অপারেশন থিয়েটারের সামনে আমার দিশেহারা বাবা-মা সেই সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন যাতে আমি বেচে ফিরে আসি।
আসসালামু আলাইকুম
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি,
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি যে,তিনি আমাকে হাজারো মাখলুকাতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ট মাখলুকাত মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ(সা:) এর উম্মত বানিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন,আলহামদুলিল্লাহ
সেই সাথে স্মরণ করছি আমার মা-বাবার কথা যাদের উছিলায় আমি এই জগতে এসেছি এবং তাদের নিরসার্থ ভালোবাসায় বড় হয়েছি
সেই সাথে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি শ্রদ্ধেয় প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার পরিশ্রমের ফসল এই নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
যেই ফাউন্ডেশনের কল্যাণে আমি আমার ছোট গল্পটি বলার সুযোগ পেয়েছি।
সবার জীবনেই একটা গল্প রয়েছে, যেই গল্পের প্রতিটি পাতায় সুখ এবং দুঃখ এক সঙ্গে গাঁথা।
বয়স কম হলেও আমার বেলায় ও এর ব্যতিক্রম নয়।
অনুরোধ রইলো গল্পটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য
আমার জীবনের গল্প
আমার ছোটবেলা :
আমি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
আমরা দুই ভাই। দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি বড় সন্তান।
বাবা-মায়ের অনেক আদর ভালোবাসায় আমার বেড়ে ওঠা।
দাদা,নানা-নানী,খালা-মামা এমনকি প্রতিবেশীরাও আমাকে অনেক আদর করতেন। আমাকে সবাই সব সময় কোলে কোলে রাখতেন এমনকি তারা আমাকে কোলে নেওয়ার জন্য টানাটানি করতেন।
আমাকে কোলে নেওয়ার বাবা-মার মধ্যেও খুনসুটি লেগে থাকত।
দাদা ও নানাও আমাকে কোলে নেওয়ার ভোরে উঠে পড়তেন যাতে তারা সবার প্রথমে আমাকে কোলে নিতে পারে।
এরকমই মিষ্টি ছোটবেলা কেটেছে আমার।
সত্যি ভীষণ আদরে বড় হয়েছি আমি,
বাবা-মা কেউই দুঃখের ছায়া লাগতে দেয়নি আমার গায়ে। চাওয়ার আগেই পেয়েছি সবকিছু এখনও পাই।
এত হাসিখুশি মধ্যেও ছিল, না পাওয়ার বেদনা,এত ব্যাথা কষ্ট তা তখনও বুঝতে পারিনি আমি।
কারণ আমি তাদেরকে দেখেছি মেনে নিতে এবং মানিয়ে চলতে।
শিক্ষাজীবন
পড়ালেখার শুরুটা মায়ের হাত ধরে।
যখন আমার সাড়ে তিন বছর বয়স,
তখন মা টিচার রেখে দিলেন বাসায় এবং
ভর্তি করিয়ে দিলেন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে।
শুরু হলো আমার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা।
পড়াশোনায় আমি বরাবরই ভালো শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়েছি যার কারণে ক্লাসের শিক্ষকরাও আমার প্রশংসা করত।
সব সময়ের মতো ভালো ফলাফল নিয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হই আর সেই,
তৃতীয় শ্রেণীতে থাকাকালীন আমি গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়ি।
চিকিৎসা করার জন্য আমাকে পাঠানো হয় ধানমন্ডি মর্ডাণ হাসপাতালে।
সেখানে আমার দাদা ভুল করে অন্য ঔষধ আমাকে খাইয়ে দেয় যার ফলে আমাকে
ইমারজেন্সিতে ট্রাস্নফার করা হয়।
রিপোর্টে আমার শরীরে টিউমার ধরা পড়ে।
সেখান থেকে আমাকে অন্য আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে আনা হয়।
