আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার জীবনের কিছু মর্মস্পর্সী সুখ দুঃখের গল্প।
আমার জীবনের গল্প,
শুরু করছি পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ তা'আলার নামে।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
স্বপ্ন যখন বড় হবার।
আমার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর,তবে আমার ছোট থেকে বড় হওয়া পুরোটাই ঢাকায়।আমার জন্মের ৮-৯ বছর আগে আমার বাবা ঢাকায় বাড়ি করেন। সেক্ষেত্রে আমার জন্মস্থান ঢাকা।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার জীবনের কিছু মর্মস্পর্সী সুখ দুঃখের গল্প। জীবন মানেই অনেক গুলো গল্পের সমাহার। কিছু গল্প বড় হয়,আবার কিছু গল্প হয় ছোট। এই নিয়ে আমাদের জীবন। আমার সারা জীবনের বৃহৎ গল্পের কিছু অংশ আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। সবার কাছে অনুরোধ দয়া করে একটু পড়বেন।
আমার জন্ম একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে।আমার বাবা ছিলেন একজন মধ্যম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা।পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার বিজনেস করতেন। ২০০৯ সালে যখন শেয়ার বাজারে ধস নামল,তখন আমার বাবার প্রায় সব টাকা লোকসান হয়।কিন্তু বাবা কখনো টাকার অংকটা আমাদের কাছে প্রকাশ করেন নাই। তারপর থেকে আমরা বাবাকে আর শেয়ার ব্যবসা করতে দেইনি।আমরা বাবা-মা ও আমরা ৫ ভাই সহ আমাদের ৭ জনের পরিবার।আলহামদুলিল্লাহ আমরা ৫ ভাই ই ব্যবসায়ী।ভাইদের মধ্যে আমি সবার ছোট।আলহামদুলিল্লাহ ছোট থেকে এ যাবত কাল পর্যন্ত কখনো খাবারের কষ্ট করিনি। বাবা-মায়ের কাছে যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। আমার বাবা ব্যক্তিগতভাবে কখনো অভাবে থাকলেও আমাদেরকে তা কখনোই বুঝতে দেন নি।"বাবা মা অমূল্য সম্পদ"বাবা মায়ের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না।
আমার পড়াশোনাঃ ২০০৮ সালে ৫ম শ্রেণী পাশ করি।
তারপর শুরু হয় আমার মাদ্রাসার পড়াশোনা,মাদ্রাসায় হেফজ শেষ করি।কিন্তু মাওলানা শেষ পর্যন্ত পড়া হয়নি।৫ বছর যাবত ভাইয়ার সাথে কাপড়ের ব্যবসায় আছি।
স্বপ্ন যখন দেখা শুরু করি তখন আমার বয়স ১২। প্রথমত আমার স্বপ্নটা যেটা ছিল,সেটা হচ্ছে আমি বাবা-মায়ের টাকায় কখনো ফুটানি করব না,নিজের জীবনের পরিচালনাটা নিজের টাকায়ই করব। তখন আমার স্বপ্নটা ছিল এমন যে, আমি একটা গুপ্তধন পাবো আর সেই গুপ্তধনের মাধ্যমে আমি অনেক ধনী হব,এবং আমি সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করবো।এ স্বপ্নটা আমার ছিল ১২ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত।কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম,আসলে এভাবে কোন স্বপ্ন পূরণ হয় না। কারণ হাদিসের মধ্যে আছে যে,আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করতে হবে, এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে রিজিক আহরণ করতে হবে।
২০ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দেই টাকা কামানোর নেশায়।বাবা মাকে না জানিয়ে চুপে চুপে গার্মেন্টসে ছোট চাকরি নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম।যেটাকে আমাদের সমাজে অনেক ছোট করে দেখা হয়।কিন্তু গার্মেন্টসে ছোট চাকরি নিতে গিয়েও দেখি যোগ্যতা লাগে। মেশিন চালানো জানা লাগবে।মেশিন চালানো শেখার জন্য একটা ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে গেলাম। তারা টাকা নিল ঠিকই কিন্তু কাজ শেখালো না😭।২৫০০ টাকা দিয়েছিলাম সেখানে।এর মধ্যে বাবা মায়ের কাছে ধরা খেয়ে যাই যে আমি গার্মেন্টসে ঢুকার জন্য চেষ্টা করতেছি।তারপর থেকে বাসা থেকে আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিল।আর আমাকে অফার করল যদি আমার ভাইয়ার দোকানে কাজ করতে পারি তাহলেই আমি কাজ করবো, অন্যথায় আমাকে পড়াশোনা করতে হবে। ওই চাপে পড়েই আমার টেইলারিং শেখা এবং কাপড়ের বিজনেস শেখা। আলহামদুলিল্লাহ এখন যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে তা দিয়ে একটা ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব।
উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা কখন থেকে মাথায় আসলো ঃ
