বার বার যখন চাকরি হারিয়ে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম তখন ফাউন্ডেশন আমাকে শক্তি যোগিয়েছে।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আসসালামু আলাইকুম।
মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি,যিনি আমাকে আপনাকে সুস্থ রেখেছেন(আলহামদুলিল্লাহ)।
হাজার হাজার দরুদ পাঠ করি আমাদের সকলের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি।
আর মহান আল্লাহর নিকট অন্তর থেকে দোয়া করি। মহান আল্লাহ তায়ালার সকল হুকুম যেন মেনে চলতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমার প্রিয় বাবা-মা এর প্রতি। যারা আমাকে দুনিয়া দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের সকলের প্রিয় অভিভাবক আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব, Iqbal Bahar Zahid স্যার এর প্রতি। যিনি আমাদের জন্য এমন একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করে দিয়েছেন। স্যার এর মানবিক কথা বলে শেষ করা যাবে না।
দোয়া করি মহান আল্লাহর নিকট, আল্লাহ যেন প্রিয় স্যারকে নেক হায়াত দান করেন এবং সব সময় সুস্থ রাখেন।
[ ] আমার পরিচয়:
আমার নাম মো: নাঈম,বাড়ি গাজীপুর জেলার, কালীগঞ্জ উপজেলার, মোক্তারপুর ইউনিয়নে, শংকরপুর গ্রামে।আমরা এক ভাই ও দুই বোন।
আমার জন্ম তারিখ: ০২-১২-২০০০ইং।আমার আব্বুর নাম মো: মুছা, আমার আব্বু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা)। আমার আব্বুকে সবাই মুসা হুজুর নামে চিনে। আমার আব্বু পড়ালেখা করা অবস্থায় দাদাকে হারায়।সেই বাবা হারা বেদনা নিয়ে কামিল পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে আলহামদুলিল্লাহ। তারপর আম্মুকে নিয়ে কিছু কথা: আমার আম্মু আমার জন্য এক সহযোগী যোদ্ধা। আমি সেই ছোটবেলা থেকে দেখতেছি আমার আম্মুর নিজের সকল ইচ্ছা, দু:খ- কষ্ট, চাওয়া পাওয়া গুলোকে ভুলে আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার আব্বু ও আম্মু দুজনেই এখনো সুস্থতার সাথে বেঁচে আছে আলহামদুলিল্লাহ।
জীবনের গল্প
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে।আমার সবসময় ইচ্ছে ছিলো সরকারি চাকরি করার। সেই লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলাম,এইচ.এস.সি (২০১৯) পাশ করে, টংগী সরকারি কলেজ অর্নাস এ ভর্তি হই। বাসা থেকে ক্লাস করা কষ্ট হতো তাই কলেজের পাশে মেছ এ থাকতাম। মেছ ও কলেজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি ও পার্ট-টাইম জব খুজতাম কিন্তু পাইনি কোনো কিছু এবং হতাশায় থাকতাম, আমার দ্বারা কিছু হবে না এটা চিন্তা করতাম সব সময়। কোনো জব ও টিউশনি ম্যানেজ না করার কারনে গ্রামে চলে আসি। গ্রামে এসে দৈনিক যুগান্তরে চাল-ডাল এর একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করে একটা চাকরি ম্যানেজ হলো, কিন্তু এটা মাত্র ১মাস করার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারনে চাকরি চলে যায়। কত কষ্ট করে জীবনের ১ম চাকরি পেলাম এটাও চলে গেলো এটা নিয়ে আমি আরো ডিপ্রেশনে চলে যাই, যাইহোক কিছু দিন যাওয়ার পর এক ভাই পরামর্শ দিলো দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার চাকরি বিজ্ঞাপন পড়ার জন্য, তা আমি নিয়মিত পড়তে থাকি ও সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে থাকি। আমার ১ম পরীক্ষায় আমি ১ম হই কিন্তু টাকার কারণে চাকরিটা হয় নাই, এই ভাবে আমি প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিতে থাকি কিন্তু চাকরি নামের সোনার হরিণ কিছুতেই ধরা দেয় না।
