জ্রপাতে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করার পরে হতাশায় ছিলাম তখন ফাউন্ডেশন আমাকে পথ দেখিয়েছে।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সর্বপ্রথম শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে যিনি এখনো আমাকে সুস্থ রেখে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করেছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মা-বাবার প্রতি যাদের মাধ্যমে দুনিয়ার আলো আমি দেখতে পেরেছি।
আমার বড় ভাই দের প্রতি তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আজকে আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
আমি আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সন্তান লাখ লাখ উদ্যোক্তা তৈরীর কারিগর প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের এত সুন্দর একটি পরিবার তৈরি করে দিয়েছেন।
আমার পরিচয় ও পারিবারিক জীবনঃ
১৯৯৮ সালের, ৪ মে রোজ সোমবার আমার জন্ম হয়। আমার শৈশব অনেক আদর, ভালোবাসায় কাটে।আমি এক মাত্র ছোট সন্তান ছিলাম,যার আদর ভালোবাসার কোন কমতি ছিলোনা, কারণ আমার সাত ভাই, চার বোন তার মধ্যে ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট হওয়ায় আদর টা একটু বেশি পেতাম পরিবারের মানুষদের কাছ থেকে।
বড় পরিবারে জন্ম নিয়েছিলাম হাসি খুশিতে ভালো কাটছিলো জীবন।
হঠাৎ পরিবারে নেমে আসলো এক কালবৈশাখীর ঝড়
আমি জন্মের পর আমার বাবাকে ইনকাম করতে দেখিনি। আমার ভাইয়ারা ইনকাম করতো।
আমার বাবা একদিন জমিতে কাজ করতে গিয়েছিলো তখন হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে,বজ্রপাতে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করে। আমরা হয়ে গেলাম এতিম।
আমার বাবা কে হারিয়ে যখন আমরা দিশেহারা ঠিক তখনই আমার চাচারা আমাদের ভাইদের মন-মানসিকতা নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন বাহানা খোঁজে।
তাদের উদ্দেশ্যে ছিল আমার দাদার সম্পত্তি যেন আমরা বিক্রি করে দেই তাদের কাছে তারা ভালো চলবে আমরা যেন খারাপ চলি কিন্তু সেটা সাকসেসফুল হয়নি । মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাইদের বুঝদান করার তৌফিক দিয়েছিলেন। তারা মনকে শক্ত করে। আমরা ছোট ভাই ছিলাম ৩ জন, দুইটা ছোট বোন ছিলো তাদের মুখে খাদ্য দেওয়ার জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করতে থাকে।
আমার শিক্ষাজীবনঃ
আর দশটা ছেলেদের মত আমি জীবন যাপন করতে পারিনি। সবসময় টেনশন লাগতো কখন আমার ভাইয়েরা আমাদের রেখে চলে যায়। কিন্তু আমার ভাইরা যায়নি আমাদের তিন ভাইকে যথাক্রমে ভর্তি করে দেয় স্কুলে।আমিও স্কুলে ভর্তি হলাম। ২০০৭ সালে গ্রামের স্কুল থেকে ফাইভ পাস করলাম। পাশের গ্রামে একটি মাদ্রাসায় সিক্সে ভর্তি হলাম।২০১০ সালে প্রথম জেএসসি পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা ভালো হওয়ার পরেও ফেল করলাম। জীবনে প্রথমবার ব্যর্থ হওয়াতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। টানা ১৪ দিন রুম থেকে বের হয়নি। এই ১৪ দিনের জীবনে অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের ভাইদের মানুষ বলতো কি লেখাপড়া করাও ভাই পাস করতে পারেনা।
কিন্তু আমার ভাইয়েরা মানুষের কথাটা শুনে নাই
তারা আমাকে বলে ফেল করছো তাতে কি হয়েছে আবার পরীক্ষা দিবা ।
আমরা তো পাশে আছি এই কথা শুনে আমি আমার মানসিক শক্তি ফিরে পাই।
২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ আমার প্রতিষ্ঠান থেকে খবর আসে যারা এক বিষর ফেল করেছে তারা নাইনে উঠতে পারবে।
খবরটা শুনে আমি জীবনের সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। পরে নাইনে ভর্তি হই। মনে মনে জিদ করেছিলাম জীবনে যতদিন লেখাপড়া করব ফেল করব না।
২০১৩ সালে মোটামুটি রেজাল্ট করে এস এস সি পাস করি।
পাশ করার পর ভাইয়েরা জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় ভর্তি হব।
যেহেতু ভাইয়েরা অনেক ভালোবাসতো
তাদের কাছে বললাম টাঙ্গাইল কোন একটা কলেজে এবং ক্রিকেট খেলার ক্লাবে ভর্তি হব।
তারা আমাকে ভর্তি করে দিল।
কিন্তু কলেজ আর একসাথে প্র্যাকটিস করা সম্ভব হলো না। পরে ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে প্র্যাকটিস অফ করে ২০১৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করি। আবার প্র্যাকটিস শুরু করি পরে ডিগ্রিতে ভর্তি হই পাশাপাশি প্র্যাকটিস করি। ভালোই চলছিল প্র্যাকটিস এবং লেখাপড়া
