নওগাঁ জেলার মরিয়ম নেছা শ্যামার জীবনের গল্প।
🧶জীবনের গল্প,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
🌿বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 🌿
🌹আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ🌹
🕋 প্রথমেই শুকরিয়া জানাই মহান আল্লাহ সুবহানুতায়ালার যিনি আমাকে সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাকলুকাত ও আখেরী নবীর উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন এবং এখনো আমাকে সুস্থ ও ভালো রেখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ ৷
💚লাখো ছালাম ও দরূদ আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি যার জন্ম না হলে এই পৃথিবীর সৃষ্টি হতো না। 💚
❤️ কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা জানাই আমার মা বাবার প্রতি যারা আমাকে ভালোবাসা ও মায়া মমতা দিয়ে বড় করে তুলেছেন৷ যাদের ছায়া তলে কাটিয়ে দিয়েছি জীবনের অনেক গুলো বছর৷ বাবা মায়ের ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। শুধু দোয়া করি-রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সগীরা।❤️
🌺 প্রিয় মেন্টর ও নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি৷ স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এতো সুন্দর ভালোবাসার প্লাটফর্ম পেয়েছি৷ পেয়েছি হাজারো ও ভালো মানুষের পরিবার🌺।
আমি মরিয়ম নেছা শ্যামা
🌷শিশুকাল ও শিক্ষা জীবন🌷
রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলা উকিল পাড়া গ্রামে আমার জন্ম।
মা,বাবা,ও ছোটো দুই ভাই সহ পাঁচ জনের পরিবার।
ছোট থেকেই প্রতিকূল পরিবেশের
সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা আমি।
সুখের দেখা মেলেনি বললেই চলে।
🌷আমার হাতে খড়ির সূত্রপাত ছোট ফুপুর হাতে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান ভুলে যাবার নয়।
কারণ প্রথম অক্ষর টা তার কাছেই শেখা। বাকি যেটুকু পড়তে পেরেছি বড় ফুপার কাছে।
আমাকে তার মেয়ের মতো ভালো বাসতেন। তিনি আজ বেঁচে থাকলে আমার আজকের জীবন টা দেখে অনেক কস্ট পেতেন ।
তিনি সব সময় তার জামায় / মানে আমার স্বামীর হাত ধরে বলতেন, আমার এই মেয়েটাকে কখনোও কষ্ট দিওনা।
তবে আজকের উদ্যোক্তা হওয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশিও হতেন তিনিই। জীবনের এতো কঠিন সময় পার করেও আজ আমি মজবুত থাকতে চেষ্টা করছি এটা দেখে।
🌷প্রাইমারি ছেড়ে হাই স্কুল জীবন শুরু হলো। তখন বড় ফুপার বাসা ছেড়ে নিজ বাড়িতে থাকছি, কারণ আমি বড় ফুপুর / ফুপার কাছেই থাকতাম।
বড়ো হয়ে গেছি তাই বাবা নিয়ে চলে এলো নিজের বাড়ি। তখন পড়াশুনা করতে অনেকটাই সমস্যা হচ্ছিলো। কেননা আমার লেখা পড়া করার জন্য আমার মা,বাবার চেয়েও তার চিন্তা ছিল বেশি।
💠আমাকে ভালো স্কুলে ( নওগাঁ সরকারি গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি করাবেন তার ইচ্ছে ছিলো। আমি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম বলে তার চেষ্টা ছিলো অপরিসীম। আমি তার কাছে চির ঋণী।
💠 মা, চাচি দের দেখে, দেখে শখের বসে হাতে তুলে নিয়েছিলাম সুঁই-সুতোর কাজ ছোট বেলাতেই।
তাতে উৎসাহ দিয়েছিলো রাজশাহীর এক আন্টি। তার ইচ্ছে/ উৎসাহ তেই শুরু হয় হস্ত শিল্প আগ্রহটা।
তিনি আমার মেজো চাচার বাসায় ভাড়া থাকতেন। এখনো তিনি আমার মা হয়ে আমার পাশে আছেন। এখনো তিনি আমাকে সেই ছোট্ট বেলার মতোই আমার কাজে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।