তারপর আমাকে সেই হাসপাতালেই অপারেশন করা হয়।
অপারেশন করার সপ্তাহখানেক পর আবার আমার রক্তক্ষরণ হয়, যেন রক্তের বন্যা বয়ে গেল।
মা আমার অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে আমাকে আবার অপারেশন করা হয়।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে আমার দিশেহারা বাবা-মা সেই সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন যাতে আমি বেচে ফিরে আসি।
সেইদিন আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং মা-বাবার দোয়ায় আমি বেঁচে যাই।
আলহামদুলিল্লাহ ,
একমাস বিশ্রাম নেওয়ার পর আমি
অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলাম।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর পড়ালেখা আবার চালু হলো।
আমি ৪র্থ শ্রেণি শেষ করে তখন ৫ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হই।
আমি যখন ৫ম ক্লাসে পিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
তখন আমার কাছে PSC মানে জীবনের একটি বড় পরীক্ষা,
ছোট থেকে একটু বড় হয়ে ওঠা,
নতুন অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত হওয়া
পরীক্ষা শুরু হলো....।
সেখানে আমি আবারও খারাপ পরিস্থিতির শিকার হই ।
আমার বন্ধুরা আমার পরীক্ষার প্রশ্ন নষ্ট করে দিত এবং আমার খাতায় কলমের দাগ দিয়ে দিত।ওরা আমাকে ঠিক করে পরীক্ষা দিতে দিত না।
তখন আমি অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি।
মা বলতেন, "তুমি তো তোমার সেরাটা দিয়েছো, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে তুমি অবশ্যই ভালো ফলাফল করবে আর বাবা-মার দোয়া তো আছেই তোমার সাথে"।
এরকম করেই শেষ হয়ে গেল আমার PSC পরীক্ষা।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখি
আমি গোল্ডেন জিপিএ-৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি।
সত্যি! মা-বাবার দোয়া থাকলে পৃথিবীর কেউই আপনার সফলতাকে আটকে রাখতে পারবে না ,ইনশাআল্লাহ !
এভাবেই চলতে থাকে আমার পড়ালেখা।
বাবা-মা সবসময় বলেন,"তোমাকে অনেক শিক্ষিত হতে হবে এবং শুধু শিক্ষিত নয় সুশিক্ষিত হতে হবে এবং ভালো ছাত্রের চেয়ে ভালো মানুষ হতে হবে, ভালো মানুষ হওয়া সবচেয়ে জরুরি।"
সরল মনে মাকে তখন প্রশ্ন করলাম,"মা,আমি তো খারাপ কিছু করি না, তোমাদের কথা মতোই চলি তবুও আমাকে কেন আরোও ভালো হতে হবে?"।
তারপর মা বললেন,"বাবা, ভালো মানুষ না হলে আপনজনকেও কষ্ট দিতেও মানুষ সংকোচ বোধ করে না"।
আমি বললাম,"ঠিক আছে মা আমি অনেক ভালো হবো, ইনশাআল্লাহ"।
জীবনের এক কঠিন মুহূর্ত
আমার পরিবার একটা সুখী ও আদর্শ পরিবার।
আমার বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। সংসারের পাশাপাশি মা এখন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছেন।
তারা দুই জনই ছিলেন প্রচন্ড সৎ এবং পরোপকারী।
ভালোই কাটছিল আমাদের দিনগুলো।
হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসলো আমাদের পরিবারে।
তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি।
আমার মায়ের নাক অপারেশন করানো হয়েছিল।
নাক অপারেশন এর ২০ দিনের মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা ও জ্বর আসে আমার মায়ের।
ওষুধ খাওয়ানো হলো কিন্তু কিছুতেই কমে না জ্বর।
