শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবার মেয়ের জীবনের গল্প।
🏵️🏵️বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 🏵️🏵️
♥️আমার জীবনের ছোট্ট গল্প ♥️
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানিত সকল ভাই ও বোনদের অনুরোধ করছি আমার জীবনের "না বলা কিছু কথা" একবার পড়ে দেখবেন।
❤️❤️ কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জানাই মহান স্রষ্টা রাব্বুল আলামিনের প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুস্থ রেখেছেন এখন পযর্ন্ত এবং আমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি রইল লাখো কোটি দরুদ ও সালাম❤️❤️
কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সম্মান জানাই আমার বাবা মায়ের প্রতি যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এ নিজেকে গরে তুলতে পেরেছি।
🌺🌺আরো কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে। যিনি আমাদেরকে এতো সুন্দর একটা প্লাটর্ফমে যুক্ত হবার সুযোগ করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ ❤️❤️
🏵️শুরু করছি আমার জীবনের ছোট একটা গল্প "না বলা কিছু কথা "
🌺🌺 আমার জন্ম ও পরিবারঃ🏵️🏵️
🏵️ময়মনসিংহ জেলার খাগডহর ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল এক ছোট গ্রামে দরিদ্র পরিবারের আমার জন্ম। বাবা একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী।এক্সিডেন্ট পরবর্তী তে অসুস্থতায় তার ২ টি পা ই কেটে ফেলতে হয়েছে। তাই তেমন কোন কাজ করার শক্তি সামর্থ্য তার ছিলনা। মা একজন আদর্শ গৃহিণী। জীবন যুদ্ধে বার বার হেরে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কিভাবে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তা আমার মায়ের কাছ থেকে আমি দেখেছি। সংসার সামলেও বাইরে বিভিন্ন কাজ করে মা সংসারের হাল ধরেছিলেন সে সময়। আমার প্রতিটি কাজের অনুপ্রেরণার উৎস আমার মা। আর আমার বাবার কাছ থেকে দেখেছি কিভাবে বার বার হেরে গিয়েও ধর্য্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আমার বড় আপু এবং পরে এক ভাই তারপর আমার জন্ম।অভাবের সংসার তারপরও মা- বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আদর যত্নে বড় হই ও বেড়ে ওঠি। কেনদিন অভাব কি বুজতে দেয়নি মা বাবা। ছোট থেকে সাধারন জীবন যাপন করেছি কোন বিলাশবহুল স্বপ্ন বা চাওয়া কোনটাই আমার ছিলনা৷ পারিবারিক অবস্থা বুঝে কোনদিন কোন আবদারও করিনি পরিবারে। এখনও সে অভ্যাস টা রয়ে গেছে। নিজের চাইতে অন্যের জন্য কিছু করতে সবসময় বেশি ভালো লাগে আমার।
♦️♦️♦️আমার পড়ালেখা ♦️♦️♦️
দরিদ্র পরিবার এ জন্ম নেয়া তারওপর মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়ায় সামাজিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি শুধু মা বাবার ভরসায়। তারা সবসময় আমাকে উৎসাহিত করেছে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।
আমি খাগডহর হোসাইন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে এস এস সি পাস করি। মহাকালী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এইচ এস সি ও তারপর মুমিনুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বি এস এস ডিগ্রি কমপ্লিট করি।
🔶🔶🔶আমার দারিদ্রতার প্রবাব--------
