শেষ সম্ভল দশ লক্ষ টাকার গাড়ি আগুনে পুরে ছাই তার পরেও গুরে দ্বারানোর গল্প।
🌿বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।🌿
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আমি সর্বপ্রথম প্রশংসা করছি মহান রাব্বুল আলামিনের; যিনি আমাকে দিয়েছেন সুস্থ একটি জীবন, দিয়েছেন ধৈর্য শক্তি ও রক্ষা করে যাচ্ছেন সমস্থ পরিস্থিতিতে। দুরুদ ও সালাম বিশ্বমানবতার আইডল নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি। কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা আমার মা-বাবা জন্য। যারা আমার নিরন্তন পথচলায় অক্সিজেনের মতো শক্তি ও সাহস জোগিয়ে থাকেন এবং ধন্যবাদ জানাই ভালোবাসার ফেরিওয়ালা, লাখো মানুষের শিক্ষক/মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে; যিনি এতো বড় একটা সুন্দর পরিবার তৈরি করেছেন। যেখানে আছে কেবল সবাই এক সাথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা ও ভালো কাজ করার সুযোগ।
❤️📣আমি ও আমার পরিবার:
আমার নাম "মাহমুদুল হাসান" জন্ম ৩ জানুয়ারি ২০০২ ময়মনসিংহ জেলা ধোবাউড়া উপজেলা গোয়াতলা ইউনিয়ন রঘুরামপুর গ্রামে। একেবারেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আমি ৬ নাম্বারে।
আমার শৈশবঃ⛹️♂️
আমার শৈশব কালটা অনেক সুন্দর কেটেছে। সারা দিন শুধু গুড়াগুড়ি আর খেলা দোলায়।
শৈশব কালে খেলাধুলায় চিলাম ১ নাম্বারে।ক্রিকেট, লাফ,দৌড় খেলায় সব সময় থাকতাম প্রথম স্থানেই। ফুটবল খেলায় সফলতাও অর্জন করেছিলাম ক্লাস তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময়। আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় ইউনিয়ন শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছিলাম।
কিন্তু সময় এবং পরিস্থিতির কারণে বেশি দিন খেলাধুলা করতে পারিনি।
❤️✌️আমার শিক্ষা জীবন ☘️
পরিবারের বড় সদস্যরা বেশি একটা পড়াশোনা করেনি। যার কারণে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। কারণ, আমাদের এলাকায় শিক্ষার হার অনেক কম ছিল। ভালো কোনো শিক্ষক খুজে পাওয়া যেত না।অন্য এলাকায় গিয়ে প্রাইভেট পড়তে হতো। যার কারণে ইংরেজিতে অনেক দূর্বল ছিলাম। বন্ধুদের কাছে ইংরেজি কম পাড়ার জন্য অনেক অপমান ভোগ করতে হয়েছে।শুধু ইংরেজি কম পাড়ার জন্য ক্লাস ৩য় শ্রেণিতে ফেল করেছি।
আমি যখন ক্লাস পঞ্চম শেণীতে পড়ি, তখনও আমি ইংরেজি রেডিং ঠিক মতো পড়তে পারতামনা। এই বিষয়টা বাকী বন্ধুরা জানত।ইংরেজি শিক্ষককে দেখলেই বয় পেতাম।কিন্তু কথায় আছে না,,,, যেখানে বাঘের বয়, সেখানেই রাত হয়। হটাৎ একদিন স্যার আমকে ক্লাসের সামনে ডেকে নেন।এবং বলেন, সবার সামনে ইংরেজিটা পড়ে শোনাতে।তখন বয়ে আমার আত্মা থরথর করে কাঁপছে।বার বার স্যার পড়তে বলেন, কিন্তু পারিনি।ওই দিন স্যার সহ ক্লাসের সব বন্ধু মিলে অনেক অপমান করে।তারপর ওই আপমানটা রাতে ঘুমাতে দেয়নি।
সেই থেকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। যেভাবেই হোক, আমাকে ইংরেজি শিখতেই হবে।একাই শুরু করলাম ইংরেজি পড়া।প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে একটা ইংরেজি শিখার বই সংগ্রহ করলাম।বইটার নাম ছিল নুর জাহান। নুর জাহান নামক এই, ইংরেজি বইটা থেকে খুব সহজেই ইংরেজি শিখে ফেলি। তারপর থেকে আমি প্রতি দিন কমপক্ষে এক পৃষ্ঠা ইংরেজি রেডিং পড়তাম। যার ফলে ইংরেজিতে অনেক ভালো করতে থাকি এবং প্রতিটা ক্লাসে ভালো ফলাফল করি।