চার দিন কেটে গেল,তারপর আর দেরি না করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া হলো মাকে। ডাক্তারের রিপোর্টে ধরা পড়ে,এটি ডেঙ্গু জ্বর।
তারপর মাকে সেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বিকাল না গড়াতেই আবার আমার ছোট ভাইয়েরও প্রচন্ড জ্বর আসে।
ভাইয়ের ব্লাড টেস্ট করানো হয় এবং ধরা পড়ে সেই ডেঙ্গু জ্বর।
বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন। দুইজনের একই রোগ।
ভাইকেও সেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
১ দিন পর মায়ের অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগল,রক্তের কাউন্ট ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।
ডাক্তার বাবাকে বললেন আল্লাহকে ডাকেন,
বাবা শুনে বললেন এই হাসপাতালে রাখবো না।
ততক্ষণে হাসপাতালে কান্নার ঢল নেমে গেল।
দাদা আর নানির হাতে আমাকে ও ছোট ভাইকে দিয়ে মা বললেন,'আমার দুই ছেলেকে দেখে রাখবেন,আমি যদি মারা যাই কোন কষ্ট যাতে তারা না পায়'।
দাদা আর দাদীর কাছে ছোট ভাইকে রেখে,বাবা আর নানী মাকে নিয়ে ভর্তি করালেন অন্য একটি হাসপাতালে।
ডাক্তার মাকে দেখে বললেন অবস্থা বেশি ভালো না।
তার কিছুক্ষণ পরে ফোন আসলো দাদার।
বললেন,'তোমার ছোট ছেলে অনেক কান্না করছে'।
বাবা বললেন ওকেও তাহলে ওই হাসপাতাল
থেকে নাম কাটিয়ে এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
দাদা ওই প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে নাম কাটিয়ে নিয়ে গেলেন এবং ভাইকেও ভর্তি করলেন সেই হাসপাতালে।
একই হাসপাতালের ৩ তলায় ভাই আর ৬ তলায় মা।
তারপর দিন আবার টেস্ট করানো হলো। ডাক্তার বাবাকে বললেন রিপোর্ট খারাপ এসেছে রক্ত লাগতে পারে ডোনারের ব্যবস্থা করুন।
বাবা দিশেহারা হয়ে পড়লেন।
আত্মীয়-স্বজন,পরিচিতি-পরিজন,
সব বন্ধু-বান্ধব সবার কাছে ফোন দিতে লাগলেন।
কিন্তু বিপদের সময় কোন আত্মীয়-স্বজন আসলো না।
বাবা চিনে গেলেন আপন সেই মানুষ গুলোকে।
দিশেহারা বাবা কখনো ৩ তলায় আবার কখনো ৬ তলায় ছোটাছুটি করতে লাগলেন
আর তখন কান্নায় বুক ভেসে যেত বাবার।
আমি অভাগা একা বাসায়।
ভয়ে থাকতাম সবসময়, মা ও প্রাণ প্রিয় ছোট ভাই মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে, এই বুঝি আমি এতিম হয়ে পড়লাম।
আমাদের এলাকার এক বাড়িওয়ালি আমার মা আর ভাইয়ের জন্য নফল নামাজ পড়লেন এবং মসজিদেও অনেক দোয়া দরূদ পড়ানো হল।
এভাবে কেটে গেল আরো দুইদিন।
মানুষ যা বলে অন্যের উপকার করলে নাকি সৃষ্টিকর্তা নিজে তাকে উপকার করেন।
আমার মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন ও মানুষের কোন বিপদ দেখলে তাদের বিপদে পাশে দাঁড়াতেন এবং বিশেষ করে আমার মায়ের কথা তিনি ছোটবেলা থেকেই ভীষণ পরোপকারী ছিলেন,আমার নানীও তা বলতেন।
আমিও দেখেছি কেউ বিপদে পড়লে আমার মা নিজ উদ্যোগে সাহায্য করতেন এবং আশেপাশের প্রতিবেশীদের সহযোগিতার মাধ্যমেও তার সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতেন।
পরোপকারের উপহারস্বরূপ আল্লাহ রহমতে আমার মা সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন।
কিন্তু অন্যদিকে ভাইয়ের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে লাগলো।
মাকে কিছুই জানানো হয় না, মা শুধু জিজ্ঞেস করে ও কেমন আছে?
