পলি সিকদারের জীবনের গল্প।
🌻🌻আমার জীবনের গল্প 🌻🌻
❣️❣️প্রতিটা মানুষের জীবনে একটা গল্প থাকে হোক তা সফলতার কিংবা ব্যার্থতার আমারও তার ব্যাতিক্রম নয়। প্রানের ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে অনেক ভাই-বোনদের জীবনের গল্প পড়েছি। তাদের গল্প গুলো পড়ে নিজের জীবনের গল্প লেখার উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা পেয়েছি।অনুরোধ করছি, গল্পটি পড়ার জন্য আজ আমার নিজের গল্প শেয়ার করলাম।
ভালোবেসে একটা লাইক কমেন্ট করে আসবেন।
🪴🪴পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করলাম।
🍁🍁ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রিয় মেন্টর, প্রিয় স্যার,জনাব @ Iqbal Bahar Zahid স্যারকে।যার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি " নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন " উদ্দোক্তা তৈরির কেন্দ্র।
🥀🥀স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন,শুরু করুন,লেগে থাকুন,সফলতা আসবেই।🥀🥀
,,,,,,,,,,,,,,,,,ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
🪴🪴জন্ম ও পরিবার:
আমি পলি সিকদার। পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায় বান্নাকান্দা গ্রামে জন্ম। আমরা তিন ভাই বোন।দুই ভাই এক বোন। আমি ছিলাম মেজো।দুই ভাইয়ের এক বোন আমি ছিলাম খুব আদরের।
🌲শৈশব জীবন :
ছোট থেকেই আমি ছিলাম শান্ত স্বভাবের এবং গ্রামেই বড় হয়ে ওঠা।
আমাদের জীবন বেশ হাসি খুশিতেই কাটছিলো হঠাৎ আমাদের জীবনে ঝড় নেমে আসল। আমার ছোট ভাইয়ের বয়স যখন দেড় মাস তখন আমার মা খুব অসুস্থ হয়ে পরে।আমাদের পারিবারিক অবস্থা মোটামুটি ভালো থাকলেও মাকে চিকিৎসা করাতে আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পরে,😭
শৈশবে আমার পড়াশোনার প্রতি ছিল খুব আগ্রহ।পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম তাই প্রাইমারিতে প্রাইভেট পড়তে হয়নি। পড়ালেখা ভালো পারায় স্যাররা আমাকে খুবই ভালোবাসতেন এবং আদর করতেন।
কোন বিষয় যদি বুঝতে সমস্যা হতো তা আমার বড় ভাই সমাধান করে দিত।আমার খেলার সাথীর অভাব ছিল না।আমি খেলাধুলায় এবং দুষ্টমিতে পারদর্শী ছিলাম।
বাবা ব্যবসা করতেন। ছোট থেকে কষ্ট কি তা বুঝিনি।আমাদের সংসার বেশ ভালোই চলছিল।কিন্তু মা অসুস্থ হওয়ার পরে আমরা অনেক ঋণী হয়ে পরি।আমাদের থাকার একমাত্র দোতলা বাড়ি টাকার অভাবে বিক্রি করে দেয়।বাবার তৈরি করা ঘরে নিয়তি আমাদের থাকতে দিল না।হয়তো আমার জীবনের এটাই ছিল সবচেয়ে কষ্টের।কষ্টের মধ্যে আনন্দ ও ছিল আমরা আমার মাকে ফিরে পেয়েছি।আমরা তখন ছোট একটা ঘর বানিয়ে থাকি।তখন বাবা দিশেহারা হয়ে পড়ে কি করে ঋণ শোধ করবে এবং আমাদের লেখাপড়া করাবে।তখন বড় ভাই থ্রিতে এবং আমি ওয়ানে পড়ি আর ছোট ভাইয়ের বয়স তিন মাস।বাবা তখন ব্যবসা ছেড়ে পাড়ি জমায় ঢাকায়। ঢাকা গিয়ে একটা গার্মেন্টসে চাকরি নেয়।চাকরি করে আস্তে আস্তে ঋণ শোধ করে। আমাদের কখনো কষ্ট কি বুঝতে দেয়নি নিজে দিনরাত পরিশ্রম করেছে। বাবা আমাদের একটা কথাই বলেছে আমি কষ্ট করি তোমাদের কষ্ট না হয়।তোমরা লেখাপড়া চালিয়ে যাবা।হয়ত এই কষ্টের দিন কখনো ভুলবার নয়।
এখন বাবাকে কোন কাজ করতে দেই না।আমার বড় ভাই চাকরি করে বাবাকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। এখন মা-বাবা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন।আমার বড় ভাই মেহেরপুর থানায় কর্মরত আছেন। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
