জীবনের গল্প
#জীবনের_গল্প
আসসালামুয়ালাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতু
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি,
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি যে,তিনি আমাকে হাজারো মাখলুকাতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ট জীব মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ
সেই সাথে স্মরণ করছি আমার মা-বাবার কথা যাদের উছিলায় আমি এই জগতে এসেছি এবং যাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বড় হয়েছি।
সেই সাথে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি শ্রদ্ধেয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
যেই ফাউন্ডেশনের কল্যাণে আমি আমার ছোট গল্পটি সকলের মাঝে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি।
সবার জীবনেই একটা গল্প রয়েছে, যেই গল্পের প্রতিটি পাতায় সুখ এবং দুঃখ এক সঙ্গে গাঁথা।
বয়স কম হলেও আমার বেলায় ও এর ব্যতিক্রম নয়।
সকলের কাছে অনুরোধ🙏🙏 রইলো সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ার।
জীবনের গল্প
#আমার_ছোটবেলা:
জন্ম আামার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা শহর ঢাকার অপর নাম জাহাঙ্গীর নগরে। শিশুকাল জাহাঙ্গীর নগরেই কেটেছে। আমার যখন দুই বছর বয়স তখন আমার বাবা মা স্বপরিবারে একেবারের জন্য চলে আসেন শরীয়তপুরে। শরীয়তপুরে এসে আমি পাই নতুন একটি পরিবার। যখন আমি ঢাকায় ছিলাম, তখন বড় হচ্ছিলাম একটি একক পরিবারে। কিন্তু যখন আমার বাবা মা আমাকে নিয়ে শরীয়তপুরে চলে এলেন তখন আমি পেলাম একটি যৌথ পরিবার। আমার যৌথ পরিবারে ছিল , দাদা- দাদি,চাচা-চাচি, নানা- নানি,মামা কারও কোনো অভাব ছিল না আমার। সবার আদর যত্নেই আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠেছি আমি, পরিবারের সবাইকে একসাথে পেয়েছিলাম। আমাদের নিজস্ব এমব্রয়ডারির কারখানা ছিলো যেহেতু আমাদের নিজস্ব ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সেহেতু আমাদেরভ পরিবারের কাউকেই বাহিরে বা অন্যত্র চাকরি করতে হয়নি। সবাই নিজস্ব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতেন। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সবাই আমার খুব খেয়াল রাখতেন। আমার বাবা মা ও আমার পরিবার কখনো আমার জীবনে দুঃখের ছায়া লাগতে দেন নি। চাওয়ার আগেই সবকিছু পেয়েছি, আমি এখনও পাই। আমার প্রতিবেশীরাও আমাকে খুব আদর করতেন। এরকমই মিষ্টি ছোটবেলা কেটেছে আমার।
#শিক্ষাজীবন:
শিক্ষার শুরুটা মায়ের হাত ধরে। যখন আমার মাত্র চার বছর বয়স তখন আমার মা আমাকে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।পড়াশোনায় আমি বরাবরই ভালো ছাত্রের পরিচয় দিয়ে এসেছি। তাই আমার শিক্ষকরাও আমাকে খুব আদর করতেন। যখন আমি ৫ম শ্রেনীতে পড়ি তখন আমার কাছে PSC মানে জীবনের একটি বড় পরীক্ষা। তাই বছরের শুরু থেকেই ভালোভাবে পড়াশোনা করা শুরু করে দিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে 4.83 পেয়ে ৫ম শ্রেনী শেষ করলাম। ভর্তি হলাম ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে, ৬ষ্ঠ শ্রেনী শেষ করে ৭ম শ্রেনীতে ভর্তি হতে না হতেই চলে এলো মহামারী করোনা ভাইরাস। মহামারী করোনার জন্য পড়াশোনায় ধ্বস নেমে এসেছিলো আমার। এই করোনার সময় পড়াশোনায় ফাকিবাজ হয়ে গেছিলাম আমি। স্কুল বন্ধ থাকায় সারাদিন বাসায়ই থাকতাম, কিন্তু পড়াশোনা করতাম না ঠিকমতো। সেই সময় মাথায় চিন্তা আসলো, সারাদিন তো ঘরে বসেই থাকি, ঠিকমতো পড়ছিও না, আবার তাইরে নাইরে করে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছি। এভাবে সময় না কাটিয়ে কিভাবে এই সময়টাকে কাজে লাগানো যায়? তখনই মাথায় আসলো কম্পিউটারের কাজ শিখার কথা। সাথে সাথেই বাবা-মাকে বললাম “ আমি কম্পিউটারের কাজ শিখতে চাই। বাবা-মা কথাটি শুনে খুবই খুশি হলেন। কারন তখন আমার