চাকরি জীবন আমার বাবা ৭ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতো আবার আসতো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমার জীবনের গল্প
"""আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি"""
সর্বপ্রথম শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জানাই মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি, যিনি আমাকে আপনাকে সুস্থ রেখেছেন,ভালো রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
মহান সৃষ্টিকর্তার পর আমার বাবা-মা এর উপর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি, যাদের কারনে এই সুন্দর ভুবনে আসতে পেরেছি
ধন্যবাদ জানাই সবার প্রিয় মেন্টর,প্রিয় শিক্ষক,তরুন তরুনীর আইডল, অবিভাবক Iqbal Bahar Zahid স্যারকে যিনি আমাদের জন্য এই বিশাল প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছেন।একটা ভালো মানুষের পরিবার উপহার দিয়েছেন।দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে হায়াত বৃদ্ধি করে দেন।
দোয়া আর ভালোবাসা আমাদের সকলের প্রিয় "নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন" এর সকল ভাই-বোন দের জন্য।
জীবনের গল্প লিখা মানে জীবনের অতীতকে নতুন করে আর একবার মনে করা।কিছু খারাপ স্মৃতি কিছু ভালো স্মৃতি সব মিলিয়ে অন্য রকম অনুভূতি। যা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।জীবনের গল্প কখনও লিখে শেষ করা যায় না।সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখলাম।
আমার পরিচয়
আমি মো: তৌহিদুল ইসলাম।পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী ।বাবা মা এর ৩য় সন্তান।বড় ২ বোন আর ভাই আমি একাই ।১৯৯৫ সালে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি।
আমার বাল্যকাল
বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে আমিই ছোট আর একমাত্র ছেলে হওয়ায় সবার আদরের ছিলাম আর দুষ্টামিও করতাম খুব। মা আর বোন আমাকে অনেক শাসন করতো।বাবা আমাকে কিছুই বলতো না।খেলাধুলা করতাম অনেক
আমার শিক্ষা জীবন
শিক্ষা জীবন আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
স্কুলজীবন শুরু হয়েছে ২০০০ সালে।আমার বড়বোন আমাকে পড়াশুনা করাতো। আমি দুষ্ট থাকার কারনে প্রতিদিন প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুল চলাকালীন সময় বেশ কয়েকবারই নালিশ নিয়ে হাজির হতো আমার সহপাঠিরা।ক্লাস ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত রোল ছিল এক। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার পর পড়াশুনা উপর আনমনা হয়ে গেলাম।
২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক পাস করি।উচ্চমাধ্যমিক পড়াশুনার শেষ দিকে যখন ২০১২ সালে পরীক্ষা দিবো তখন অসুস্থ হয়ে পড়ার কারনে পরীক্ষা দিতে পারলাম না। ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি। পারিবারিক সমস্যার কারনে দূরে কোথাও পড়াশুনা করতে যাওয়া হয় নাই।আমি পটুয়াখালী সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। এরপরে ২০১৮ সালে অনার্স এবং ২০১৯ সালে মাস্টার্স করি।
আমার বাবা
প্রত্যেকটা পরিবাবের একজন মানুষ থাকেন মাথার উপর ছাতা হয়ে ছায়া দেয়ার জন্য। ঠিক তেমনই আমার বাবা একজন।আমার বাবার বয়স যখন ১০, তখন থেকে নামাজ জীবনে কোনোদিন বাদ দেয় নাই এক ওয়াক্ত,তাহাজ্জুদ নামাজ পরতো প্রত্যেহ, আমার দাদা ভাইয়ের কাছে শুনেছি।আর এখনতো আমার নিজের চোখে দেখি।বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। আমার বাবা একজন মাটির মানুষ। কারো সাথে ঝগড়া করতে কোনোদিন দেখি নাই।