তাই চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করবো না করবো
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম "
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু....
আমার জীবনের গল্প
------------------------------
আশা নয় বিশ্বাস আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের সকলের দোয়ার বরকতে আমিও ভালো আছি।
সর্বপ্রথম মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি তিনি আমাকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) উম্মত হিসেবে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
তারপর কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি আমার মা-বাবাকে যাদের অবদানে আমি দুনিয়ার আলো দেখতে পেয়েছি। অনেক আদর, যত্ন এবং ভালোবাসা দিয়ে তারা আমাকে বড়ো করে তুলেছেন এবং মানুষ করেছেন। আমার সকল আব্দার পূরন করেছেন। আসলে মা বাবার ঋণ কখনোই শোধ করার মতো না। সেই সাধ্যও আমাদের কারো নেই।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যারকে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের জন্য এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম এবং ভালো মানুষের পরিবার গড়ে তুলেছেন। যেখানে আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমি একজন ভালো মানুষ।
যার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই বিশাল পরিবার আমরা পেয়েছি। সময়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক,লক্ষ্য তরুন তরুণীর হ্নদয়ের স্পন্দন ও যার পরিকল্পনা, প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি এই প্লাটফর্ম। যার শিক্ষা বুকে ধারণ করে লক্ষ্য লক্ষ্য শিক্ষিত বেকার তরুণ তরুণীরাও আজ সাহস করে বাস্তব জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প অনায়াসে লিখছে ।"চাকরি করবো না চাকরি দিবো "এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
যিনি আমাদের কে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়তে, দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, এবং বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরনের মহৎ উদ্যোক্তা, তিনি হলেন প্রিয় মেন্টর এবং আমাদের পথ প্রদর্শক জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার। স্যারকে অন্তর থেকে স্যালুট জানাই।
ভালোবাসা রইলো নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের সকল দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গের প্রতি। সকলের সুস্থ্যতা ও দীর্ঘআয়ু কামনা করছি। আশা করি সবাই ধৈর্য্য সহকারে পাশে থাকবেন এবং আমার জীবনের গল্পটা পড়বেন।
নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবতী মনে করি আমি
#নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশনের ২২ তম ব্যাচ থেকে আজীবন গর্বিত সদস্য হিসেবে আছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই আপুকে যে আপু আমাকে ইনভাইট করেছিলো, আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত যে সেই আপুটার নাম আমার মনে নেই । আমি আরও কৃতঞ্জতা জানাচ্ছি Md Omar Faruque Siddique ভাইয়াকে যিনি আমাকে রেজিষ্ট্রেশন থেকে শুরু করে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হতে সহোযোগিতা করেছিলেন।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু না কিছু গল্প থাকে। কারন একেক জনের জীবন একেক রকম। তাই প্রত্যেকের জীবনের গল্পটাও ভিন্ন।
আমার জীবনেও কিছু গল্প আছে যা আমাকে ভেঙে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।
নতুন করে আবার দুনিয়াকে এবং দুনিয়ার মানুষগুলোকে চিনতে শিখিয়েছে।
✍️আমার জন্মঃ আমার নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর, থানা রামগঞ্জ।আমরা চার ভাইবোন। যেহেতু মা বাবার প্রথম সন্তান এবং নাতি নাতনীদের মধ্যেও বড়ো তাই সবার ভীষণ আদরের।তবে আমি ছিলাম ভীষণ চঞ্চল এবং দূরন্ত।
✍️আমার প্রথম ভালোবাসাঃ
আমার আদর্শ আমার প্রথম ভালোবাসা আমার বাবা। আমার বাবার ভীষণ আদরের ছিলাম আমি। বড়ো সন্তান হিসেবে খুব ভালোবাসতেন বাবা আমাকে।বিয়ের পর আমার বাবা ছোটো খাটো একটা চাকরি করতেন ঢাকাতে। আমার মা আমাকে নিয়ে বাড়িতেই থাকতেন। যেহেতু আমার মায়েরও বয়স কম ছিলো তাই বেশিরভাগ সময় আমার নানুর বাড়িতে থাকতেন।আমার যখন দুই কি আড়াই বছর বয়স তখন আমার বড়ো খালা আর খালু বাড়িতে বেড়াতে যান। আমার খালু ছিলো আমার মায়ের আপন জ্যাঠাতো ভাই। আমার খালু আমার মাকে আর আমাকে তাদের সাথে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আমার বাবাকে খবর দেন আমার বাবাও আসে।