্থ মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ, অন্যদিকে দামি গাড়িতে চড়ে যাওয়া সাহেব। পৃথিবীর চিত্রই আজ এরকম। রাস্তায়-ফুটপাতে অসুস্থ, ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ। এইসব অসহায় মানুষের আর্তনাদ শুনে ও আজ কেউ শুনেনা কেমন জানি আজ সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত,, এর মাঝেও কিছু উদার সাহসিকতা, ন্যায় পরায়ণ, যাদের পুরো জীবন জুড়ে রয়েছে মানবিক কাজের উদারতার মন,
যারা সমাজের এবং দেশের কথা ভেবে নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। আত্মপ্রচার নয়, আত্মতৃপ্তিই যাঁদের মূল উদ্দেশ্য। মানবতার কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলে কেমন জানি অনেক ভালো লাগে।
এ সমাজে এমন অনেক চলমান গা ভাসিয়ে দেওয়া রাজনীতির যুগে সবার টার্গেট থাকে দলের পদ দখল। পদ দখল করে দলনেতা হওয়া যায়, কিন্তু জননেতা হওয়া যায় না। জননেতার প্রধান গুণ মানবিক হওয়া, মানবতার জন্য কাজ করা। আজকের সময়ে মানবতার কাজ করে যাচ্ছে Free Motion by Nahid সকলেই সবসময় পাশে থাকবেন এবং সহযোগিতা করবেন
আমার এই মানবিক কাজ গুলোর জন্য আপনাদের উৎসাহ অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই ।
আমার শিক্ষাঃ-
স্যারের সেশনটা যদি তখন পেতাম তাহলে ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম "চাকরি করবো না চাকরি দিবো"।
দক্ষতা তৈরি হয় অভিজ্ঞতা থেকে, আর অভিজ্ঞতা আসে ব্যর্থতা থেকে, তাই ব্যর্থতা খারাপ কিছু নয় এটা সাফল্যের প্রথম ধাপ।
প্রিয় গ্রুপে যুক্ত হওয়াঃ-
একদিন সকালে ফেসবুকে ফিডব্যাক দেখতে হটাৎ নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন আমার চোখে পড়লো গ্রুপটি প্রতিনিয়ত ফলো করতে লাগলাম পরে ভালো মন্দ দিকগুলো দেখতে পেলাম মাঝে ১৮তম ব্যাচ এ রেজিস্ট্রেশন করে নিলাম সেই থেকে গ্রুপের সাথে যুক্ত আমি।
প্রিয় ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষাঃ
মানুষের জীবনে শিক্ষার কোন শেষ নাই। এই ফাউন্ডেশন থেকে আমিও প্রতিনিয়ত শিখেই চলেছি নতুন বিষয়।
স্বপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন এবং লেগে থাকুন -একদিন সাফল্য আসবেই।
জীবনে বড়, সফল ও সুখী হবার জন্য পজেটিভিটির কোন বিকল্প নাই।
সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে সততা ও কমিটমেন্ট।
সময় নিন, সময় দিন,সময় জীবন বদলে দিবে।
যে নিজেকে ভালো রাখে এবং অন্যকেও ভালো রাখে - তিনিই একজন ভালো মানুষ।
জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হওয়া।
জীবনে এগিয়ে যাবার যাওয়ার অবদান শুধু মাত্র মা, বাবার দোয়া।
প্রিয় ফাউন্ডেশন থেকে অর্জনঃ-
ভালোবেসে এই প্লাটফর্মে যুক্ত ছিলাম ৫ম ব্যাচ থেকে কিন্তু আমি যানতাম না যে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় যখন জানতে পারি তখন ১৮তম ব্যাচ চলছে তখন আমি দ্রুত ১৮তম ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলি। এখানে পেয়েছি ভালো মানুষদের সাথে কথা বলার সুযোগ । এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবার সাথে পরিচিত লাভ করছি । আমি ২০২০ সালের ১৮ই আগস্ট থেকে একটি উদ্যোগ নেই অনলাইন অফলাইন ব্যবসার। আমি বিভিন্ন কসমেটিকস পণ্য মালয়েশিয়া থেকে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট করি আমার বিজনেস পেজ
@MK Enterprises । আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন প্রতি মাসে ভালো সেল করি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতায় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন একদিন ইন্টারন্যাশনাল একটা ব্যান্ড এ পরিণত হতে পারে।
❝আশা নয়, বিশ্বাস করি ভালোবেসে সবাই পাশে থাকবেন❞
পরিশেষে একটা কথা বলতে চাইঃ-
সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার জীবনের গল্পটা পড়ার জন্য। আমার গল্পটির মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে" ৯০৯
০১/১২/২২
আমি মোঃ- মুক্তাদুল কবির নাহিদ
ব্যাচ নংঃ- ১৮
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ- ৯৯৪২৯
নিজ জেলাঃ- নওগাঁ
উপজেলাঃ- সাপাহার