জীবনের সাথে চরম যুদ্ধ করে একটু যখন দাঁড়ালাম, ঠিক তখন ২০১৭ সালে একটা জমি কিনতে গিয়ে দালালের চক্করে পরে আবার সমুদয় টাকা হাড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলাম।
🌹❤️ জীবনের গল্প>>>
🕋বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম 🕋
🌹সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম, "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ"!
শুরুতে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া, যিনি আমাকে আাশরাফু মাখলুকাত হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরন করেছেন।
🙏তারপর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমার পিতা-মাতাকে যাদের জন্য পৃথিবীর আলোবাতাস দেখার এবং ভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছে।
🌹🌷তারপর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি অসংখ্য তরুণের স্বপ্নদ্রষ্টা "প্রিয় মেন্টর" "ইকবাল বাহার জাহিদ" ভাইকে, যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর মত বিশাল বড় একটা পরিবার।
একই সাথে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর সকল আজীবন দায়িত্বশীল ও সদস্যদের।
🌱জন্ম এবং শৈশবঃ
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল উনিয়নের দুধল গ্রামে। বাবা গ্রাম্য মাতব্বর ও ব্যবসায়ী মোঃ আজাহার আলী হওলাদার এবং মাতা গৃহিনী রিজিয়া বেগমের কোল জুড়ে ১৯৬৯ সালের ২রা বৈশাখ আমার আগমন। শৈশব এবং কৈশোর সেখানেই কাটে। আমরা ৫ ভাই ও ১ বোন।
🌳পারিবারিক শিক্ষা এবং বেড়ে ওঠাঃ
৬ ভাই বোনের ভীতর আমি দ্বিতীয়। নানা নানীর ১৭ নাতি নাতনির মধ্যে আমি ছিলাম সকলের আদরের।শৈশবটা সকলের ভালোবাসায় খুব আনন্দে কেটেছে।
কিন্ত আমার কৈশোর.....!!!
বাবা ছিলেন ইলেকশন পাগল ও পরোপকারী একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ সমাজসেবক। মা ছিলেন অনেক সরল সোজা ধর্মভীরু ও আদর্শবাদী।
# আমার বাড়ির দরজায় স্কুল। শিক্ষকদের হাতে ব্যাত থাকতো আর আমার ভিতর ভয় কাজ করতো, স্কুলে গেলে শিক্ষকরা মারবেন!! ভয়ে স্কুলে যেতামনা!!
পালিয়ে পালিয়ে থাকতাম! বাবার ভয়ে ঘরে উঠতামনা। বাবা ব্যাবসায়িক কাজে বাহিরে গেলে গোপনে ঘরে উঠে খেয়ে নিতাম। পরে বড় ভাই ও বাবার সাথে যোগ দিলেন। উনিও শাসনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন।
!! একদিন সকালে বড় ভাই আমাকে বকা দিলেন, স্কুলে না গেলে অন্যের বাসায় কামলা খাটতে হবে!!
# আমার ভিতর প্রচন্ড জেদ তৈরী হলো!! দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে গোসল করে উঠে স্কুলের জন্য তৈরী হলাম। শুরু হলো স্কুলে যাওয়া। আর কোনোদিন স্কুল ফাঁকি দেয়নি। ওয়ান টু টেন পর্যন্ত উপস্থিতিতে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছি প্রতি ক্লাসে।# মেধার দিক দিয়ে ওয়ান টু টেন দ্বিতীয় স্থানে ছিলাম। কোনো ক্লাসে তৃতীয় ও প্রথম হতে পারিনি!!