আসলে উদ্যোক্তা কি জিনিস আমি এটা জানতাম না,আমি উদ্যোক্তা শব্দটা প্রথম শুনি পাঠাও(রাইড শেয়ারিং কোম্পানি)এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম ছালেহ্ হত্যার পর।যখন শুনতে পারলাম ৩৩ বছর বয়সে উনি ৩০০ কোটি টাকার মালিক।তখন আমি বুঝতে পারলাম যে ধনী হওয়ার জন্য বয়সটা মূল ফ্যাক্টর না।মূল বিষয় হচ্ছে পরিশ্রম ও দক্ষতা।
তারপর থেকে একটা ই-কমার্স বিজনেস চালু করার জন্য অনেকটা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।কারন আমার দক্ষতাও ছিল না যোগ্যতাও ছিল না।
তবে অনলাইনে কিছু করার জন্য ঘাটাঘাটি করতাম সব সময়,আর অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও দেখতাম। ঘাটাঘাটি করতে করতে দুই বছর আগে আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটি ভিডিও আমার সামনে আসে।ভিডিওর মধ্যে আমি দেখতে পারলাম যে স্যার বলতেছেন ৯০ দিনের একটি কোর্স আছে, যেটা সম্পূর্ণ ফ্রিতে করানো হয়।ওইটা আমি অনেকদিন পর্যন্ত ট্রাই করলাম যে, এটা কিভাবে করে কোত্থেকে করে কিন্তু আমি ব্যর্থ হলাম খুঁজে পেতে। তারপর ২১ তম ব্যাচের ৪৭ তম দিনে (সম্বাব্য)আমি ভিডিওর নিচে একটা লিংক পাই।ওই লিংকে ক্লিক করার পর আমাকে #নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন# এর ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে গিয়ে আমি আমার কৌতুহলবশত স্টেপ বাই স্টেপ সকল ফরম ফিলাপ করি।তারপর আমি দেখতে পারলাম আমার রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম না তারপর আমার করনীয় কি? আমি কিভাবে সবগুলো কোর্স করতে পারব?আমি সেখানে লাইফ সাপোর্ট টিমকে পেলাম, আমি তাদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেলাম।আমি তাদের কাছ থেকে আমাদের ওয়ারী জোন অ্যাম্বাসেডর @ Md Hazrat Ali ভাইয়ক আমাকে ওয়ারী জোনে এড করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ ওয়রী জোন দায়িত্বশীলরা এবং সকল আজীবন সদস্য ভাই ও আপুরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। কৃতজ্ঞতা ওয়ারী জোনর সকলের প্রতি।
ফাউন্ডেশনের যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমার ভিতরে যে পজেটিভ পরিবর্তন গুলো আসছে -
১.ব্যবসায়ের প্রতি আমার আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
২.নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
৩.মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস তৈরি হয়েছে।
৪.ব্যবসা শুরু করার সাহস তৈরি হয়েছে।
৫.এরাবিয়ান টেইলার্সএন্ড ফেব্রিক্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করে দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
১৯ মে ২০২৩ "কোটি টাকার ম্যাচ মেকিং" এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করি। সেখানে সর্বপ্রথম প্রাণের প্রিয় মেন্টর আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর ও লক্ষ তরুর উদ্যোক্তার সপ্নের কান্ডারী জনাব@Iqbal Bahar Zahid স্যারের সাথে সরাসরি দেখা করার সুযোগ হয়।সেখানে পরিচয় হতে পারি ফাউন্ডেশনের আরও কিছু দায়িত্বশীলদের সাথে, তাদের ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে। সত্যি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন ভালো মানুষ তৈরির কারখানা।।
সেখানে একটা কুইজ প্রতিযোগিতায় আমি অংশ গ্রহন করি। এর মাধ্যমে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ উদ্দীপনা আরো অনেক বেশি বেড়ে যায়। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পর পুরোপুরি ভাবে সিদ্ধান্ত নিই, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের যুক্ত আছি, যুক্ত থাকব ইনশাআল্লাহ। একজন ভালো মানুষ হবো, একজন সফল উদ্যোক্তা না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকব। (ইনশাআল্লাহ)
সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।
🏵️সবার সুস্থতা কামনা করছি,
🏵️সবার উদ্যোক্তা জীবনের সফলতা কামনা করছি,
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার জীবন গল্প এত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে -৯৪৯
তারিখ - ২৬/০৬/২০২৩ ইং
🌻নাম: Md Sadiqul khan
🌻ব্যাচ নং: ২১
🌻রেজিস্ট্রেশন নং: ১১৬২৩৯
🌻 ব্লাড গ্রুপ: A+
🌻নিজ জেলা: শরীয়তপুর
🌻বর্তমান অবস্থান: কদমতলী থানা, ওয়ারী জোন, ঢাকা