আমার আত্মীয় স্বজন ও সমাজের লোকেরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে কথায় আঘাত করতে থাকে, আমি পারবো না এটা বলতে লাগলো। কিন্তু আমি পরীক্ষা একটার পর একটা দিতেই থাকি। সর্বশেষ নরসিংদী জেলায় আমার পরীক্ষা ছিলো, আর ঐ টাতে আমি প্রথম হই এবং টাকা ছাড়া আমার চাকরি হয়ে যায়। চাকরী পেয়েও আমি ঠিক থাকতে পারি নাই। কেননা চাকরির মাধ্যমে আমাদের অন্য জনের অধীনে কাজ করতে হচ্ছিল। সেখানকার দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন ভাবে কাজের প্রেসার প্রয়োগ করে,আমার মনে হচ্ছিল চাকরী আমার জন্য নয়। যেহেতু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে আরো অন্য কিছু করার দক্ষতা দান করেছেন। আমি কি করবো এটা নিয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাই। হঠাৎ একদিন ফেসবুক নিউজফিড পড়তে পড়তে " নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন " এর নাম আমার চোখের সামনে চলে আসে।তখন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন কী? তাদের কাজ কী? এগুলো আমি জানতে থাকি। সব কিছু জেনে দেখলাম আমি স্বপ্নে যাকে খুঁজতেছিলাম তাকে আমার কাছে পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন আর হাত ছাড়া করা যাবে না। তারপর এক ভাইয়ের মাধ্যমে গুপে যুক্ত হই। যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত ৯০ দিন একটানা ক্লাস করি।আর এই ৯০ টা দিন সেশন অর্থাৎ ক্লাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি একটা বিজনেস শুরু করবো সিদ্ধান্ত নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মূলধন নিয়ে সমস্যায় পড়ে যাই কিন্তু আমাকে বিজনেস করতে হবে এই স্বপ্নটা আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিলো না। মূলধন সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য স্যার এর কাছ থেকে শিখতে পাই অল্প মূলধন দিয়ে শুরু করার জন্য। আর এই শিক্ষাটাকে কাজে লাগিয়ে আমি " দশ হাজার" টাকা দিয়ে শুরু করি। আমার পণ্য সমূহ হলো: কাঠের ঘানি ভাঙানো সরিষা তৈল, গাভীর খাঁটি দুধ, দেশি মুরগির ডিম ইত্যাদি। প্রিয় ভাই ও আপুরা জেনে খুশি হবেন যে, আমি বিজনেস শুরু করার পর মাঠে আসার পরপরই অল্প সময়ে ভালো ফলাফল পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আপু ও ভাইজান আপনাদের দোয়ায় মাসিক ভালো পরিমান আয় হচ্ছে। আর এই আয় থেকে আমি গরিবদের জন্য ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারছি। সবাই দোয়া করবেন এই ভাবে যেন হালাল ভাবে বিজনেস করতে পারি ইনশা-আল্লাহ।
[ ] আমি এই বিজনেস এর পাশাপাশি আই,টি সেক্টর নিয়ে শীঘ্রই আরেকটি প্রতিষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছি। যেখান থেকে আমি নানা রকম সার্ভিস দিবো।
যেমন:- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট, এপস, ভিডিও বিজ্ঞাপন, স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের যাবতীয় সমস্যা সমাধান ইত্যাদি।
যখন আমি চাকরি পেয়েও হতাশায় ছিলাম তখন আমি ২জন মানুষকে পাশে পেয়েছি মা ও বাবাকে। মা ও বাবা আমাকে বলছিলো চেষ্টা চালিয়ে যেতে সফল একজন উদ্দোক্তা হতে পারবো। তাদের দোয়ায় কিছুটা বিলম্বে হলেও আমি সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছি, সবাই আমার বাবা ও মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