বয়স মাত্র ১৩ বছর বয়স। তখন বাবা আমাকে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দেন। কম্পিউটারের বেসিক কাজ শিখার জন্য ৬ মাস লাগলো সেই কোর্স শেষ করতে। বেসিকের কাজ শেষ করার পর ওখান থেকেই জানতে পারি স্টুডিওর কাজ সম্পর্কে। আগ্রহ হলো স্টুডিওর কাজ শিখার। তখন বাবা মাকে আবারও বললাম “ আমি স্টুডিওর কাজও শিখতে চাই। তখন বাবা আমাকে আরেকটি কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দিলেন। সেখান থেকে photoshop ও Illustration এর কাজ শিখলাম। এই কাজগুলো শিখার পর একটি ল্যাপটপ ও একটি প্রিন্টার কিনি । তারপর বাসায়ই কাজ শুরু করে দেই । আমাদের স্কুল ও আশেপাশের স্কুলের কাজগুলো স্কুলের প্রধান শিক্ষকের থেকে নিয়ে বাসায়ই কাজগুলো কমপ্লিট করে তাদের ডেলিভারি করতে থাকি । এটা ছিল আমার প্রথম ব্যাবসায়িক উদ্যোগ। মহামারী করোনার ভ্যাকসিন সকল শিক্ষার্থীকে দেওয়া শেষ হলে যখন আমাদের স্কুল আবার খুলে দিল, স্কুল খোলার পর ভর্তি হলাম নবম শ্রেনীতে। এভাবেই চলতে থাকে আমার পড়ালেখা। বাবা মা সবসময়ই বলতেন আমাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে, সুশিক্ষিত হতে হবে, মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করতে হবে। কারন বর্তমান সমাজে ভালো মানুষ হওয়া খুবই দরকার।
#জীবনের_এক _কঠিন_মুহূর্ত:
আমার জীবনের এক কঠিন মুহূর্ত ছিল মহামারী করোনা চলাকালীন সময়। এই করোনার সময় আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার জীবনের সবচাইতে দামি জিনিস সেটি হলো আমার মূল্যবান সময়। মহামারী করোনা চলাকালীন সময়ে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে এসেছিলো। কিন্তু এই করোনাকালীন সময় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে এসেছিলো ধ্বস। এই মহামারী করোনা ভাইরাসের জন্য আমি আমার জীবনে একটি বড় পাবলিক পরীক্ষা JSC দিতে পারি নি। লকডাউনের জন্য দীর্ঘ দিন স্কুলেও যেতে পারি নি অনেক কিছু শিখতে পারি নি, আমি আমার স্কুলের শিক্ষকদের থেকে। আমার পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে মহামারী করোনার জন্য। লকডাউনের জন্য অনেকদিন বাসায়ও বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে আমাদের, খুবই কঠিন পরিস্থিতি পার করেছি। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে আমরা সকলে আল্লাহর অশেষ রহমতে মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেলাম। ইনশাআল্লাহ এখন আবার আগের মতো ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারবো।
দ @প্রিয়_ফাউন্ডেশনের_সাথে_যুক্ত_হওয়া:
এই গ্রুপে একটি বিরাট নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়, যার মাধ্যমে নিজের একটি বিরাট নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। বাবার কথা মতো আমি স্যারের প্রতিটা সেশন পড়া শুরু করে দেই এবং একটি একটি করে ৯০ টি সেশন পাঠ শেষ করে ১৫ তম ব্যাচ শেষ করি। এভাবেই প্রিয় ফাউন্ডেশনের সাথে আমার যুক্ত হওয়া ।এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আমি পেয়েছি লাখো বোন, আঙ্কেল - আন্টিদের যাদের থেকে আমি প্রতিনিয়তই শিখছি এবং টানা ৯০ দিনের প্রশিক্ষন নিয়ে আমি আমার উদ্যোগটি শুরু করেছি।
সর্বশেষ আবারো বলতে চাই আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করছি শ্রদ্ধেয় মেন্টর জনাব @IQBAL BAHAR ZAHID স্যারের প্রতি। প্রিয় স্যারের সু-স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি কারন স্যার যতোদিন বেচে থাকবেন ততোদিন তৈরি হবে হাজারো ভালো মানুষ হাজারো উদ্যোক্তা।
আমার লেখার মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি পেয়ে থাকেন সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন যেন স্যারের শিক্ষাকে সঠিক কাজে লাগাতে পারি।
সকলের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইল।
আদনান সামি মাল,১৫ ব্যাচ।