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ কোন একটা বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি।
ঢাকা গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের কিছু ফাস্ট বোলার নেবে ।
তখন বাড়িতে এসে বললাম কিন্তু টাঙ্গাইলের তুলনায় ঢাকা একটু খরচ বেশি হওয়ার কারণে
পরিবারের মানুষ মত দিলো না। পরে রাগ করে কয়েক দিনের জন্য প্র্যাকটিস অফ করে দিলাম
বাড়িতে এসে রাগারাগি করতাম ভাত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করলাম । পরে আমার পরিস্থিতি দেখে রাজি হলো বাড়িতে থেকে পরে ২০১৮ সালের প্রথম দিন ঢাকায় পা রাখি। ২-১-২০১৮ গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য যাই আলহামদুলিল্লাহ প্রথমেই টিকে যাই।
আলহামদুলিল্লাহ শুরু হলো ঢাকায় প্র্যাকটিস।
মোটামুটি ৩ মাসে একটা ব্যাচ পার করি কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাচ ৬-৭ মাস হয়ে যায় পার করতে পারি না হতাশ হয়ে গেলাম।
তখন মনে হলো আমাকে দিয়ে মনে হয় হবে না
আমি মনে হয় পারবোনা।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর সাথে যুক্ত হওয়াঃ
তখন আমি আমার বড় ভাই যেটা পুলিশের চাকরি করতো তার সাথে পরামর্শ করি সে বিষয় টা বুঝতে পেয়ে আমাকে এই নিজের বলার মত ফাউন্ডেশনের সন্ধান দেয়।
বলে,
তুমি নিয়মিত ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের লেখা গুলো পড়ো তাই সাহস পাবে।
ভাইয়ের পরামর্শে তাই শুরু করলাম
একদিন স্যারের সেই উক্তিটি সামনে আসলো
তুমি যতবার পড়বে ঠিক ততবার উঠে দাঁড়াবে বলবে আমি খেলব আমাকে দিয়ে হবে আমি খেলবো।
তখনি সাহস করে আবার প্র্যাকটিসে মনোযোগ দিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ ১ মাস পরে সেই ব্যাচ পার করলাম।
পরে টাংগাইল প্রিমিয়ার লিগে ডাক পেলাম।
প্রিমিয়ার লিগ খেলার পরে টাঙ্গাইল থেকে ইন্ডিয়া যাওয়ার চান্স পেলাম ।
পাসপোর্ট করলাম ভিসা লাগালাম ।
২০২০ সালে মার্চ মাসেই যাবো।
কিন্তু মহামারি করোনা হানা দিলো সব শেষ ।
দীর্ঘদিন করোনা থাকায় প্র্যাকটিস অফ করে দিলাম ।
পরে আর খেলায় দিকে মনযোগ না দিয়ে কি করা যায় ভাবতে শুরু করলাম।
আমার কর্মজীবনঃ
পরে পরিবারের মানুষ সাথে পরামর্শ করে একটা ছোট করে বিজনেস শুরু করলাম হোল সেলের বিজনেস ।
প্রথমে ৬ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করেছি ১৯ মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ আমার বিজনেস ভালো পজিশনে চলে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হবার পর আমার পরিবর্তনঃ
এখন বলি ফাউন্ডেশন আমাকে কি শিক্ষা দিলো। আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের শিক্ষা নিয়ে এলাকায় একটি সংগঠন করেছি।
আলহামদুলিল্লাহ স্যারের শিক্ষা নিয়ে আমি একটি সংগঠন করেছি।
এলাকায় মানবিক ও সামাজিক কাজ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি।
২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর সংগঠন টি উদ্বোধন করি। তার পরে সেই সংগঠন থেকে যে কাজ হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
যেহেতু নদী ভাঙ্গন এলাকা চোখের সামনে বাড়ির শত শত বাড়ি ভেঙ্গে যেতে দেখেছি ।
পাশের গ্রামের মানুষের চিৎকার আর্তনাদ শুনে আমরা কিন্তু ঘরে বসে থাকিনি রাতের আধারে মানুষ বাড়ি ঘর রক্ষা করার কাজে সহায়তা করেছি।
আমাদের সামাজিক সেবা সংগঠনের ছেলেদের নিয়ে ৮ টি পরিবার কে ছাগল কিনে দিয়েছি তাদের সংসার একটু হলেও সচল করার জন্য।
এবং একটি পরিবার অসহায় হয়ে পড়ায় তাদেরকে ৫৫ কেজি চাউল নগদ ৮৭০০ টাকা দিয়ে সহায়তা করছি।
আরো অনেক ভালো কাজ করেছি।
স্যারের শিক্ষা নিয়ে এলাকায় মানবিক ও সামাজিক কাজ করার জন্য একটি টিম তৈরি করেছি । বতমান সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ১৬৫ জন।
প্রত্যকটা সদস্যকে স্যারের শিক্ষা নিয়ে কিছু শেখানোর চেষ্টা করছি।
ইনশাআল্লাহ দোয়া করবেন নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ড আমি গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে পৌছে দিব ইনশাআল্লাহ।
সবাই আমার ও আমার পরিবারের, প্রতিষ্ঠানের জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন স্যারের শিক্ষা নিয়ে আজীবন চলতে পারি।
একজন আদর্শ ভালো মানুষ হতে পারি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯৩৭
Date:- ১০/০৪/২০২৩ইং
বেলাল হোসেন
ব্যাচ ১১
রেজিঃ৩৪২৪০
উপজেলা কালিহাতি
জেলা টাংগাইল