💠 আচরণে ছিলাম শান্ত, লাজুক। অল্পতেই খুশি থেকেছি সব সময়। মনে লোভ, লালসা ছিলোনা এখনো নেই। কারো দুঃখ, কষ্ট আমায় ভিষণভাবে মর্মাহত করে। খুবই সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলি । আর যাকেই বিশ্বাস করি বিনিময়ে তার কাছেই উপহার হিসেবে পেয়ে থাকি আঘাত। লোকমুখে শুনেছি, যাকে বুক দিয়ে ভালোবাসা দিবা, সে তোমাকে পিঠ দেখিয়ে চলে যাবে। ঠিক সেটাই হয়ে থাকে আমার সাথে সর্বসময়।
🌷দ্বিতীয় জীবন🌷:
অষ্টম শ্রেণিতে উঠতেই - হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যায় অল্প বয়সে।
বাবা রাজি ছিলোনা এই বিয়েতে। মায়ের চেষ্টা এবং আত্মীয়-স্বজনরা সবাই মিলে বিয়ে দিয়ে দেয় ফুপাতো ভাই এর বন্ধুর সাথে। মাশাআল্লাহ পাত্র হিসেবে সে যেমন অসাধারণ, দেখতেও তেমনই সুদর্শন। বাকিটা ইতিহাস।
💠 শ্বশুর মশাই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। প্রথম বার আমাকে দেখতে এসে বলেছিলেন তুমি আমার মেয়ের মতো আমার স্কুলে তোমাকে ভর্তি করে দিবো। পড়াশোনা চালিয়ে যাও।
কিন্তু আমার তিনি, উনি, সে এতে আপত্তি জানালেন । বললেন চিঠি লিখতে পারলেই হবে। আর পড়াশুনা করে কাজ নাই। আমি ভাবি সেই আমার সবকিছু। তাকে খুশি করার জন্য সবকিছু করতে পারতাম। তাই সে যা বলে তাই শুনতে হবে। শুনে এসেছি সর্বসময়। তার অবাধ্য কখনও হইনি।
🌷 শ্বশুরের দেওয়া কথা মতো স্কুলে ভর্তি হতে পারলাম না। আমার প্রাণপ্রিয় স্বামী আপত্তি করলেন । আমার সব কাজে খুত/ ভুল ধরতে থাকলেন। চুন থেকে পান খসলেই কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করতেন। আমি এসব আমার ভাগ্য/ নিয়তি বলে মেনে নিয়েছি। তাছাড়া আমি একটু বেশিই স্বামী বলতে অন্ধ ছিলাম । এর জন্য অনেক এর কাছে অনেক রকম কথাও শুনতে হয়েছে। স্বামী জীবনের বড় সম্পদ এটাই শিখেছি তার কাছে, ছোটবেলা থেকেই। বয়সে অনেক ছোটো ছিলাম, ভয়ে ভয়ে থেকেছি সবসময়। তাই তার কথায় কখনো মন খারাপ না করে বরং সব সময় তার মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করেছি আরো ভালোবেসে সংসারটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।
🌷বিয়ের পরদিন থেকে আমার কঠিন জীবন পার করতে হয়েছে। এক বছর যেতে না যেতেই ডিপ্রেশন শুরু। দিনের পর দিন চলছে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে।
দু-বছর যেতেই কোল জুড়ে এলো আমার ছেলে সন্তান। আমার পা বাঁধা পড়ে গেলো আরেক শিকলে।
কিছু ভাবতে গেলে তার কথা আগে ভাবতে হয়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। শুধু মাত্র সন্তানের মুখ চেয়ে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে চলেছি। রাতের পর রাত জেগে শুধু কেঁদেছি। আমার কান্নার শব্দ কারোরই কানে কখনও পৌঁছাতে দেইনি। শুধু মাত্র আমার আল্লাহ্ তায়ালা সাক্ষী।
🌷ছেলের ছয় বছর পরে আরও
একটা মেয়েও এলো কোল জুড়ে।
বাহ দারুণ তোহ!" কি সুখী সংসার আমার। সবার মুখে মুখে এখন অবধি শুনেই চলছি।
এটা কেউই বুঝতে পারেনা আমার বুক ভরে আছে কতটা জ্বালা,যন্ত্রণা। প্রতিটা খন আমাকে তুষের আগুনে পুড়ে মারা হয়েছে । তিলে তিলে মরছি আমি। আমি কেমন আছি তা আমিই ভালো জানি। মুখ ভরা হাসি রেখেছি তবুও। মনের দুঃখ প্রকাশ হতে দেইনি কারো কাছে। এটায় ছিলো হয়তোবা আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল। সেটা আজ বুঝতে পারছি।
📌কর্মজীবন শুরু📌
স্বামী সরকারি চাকুরীজীবী, বেতন ভালোই পায়। তবুও আমার প্রতি দায়িত্ব তার নাই বললেই চলে।
তাছাড়া আমিও তার কাছে কখনো কোনো কিছুর জন্য অভিযোগ ও করিনি। কেননা তার ফ্যামিলি মা,ভাই,বোনের দেখার ভার তার উপর ছিলো। সেই জন্য আমি চেষ্টা করি নিজে থেকে নিজের সংসার গুছাতে। তার কোনো সাহায্য ছাড়া।
নিজের হাত খরচ এবং এক্সট্রা খরচ করতে শুরু করলাম কর্মজীবন।
ছোটবেলায় শখের বসে শেখা হস্তশিল্প নিয়েই দুই হাজার সাত সাল- ঘরে বসে আবারও শুরু করলাম কাজ।।
প্রথমেই টেইলারিংয়ের কাজ।
শুরুটা হয়ে ছিলো ঠিক এভাবে!!