আমাদের পরিবারের সকলের জন্য আমার বাবা একজন আদর্শ বাবা ছিল। আমাদের আত্মীয় স্বজনরা এবং পাড়া প্রতিবেশি সকলেই আমার বাবাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতো। বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।বাবা ২০১২ সালে চাকরি থেকে অবসারে যান।চাকরি জীবন আমার বাবা ৭ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতো আবার আসতো।কারন তখন যাওয়ার আসার পথে কোনো যান-বাহনের ব্যবস্থা ছিলো না।এখন যান-বাহনের অভাব নাই কিন্তু বাবা চাকরিতে নাই। আমাদের তিন ভাইবোন দের অনার্স-মাস্টার্স করিয়েছেন অনেক কষ্ট করে। বাবার কাছে জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।শত কষ্টের মাঝেও সন্তানদের চাহিদা গুলো পূরন করতো।কিন্তু এখন বুঝি বাবা কত কষ্ট করতো আমাদের জন্যে ।বাবা ১০ আগষ্ট ২০২১ সালে স্ট্রোক করে প্যারালাইজড।কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার বাবা অত্যন্ত একজন ভালো মানুষ।দোয়া করবেন আমার বাবার জন্যে।
আমার মা
আমার মা অতি সাধারন নরম মনের মানুষ। আমাদের তিন ভাই-বোনকে গড়ে তোলা,সংসার সামলানো এতেই মা খুশি। মা রাত ভরে বসে থাকতেন যতক্ষন পড়ার টেবিলে থাকতাম।আমার মা এর সম্পর্কে অল্প কিছু বলে শেষ করা যাবে না। আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। "মা" আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন ।আমার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
আমার কর্মজীবন ও কষ্টের সময়
বাবা ২০১২ সনে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর আমাদের পরিবারের সবার চোখে অন্ধকার দেখা শুরু হলো।বাবা একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। যা বেতন পেতেন তা আমাদের তিন ভাইবোন এর পড়াশুনা আর সংসারে খরচ হয়ে যেত। সারাজীবনের জমানো পুজি ছিলাম একমাত্র আমরা তিন ভাইবোন ।সমস্ত টাকা আমাদের পিছনেই খরচ করতে হতো। আমি যুক্ত হয়ে গেলাম কর্মজীবনে।টিউশনি করানো শুরু করলাম। পার্ট-টাইম চাকরি করতাম।এভাবেই কর্মজীবনে পথ চলা শুরু। আত্মীয় স্বজনরা সবাই চাকরি দিবে এমন আশা দেয়।কিন্তু যখন অনার্স শেষ করলাম তখন আর একজন আত্মীয় খুজে পাই নাই।আজও না।একটা প্রবাদ আছে, ""মাথায় তেল থাকলে সবাই তেল দিতে আসে,খালি মাথায় কেউ তেল দিতে আসে না""। অজুহাতের শেষ নাই।বাবা আগষ্ট ২০২১ সনে অসুস্থ হওয়ার পড়ে আমার চাকরি টা ছেড়ে দিতে হয়।কারন বাবাকে দেখার জন্যে কেউ নাই। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর আর আমার চাকরিটা না থাকার কারনে অনেকটা পিছিয়ে গেছি।
উদ্দোক্তা জীবন
তখন অনার্স পড়া অবস্থায় জমানো টাকা দিয়ে একটি একটি ল্যাপটপ কিনি আর প্রিন্টার কিনি। শুরু করে দিলাম উদ্দোক্তা জীবন। ২০১৮ সাল ব্যবসা ভালোই চলছিল কিন্তু কি আর করার।শুরু হলো কোভিড ১৯। ব্যবসায় ধস।।দোকান ভাড়া বসে বসে দিতে হলো। শেষে ছেড়ে দিতে হলো দোকান। দোকান ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম।কোভিড ১৯ শেষের দিকে ঢাকা টিশার্ট প্রিন্ট করার ট্রেনিং দিলাম।যেকোনো কারনে ব্যবসা শুরু করতে পারি নাই।শুরু করে দিলাম আবার জব করা।
"নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন"" এর সন্ধান
আমি একদিন ইউটিউব দেখতে দেখতে সামনে চলে আসে UTV LIVE । তখন থেকে আমি প্রিয় মেন্টরইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর ভিডিও গুলো দেখতাম UTV লাইভ থেকে এবং নিজের মধ্যে অনুধাবন করি।তারপরে গ্রুপে যুক্ত হইলাম। ১৭ তম ব্যাসে ভর্তি হয়ে গেলাম। নিয়মিত সেশন গুলো ভালো করে পড়তাম আর বুঝতাম।