🍁বিবাহিত জীবন :
আমার মনের ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করা। কিন্তু তা আর হলো না। এস এস সি পরিক্ষার পর পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।বাবা ছিল খুব রাগী মানুষ তার উপরে কোন কথা বলতে পারিনি তাই তাদের সিদ্ধান্ত মুখবুঝে মেনে নিতে হয়েছিল।বিবাহিত জীবনে এক ছেলে এক মেয়ে।আমার শ্বশুর ছিল মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। দুইজন ননদ তারাও স্কুলে চাকরি করে।আমার স্বামী প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করতো। এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঔষধের ফার্মেসি দিয়েছে এই দুই মাস হয়েছে। আমাদের
দোকানের নাম"" সেইভ লাইফ ফার্মা""শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ সড়ক,সদর থানা রোড,পিরোজপুর।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমিও পাশাপাশি একজন উদ্দোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছি।
🌷🌷আমার লেখাপড়া :
আমার বাড়ির পাশে স্কুল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেষ করি। কাউখালী মহিলা কলেজ থকে এইস এস সি শেষ করি। পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ডিগ্রি করি। বর্তমানে এই কলেজে মাস্টার্স করতেছি। যেহেতু এস এস সি পরিক্ষার পরেই বিয়ে হয়েছে আর এখনো লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই খুব ভালো মানুষ তার জন্যই আমি লেখাপড়া করতে পেরেছি।শ্বশুর বাড়ির সবাই আমার পড়াশোনার জন্য সাপোর্ট করলে ও পড়াশোনা চালানো ততটাও সহজ ছিল না।কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। বিয়ের দুই বছর পর ছেলে বাচ্চার মা হই। তখন শ্বশুর বাড়ির সব কাজ করা, বাচ্চা সামলানো,কলেজ করা এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়েছে।সকালে উঠে রান্না করে বাসার সব কাজ করে বাচ্চাকে খাবার খাইয়ে কলেজে যেতাম আবার কলেজ থকে এসে বিকালে রান্না করে রাতে বই নিয়ে বসতাম।শ্বশুর, শ্বাশুড়ি লেখাপড়ায় সাপোর্ট করলেও সব কাজ আমাকেই করতে হতো।
🫶প্রিয় প্লাটফর্মে আগমনঃ-প্রিয় গ্রুপে আমি Amina akter mina আপুর মাধ্যমে আসি।প্রিয় গ্রুপে আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করতে সাহায্য করেন Sheuly Akhter আপু এবং পিরোজপুর জেলা গ্রুপে এড করে দেন পিরোজপুরের জেলা প্রতিনিধি ও মডারেটর G M Shakil ভাইয়া।তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম দেওয়ার জন্য যেখানে আমি না বলা কথা গুলো বলতে ও লিখতে পারি।ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমার মনে হলো এখানে সবাই ভালো মানুষ। কেউ কাউকে কোনদিন ঠকাবে না কারন এখানে সবাই স্যারের শিক্ষায় আলোকিত মানুষ।
💜💙স্যারের যে কথায় অনুপ্রাণিত হইঃ-
১.স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন,শুরু করুন, লেগে থাকুন,সফলতা আসবেই।
২.চাকরি করবো না, চাকরি দিবো।
৩.বৃষ্টি সবার জন্য পড়ে, ভিজে কেউ কেউ।
৪.নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে হবে।
৫.সার্টিফিকেট নয়,দরকার দক্ষতা ও কাজ শেখার শিক্ষা।
৬.হয় জিতবেন অথবা শিখবেন, হারবেন না কখনো, সুতরাং কখনো থেমে যাওয়া যাবে না।
৭.যত যাই কিছু হোক হতাশ হবোনা,কাজ ছেড়ে পালাবোনা।লেগে থাকব শেষ পর্যন্ত।