💠 একটা ছোট্ট বাচ্চার রেডিমেড ফ্রক,,,ডিজাইন টা সুন্দর। সেই ফ্রক কপি করে বড়ো করে বানিয়ে দিলাম ( ইমার ) জন্য। মেয়ের স্কুলের সবাই ভাবিরা খুব পছন্দ করে ফ্রক টা। ৬ মাসের বাচ্চার একটা ফ্রক দেখে ৪ বছরের মেয়ের ফ্রক বানানোর পরে সবাই প্রসংশা শুরু করে দিলো।
ঠিক একি জামা,একি রং-এর একি ডিজাইন এর একে একে ৫ টা বানিয়ে দিলাম। আমার মেয়েকেও একটা দিলাম। আমার মেয়ের খুবই পছন্দের একটা জামা ছিলো সেটা।
মূলত এখানে থেকেই প্রথম শুরু আমার পথচলা।
আমার উদ্দোক্তা হাওয়ার গল্প।
🌷এখানে একজন এর কথা না বললেই নয় ( ইমার মা ) ভাবি।। অসংখ্য ধন্যবাদ সেই ভাবিকে।আমাকে সেই সময় যথেষ্ট সাপোর্ট করেছিলেন।
ভাবি আমার কাছে তার মেয়ের জন্য প্রথম জামা বানানোর পর থেকে থ্রি পিচ, মেয়ের ফ্রক, টুকটাক বিভিন্ন কিছু বানিয়ে নিতে থাকেন।
একদিন তিনিই বলে বসলেন।
এই ভাবি?? আপনি এতো কিছু কাজ জানেন।
তাহলে অল্প কিছু পুঁজি দিয়ে কাজ শুরু করেন।
আপনি তো অনেক কাজ জানেন। আমার কাছে তো কোনো রকম পুঁজি নাই ভাই। সে বলে উঠলো আমি দিবো। চলেন মার্কেটে আপনার কি লাগে কিনে নেন।পরে টাকা আমাকে পরিশোধ করে দিয়েন। বিসমিল্লাহ করে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করেছিলাম।
🌷প্রথম পুঁজি 🌹
মাত্র ৩ হাজার টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢাকা মিরপুর ১১ নং বাজার থেকে পাইকারীতে নিয়ে এলাম। শুরু হলো পুঁথির ব্যাগ,বেতের ব্যাগ,বিভিন্ন ডিজাইন এর।সাথে পুঁথি দিয়ে সবজির আইটেম, ফলের আইটেম, ফুলদানি, টিসুবক্স, ফুল, ফলের ঝুড়ি,ইত্যাদি হস্তশিল্পের কাজ ।
সেই সাথে টেইলারিং ও
পাশাপাশি ঘরে বসেই ট্রেইনিং করানো। এর পর থেকে নানান রকম হাতের কাজ করতে থাকি এবং শেখাতে থাকি।
এবং যে যা কাজ শিখছিলো সেই মাল গুলো আমার কাছে থেকেই কিনে নিয়ে কাজ শিখেছে। আলহামদুলিল্লাহ অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেই ভাবিকে তার ৩ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম। সত্যিই তার অবদান ও কখনোও ভুলে যাবার নয়। আমি সে ভাবির কাছে চিরো রিনি।
যেকোনো কাজ শেখার আগ্রহ বেশি। আমি নতুন কিছু জানতে শিখতে পছন্দ করি।
শুনেছি শেখার, জানার জন্য নাকি কোনো বয়স লাগেনা।
তাই এখনও সেটাকে ধরে রেখেছি।।
🌹উপার্জন 🌹
২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভালো আয়ের মধ্যে ছিলাম। ৪ টা ডিপিএস , ছেলে, মেয়ে এক্সট্রা খরচ, ছেলের প্রাইভেট খরচ, নিজের হাত খরচ আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলছিলো। ২০১৪ শুরুতেই ডিপ্রেশনের কারণে ঢাকা সি এম এইচ ভর্তি করা হলো আমাকে। রাত দেরটায় অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে যায়, শুরু হলো সাইক্রেটিক ট্রিটমেন্ট। নিয়মিত মেডিসিন এর উপর থাকা।
💠ডিপ্রেশন 💠
২০১৬ সাল নেমে এলো জীবনে তুমুল ঝর। কঠিন ডিপ্রেশনে ভুগছি,দিনের পরে দিন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পথে।
না পারছিলাম কাওকে বলতে। না পারছিলাম সহ্য করতে।
শুধু মাথায় ছিলো আর বেঁচে থেকে কি হবে?
