জীবনের গল্প
@everyone
🌿🌹আসসালামু আলাইকুম।
🌿🌹আমার জীবনের গল্প।
🌿🌹আমার ভাই বোন সবাইকে অনুরোধ করছি আমার জীবনের গল্পটি একবার পড়ে দেখার জন্য।
🌿🌹কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জানাই মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুস্থ রেখেছেন এখন পর্যন্ত।
🌿🌹দরুদ ও সালাম জানাই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে।
🌿🌹কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই বাবা-মায়ের প্রতি।
🌿🌹কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই প্রিয় মেন্টর প্রিয় Iqbal Bahar Zahid স্যার কে যার অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং প্রচেষ্টায় আমরা পেয়েছি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তা তৈরীর কেন্দ্র।
🌿🌹জন্ম ও পরিবার
ফেনী জেলার মোটবি ইউনিয়নের একটি গ্রামে আমার জন্ম। ভাই নেই। পাঁচ বোন। বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন এবং তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি দাদি চাচা চাচী চাচাতো ভাই বোন সবাই ছিল ছিল একটা যৌথ ও সুন্দর পরিবার।
🌿🌹শৈশব
ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু মাঠে-ঘাটে দুরন্ত ভাবে ঘুরাঘুরি করা হয়ে ওঠেনি। কারণ বাবা ছিলেন আর্মি অফিসার আমার শৈশব বলতে গেলে বুঝি সকালে স্কুল এ যাওয়ার আগে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে একটু সাঁতার কাটা তাও আবার সাঁতারের শব্দ বাবার কান পর্যন্ত পৌঁছানো যাবেনা। এরপর স্কুল থেকে ফিরে বিকালে উঠানে চাচাতো ভাই বোনদের সাথে খেলা। রাতে পড়া শেষ করে এক ঘন্টা টিভি দেখা। এভাবে কেটে যায় আমার শৈশব।
🌿🌹লেখাপড়া।
লেখাপড়া শুরু বাড়ির পাশে স্কুলে সেখানে ক্লাস টেন পর্যন্ত থাকায় একই স্কুল থেকে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শেষ করার সুযোগ পাই ।লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো ছিলাম আর আমাদের হেড স্যার ছিলেন আমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই অন্যান্য স্যারদের কাছে থেকে একটু বেশি শাসন পেতাম। মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে ভর্তি হলাম ফেনী সরকারি কলেজে। উচ্চমাধ্যমিকে এক বছর পর বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমাদের জীবনের মোড় তখন আস্তে আস্তে ঘুরতে শুরু করে। বাবা মারা গেলেন তখন আমার ছোট বোন আমার মায়ের পেটে বাবা মারা যাওয়ার ১৯ দিন পরে ওর জন্ম বাবার অকাল মৃত্যুতে জীবনের চাকা এক নিমেষেই ঘুরে গেল।
🌿🌹বিয়ে ও সংসার
দেখতে মোটামুটি ভালই ছিলাম। আর সেটাই আমার সব স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নের রূপান্তর করল ।বাবা থাকতে অনেকের পছন্দের পাত্রী হওয়ার পরেও সেই ভাবে কেউ সামনে এসে কোনদিন কিছু বলার সাহস করেনি । যেহেতু উনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন বাহির থেকে মানুষ উনাকে মোটামুটি ভয় পেতেন এবং অনেক সম্মান করতেন।কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। বাবা হিসেবে ছিলেন অতুলনীয় উনার মেয়েদের ব্যাপারে ছিলেন খুব সচেতন। আমার বাবার খুব ইচ্ছা ছিল সব মেয়েদেরকে চাকরি করুক আর না করুক অন্তত লেখাপড়াটা ভালোভাবে শেষ করাবে। তাই উনি সবসময় চোখ কান খোলা রাখতেন আমরা যেন কারো সাথে বয়সের ভুলের কারণে কোন সম্পর্কে না জড়াই। বাবার শাসনের কারণে প্রেম ভালোবাসা জিনিসটা আমার কাছে খুব অপরিচিত ছিল। বাবার মৃত্যুর পর চাচাতো ভাই চান্স পায় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। চাচার পরিবার তখন চলে যায় চট্টগ্রামে। বাড়িতে আমার মা দাদী আর আমরা পাঁচ বোন ঘরে কোন পুরুষ মানুষ নাই। কলেজে যাওয়া আসার পথে যারা ডিস্টার্ব করত রাতে তাদের ভয়ে আমার ঠিক মত ঘুম হতো না। আর প্রতিদিন নিত্য নতুন বিয়ের প্রস্তাব আসতো চাচাদের কাছে। বেশিরভাগ প্রস্তাব আসতো ইউরোপের সিটিজেন পাত্রের। অনেক টাকা পয়সা শুনলে আমার মন থেকে আগ্রহ পেতাম। না বিদেশে স্যাটেল হওয়ার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র পরিমান আগ্রহ কখনোই ছিল না। শুধু মনে হতো একটা মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী পাত্রের সাথে বিয়ে হলে আমি ভালো থাকবো । সব সময় আল্লাহকে বলতাম আমার বাবা নেই ,তুমি আমার বাবাকে অল্প বয়সে নিয়ে গেছ। আমার বাবা চাচারা যেরকম সাংসার িক এরকম একজন সাংসারিক পাত্র কে তুমি আমার জন্য ব্যবস্থা করে দিও,এর থেকে বেশি আমার আর কিছু চাওয়ার ছিল না। আমার মনের মধ্যে কাজ করতো simple life is the Best Life " যথারীতি আমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে চাচারা পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে ঠিক করে ওষুধ কোম্পানির একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সাথে। ভাল কোম্পানি চাকরি বেতন ও মোটামুটি ভালো ছিল। শুধু ভালো ছিল না আমার ভাগ্য। দিনে দিনে বুঝতে পারি আমি একজন ভুল মানুষের সাথে জীবন শুরু করেছি কিন্তু ততদিনে আমার বড় ছেলের জন্ম শুরু হয় আমার নতুন যুদ্ধ। সব সময় চাইতাম একটা কিছু করার কিন্তু বাচ্চা ছোট তাই সাহস পেতাম না এর মধ্যে আবার মা হই দুই ছেলে নিয়ে তখন আমার পুরাই একটা যুদ্ধ ময় জীবন। কারণ আমার স্বামী ছিল অতিরিক্ত বদ মেজাজি। আমি আমার ছেলেদের বাবা আমি ওদের মা। শুধু স্বামী হিসেবে নয় বাবা হিসেবেও ওর মধ্যে কোন আন্তরিকতা ছিল না নিজের সন্তানদের জন্য। শুধুমাত্র মানুষ খারাপ বলবে তাই ওদের নিয়ে এই রকম স্বামীর সংসার করতে বাধ্য হয়েছি ।সবকিছু নীরবে সহ্য করেছি ।শুধু ভাবতাম ছেলেরা বড় হলে হয়তো লজ্জা শরমে ও ঠিক হয়ে যাবে। দেখতে দেখতে ছেলেরাও বড় হল কিন্তু ওর আচরণ ঠিক হলো না এখন আলহামদুলিল্লাহ বড় ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে অনার্সে পড়ছে ।ছোট ছেলে ক্লাস 10এ পড়ছে ।কিন্তু ওরা আমার সবচেয়ে বেশি শান্তির জায়গা। আমার ছেলেরা আমার বেহেশ্ত । ওদের জন্য ধৈর্য ধরেছি আল্লাহ আমাকে পুরস্কার দিয়েছে। এখন আমার সন্তানরা আমার অনেক সাপোর্ট করে। আমার ছেলেরাই আমার অনুপ্রেরণা ।ওরা সব সময় বলে আম্মু তুমি অনলাইনে কিছু একটা কর। বাবা যদি তোমার সাথে এটা নিয়ে ঝামেলা করে আমরা তো আছি। আলহামদুলিল্লাহ এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমি মনে করি আমার আর কিছুই পাওয়ার নাই। কিন্তু কি করব?