আমার লেখা পড়ার খরচ সবটাই সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেনির মানুষের সহযোগীতায় ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃত্তির টাকায় হয়েছে। বড় ভাই বোনদের ও অনেক চেষ্টা করেছিল পড়ালেখা করাবে কিন্তুু পারেনি। বাবা মা সবসময় আমাদের ৩ ভাই বোন কে সমান গুরুত্ব দিয়ে লালন পালন করেছেন। এখনও আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। তারা চেয়েছিলেন যে কষ্ট করে তারা আমাদের বড় করেছেন সেটা যেন আমাদের পোহাতে না হয়। তাই সবাই কে লেখা পরা করিয়ে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছেন। কিন্তু কেও কন্টিনিও করতে পারেনি। তখন বাবার শেষ ভরসা ছিলাম আমি। তাই হাজারও কস্ট সহ্য করে আমাকে পরিয়েছেন। আমিও বাবার ভরসা হয়ে লেগে ছিলাম স্বপ্ন দেখেছিলাম বাবার স্বপ্ন পূরন করার। কিন্তু তা আর হলো কই। এরি মাঝে প্রেম ও অনেক কাঠ খর পুরিয়ে সেই মানুষ টার সাথেই বিয়ে। সেখানেও বাদ সাদছিল পারিবারিক অবস্থা। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ায় সেখানেও ভালোবাসার মানুষ টিকে অনেক কস্ট করতে হয়েছে আমাকে পেতে। অনেক কস্টে সে তার পরিবার কে রাজি করিয়ে আমাকে তার করে নিয়েছে। আমার বাবা মা ও ছেলেপক্ষের আবদার রাখতে তাদের সবটুকু দিয়ে ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিলেন। যেন মেয়েকে কেও খুটা না দিতে পারে। সংসার জীবনে এসে শুরু হলো আরেক জীবন যুদ্ধ। একদিকে ২ জন ই স্টুডেন্ট তারওপর ওর কোন চাকরি নেই। কিন্তু এভাবে কি চলা যায়। শশুর শাশুরি ছিল পাশে সব খরচ তারাই দিত কিন্তু লেখাপড়ার প্রয়োজন এর বাইরেও একজন মানুষের কিন্তু বক্তিগত কিছু খরচ থাকেই। আমার স্বামী একজন সৎ মানুষ। বাবার থেকে কোনদিন এক টাকাও চেয়ে নেয়ার মানসিকতা তার কোনদিন ছিল না। কোন প্রয়োজন এ বাবা যদি টাকা দিত সেখান থেকে একটি টাকাও যদি ঘুরে আসত সে এক টাকাই সে ফিরিয়ে দিত বাবাকে আমি নিজে দেখেছি তার সততা। অনেক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু সুন্নতি জীবন যাপন করায় কোথাও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি। সবখানেই সবাই স্মার্ট এমপ্লই খুজে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? তাই বিয়ের মাস ছয়েক পর নিজের মামার বিজনেস এ কাজে লাগেন। সেখানে কাজ শেখা শুরু করেন। প্রথম বছর সে কাজ শিখেছে ও খুব তারাতাড়ি কাজ শিখে ফেলেছে, নিজের সততা দিয়ে মন জয় করেছে সবার। তখন আলহামদুলিল্লাহ তার মোটামোটি ভালোই ইনকাম হওয়া শুরু হলো। স্বামীর কাজ না থাকায় অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়েছিল সংসারে। সেগুলো আর নাই বলি। এরি মাঝে ২০১৯ এ আমার একমাত্র ছেলে আসে আমার কোল জুরে। ছেলের জন্ম শশুরের অসুস্থতা সবটাই একসাথে শুরু। হসপিটালের নিচের তলায় আমি উপরের তলায় শশুর। সবটাই আমার স্বামী একা হাতে সামলেছে সমস্ত খরচ তার ওপর। আমার মা ও সহযোগিতা করেছে। হসপিটাল এ ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার মা ও বোনের যুদ্ধ শুরু। আমার জন্য তাদের এ কস্টের দাম কোনদিন শোধরাবার নয়। মা ও বোন দিন রাত সেবা করেছে আমার। মা হওয়ার পরবর্তী ৬ মাস ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই ছিলাম। শশুর বাড়িতে আমাকে আমার ছেলেকে আগলাবার মত কেও ছিল না। তাই। ততদিন সব খরচ আমার বাবা মা ই বহন করেছে। আমার ছোট খাট একটা সঞ্চয় ছিল একটা ট্রেনিং করে ৫০,০০০ টাকা পেয়েছিলাম সেটাই মা বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম কি করব মা বাবার অবস্থাটাও ত দেখতে হবে। আমাকে সুখি করতে গিয়েই তো কতকিছু করেছে তারা। এভাবেই চলছিল জীবন যুদ্ধ। মা বাবা সারাজীবন আমায় শুধু দিয়েই গেল বিনিময়ে তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ পেলাম না। বাবার স্বপ্নটাও পূরন করতে পারলাম না।
♦️♦️আমার উদ্যােক্তা হয়ে উঠার গল্প ♦️♦️
যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন বাবার সপ্নটা আমায় তারা করে বেরায়। বাবার স্বপ্ন আমি পূরন করতে পারিনি। কিন্তু কিভাবে করব? নিজের কোন পুজি নেই। কারোর ভরসা নেই৷। তারওপর ছেলেও ছোট। এ অবস্থায় বাইরে গিয়ে ত কিছু করা সম্ভব নয়। স্কুল লাইফ থেকেই অনলাইন এ কেনাকাটা দেখতাম। সেখানে কাজের সুযোগ এর ব্যপারে দেখতাম কিন্তু চেস্টা করা হয়নি কখনও। মোবাইল ও ছিল না নিজের। এইচ এস সি পাশ করার পর বৃত্তির টাকায় একটা ফোন কিনেছিলাম। সেই মেবাইল টা বিয়ের পরও আমার কাছে ছিল। যখন একটু ভালোভাবে চলতে থাকল সংসার। তখন টুকটাক কেনাকাটা অনলাইন এ করতাম। কেনাকাটা করতে করতে চারদিকে নারীদের এত উন্নতি দেখে মন চাইল নিজেও কিছু করি। সবাই করছে, আমিও পারব৷ সেই থেকে লুকিয়ে রিসেলিং শুরু করি। ২০২২ এর ১৫ ই অক্টোবর নিজেই একটা পেইজ ওপেন করি। যার নাম ছিল Need Shoop. কাজ শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই চোখে পরল প্রিয় ফাউন্ডশন এর একটি পোস্ট। সাথে সাথেই রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলি। ক্লাসে যুক্ত হই। কিছু দিন যাওয়ার পর ভাবলাম বিজনেস টা ত দুই একদিনের জন্য নয়। দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা আমাকে করতে হবে। তাই লুকোচুরি থেকে বেরিয়ে এসে মুখ ফুটে বললাম আমি কিছু করতে চাই। ও কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম। কিন্তু কোন সাপোর্ট নেই কারোর। তারপরও হতাশ না হয়ে লেগে আছি। এখনও পুরোপুরি কোন সাপোর্ট আমি পাইনি আমার পরিবার থেকে। তবে মা বাবার সাপোর্ট ছিল সবসময়। মা আমাকে ১০,০০০ টাকাও দিয়েছিল প্রডাক্ট স্টক করার জন্য। সেই দিয়েই শুরু। আগে কেও জানত না কিন্তু এখন অনেকেই জানে। যদিও এখনও আহামরি কোন সেল আসে না তবুও লেগে আছি । এরি মাঝে আমার আগের আইডিটা লক হয়ে যায়৷ পেইজের কার্যক্রম ও বন্ধ হয়ে যায়। আবারও নতুন আইডি ওপেন করলাম নতুন পেইজ এ কাজ শুরু করলাম। সেখানে নিজেকে পরিচিত করছি আস্তে আস্তে। নিজেকে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে সফল উদ্যােক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছি প্রতিদিন। স্বপ্ন দেখছি বাবার স্বপ্ন পূরন করার।
❤️❤️ এই ফাউন্ডেশন কি দিয়েছে ❤️❤️
এই ফাউন্ডেশন যা দিয়েছে তা আমি বলে শেষ করতে পারব না। সর্বপ্রথমে বলতে পারি আমি একজন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা পাচ্ছি প্রতিদিন। পেয়েছি নিজের পরিচয়, পেয়েছি একে অপরের প্রতি অবিরাম ভালোবাসা। শিখতে পেরেছি অন্যের কথায় কান না দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস। পেয়েছি জ্ঞানী ও গুনী অভিভাবক। জানতে পেরেছি একটা কাজ করার জন্য আমার জন্ম হয় নি। এখানে পেয়েছি অনেক ভাই ও বোন যাদের নির্দেশনায় একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য ও আমার উদ্যােগ এর জন্য।
♦️♦️♦️জীবনের ভুল♦️♦️♦️
জীবনে একটা ভুলেই বার বার হেরে গিয়েছি আমি , ভুলটা হলো মানুষকে বেশি বিশ্বাস করা। মানুষকে বিশ্বাস করে বার বার ঠকেছি তারপরও এই ভুলটা আজও করে যাই এই একটা ভুল মাঝে মাঝে আমার জীবনকে থামিয়ে দেয়।
কিন্তু ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর আমি থেমে গেলেও স্যারের সেশন গুলে প্রতিনিয়ত আমাকে অনুপ্রানিত করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
👉👉 কি কি নিয়ে কাজ করি 👉👉
আমি কাজ করি দেশিয় সকল পোশাক পন্য, বেডশিট,ও ইউনিক প্রডাক্ট নিয়ে। আমার উদ্দোগ এ নতুন যোগ করেছি খাটি ঘি, মাখন, খাটি নারকেল তেল ও সব ধরনের মধু।
স্যারের একটি কথা আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে সেটা হলো
সাহস করুন
শুরু করুন
লেগে থাকুন
সাফল্য আসবেই
ইনশাআল্লাহ
♦️♦️♦️ব্যবসার বয়স ♦️♦️♦️
আমার ব্যবসার বয়স ৯ মাস। নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে ২০ তম ব্যাচ থেকে নিয়মিত সেশন চর্চা করে যাচ্ছি। আপনারা সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে চাই। তৈরি করতে চাই নিজের বলার মত একটা গল্প।
মানছুরা আক্তার
ব্যাচ - ২০
রেজিষ্ট্রেশন নং- ১০৮৬৯২
ময়মনসিংহ সদর