# ফুটবল, ভলিবল, হাডুডু খেলায় ছিলাম এলাকার সেরা। উপজেলার ভিতর সেরা গোল রক্ষক ছিলাম।
স্বপ্ন ছিলো আবাহনী জাতীয় ফুটবল টিম এ খেলবো! আমি আবাহনীর জার্সি পরেই খেলতাম। খেলাধুলা, গান, নাটক, এই নিয়া বাইল্লোকাল থেকে কর্মজীবন কাটিয়েছি অনেক হৈ হুল্লোড় ও আনন্দে।
# স্কুল জীবনের দু:সময় ও দুঃখময় কিছু স্মৃতিকথা :
😭আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি, তখন মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রচন্ড জ্বর ও স্তনের ভিতর অনেক ব্যাথা! সে কি যন্ত্রনা, কি কান্না!! মায়ের ওই সময়ের কান্না এখনো আমাকে কাঁদায়। সারারাত মায়ের শিয়রে থেকে কান্না শুনেছি। মায়ের মাথা টিপে দিয়েছি, পা ম্যাসেজ করেছি, কিন্তু কান্না থামাতে পারিনি।😭
😭 পরেরদিন সকালবেলা বাবা ডাক্তার নিয়ে আসেন। ডাক্তার বললেন মায়ের হাজরের জ্বর হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। শুরু করলাম হাসপাতাল যাবার প্রস্তুতি, কিন্তু ছোট্ট ১ তলা লঞ্চ ছাড়া জেলা শহর হাসপাতালে নেয়ার মতো আর কোনো বাহন ছিলোনা, আর লঞ্চ ছাড়ে সকাল সাড়ে পাঁচটায় । তারমানে পরেরদিনের জন্য অপেক্ষা। চেয়ার এ বসিয়ে ২ জনে ধরে লঞ্চে উঠিয়ে দিলেন, আমি আর বাবা মাকে নিয়ে ভর্তি করালাম শেরে বাংলা হাসপাতাল এ।
ডক্টর আসেন, দেখেন, চলে যান কিন্তু একমাত্র প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো মেডিসিন লেখেন্না । এভাবে আরো ২ দিন গেলো কিন্তু মায়ের শারীরিক কোনো উন্নতি হলোনা। মায়ের সেবা আর রাতে মায়ের কান্নায় না ঘুমানোর কষ্ট আজও ভুলিনি! টেলিগ্রাম করা হলো আমার বড় ভাইকে (Mother admitted in hospital, come sharp ) বলে। তিনি তখন ঢাকা পলিটেকনিক এর ছাত্র। বড় ভাই বরিশাল হসপিটালে গিয়ে মায়ের কি হয়েছে ডক্টরদের কাছে জানতে চাইলে ডক্টররা উত্তর না দিয়ে ভাইয়ের উপর চটে যান। তখন ওনাদের মধ্যে ইংলিশে অনেক কথার কাটাকাটি হয়।
ঐদিন সন্ধ্যার পর মায়ের চিকিৎসার জন্য ডক্টরদের বোর্ড বসে!! শুরু হলো প্রিসক্রিপশন,,,,
Dyrutants, Indiver, Permival etc দিয়ে, এই ঔষধ গুলো তখন বরিশালে দুষ্প্রাপ্প ছিলো।
বড়ভাই মোঃ শহীদুল ইসলাম বরিশাল হসপিটালে থাকলেন আর আমাকে ঢাকায় মিডফোর্ড থেকে ঔষধ নিতে পাঠালেন। আমি তখন ৮-৯ বছরের বালক, ঢাকায় জীবনের প্রথম, বুকভর্তি ভয় ও আরেকদিকে মায়ের আকুতি,,,, সব মিলিয়ে আমাকে ভয়কে জয় করে মায়ের সেবায় নিয়োজিত করলাম। ঢাকায় এসে ঔষধ নিয়ে বরিশাল হসপিটালে পৌঁছলাম।
এভাবে ৯ দিন কাটালাম মায়ের পাশে।
# মাকে নিয়ে গেলাম বাড়ি আর এরপর শুরু হলো আমার আরেক পরীক্ষা!! বরিশালেতো হোটেলে খেয়েছি! কিন্তু বাড়িতে হোটেল নাই! কে রান্না করে দিবে?? এমন কাউকে পাওয়া যায়নি তখন।
🙏নিজ হাতে হলুদ, মরিচ, মসলা শীল পাটায় বেটে রান্না করে নিজ হাতে মাকে খাইয়েছি! স্কুলের লেখাপড়া, মায়ের সেবা করা ও রান্নাঘর সামলানো, একাধারে ২মাস ২০ দিন এভাবে কাটাতে হয়েছে।
😭ওই বছরের শেষের দিকে বাবা প্যারালাইসিস এ আক্রান্ত হয়ে পড়েন আর শুরু হয় জীবনের কঠিন পরীক্ষা!! সংসার চালানোর দায়িত্ব ভার পরে আমার উপর। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর একটা এপ্লিকেশন করে ৫ পিরিয়ডের পর ক্লাস না করে বাজারে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসতাম ও রাত ৯ টা পর্যন্ত বিক্রি করতাম। রাতে বাসায় ফিরে এসে স্কুলের পড়া শেষ করে ঘুমাতাম। এভাবে ক্লাস নাইন পর্যন্ত চলতে থাকলো। আমি যখন নাইন এ পড়ি তখন বড় ভাই একটা কারিগরী প্রতিষ্ঠানে টিচার হিসেবে চাকরী পান ও পরে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হয়! বড় ভাই সংসারের দায়িত্ব নেন!!