🌹🌿প্রিয় প্লাটফর্মে আগমন।
সব সময় মাথায় ঘুরতো কি করি কিন্তু কোন কুল কিনারা পেতাম না ।এর মধ্যে আমার বোন কুরিয়ারে আমার জন্য এটা ওইটা কিনে পাঠাতো। পার্সেল রিসিভ করার সময় কুরিয়ারের অফিসে গেলে দেখতাম। আমাদের ফেনী জেলার ডিস্ট্রিক্ট এম্বাসেডর ফোরকান ভাইকে কি জানি সব বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছে একদিন সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম। ভাইয়া আপনাকে তো সব সময় দেখি এটাও এটা কোথায় জানি পাঠান কিন্তু ভাইয়া এগুলো কি পাঠান? উনি বলল সরিষার তেল আর মসলা আমি বললাম মসলা? কি মসলা হোমমেড মসলা এরপর আরো আরো কুরিয়ারের অফিসে দেখা হয়েছে উনার সাথে। এরপর উনার ভিজিটিং কার্ড নিয়ে আমার ননাসকে নিয়ে গেলাম উনার বাসায় ।গিয়ে আমি তো অভিভূত মাশাল্লাহ বাসায় বসে এত সুন্দর ব্যবসা।
তখনই ভাই আমাকে বলল নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন এর কথা। আমার খুব পছন্দ হলো কিন্তু এর মধ্যে আমি ফেনী থেকে রাঙ্গামাটির স্বামীর কর্মস্থলে চলে আসি । বড় ছেলের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা। ছোট ছেলের রাঙ্গামাটিতে ভর্তি পরীক্ষা। ওদের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়াতে ।নিজের জন্য সময় বের করতে পারি নাই।হঠাৎ আবার একদিন ফেসবুকে চোখে পড়ল তখনই ২০ তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেশন চলছে নক দিলাম আবার ফোরকান ভাইকে ভাইয়ার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ৯০ দিনের সেশনটা কমপ্লিট করি। স্যারের পুরো সেশনটা আমি বুকে ধারণ করেছি এবং স্বপ্ন লালন করেছি কিছু একটা করার।
🌿🌹জীবনের সেরা প্রাপ্তি।
আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি হয়ে আমার জীবনকে স্বপ্নের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন।
যেখানে শিখব এবং নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করব। এইরকম প্লাটফর্ম আমি মনে মনে আশা করেছিলাম যেখানে স্যারের মতো একজন ভালো মানুষ আমাকে পরিচালনা করবে। আমাকে এবং আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত হতে লাগলাম সাহস বাড়তে শুরু করল নিজের পরিবর্তন নিজেই লক্ষ্য করেছি এখানে সবাই খুবই আন্তরিক এবং গুরুত্বের সাথে ভালোবেসে কাজ করে যাচ্ছে অবিরাম। আমি ভালোবেসে আমার কাছের বন্ধু বান্ধব কে যুক্ত করেছি এবং চলমান আছে আমি শিখছি এবং নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরি করার চেষ্টা করছি। স্যার সহ সকল সাহসী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানাই যারা গ্রুপকে ভালোবেসে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
🌿🌹মানসিক শান্তির আরেক নাম নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন।
যেখানে আপনার হতাশা দূর করে আপনাকে আলোর পথ দেখাবে স্যার এর প্রতিটি বাক্য অনুপ্রাণিত করে যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ "স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন ,শুরু করুন, লেগে থাকুন সফলতা আসবেই" পরিশেষে সবার জন্য দোয়া রইল আমার জন্য দোয়া করবেন। আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে পাশে রাখবেন ।
🌿🌿🌹স্যারের কিছু কথা আমার মূল অনুপ্রেরণা।
১.প্রথমত শপথ বাক্যই আমার মূল অনুপ্রেরণা।
২.সবার আগে নিজেকে ভালবাসতে হবে।
৩.সময়কে খুব বেশি চিন্তা করে ব্যবহার করতে হবে না হলে সময় একদিন আর সময় দিবে না ।
🌿🌿🌹মাত্র ১৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে অনলাইনে রাঙ্গামাটির বিখ্যাত সব পণ্য নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ আমার বাবা-মায়ের দোয়া আমার সাথে আছে আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া জানাই আমার এখন প্রতিদিন কোন না কোন প্রোডাক্ট ডেলিভারি যাচ্ছে।
স্ট্যাটাস অফ দি ডেঃ৯২৪
তারিখঃ১৭-০২-২৩