গ্রুপে এসে আমাদের সবার প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর স্লোগান স্বপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন এবং লেগে থাকুন -সফলতা আসবেইএই বানী দেখার পর আমার স্বপ্ন আমাকে ঘুমাতে দেয় না ।একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।স্যার এর সেশন গুলো পড়ে অনেক অনুপ্রেরণা পাচ্ছি যা আমি কোনো গ্রুপে পাই নাই।আমি নিজেকে অনেক ধন্য মনে করি। ইনশাআল্লাহ স্যার আপনার শপথনামা বুকে লালন করে, মেনে চলবো।
এই গ্রুপ থেকে আমি যা শিখছি
প্রতি দিন আমি এই গ্রুপ থেকে স্যার এর দেয়া সেশন থেকে যা শিক্ষা নিচ্ছি।
আমি স্বপ্ন দেখতে শিখে গেছি।
আমি ভালো মানুষ এর চর্চা করতে শিখেছি।
আমি প্রতি দিন সেশন চর্চায় থেকে কথা বলার জড়তা কাটাতে শিখে গেছি।
আমি মানুষের সাথে মিশতে শিখেছি।
কীভাবে একজন ভালো উদ্যোক্তা হওয়া যায়।
কীভাবে অন্যের বিশ্বাস অর্জন করা যায়।
এসব কিছু আমি আমার প্রিয় স্যার থেকে শিখেছি এবং যতদিন বেঁচে আছি শিখে যাবো।
এই গ্রুপ থেকে আমি কি পেলম
কি ভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায় তা প্রতিনিয়ত শিখছি
কিভাবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে হয়।
যে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তা থেকে কিভাবে সমাধান বের করতে হয়।
নিজেকে একজন সৎ ও ভালো মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
কিভাবে সব সময় পজিটিব চিন্তা করা।
প্রিয় ভাই বোন পেয়েছি।যাদের কথা না বললেই নয়।জেলা প্রতিনিধি ও সম্মানিত মডারেটর নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন=> Mansura Rina ,, কান্ট্রি এম্বাসেডর Md Masud Rana , কমিউনিটি ভলান্টিয়ার মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন , কমিউনিটি ভলান্টিয়ার Md Khokon ,, কমিউনিটি ভলান্টিয়ার Sabina Yesmin , কমিউনিটি ভলান্টিয়ার Burhan Uddin Sabu ভাতিজা=> ক্যাম্পাস এম্বাসেডর Md Siddiqur Rahman Shuvo
আলহামদুলিল্লাহ এই গ্রুপ থেকে কি পেলাম তা আমি লিখে শেষ করতে পারব না।আমাদের গ্রুপের প্রতিটা ভাই বোন অনেক আন্তরিক সবার জন্য অনেক দোয়া রইল যারা আমার জীবনের গল্প তুলে ধরতে সাহস দিয়েছেন।
সর্বোপরি কথা
একজন ভালো মানুষ সমগ্র পৃথিবীর জন্য আলোকবর্তিকা। আর প্রিয় মেন্টর শ্রদ্ধেয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আমাদেরকে সর্বদা সেই ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। আসলে স্যারের প্রতিটি কথার মধ্যে আমার মনে হয় এক ধরনের জাদু আছে। আমি স্যারের প্রতিটি কথা মনে প্রানে পালন করছি। প্রতিটি কথায় আমি অনুপ্রানিত হয়। আমি সাহস পাই এগিয়ে যাওয়ার জন্য। স্যারের একটি বানী আছে,""বৃষ্টি সবার জন্য পড়ে, তবে ভিজে কেউ কেউ""এই কথার গভীরতা কিন্তু অনেক বেশি।আসলে আমাদের জন্য চমৎকার একটি সেরা বাক্য।
সকলেই আমার জন্যে দোয়া করবেন,আমি যেন একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারি এবং ভালো মানুষ হয়ে আজীবন বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে পারি সবাই দোয়া করবেন।
আমার কথা গুলোর মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলের মঙ্গল কামনা করছি। মহান আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের হায়াৎ দান করেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য্য সহকারে আমার গল্পটি পড়ার জন্য এবং আপনাদের মূল্যবান সময় আমাকে দেওয়ার জন্য।
সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। নিরাপদে থাকুন।আল্লাহ হাফেজ
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯১৪
Date:- ২০/১২/২০২২ইং
নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর একজন গর্বিত সদস্য।
নামঃ মোঃ তৌহিদ
ব্যাচ নংঃ ১৭
রেজিস্ট্রেশান নংঃ ৮৯১৬৭
জেলাঃ বরগুনা
উপজেলাঃ আমতলী
বর্তমান অবস্থানঃ ঢাকা
মোবাইলঃ ০১৭১৩-৯৫৯১২৫
রক্তের গ্রুপঃ'ও' পজেটিভ (o+)