🌲🌲 স্যারের এই কথা গুলো প্রতিনিয়ত আমাকে অনুপ্রেনিত করে, আমাকে স্বপ্ন দেখায় একজন উদ্দোক্তা হতে। আমার স্বপ্ন আমি একজন উদ্দোক্তা হতে চাই। নিজের বলার মতো কোন গল্পই তৈরি করতে পারি নি।উদ্দোক্তা হবার স্বপ্ন নিয়ে আমি এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়েছি। স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে এবং স্যারের শিক্ষা বুকে ধারণ করে একজন সফল উদ্দোক্তা হতে চেষ্টা করছি। আমার জীবনের লক্ষ্য একজন সফল উদ্দোক্তা হওয়া ও একজন ভালো মানুষ হওয়া।আমি সকলের কাছে দোয়া চাই আমি যেন একজন সফল উদ্দোক্তা হতে পারি।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় স্যারের প্রতি।এই ফাউন্ডেশনে আসার পর কিছু কথা যা না বল্লেই নয়।আমি এই ফাউন্ডেশনে রেজিষ্ট্রেশন করি ৩০ জুলাই ২০২১ সালে।আমি এই দুই বছর অন্ধকার জগতে ডুবে ছিলাম ফাউন্ডেশনের আশার আলো দেখতে পাইনি। প্রথম দিকে সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত হতাম সবাই দেখতাম কত সুন্দর করে সঞ্চালনা করে,সেশন পাঠ করে নিজের পরিচয় দেয়।আমি ছিলাম অজ্ঞ, আমি কথা বলতে পারতাম না আমার কথায় জড়তা ছিল আমি ভিরুর মতো পালিয়ে আসতাম ভাবতাম সবাই কি ভাববে।আমার কথা শুনে সবাই হাসবে। মাঝে মাঝে সাহস করতাম ক্লাস করব আমি পারব কিন্তু তখনই আবার হারিয়ে যেতাম পারিবারিক চাপে।আমার স্বামী বলতেন সারাদিন খালি মোবাইল টিপা। যখন সেশনে যোগদান করতাম তখন সবার নানা কথা এই মিটিং করে কি হবে কত টাকা পাব।নানা কারণে ছেড়ে দিয়েছি সেশন চর্চা কিন্তু আমাকে প্রতিনিয়ত স্যারের বাণী গুলো অনুপ্রেরনা দেয়।স্যার যেন আমাকেই বলছে স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন,সফলতা আসবেই।স্যারের এইরকম অসংখ্য বাণী আমার কানে বাজে আমাকে অস্থির করে তোলে,আমি সুস্থ থাকতে পারি না।তাই আবার সকল বাধা উপেক্ষা করে এই জুলাই মাস থেকেই ফাউন্ডেশনে লেগে আছি।আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি এবং আমি একজন সফল উদ্দোক্তা হতে চাই এবং আমাকে যারা বাধা দিয়েছে তাদের দেখিয়ে দিতে চাই এই ফাউন্ডেশন আমাকে কি দিয়েছে। এই ফাউন্ডেশনের সবাই যে কি ভালো মানুষ তা বলে বোঝাতে পারব না।আমি নিয়মিত সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত হই।আমি কথা বলতে পারি না,আমার কথায় জড়তা রয়েছে তারপর ও আমাকে সবাই যেভাবে উৎসাহিত করেছে যা ভালো মানুষ ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়।এখানে সবাই যে এত ভালো মানুষ যা ওজন করা যায় না,পরিমাপ করা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।
🌺🌺আমি আরো কৃতজ্ঞতা জানাই যাদের কল্যাণে আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি আমার পিতামাতার প্রতি।
🌷কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা জানাই আমার জেলা টিমের ভাই বোনদের প্রতি। স্যারের প্রতিদিনের সেশন আমাকে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখায়।
আমরা নারি আমরা চাইলে অনেক কিছুই পারি।
ফাউন্ডেশনের অন্য সব সফল নারিদের অনুকরনে চলছি।
জীবনের না বলা কথা, জীবনের গল্প লিখতে গিয়ে বা বলতে গিয়ে কখনো শেষ হবে নাহ,তাই এখানে ইতি টানছি।
গোছালো অগোছালো বুজি না,আমার মনের ছাপা কথা গুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।এতক্ষণ ধরে আমার না বলা কথা গুলো পড়ার জন্য আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।
া