প্রথমে খারাপ ছাত্র ছিলাম। কিন্তু প্রচুর চেষ্টা করায় দশম শেণীর মডেল টেস্ট পরিক্ষায় প্রথম স্থান হই। সব স্যার মেডামদের সাহায্যে এসএসসি পরিক্ষায় ভালো একটা ফলাফল করি।
আর এখন, আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে, প্রাইমারি স্কুলে খারাপ ছাত্র চিলাম বলে, যে বন্ধু গুলো হাসাহাসি করেছিল!!!! তাদের মাঝে কেউ অনার্স এ ভর্তি হওয়া সুযোগটাও পায়নি। এক মাত্র আমিই অনার্সে পড়াশোনা করছি আলহামদুলিল্লাহ।
❤️📣আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অংশ 🌿
আমার পরিবারের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করি।
বড় ভাইয়ের নাম "সেলিম"।তারপরের ভাইরে নাম "এনামুল"।আমরা যেহেতু (৫)পাঁচ ভাই,কেউ বেশি পড়াশোনাও করেনি,তাই আমার বাবা সেলিম ভাইকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন ২০০৪ সাল। জমির দাম অনেক কম ছিল। তারপরেও বাবা অনেকটা জমি বিক্রি করেন।জমি বিক্রির টাকা দিয়ে সেলিম ভাইকে বিদেশে পাঠানো হয়।
সেলিম ভাই বিদেশে যাওয়ার চার বছর পরে এনামুল ভাইকে বিদেশে নিয়ে যান। বাবার স্বপ্ন যেন সত্যি হতে লাগলো। তখন অনেক ভালো কাটছিল আমাদের দিন গুলো। প্রতি মাস শেষে দুই ভাই বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতেন। বাবার ইচ্ছা আমরা বাকি তিন ভাইকেও বিদেশে পাঠাবেন।
এনামুল ভাই একটু অন্য রকম মানুষ ছিল।একেবারে আমাদের চাইতে আলাদা। তার যা মন চায়তো তাই করত।মা-বাবাকে না জানিয়ে সে বিদেশে কাঁচামালের ব্যবসা শুরু করে দেয়।বাবা যখন জানতে পারেন, সাথে সাথে নিষেধ দিয়ে দেন।কারণ এনামুল ভাইয়ের বিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।বিসা ছাড়া এভাবে ব্যবসা করলে পুলিশে ধরে ফেলতে পারে।
কে শোনে কার কথা, ব্যবসায় অনেক লাভ দেখে এনামুল ভাই আরো মনোযোগ দিয়ে ব্যবসা করতে থাকে।এক সময় ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য সেলিম ভাইকে সাথে নেওয়া চেষ্টা করে।তখন বাবা যুর গালায় নিষেধ করে দেয়। বাবা বলেন, "ব্যবসা করলে একা কর,সেলিমকে সাথে নিবা না"।কারণ সেলিম ভাইয়েরও বিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এমন রিক্সে দুই ভাই এক সাথে থাকাটা বিপদের ছিল। কিন্তু সে মা-বাবার কথা অমান্য করে।সেলিম ভাইকে নানানভাবে বুঝায় এবং ব্যবসায় আরো লাভের সম্ভাবনা দেখায়। অবশেষে সেলিম ভাইকে সাথে নিয়েই ব্যবসা করতে থাকে। দুই ভাই এক সাথে অনেক দিন ব্যবসা করে।এভাবে চলছিল।
হটাৎ একদিন বিদেশি গোয়েন্দা পুলিশ তাদেরকে আটক করে। এবং বিসা না থাকার অপরাধে দেশে পাঠিয়ে দেয়। শুরু হয় আমাদের জীবনে দুঃখের দিন। তখন ও আমাদের অনেক টাকা ঋণ ছিলো। একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরিবারের সবাইকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এদিক দিয়ে আমি সহ দুই ভাই ও এক বোন পড়াশোনা করছি। আমাদের পড়াশোনা করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে।
এ সময় বিদেশ ফেরত দুই ভাই অনেক অসহায়।তখন তারা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় পারি জমায়।
ঢাকা গিয়ে, এনামুল ভাই একটা গাড়ির হেল্পার হিসাবে কাজ করে।এনামুল ভাই অনেক দিন হেল্পারি করে, অনেক কষ্ট করে গাড়ি ড্রাইভিং করা শিখে।তারপর সে অনেক দিন গাড়ির ড্রাইভার হিসাবে কাজ করে।
অনেক দিন গাড়ি ড্রাইভিং করায়, এনামুল ভাই কিছু টাকা আয় করে ফেলে।