নানি আর বাবা বলে, "ভালো তুমি ওর জন্য দোয়া করো"।
মা বলেন, "ওকে দেখতে ইচ্ছে করে আমার"।
এদিকে ভাইয়ের প্রশাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে গেছে ও পেট ফুলে ভয়ংকর অবস্থা ।
ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছে।
ডাক্তার বলেছে রাতের মধ্যে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে, আল্লাহকে ডাকেন।
বাবা আমার মাকে বললেন "যদি তোমার রিপোর্টটা ভাল আসে তাহলে মনে করবো কপালটাই ভালো"
কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার আসলেন।
ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললেন,"আপনার রিপোর্ট ভালো আসছে আপনার রক্ত লাগবে না রক্তের কাউন্টার বেড়ে গেছে"।
বাবা দু চোখের জল ফেলে হেসে দিলেন।
মাকে রিলিজ করে দেওয়া হলো।
এদিকে বাবা নানীকে অনুরোধ করলেন আমার মাথায় হাত রেখে বলেন আপনার মেয়েকে এই সব কিছুই বলবেন না ও সহ্য করতে পারবেনা না।
নানী বাবাকে কেঁদে কেঁদে বললেন ওর সন্তানকে একবার শেষ দেখা দেখতে দাও।
বাবা বললেন সবাই স্বাভাবিক থাকবেন কেউ বুঝতে দিবেন না, হাসিখুশি থাকবেন।
নানি আর বাবা চলে গেলেন ভাইয়ের কাছে তিন তলায়।
দাদি ছয়তলা থেকে মাকে তিনতলায় নিয়ে আসলেন।
মা গিয়ে দেখলেন পরিবারের সব দাঁড়িয়ে আছে।মাকে দেখে সবাই মুচকি হেসে দিলেন।
বাবা বললেন,"দোয়া করে দাও তোমার ছেলেকে"। মা ভাইকে ধরতে পারলেন না, ভাইয়ের পেট ফুলে ভয়ংকর অবস্থা।
মা দুই হাত তুলে আঁচল পেতে মেঝেতে বসে পড়লেন ও বললেন, হে আল্লাহ আমার সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও আর দোয়া পড়ে ফু ও দিলেন
তারপর মা বললেন,"আমি আমার সন্তানের কাছে থাকবো,আমি ওর সেবা করব,আমি যদি থাকতাম তাহলে ও এত অসুস্থ হত না"।
বাবা বললেন তুমি বাসায় চলে যাও তুমি তো দোয়া করেছো। ও সুস্থ হয়ে যাবে ।
তারপর মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরের দিন ডাক্তার আসলেন এবং আমার ভাইয়ের রিপোর্ট দেখে বললেন,"তাদের পক্ষে আর সম্ভব না"।
বাবা দুই চোখের জল ছেড়ে দিলেন।
তখন বাবা আমার ভাইকে দ্রুত ধানমন্ডির নামকরা একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে ডাক্তার বলেন, এই রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ওকে দ্রুত ICU তে ভর্তি করান
আমাদের কাছে এই মুহূর্তে ICU খালি নেই।
ডাক্তার পরামর্শ দেন আমার ভাইকে ধানমন্ডি একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিতে। এমন করে তিনটি হাসপাতাল থেকে ভাইকে রিটার্ন দেওয়া হল।
বাবা দ্রুত সিএনজি ভাড়া নিয়ে রওনা দেন। কিন্তু এদিকে বিপদ যেন শেষ হয় না,
সেদিন খুব ট্রাফিক জ্যাম ছিল।
পৌঁছানোর পর বাবা ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
তারপর ICU এর জরুরি বিভাগে ভাইকে এডমিট করা হয়।
রাতে ডাক্তার বললেন,"রোগীর জন্য দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে দ্রুত ব্যবস্থা করুন"।
বাবা দিশেহারা হয়ে পড়লেন।
তখন সেই হাসপাতালের দুইজন নার্স রক্ত দান করলেন।
এমন করে ভাইকে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলো।
ধীরে ধীরে আমার ভাই সুস্থ হতে লাগলো।
প্রায় সাত দিন পর ICU থেকে নরমাল বেডে ট্রান্সফার করা হয়।
দুইদিন পরই আমার ভাইকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়।
আল্লাহর রহমতে আমার ভাই সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
আলহামদুলিল্লাহ ।
উদ্যোগের ভাবনা
অষ্টম শ্রেণীতে থাকাকালীন লকডাউন পড়ে যায় করোনা ভাইরাসের কারণে।
এসময় আমি ইন্টারনেটের সাথে প্রথমবারের মতো পরিচিত হই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে শুরু করি।
আমাকে মা অনেক উদ্যোক্তাদের জীবনী ও বায়োগ্রাফি বের করে দিতেন এবং
সেখান থেকেই আমার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনা আসে।
সেই ভাবনাটি একসময় ইচ্ছা এবং সেই ইচ্ছাটি একসময় প্রবল ইচ্ছার রূপ ধারণ করে।
তাই ভেবে নিয়েছিলাম আমি বাণিজ্য বিভাগে পড়ব।
আমার এই সিদ্ধান্ত দেখে স্কুলের শিক্ষকরা তেমন খুশি হলেন না। সাবজেক্ট চেঞ্জ করার সময় প্রধান শিক্ষক বললেন,"তুমি তো ভালো ছাত্র তাহলে বিজ্ঞান শাখা ছেড়ে বাণিজ্য বিভাগে কেন পড়তে?" চাও?