মরে যাওয়ায় শ্রেয়। ভয়ংকর দিন পার করলাম সেই সময়।
নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি টানা ৭ মাস।
এক সময় ভেবে নিলাম আল্লাহ যা করে ভালোই করে। এখন আমাকে সুস্থ থাকতে হবে আমার বাচ্চাদের জন্য।।
কিন্তু কে জানতো সামনে আমাকে আরও বড়ো কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। দিনে দিনে আমার জীবনে কালো মেঘ ধেয়ে আসছে। আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।
আমার সংসার থেমে গেছে আরও আগেই তাও আমি টের পাইনি। শেষ হয়ে গেছে সবকিছু অনেক আগেই আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।
নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে যাই, কতটা অপদার্থ আমি। আমার জীবনে কত কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে অথচ আমিই জানতে পারলাম না???
অতঃপর সব কিছু হারিয়ে বুঝতে পারছি। বিশ্বাস করা ভালো তবে অন্ধবিশ্বাস করা উচিত না। সে যেই হউক না কেনো।
💠 অতিরিক্ত মানসিক টর্চার আর নিতে পারছিলাম না।
২০/১০/২০১৮ তে ব্রেইন স্ট্রোক করি।
আমার সকল কাজে বাধা হয়ে দারায় আমার এই অসুস্থতা। তার জন্য সকল কাজ ও সেলাই অফ করে দিলাম।
অতঃপর যখন ২০২০ সারাবিশ্বে করোনা এসে হানা দেয়।
সেই করুন মুহুর্তে আমার অবস্থা আরো করুণ হয়ে যায়।
নিজেকে শক্ত করে ভেবে নেই এবার এমন কিছু একটা করতে হবে। যেই কাজ আমাকে সামনের চলার পথে এগুতে শক্তি যোগাবে।
এভাবে ঘরে বসে থাকলে চলবেনা।আমি কাজ করতে চাই তাদের নিয়ে। যারা ঘরে বসেই হালাল ইনকাম করতে পারে। কারোরই উপর বোঝা না হয়ে নিজে কিছু একটা করতে পারে।
🌷হস্ত শিল্পের দক্ষতা🌷
এটাই এই মুহুর্তে একমাত্র ঘুরে দাড়াবার হাতিয়ার।
এই করুন মুহুর্তে আমার মেয়েটা আমাকে উৎসাহ দেয়।আমি পারবো বলে বিশ্বাস স্থাপন করে আমার মধ্যে।
কিছু টাকা ম্যানেজ করে জুলাই -দুই হাজার বিশ ইং থেকে হাতের কাজের জামা নিয়ে কাজ শুরু করি অনলাইনে। তবে এখানেও প্রথমে আসে হতাশা, বাধা। তবুও হাল না ছেড়ে চেষ্টা করে যাই অবিরাম।
🌷কিছুদিন পরে এক ছোট ভাই এরসাথে পরিচয় হয়।
তার মাধ্যমে একটা প্লাটফর্ম এর সন্ধান পাই।"Global company ,,
জয়েন করে ফেললাম ।
স্বপ্ন যেনো দুচোখে আমার জ্বলজ্বল করে ভাসছে। আমার একটা আইডেন্টিটি পেয়েছি।এখানে থেকেই আমার সব আশা পূরণ হবে হয়তোবা।
তবে মেয়েদের পথচলা এত সহজ নয়।প্রতি নিয়ত প্রতিটা মুহুর্তে আমাকে টর্চার সহ্য করতে হচ্ছে।কিছু করার আশায় উদ্যোগ নেওয়ায়। আমি যেনো মহাপাপ করে ফেলেছি।
আর এই উদ্যোক্তা হতে এসে হাজারও অপমান সইতে হচ্ছে। তবুও আমি মজবুত আছি। আমি থেমে নেই আর না আছে আমার থামার ইচ্ছে।
আমি ভাঙবো তবু মচকাবো না কখনো।
🪠জীবনে আসা টাইফুন🪠
বজরাগী স্বামী, ঘর সংসারের ঠিকঠাক খবর না নিলেও,নিজে থেকে কিছু বাড়তি আয় করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মাথার উপর একটা ছাদ ছিল, একটা পরিচিতি ছিল আমি বিবাহিতা, স্বামী সন্তান আছে । দিন শেষে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাকে অনেক ভালবেসে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টায় ছিলাম। কিছুতেই এটা ভাঙতে হবে ভাবতে পারিনি।