এক সময় এনামুল ভাই নিজেই একটা গাড়ি কিনার ইচ্ছে করল।কিন্তু একটা গাড়ি কিনার মতো টাকা তার কাছে ছিলোনা।পরিবার থেকে টাকা দেওয়ার মতোও ব্যবস্তা নেই।মা-বাবা তাকে বিভিন্ন ভাবে গাড়ি না কিনার জন্য বুঝাল।কিন্তু আবার এনামুল ভাই মা- বাবার কথা মানতে রাজি না। সে গাড়ি যেভাবেই হোক কিনবেই।
অনেক টাকা ব্যংক থেকে ঋন নেয়।এবং কিছু টাকা ধার করে, একটা সেগেনাল NOAH ব্রান্ডের প্রাইভেট কার কিনে।গাড়িটা কিনতে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা লেগেছিল। ভালোভাবেই গাড়ি চালাচ্ছিল। একদিন এনামুল ভাই ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে আসছিল। তখন অনুমান রাত ১০টা হবে। গাড়ি খুব ভালোভাবেই চলছিলো। যাত্রীরা অনেক আনন্দ খুশি নিয়ে ছিল। এই দিন রাতেই ঘটে এক বিরল ঘটনা,,,,।
নিয়তির কি পরিনতি,,,,
গাড়িটা কিনার এক সাপ্তাহের মাঝেই, বেটারি ফিউজ হয়ে সমস্ত গাড়িতে আগুন লেগে যায়।তখন গাড়িটা রানিং এ ছিল।অনেক কষ্ট করে গাড়ির যাত্রীদেরকে নামানো হয়।কিন্তু গাড়ির আগুন কোনোভাবে নিবানো যাচ্ছিল না।তখন ফাইয়ার সার্ভিসকে কল দেওয়া হয়।কিন্তু ফায়ার সার্ভিসও সরকারের অন্যান্য সেক্টরের বেতীক্রম করেনি।মাসআল্লাহ গাড়িটা সম্পুর্ন ফুরে শেষ হওয়ার পর ফায়ার ফাইটারদের উপস্থিতি মিলে।হয়তো তাদের সময় মতো উপস্থিত হলে এমনটা হতোনা।চোখের সামনেই সপ্নের গাড়িটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়,,,,,,,,,।
এ যেন বেঁচে থেকেও মরে যাওয়া। ১৩ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনা গাড়িটা এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।
(হে আল্লাহ)কবে এই সেক্টর গুলো সঠিক দায়িত্ব পালন করবে,,,,,,,,,!!!!
তখন পরিবারে নেমে আসে শ্রাবণের বর্ষা। প্রথমে দুই ভাই বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা ক্ষতি করে। এখন আবার এতো টাকার একটা গাড়ি ফুঁড়ে গেল। তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিলো না। মা সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।আল্লাহ মনে হয়, আমার মায়ের দোয়া কবুল করেছেন।
কিছু দিন পাঁচ ভাই মিলে পরিশ্রম করে সমস্ত ঋণ দিয়ে দেই।তারপর মা বাবর অনুমতি নিয়ে একটা নিউ TOYOTA HIACE কিনেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের গাড়ি এখন ভালোভাবেই চলছে।এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি।
✌️📣জীবন থেকে শিক্ষাঃ
প্রথমত বলব প্রচুর পরিমাণ চেষ্টা থাকতে হবে। কারণ,পরিশ্রম এবং চেষ্টা সফলতা বয়ে আনতে পাড়ে।
এক সাথে অনেক বেশি আয় করার চাইতে অল্প অল্প করে প্রতিদিন করা অনেক ভালো। কোনো কিছুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসতে নেই। কারণ,অল্প অবহেলাতেই অনেক বেশি কষ্ট পেতে হয়।
মা বাবার প্রতিটা কথার মূল্যায়ন করতে হবে। এবং তাদের দোয়া নিয়ে কাজ করতে হবে।জীবনের সবচেয়ে বড় পীর হচ্ছেন মা-বাবা। কোনো ব্যবসা বা কোম্পানি শুরু করার আগে, উদ্বোধন করার জন্য কোনো পীর বা শায়েখ আনার দরকার নাই।মা-বাবার মাধ্যমে উদ্বোধন করুন।দেখবেন সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ।
❤️এতক্ষণ কষ্ট করে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য সকলকে অত্যন্ত ধন্যবাদ যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯১৯
Date:- ২৩/০১/২০২৩ইং
ধন্যবাদান্তে
মোঃ মাহমুদুল হাসান
নিজ জেলা:ময়মনসিংহ
ব্যাচ নং :১৯
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার: ১০৫৩৭০