তখন বললাম, "স্যার আমি উদ্যোক্তা হতে চাই,
চাকরি নিতে চাই না চাকরি দিতে চাই
এছাড়াও বাণিজ্য বিভাগে আমি হয়তো আরো ভালো ফলাফল করতে পারি"।
এরপর আমি সাবজেক্ট চেঞ্জ করে বাণিজ্য বিভাগে চলে এলাম।
জীবনের প্রথম দূর্যোগ
সারা বিশ্ব যখন থমকে গেছে করোনা ভাইরাসের কাছে।
তখন বার বার লকডাউনের কারণে আমার বাবা মার ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে।
সেজন্য বাবার ডিপিএস ও জমানো টাকা ভেঙ্গে আমাদের চলতে হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে আমরা সাময়িক কিছু সমস্যায় পড়ে যাই।
তখন চিনতে পারলাম আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের।
এখন আমি বুঝতে পারলাম কেন আমার বাবা-মা আমাকে বারবার বলতেন তোমাকে শিক্ষিত হতে হবে ভালো মানুষ হতে হবে।
আজ বড়ই দুঃখ হয় সেইসব আপনজনদের কথা মনে পড়লে,এই বলে দুঃখ হয় না যে তারা আমাদেরকে ধোকা দিয়েছে,এই বলে যে আর আমরা তাদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছি না।
তারা যে আমার বাবা মার সাথে কতটা খারাপ আচরণ করেছে সেটা ভাবলেই হৃদয়টা কেঁপে উঠে।
আমার বাবা-মা খুব সরল মানুষ এত কিছুর পরও তারা চেষ্টা করেছে তাদের সাথে মিলেমিশে থাকার। জীবনে তারা অনেক সংগ্রাম করেছেন
আমি গর্বিত এরকম মা বাবা পেয়ে।
সত্যিই আমি খুবই সৌভাগ্যবান।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং একজন ভালো মানুষ হতে পারি। ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ফাউন্ডেশন এর সাথে যুক্ত হওয়া
মা একদিন দেখলে ১৭তম ব্যাচ শুরু হয়েছে এবং আমাকে বললেন কিভাবে এখানে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে?
তখন আমি ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে চেক করলাম এবং লাইভ সাপোর্ট টিমের একজনের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে এখন কি ১৭তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে কিনা?
তখন সেই লাইফ সাপোর্ট টিমে থাকা সেই দায়িত্বশীল আমাকে বললেন হ্যাঁ রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
তখনই আমি আমার মাকে বললাম রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
তখন মা বললেন,"তুমি রেজিস্ট্রেশন করো এখান থেকে তুমি অনেক কিছু শিখতে পারবে"।
তারপর আমি রেজিস্ট্রেশন করলাম ১৭তম ব্যাচে।
এভাবেই প্রিয় ফাউন্ডেশনের সাথে আমার যুক্ত হওয়া।
এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয় আমি পেয়েছি লাখো ভাই-বোনদের যাদের থেকে প্রতিনিয়তই শিখছি এবং টানা ৯০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি আমার উদ্যোগটি শুরু করেছি। আমার উদ্যোগের নাম হরদম বাজার(Hordom Bazar)
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা প্রিয় মেন্টর জনাব @Iqbal Bahar Zahid স্যারেকে এত সুন্দর ফাউন্ডেশন উপহার দেওয়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯১৩
Date:- ১২/১২/২০২২ইং
গল্পটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ
আমি,,,,
মোঃ ফেরদৌস
ব্যাচ নং-১৭
রেজিস্ট্রেশন নং-৮২২৩৬
থানা-শ্যামপুর
যুক্ত আছি ওয়ারি জোনে
নিজ জেলা- শরিয়তপুর