💠আমার প্রাণপ্রিয়, অন্ধবিশ্বাস করা স্বামী যে তার বাল্য প্রেমিকার সাথে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে পুনরায় যোগাযোগ চালিয়ে এসেছে ।
২০১৫ সালে তাকে বিয়ে করে সুখের সংসার করে চলেছে। এই সব কিছু আমার অজানা।আমি তাকে সামান্য তমও সন্দেহ কখনও করিনি।
সব কিছু জানার পরে-ও অনেকে চেষ্টা করছি। বাচ্চাদের কথা ভেবে। এমনকি তাঁদের বাবার এসব কথা গোপন রেখেছি তাদের থেকে। এবং সমস্ত প্রিয় স্বজন দের কাছে।তার সম্মান টা বজায় রাখতে।
কিন্তু অবশেষে নিজের জীবন নিয়েই টানাটানি। নিজের জীবন টাকে বাঁচানো ফরজ হয়ে গিয়েছিলো শেষ পর্যন্ত। বহুবার, সব রকম চেস্টায় অসফল হয়েছি সুইসাইডের।
💠 তাই অবশেষে আমি আমার জীবনের চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। তাই মনস্থির করে নিলাম। আর আমি মরবো না। আমি মরলে কারোরই কিছু আসে যায় না। বৃথাই কেনো আমার জীবন দিবো??
জীবন বাঁচাতে বেরিয়ে আসতে হয়েছে তার ঘর ছেড়ে।৷
এ ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলো না।
সত্যিই বলছি,,,।। আমার কিছুই করার ছিলোনা। তার অসহ্য টর্চার আর নিতে পারছিলাম না। মাথায় শুধু একটা ভাবনা আমাকে বাঁচতে হবে যেকোনো উপায়ে। এবং বাঁচার মতো বাঁচতে হবে। দেখিয়ে দিতে হবে। আমি ফেলনা না, কারোরই হাতের পুতুল না। যে আমাকে ইচ্ছে মতো নাচাবে?? অনেক তো নাচলে। এবার আমি আমার মতো করে বাঁচবো। নিজেকে নিয়ে ভাবতে শিখে গেলাম।
তাই মুক্ত করে দিয়েছি তাঁকে।
যিনি আমার কাছে মুক্তি চেয়েছে, সরাসরি নয় অত্যাচার,আর শত টর্চার এর মাধ্যমে।
একেবারেই শুন্য হাতে শুধু বেরিয়ে এসেছি। নিজের হাতে যত্নে গরা ঘরটাকে ছেড়ে। মাঝে অনেক, অনেক ভয়ানক দিন পার করছি। আমার পাশে কেউই নাই, আমাকে সান্তনা দেবার মতো। আমি চাইওনা কারো মিথ্যা সহানুভূতি।। তাই তো কারো উপর নির্ভর না করে। প্রতি নিয়তয় নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছি এখন পর্যন্ত।।
💠ভালো থাকুক আমার প্রিয় মানুষ গুলো। আমিই না হয় ঝরে পরলাম ঝরে যাওয়া মুকুলের মতো💠
💠 ২০২০ এ নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যোগদান করি । প্রথম প্রথম কিছু বুঝতামনা। পরে এক আপুর কথা মতো রেজিস্ট্রেশন করি। তারপর থেকে প্রতিটি সেশন চর্চায় মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করেছি ।১২ তম ব্যাচ থেকে আজ ১৯ তম ব্যাচে আমার শিক্ষা গ্রহণ চলছে। প্রিয় মেন্টরের দেওয়া প্রতিটি সেশন আমি অন্তরে ধারণ করেছি এবং আমার বাস্তব জীবনে প্রয়োগের চেষ্টা করছি । হাঁটছি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে।আমি থেমে নেই।আর না আছে থামার ইচ্ছে।
আমি হাজার না হোক শত। শত না হোক একজনের উদাহরণ হবো ইনশাআল্লাহ। এই আশার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রতিটি মুহুর্ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছি।
💠এগিয়ে যাওয়ার গোপন সুত্র হলো শুরু করা💠
শুরু করেছি সামনের পথ চলা অনেক বাকী।এ জীবনের যেনো সকল কাজে সফল হতে পারি অন্য দেরকেও সাহায্য করতে পারি। এই আমার মূল উদ্দেশ্য।এবং সম্মানএর সহিত বাঁচতে পারি।
আমি সফলতা অর্জন করতে চাই তাদের জন্য, যারা আমাকে অবহেলার চোখে দেখেছিলো।এবং
আমি সফল হতে চাই তাদের জন্য, যারা আমাকে প্রতি নিয়োতো সাপোর্ট করে এসেছে। আমার ছেলে, মেয়ে আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে। এখন অব্দি দিচ্ছে। তাদের জন্যই আমি আজকের নারী উদ্যোক্তা। সব কিছু হারিয়ে একবারে জিরো থেকে আবার শুরু করেছি।
একেবারেই শুণ্য, খালি হাতে।
যে কাজ এক দিন সখের বসে করেছি। পরে তা প্রয়োজন হয়ে দারিয়েছে। আর এখন এসে তা স্বপ্নে পরিনত হয়ে গেছে।আমার কাজই আমার সামনের পথ চলার স্বপ্ন।
🌹💠ফাউন্ডেশন থেকে পাওয়া💠🌹
ভালো মানুষের পরিবার, কিছু সাদা মনের ভাই, বোন পেয়েছি মিরপুর মডেল জোন থেকে।
যারা প্রতি নিয়ত পাসে আছেন সর্ব সময়।
অনেক এর কাছেই কৃতজ্ঞ আমি ।
যেকোনো বিষয় সাপোর্ট পেয়ে থাকি তাদের কাছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ দিতে চাই আমি তাদের কে।
এবং অসংখ্য ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা
জানাই প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যার কে।
তার কঠোর পরিশ্রম দিয়েছেন আমাদেরকে এ-ই বিশাল প্লাটফর্ম। যেখানে এসে আমরা বাঁচার আশ্রয় পেয়েছি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ও ঘুরে দারানোর সুযোগ পেয়েছি।
🌹প্রিয় স্যার এর উক্তি 🌹
প্রথম মনে গেঁথেছিলাম,
🔹 বৃষ্টি সবার জন্য পরে কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।।
🔹 স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই।
আমি আমার স্বপ্নকে যেনো বাস্তবে পরিণত করতে পারি সেই প্রচেষ্টায় সর্বদা। সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।।
স্যার বলেন কারোরই জন্ম শুধু একটা কাজ এর জন্য নয়।একটা কাজ নিয়ে বসে থাকলে চলবেনা।
তাই একটা কাজ অথবা একটা পণ্য নিয়ে বসে থাকলে চলবেনা।
এজন্য কাজ করছি কয়েক রকম পণ্য নিয়ে।
এবং কাজ করছি সিজিন্যাল ফল আম নিয়ে।।আলহামদুলিল্লাহ সারা পেয়েছি ভালো।।
🌹অনুভূতি প্রকাশ 🌹
গত ৩/৬/২০২৩ চাপায় হয়ে গেছে রাজশাহী বিভাগীয় আম মেলা।
যেখানে আমি উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করছি, ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ এ-ই মেলা থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।
পেয়েছি চাপায়ের মানুষের ভালোবাসা, অনেক পরিচিতি।
পেয়েছি নিজের জেলা নওগাঁ থেকে আসা সকল ভাই দের ভালোবাসা। একি সাথে ব্যবসায়িক পরিচিতি। যা আমাকে আমার সামনের পথ চলতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
এই আমার জীবনের সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা গল্প
🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে- ৯৪৯
তারিখ - ২৬/০৬/২০২৩ইং
আমি
Marium Nesha Shyama
🔹ঢাকা কান্টনমেন্ট, মিরপুর ১৪
🔹মিরপুর মডেল জোন ভাষান টেক থানা
🔹নিজ জেলা নওগাঁ সদর নওগাঁ
🔹রেজিষ্ট্রেশন ৪৭৮০৪
🔹 ব্যাচ নং ঃ ১২