# এরপর বাঁধাহীন পড়াশুনা শেষ করে ১৯৯৩ সালে চাকরী শুরু করি।
😭 জীবন যুদ্ধের আরো কিছু স্মৃতি কথা :
# ২০১১ সালে শেয়ার মার্কেটে জীবনের অর্জিত সমুদয় টাকা লোকসান দেই! 😭 ওই সময় আমার ছেলেকে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তি করানোর মতো টাকা হাতে ছিলোনা!! ওয়াইফ এর একটা সর্ণের চুরি বিক্রি করে ছেলেকে রাজউক কলেজের ক্লাস সিক্স এ ভর্তি করাই।
😭জীবনের সাথে চরম যুদ্ধ করে একটু যখন দাঁড়ালাম, ঠিক তখন ২০১৭ সালে একটা জমি কিনতে গিয়ে দালালের চক্করে পরে আবার সমুদয় টাকা হাড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলাম।
🤣এতো দুঃসময়েও আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও মা বাবার দোয়ায় নিজের মনোবল ছিলো অটুট ও আস্থা ছিলো অবিচল।
🌹 কর্ম জীবন : ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত দীর্ঘদিন কর্পোরেট ও মাল্টিনেশনাল জব করেছি। সততা, নিষ্ঠা দিয়ে সব সময় লিডার থেকেছি, কখনো বস হয়নি।
# আবার ছন্দ পতন : Covid 19 er প্রভাবে ৫০% লোক চাকরী হারিয়েছেন! আমি টিকে ছিলাম। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ এ ২০২১ সালে আরো কিছু লোক ছাটাই প্রক্রিয়া শুরু হলে আমি বাদ পরে যাই!!
🌹প্রচন্ড সাহস, নিজের অনেক মনোবল নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার অবিচল চেষ্ঠা রেখেছি সব সময়।🌹
# ২০২২ জানুয়ারি মাস : মিরপুর ১০ এ শোরুম করলাম। চায়না, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের মেশিন বিক্রি শুরু করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছি।
🌹❤️ নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন : ২০ তম ব্যাচের ৮৫তম সেশন এ আমার ওয়াইফ Sathi Sikder, ও Rezaul Karim Reza ভাইয়ের এর মাধ্যমে পারিচিত হই।
#প্ৰিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ ভাই এর ৯০ টি সেশন থেকে অনেক নতুন নতুন তৈথ্য জানতে পেরেছি।
ধন্যবাদ প্রিয় মেন্টকে, প্রিয় ফাউন্ডেশনকে।
🌹 উল্লেখ্য : আমি জন্ম থেকেই একজন সৎ ও ভালো মানুষ। দেশে বিদেশে অনেক ধরনের মাল্টিনেশনাল কালচার এর উপর ট্রেনিং নিয়েছি।
❤️চাকরী করবোনা, চাকরী দেবো ❤️
এই প্রত্যয়ে আমার বিজনেস, Akash Packing Machineries শুরু করেছি।
🌹 আপনাদের ভালোবাসা ও দোয়ায় ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্রই নিজের জীবনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখবো।
🌹❤️ আমার জীবনের গল্প পরে যদি আপনাদের মনে এতটুকু দাগ কেটে থাকে তাহলে ভালোবেসে বেশী বেশী লাইক কমেন্টস করবেন।
ধন্যবাদান্তে :
মোঃ মজিবুর রহমান আকাশ
প্রমোশন টিম মেম্বার ও আজীবন সদস্য।
ব্যাচ :২১
রেজিস্ট্রেশন :১১৩১৩১
জেলা : বরিশাল
বর্তমান ঠিকানা : মিরপুর, ঢাকা
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে -৯৫৪
তারিখ ৩০-০৭-২০২৩