"৬৪ জেলার সহস্রাধিক উদ্যোক্তার সম্মেলন অনুষ্ঠিত" | প্রথম আলো ||
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ২২: ৪৬
টানা সাত বছরে একে একে ছয়টি ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেও কোনোটাতেই সফলতা পাননি জায়েদ হাসান। তবে বছর তিনেক আগে জায়েদ গড়ে তোলেন সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান যারিক লিমিটেড। জায়েদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২০ জন কর্মী কাজ করছেন।
জায়েদ হাসানের মতো গল্প নিয়ে আজ শনিবার সহস্রাধিক উদ্যোক্তা হাজির হন রাজধানীর মিরপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। বিনা মূল্যে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। একই অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও উদ্যাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ইকবাল বাহার। আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়্যারম্যান সবুর খান, দ্য ডেইলি স্টারের চিফ বিজনেস অফিসার তাজদীন হাসান প্রমুখ।
বিশ্ববাজারে দেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ও উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের সহযোগিতা করছে। তবে আমি উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করব নিজ দেশে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন নিয়ে কাজ করতে। তাহলে আমদানিনির্ভর ব্যবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।’
আইডিয়া প্রকল্প পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সরকার বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার যে রূপকল্প নিয়েছে, সেখানে মূল কারিগর আমাদের উদ্যোক্তারা। দেশের সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সরকারের আইডিয়া প্রকল্পও কাজ করছে। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের আমরা ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২৫০ জনকে এ অনুদান দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু অনুদানই নয়, এটা রাষ্ট্র থেকে উদ্যোক্তাদের জন্য একটা স্বীকৃতিও।’
অনুষ্ঠানে দেশে বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে এক কোটি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যের কথা জানান নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এক লাখ উদ্যোক্তা তৈরি করেছি। নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব লোকের প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে, তাঁদের সাহস দিতে আমরা কাজ করছি। দেশের ৬৪ জেলা ছাড়াও অর্ধশতাধিক দেশে থাকা আমাদের প্রবাসীদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।’
সম্মেলনে স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে আসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. রায়হান আহমেদ। ছোটবেলায় টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে এক পায়ের সক্ষমতা হারান রায়হান। তিনি বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কেউ আমাকে চাকরি দেয়নি। পরে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিই।’ তবে উদ্যোক্তা হলেও প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ পান না বলে অভিযোগ করেন রায়হান। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকে আমাদের কাজের সক্ষমতার বিষয়ে বিশ্বাস করতে চায় না। এ জন্য ঋণও দেয় না।’
অনুষ্ঠানে ২০২২ সালের জন্য ২২ জন উদ্যোক্তাকে সেরা গল্প সৃষ্টিকারী উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে একজনকে দেওয়া হয় শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তার সম্মাননা।
নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মটি পাঁচ বছর ধরে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২০টি ব্যাচের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় ও ৫০টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ৬ লাখের বেশি লোককে তারা প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে।