ফেরদৌসী জাহান আপুর জীবনের গল্প।
একটি ব্যর্থ জীবনের গল্প
আসসালামুয়ালাইকুম ওরাহমাতুলল্লাহ
🙏সবাইকে অনুরোধ করতেছি আমার জীবনের গল্প টি পড়ার জন্য।
☘️ কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জানাই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে যিনি আমাকে আখলাকুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
☘️দুরুদ ও সালাম জানাই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে।
☘️ কৃতজ্ঞতা - কৃতজ্ঞতা জানাই বাবা মা এর প্রতি তাদের জন্য আমি সুন্দর এই পৃথিবীতে আলো দেখতে পেরেছি।
☘️ কৃতজ্ঞতা - কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যারকে লাখো তরুণ তরুণীর বেকার ও হতাশা গ্ৰস্ত জীবনে একগুচ্ছ সপ্ন ও বেঁচে থাকার আশ্বাস এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়ার জন্য। আমি মহান রাব্বুল আলামীন এর কাছে স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
☘️ কৃতজ্ঞতা - কৃতজ্ঞতা জানাই আমি আমার লক্ষীপুর জেলার সকল দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ভাইবোনদের কে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ আমরা এমন একটি প্লাটফর্ম যুক্ত আছি। এবং প্রতিদিন সেশান চর্চা , কথাবলার জড়তা কাটিয়ে তোলা ,নলেজ শেয়ারিং ইত্যাদি বিষয় গুলো আমার জেলার দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ভাইয়াদের থেকে শেখা।মহান আল্লাহ পাক এর কাছে তাদের দীর্ঘ আয়ু কামনা করছি।
🏡🏠 জন্ম ও পরিবার - লক্ষীপুর জেলায় , ১৪ নং মান্দারী ইউনিয়নে ১৯৮৬ সালে ৩জুনে নিজ গ্ৰামে আমি জন্মগ্ৰহন করি । আমরা ছিলাম ৩ভাই বোন ।দুই বোন ও ১ ভাই ।আমি সবার বড়। আমার বাবা বিয়ে করার আগে আমার দাদা দাদী মারা যান ।তাই মা শশুর শাশুড়ি পাইনি ।বাবা ছিলেন ৫ভাই ৩বোন সবাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে । কিন্তু মেজো জেঠু আর আমার বাবার একএে থাকতেন জেঠু ছিল ২ছেলে । কোন মেয়ে ছিল না তাই আমাদের ২ই বোন কে অনেক আদর করতেন বাবার মুখে শুনেছি আমি দেখতে দাদুর মত হয়েছি তাই আমার বাবা ও আমার জেঠারা আমাকে মা বলেই ডাকতেন ।আমার মা ও জেঠিমা বোনের মত তাদের সংসার জীবন ৩৮ বছর আমরা এখনো যৌথ পরিবার হয়ে আছি। ২ই পরিবারের ভাই-বোন সবাই বিবাহিত ।বর্তমানে ২ই পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১৩ জন আলহামদুলিল্লাহ। আমার মা একজন গৃহিণী বাবা একজন ছোট ব্যবসায়ি বাবার একটা ফিশারি ও একটি গরুর খামার আছে।সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
🚴⛹️শৈশব-আমার শৈশব কাটে আমার মা বাবার সাথে গ্ৰামে । আমি আর আমার ভাই ছিলাম আড়ই বৎসরের ব্যবদান। বাবার ইচ্ছে তে ২জন ছিলাম একই ক্লাসে ।তাই আমার বন্ধু ভাই আমার খেলার সাথি ঝগড়া করা সবটাই ছিল আমার ভাইয়ের সাথে। আমি অনেক শান্ত ও ভদ্র ছিলাম । ভাই ছিল অনেক রাগী আর বোন তো অনেক ছোট। দুই ভাই বোন একসাথে পড়াশুনা খেলাধুলা কাজ করা । সব কিছু মিলিয়ে ছিল অনেক মধুর একটা শৈশব।
☘️,🖍️ পড়াশোনা- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমি ২য় স্থান অর্জন করি এবং ক্লাস ফোর ও ফাইভে প্রাথমিক ও টেলেন্টপুলে বৃওি ওপাই ।ক্লাস সিক্সে আমি গার্লস স্কুল এ ভর্তি হই ।খুব সুন্দর ভাবে যাচ্ছে দিন।যখন আমি ৯ ম শ্রেনী তে বার্ষিক পরীক্ষা দিব তখনই হঠাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। এর পর হসপিটাল এ ভর্তি হলাম আর পরীক্ষা দিতে পারি নি ।পারিবারিক ও আর্থিক সংকট এর কারনে এবং আমি বেশি দিন বাঁচবো না পড়াশোনা করে কি হবে এমন ভুল চিন্তা ভাবনা থাকার জন্য আমার পরিবার থেকে আর পড়াশোনা করানো হয়নি ।
😥🍂হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো ঃ ২০০২ সালে আমি হঠাৎ ভিশন অসুস্থ হয়ে পড়ি । ডাঃ কাছে গেলে ডাঃআমাকে হসপিটাল ভর্তি করে দেয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের / পিজি হসপিটাল ইমারজেন্সি রুমে ভর্তি হই ।আমার শরীল এ ব্লাড নেই ইমারজেন্সি ব্লাড লাগবে ।ডাঃ আমাকে দেখে বললো ২৪ ঘন্টা মধ্যে ব্লাড না দিলে আমি মারা যাবো ।আমার হিমোগ্লোবিন আসছে ফোর পয়েন্ট । এর পর এক ব্যাগ ব্লাড দেয়া হয় শুরু হল পরিক্ষা নিরীক্ষা ডাঃ দের বোড বসানো হয় আমাকে নিয়ে কত ক্লাস করানো হয় লক্ষন গুলো কি চিল প্রশ্ন সবার কি হতে পারে ২২,দিন হসপিটাল এ থাকার পর ফাইনালি টেষ্ট এ আসলো আমি দূরারোগ্য E - beta thalassemia রোগে আক্তান্ত এই রোগের চিকিৎসা হল প্রতি মাসে শরীর এ ব্লাড দেয়া এবং ব্লাড দেয়ার পর শরীল এ যে আয়রন জমে তা ঔষধ বা ইনজেকশন এর মাধ্যমে শরিল থেকে বের করা এবং আয়রন জাতীয় খাবার বর্জন করা। সব ওষুধ ই ইনন্ডিয়ান । তাই দাম একটু বেশি ।এই ব্যায়বহুল দুরারোগ্য রোগটি কখন যে আমার শরীল এ বাসা বাঁধলো বুঝতেই পারিনি ডাঃ বললো আমি বেশিদিন বাঁচবো না ডাঃ এই একটি কথায় আমার জীবনের সব আশা সপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল মনে হচ্ছে আমি শূন্যের উপর দাঁড়িয়ে আছি ।আমার পায়ের নিচে মাটি নেই খুব দুর্বিষহ বছর গুলো কাটতে লাগলাম এর পর ভাবতে থাকি কি করা যায় । শুরু করি ১টা টিউশনি । ২০০৯ সালে কিছু জমানো টাকা ও ঈদের টাকা মিলিয়ে একটা সেলাই মেশিন কিনি । মাসের শেষে ব্লাড নেয়ার জন্য ঢাকায় চলে যাইতাম ১৮ বছর বয়সে আমি একাই ঢাকায় যাই একাই ডাঃ দেখানো শুরু করি আমার মনে হত আমি বাঁচবো এবং লড়াই করেই বেঁচে থাকবো জীবন টা আমার লড়াই টা ও আমাকে ই করতে হবে আমার এই আত্মবিশ্বাস আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সব থেকে বেশি কষ্ট হয় সব কিছু তেই আমার বাদা ছিল পরিবার থেকে শুধু বলা হত আমি পারবো না ।এই না শব্দ আমি মেনে নিতে পারি নি আমার চিকিৎসা ছিল ব্যায়বহুল বাবার পক্ষে খরচ চালানো সম্ভব ছিল না তাই দুই মাস ঔষধ খাই তো এক মাস খাই না । এই ভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আপনাদের দোয়ায় আমি এখনো চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে আছি যে বয়সে হাতে কলম থাকার কথা সে বয়সে সুঁই ধরেছি ।যে বয়সে খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছি।
কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মারে কে।
আজ আমি স্বপ্ন দেখছি নতুন করে বাঁচার । নতুন একটা গল্প তৈরি করার । আর সেটা শুধু মাত্র সম্ভব হয়েছে নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন' এ এসে।
🌸☘️প্রিয় প্লাটফর্ম -আগমন -ঃ নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন' সব সময় আমি ফলো করতাম ।একদিন পোষ্ট করি রেজিস্ট্রেশন করতে চাই বলে কোন একজন ভাই আমাকে লিংক দিয়ে দেয় আমি রেজিস্ট্রেশন করি তখন ১৮তম ব্যাচ কিন্তু আমি বিভিন্ন কারনে এক্টিভ ছিলাম না ।২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে মহাসম্মেলনে আমার প্রথম এই প্লাটফর্ম এ আগমন । এবং আমাদের জেলা এম্বাসেডর নাছির মির্জা ভাই আমাকে মেসেঞ্জার গ্ৰুপে যুক্ত করে দেয় ।এর পর থেকে আমি সব সময় সেশান এ আসা এবং ফাউন্ডেশন সব নিয়ম কানুন মেনে এক্টিভ থাকার চেষ্টা করি ।