স্যারের যে সব কথা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে সব সময়-
১। জীবনে বলার মতো একটা গল্প থাকা দরকার।
২। স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন...... সাফল্য আসবেই।
৩। জীবনের অন্তত ৫টি বছর ৯--৫টা ভুলে গিয়ে কাজটাকে ভালবাসুন, আপনার এগিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।
৪। জীবনে বড়, সফল ও সুখী হবার জন্য পজিটিভিটির কোন বিকল্প নাই।
৫। সময় নিন, সময় দিন, সময় বদলাবে, সময়ই সব ঠিক করে দিবে...।
৬। সমস্যা থেকে বের হয়ে আসবে নতুন কোন বিজনেস আইডিয়া।
৭। বৃষ্টি সবার জন্যই পড়ে, তবে ভিজে কেউ কেউ।
৮। সবসময় জিততেই হবে এই মানষিকতা আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। কোন কোন হার নতুন পথ দেখায়।
৯। যে নিজেকে ভাল রাখে এবং অন্যকেও ভাল রাখে - তিনিই একজন ভালোমানুষ ! ভালমানুষ হবার প্রতিযোগিতা হউক।
১০। জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হওয়া।
১১। আপনার জীবনে এগিয়ে যাবার কোন চমক দিতে পারে শুধুমাত্র মা-বাবার দোয়ায়।
১২। জীবনে শুধু ১ টা কাজ বা ১ টা চাকরী করার জন্য আপনার জন্ম হয়নি, আপনার যা কিছু করছেন তারচেয়েও আরও অনেক বেশী কিছু করার মেধা ও বুদ্ধি আপনার আছে।
১৩। মানুষের জন্য কাজ করলে, জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না।
ফাউন্ডেশন থেকে আমার পাওয়াঃ
১। প্রিয় প্লাটফর্মে বিভিন্ন জেলা সহ গাজীপুর জেলার কিছু প্রিয় ভাই ও আপু পেয়েছি যারা আমাকে সবসময় পাশে থেকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে ।
২। নিজেই নিজেকে প্রতিদিন তৈরি করতে পারছি, হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারছি।
৩। নতুন করে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি ও সাহস অর্জন করতে পারছি।
৪। নিজের পরিচিতি ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে পারছি।
৫। প্রাণপ্রিয় স্যারের জ্বালাময়ী একটা উক্তি
"স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ"।
স্যারের এই উক্তির উপরে চলার চেষ্টা করছি।
৬। মনের মধ্য থেকে সকল ধরনের নেগেটিভিটি দূর হয়ে যাচ্ছে এবং যতদিন বেঁচে থাকব কাউকে কোনদিন ঠকাবে না এটা নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
৭। সর্বপরি একজন ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করছি।
আর এইসব অসাধ্য সাধন করতে পারছি, প্রতিদিনে আমাদের গাজীপুর জেলার সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে।
সর্বোপরি আমি ভালো মানুষের একটা পরিবার পেয়েছি।
আমি সকল ভাই বোনদের দোয়া প্রার্থী
সবাই আমার জন্য এবং উদ্যোগের জন্য দোয়া করবেন।
পরিশেষে কৃতজ্ঞতা
দীর্ঘসময় ধৈর্য্যসহকারে আমার বাস্তব জীবনের গল্প পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো সবার প্রতি।
আমি সবসময় আপনাদের সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। আপনাদের জীবন হোক সুন্দর ও সুখময়, আজকের মত এ পর্যন্তই।
আল্লাহ্ হাফেজ
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯৩৭
Date:- ১০/০৪/২০২৩ইং
শুভেচ্ছান্তেঃ
মোঃ নাঈম
ব্যাচ নংঃ ১৭ তম
রেজিষ্ট্রেশনঃ৯২৭৪৮
জেলাঃ গাজীপুর
উপজেলাঃ কালীগঞ্জ