ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রিয় মেন্টর জনাব "ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারকে, যার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি " নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" উদ্যোক্তা তৈরির প্রতিষ্ঠান।
"বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম"
আসসালামু আলাইকুম
আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন।আপনাদের সকলের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
অনেক শুকরিয়া জানাচ্ছি মহান আল্লাহর প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রিয় মেন্টর জনাব "ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারকে, যার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি " নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" উদ্যোক্তা তৈরির প্রতিষ্ঠান।
🌹 আমার জীবনে গল্প 🌹
🌹 আমার জন্ম টাংগাইল জেলার, মধুপুর উপজেলার, জটাবাড়ি গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। আমার বাবা একজন শিক্ষক এবং আমার একজন ভালো বন্ধু। আমরা তিন বোন ও বাবা মা মিলে পাঁচ সদস্যের পরিবার। গ্রামের মনোরম পরিবেশে কাটে আমার শৈশব। আমাদের গ্রামের জটাবাড়ি (পশ্চিম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি শেষ করি। গ্রামের ছেলে মেয়েদের সাথে খেলাধুলা, পুকুরে সাঁতার কাটা, ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা এমন অনেক সুন্দর মুহূর্ত পার করেছি শৈশব জীবনে। শৈশব কাল যে কতটা মধুময় ছিল সেটা তখন বুঝতে পারিনি। এখন খুব মিস করি সেই দিনগুলো।
🌹 মধুপুর রানী ভবানী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই মাধ্যমিকে। কৈশোরের প্রতিটি দিনই ছিল অনেক সুন্দর ও সুখময়। পারার ছেলেমেয়েদের সাথে স্কুলে যেতাম, সকল সহপাঠীদের সাথে এসেম্বলি করতাম, ক্লাস, টিফিন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, প্রতি বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, বিদায় অনুষ্ঠান সব কিছু মিলে বলার ভাষা নেই কতটা মধুময় ছিল সেই দিন গুলো।
🌹 মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হই ময়মনসিংহ একটা প্রাইভেট কলেজ( রুমডো) তে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট পড়তে। এর আগে কখনো বাহিরে থাকা হয়নি। তাই বাবা মা আর গ্রামের মুক্ত পরিবেশ ছেড়ে শহরের বন্ধী জীবন আমার ভালো লাগত না। কিছু দিন ক্লাস করি কলেজে। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট পড়ার পাঠ চুকিয়ে চলে আসি বাড়িতে। ঐ বছর ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হওয়ার সময় শেষ হয়ে যায়। পরের বছর মধুপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হই। দুইটা বছর মধুপুর কলেজে খুব আনন্দেই পার করি।
🌹 ইন্টরমিডিয়েট এর পাশাপাশি ভর্তি হই টাংগাইল সরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজে চার বছরের কোর্স ( ডি.এইস.এম.এস) পড়ার জন্য।
🌹 উচ্চ্যমাধ্যমিক পাশ কারার পর প্রথম বছর কোথাও ভর্তি পরিক্ষা দিতে পারিনি, পারিবারিক সমস্যার জন্য। বাবা বলেছিলেন ডিগ্রিতে ভর্তি হতে। ডিগ্রির ফর্মও তুলেছিলাম কিন্তু জমা দিইনি। কারণ আমার খুব ইচ্ছে ছিল অনার্স পড়ার। আবারো জীবন থেকে হারিয়ে গেল একটা বছর।
🌹 পরের বছর পরিক্ষা দিই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয় নাই। মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ফর্ম তুলি চান্সও হয়ে যায়। ভর্তি হই ইংরেজি বিভাগে। আগের মত সমস্যায় পরি আবারও বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারি না কিছুতেই। কিছু দিন খুব কষ্ট করে ক্লস করি। মেসের খাবার খাবার খেতে পারি না। শহরের পরিবেশে দম বন্ধ হয়ে আসে। এভাবে থাকতে গিয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে যাই।ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তিও থাকি কয়েক বার। এর মধ্যে আমার অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা চলে আসে। কোন প্রস্তুতি ছাড়া পরিক্ষা দেয়ার কারণে পরিক্ষার ফল ভাল হয় না। আস্তে আস্তে শহরের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়েনিতে শুরু করি। মেসের খাবার খেতে খুব কষ্ট হত। কিন্তু একটা সময় শিখে গিয়েছিলম খাওয়া। এখন মেসের সেই ডাল আর আলু ভর্তা মিস করি। শুরু হল নিয়মিত মেসে থেকে ক্লাস এবং প্রাইভেট। মেসের বড় আপুদের শাসন, আদর কলেজের বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়ানো শিক্ষকদের বন্ধু্সুলভ আচরণ সব কিছুতে ছিল অন্য রকম ভালো লাগা। এর মধ্যে আমি একটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসাবে যোগদান করি। আমি মনে করি আমার জন্য একটা প্রতিবন্ধী বাচ্চাও যদি কিছু শিক্ষতে পারে এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই স্কুলের জন্য অনেক শ্রম ও অর্থও ব্যায় করেছি। আমি জীবনে যা করতে চেয়েছি সব কিছুতেই আমার পরিবার আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। এরমধ্যে আমার হোমিওপ্যাথিক কোর্স কমপ্লিট হয়ে যায়।
🌹 পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে হয়েছে। এরমধ্যে আমার অনার্স দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ শেষ হয়ে যায়। বিয়ের আগে সব কিছুতে আমার বাবা মা সহযোগিতা করেছেন আর বিয়ের পর আমার হাজবেন্ড আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন । আসলে পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া একজন মেয়ের পক্ষে কোন কাজে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আলহামদুলিল্লাহ আমাকে সবাই সহযোগিতা করেছেন। জীবন মানেই জয়- পরাজয়, হার- জিত, সুখ - দুঃখ থাকবেই তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। আমার জীবনেও অনেক বাধা এসেছে কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দেইনি। আজ এই পর্যন্ত এসেছি মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায়। এখন আমি অনার্স চতুর্থ বর্ষে আছি।
🌹 প্রিয় ফাউন্ডেশনে আমার যুক্ত হওয়া 🌹
🌹 আমি সব সময় ছোট বেলা থেকেই চেয়েছি স্বাধীন ভাবে কিছু করতে, নিজের একটি পরিচয় তৈরী করতে কিন্তু কিভাবে কি করব বুঝতেছিলাম না। আমি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের মতই একজন মেন্টর খুঁজতে ছিলাম। যিনি আমাকে স্বপ্ন দেখাবেন, আমার ভিতরের প্রতিভা গুলোকে বাহিরে বের করে নিয়ে আসবেন। আমার সেই পরিচয় তৈরী করতে সহযোগিতা করবেন। অবশেষে আমি ১৯ তম ব্যাচের নাহার দিবা আন্টির মাধ্যমে এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হই।
স্যারের সবগুলো উক্তি আমার ভিষণ ভালো লেগেছে। স্যার একটা সেশনে বলেছেন আমরা কেন অন্যের মত করে বড় হতে চাইব। একদম সঠিক কথা বলেছেন। আমি আমার মত করে বড় হতে চাই। এতদূর পড়াশোনা করেও সেইভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের জন্য। স্যারের দেয়া প্রতিটি সেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্যারের সবগুলো উক্তি আমার ভিষণ ভালো লেগেছে। স্যার একটা সেশনে বলেছেন আমরা কেন অন্যের মত করে বড় হতে চাইব। একদম সঠিক কথা বলেছেন। আমি আমার মত করে বড় হতে চাই। এতদূর পড়াশোনা করেও সেইভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে পারতাম না কিন্তু অল্প সময়ে সেশন ক্লাসে এসে কথা বলার জড়তা কাটাতে পেরেছি। পড়াশোনা শেষ পর্যায়ে এসে অনেক হতাশায় ছিলাম কি করব জীবনে। কিন্তু এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আমি হয়েছি আত্মবিশ্বাসী। এখন মনে হয় আমিও পারব সবার মতো নিজের পরিচয় তৈরি করতে। সব সময় স্বপ্ন দেখতাম চাকরি করব। তবে ফাউন্ডেশে যুক্ত হবার পর থেকে সারাজীবনের স্বপ্নটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন একটাই স্বপ্ন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া এবং ভালো মানুষ হয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকা। সবার সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।