🌸☘️ ফাউন্ডেশন থেকে আমার প্রাপ্তি -ঃ আমি আমার নিজের একটা পরিচয় তুলে ধরতে চাই এই ফাউন্ডেশন থেকে । বড় কোন উদ্যোগক্তা হতে না পারি তবে একজন ভালো মানুষ হয়ে বের হব ইনশাআল্লাহ।এমন একটা প্লাটফর্ম যুক্ত হয়ে ৬৪জেলার ভাইবোনদের সাথে কাজ করতে পারতেছি এর থেকে বড় প্রাপ্তি আমার জীবনে আর আসবে বলে মনে হয় না
🌸☘️স্যারের কিছু কথা-ঃ স্যারের কিছু কথা আমার অনেক ভালো লাগে । ১.স্বপ্ন দেখুন সাহস করূন এবং লেগে থাকুন।
২ . মানুষ এর জন্য কাজ করলে জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয়না।
৩.আমাকে দিয়ে কিছু ই হবে না বা আমি পারবো না এইটা কখনো বাবা যাবেনা।
৪.নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন নিজেকে ভালো বাসুন।
☘️🌸আমার মূল উনুপ্রেরনা: স্যারের দেয়া সেশান গুলো প্রতিদিন আমাকে আমার কাজ করতে উনুপ্রেরনা দিচ্ছে। সাহস দিচ্ছে। স্যারের প্রতি টি কথাই আমার অনুপ্রেরণা। প্রতিদিনের শপথ বাক্য আমাকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে । আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আামাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাচ্ছে। আমি আমার জীবনে কাজের ক্ষেত কখনো উনুপ্রেরনা পাইনি । কিন্তু এই ফাউন্ডেশন এ যুক্ত হয়ে সেই অনুপ্রেরণা টা পেয়ে ছি ।
🌸☘️ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প : চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করে ও কোন চাকরি পাই নি ।সব জায়গায় আমার একটা পরিচয় ছিল আমি থ্যালাসেমিয়া পেসেন্ট কিন্তু আমি এই পরিচয়ে বেঁচে থাকতে চাই না ।তখন ই আমার মনে হল আমার নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে হবে এর জন্য নতুন কিছু করতে হবে । কিন্তু কি করবো ঠিক জানা চিল না২০১৯ সালে শখের বশে আমি ৬টা জামা কিনে নিয়ে আসি এবং বাড়িতে সেল করি ।এর পর থেকে আমার কাজ শুরু হল । ২০২১ সাল এই মালাবিস ফ্যাশন হাউস নামে একটা অনলাইন পেইজ খুলে আমার উদ্যোগক্তা জীবন শুরু করি আলহামদুলিল্লাহ ।২০২২ সালে নিজ জেলায় বিসিক থেকে একটা ট্রেনিং নি।২০২৩ সালে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ জেলায় বেসিক মেলায় অংশগ্রহণ করি এবং সম্মাননা পাই । আমি প্রতিনিয়ত সপ্ন দেখি আমি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হব ।আপনাদের সকলের দোয়া এবং ভালো বাসা পেলে আমি আমার স্বপ্ন টা বাস্তবায়ন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
👍🌹 ধন্যবাদন্তে🌹
😊🖍️ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনাদের সুস্থতা ও নেক হায়াত কামনা করছি । আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন ।🤲 আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমার গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে 🧕🏻ধন্যবাদ। আপনার মুল্যবান মতামত কমেন্ট করে জানাবেন । ভুলএুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। 👏 আল্লাহ হাফেজ।
ফেরদৌসী জাহান
১৮/৯৮০৪৪
লক্ষ্মীপুর, জেলা