একদিন আমি ভীষণ কাঁদছিলাম তাই আমার বাবা আমাকে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন তখনই হঠাৎ পা স্লিপ কাটে। বলে রাখি আমার খালারা থাকতেন পাঁচ তলায়। আমি ছিলাম আমার বাবার কোলে, সেদিন যদি বাবা আমাকে ছেড়ে দিতেন তাহলে হয়তো নির্ঘাত মৃত্যু হতো আমার, কিন্তু আমার বাবা আমাকে না ছেড়ে তার বুকের সাথে শক্ত করে ধরে রেখে সমস্ত আঘাত নিজেই সহ্য করেছে। এই হলো বাবা। এরকম আরও কিছু ঘটনা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। বাবারা সব সময় তাদের সন্তানদের বুক দিয়ে আগলে রাখেন তাই তো তারা সন্তানদের কাছে সুপারম্যান। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। আমি ছিলাম বাবা অন্ত প্রাণ।আমার যখন বুঝ হয় সব সময় ভাবতাম আমার বাবা মারা গেলে হয়তো আমিও মারা যাবো। তাই সব সময় বাবার জন্য আল্লাহ কাছে বাবার প্রাণ ভিক্ষা চাইতাম। বাবা ছিলো আমাদের বন্ধুর মতো,, আমাদের চার ভাইবোনকে স্বাধীন ভাবে বড়ো হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ কখনও সুযোগের অসদ্ব্যবহার করি নি।
✍️আমার মা জননীঃ যিনি আমাকে দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণ করা থেকে জন্ম দেওয়া পর্যন্ত কষ্ট ভোগ করেছেন জানি মায়ের ঋণ কখনোও শোধ করার মতো নয়। আমরা আমাদের শরীরের চামড়া দিয়ে যদি জুতাও বানিয়ে দেই তাদেরকে তাও আমাদের মা বাবার ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। তবে আমার বাবার প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো যে আমার মাকে কখনো কষ্ট দেয়নি। আর আমার মাও ৩৮ বছর আমার বাবার সাথে সুখে -দুঃখে আমার বাবার পাশে থেকে সংসার করে গেছেন। কখনো আমার বাবাকে দেখিনি আমার মায়ের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতে কিংবা আমার মাকেও দেখিনি আমার বাবার সাথে কোনো কিছু নিয়ে ঝামেলা করতে। আমার মা বাবাকে দেখে সবাই বলতো সুখি পরিবার। আমিও গর্ব করে বলতে পারি আমার পরিবার সুখি পরিবার।
✍️আমার শৈশব কালঃআমার বাবা ছিলেন গভমেন্ট অফিসার। মা গৃহিনী।আমার জন্মের পরপরই আমার বাবার সরকারি চাকরী হয়,, সেই সুবাদে বাবার পোস্টিং হয় চট্টগ্রামে। যেহেতু সেই সময় গ্রামে লেখা পড়ার খুব একটা সুযোগ সুবিধা ছিলো না তাই সবাই আমার বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিলো আমাদেরকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারন আমার চার বছর পর যখন আমার ভাই দুনিয়ায় এলো এবং আমিও বড়ো হচ্ছি তাই আমার দাদা ভাইও বললো আমাদেরকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার কথা। আমার বয়স যখন ৫ বছর তখন আমার বাবার আমাদেরকে চট্টগ্রাম নিয়ে যান।
আমার শৈশব, কৈশোর বলতে পারেন আমার জীবনের ১৪ টা বসন্ত চট্টগ্রামেই কেটেছে। আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি তখন আমার বোনের জন্ম, তারপর আমার ছোটো ভাই।
আগেই বলেছি আমি ছিলাম ভীষণ চঞ্চল।
ফুটবল, ক্রিকেট,সাত চাড়া, গোল্লাছুট, মাংসচুরি, সাতপাতা, বউছি মানে কোনো খেলা বাদ নেই যে খেলিনি। আম গাছ, জাম গাছ, লিচু গাছ, পেঁয়ারা গাছ কোনো গাছ বাদ নেই যে উঠিনি।বাবার আদর যেমন পেয়েছি শাসনও করেছেন বাবা আমাদেরকে। ধীরে ধীরে সময় যেতে লাগলো বড়ো হলাম যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন থেকেই আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকি। লেখা পড়ার পাশাপাশি গান, কবিতা আবৃত্তি এগুলোও শিখেছিলাম শখ থেকে।বিয়ের পর সব শখ জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিলো।
✍️আমার লেখা পড়ার শুরু-
আমার লেখাপড়ার হাতে খড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া উপজেলার একটা প্রাইমারী স্কুলে শুরু হয়। স্কুলটার নাম ছিলো বাগমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়। চতুর্থ শ্রেনীতে উঠার পর বাবা ভর্তি করেন কর্ণফুলী জুট মিলস কিন্টারগার্ডেনে,, ওখানে ষষ্ঠ শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করি,, তারপর ভর্তি হই পাহাড়তলী থানার অন্তর্গত BITক্যাম্পাস হাই স্কুলে। ৯৮ সালে যখন SSC পাস করি তখন বাবা ভর্তি করেন ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রি কলেজে।
আমার বাবা ১৪ বছর চট্টগ্রামে চাকরি করেন কিন্তু কখনো ট্রান্সফার অর্ডার গ্রহণ করেন নি কারন সরকারি কর্মকর্তাদের ট্রান্সফার গুলো সব সময় পাহাড়ি এলাকায় হতো আর আমাদের লেখপড়ার কথা চিন্তা করেই আমার বাবা ট্রান্সফার অর্ডার ডিনাই করতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ডিনাই করতে পারেন নি। উনাকে ট্রান্সফার করা হয় কাপ্তাইতে। ওখানে ছয়মাস চাকরী করার পর আমার বাবার মেঝো মামার মাধ্যমে ট্রান্সফার চাটখিলে হয়। যেহেতু বাবা ছয় মাস কাপ্তাই চাকরি করতে হয়েছে তখন আমার ছোটো বোন মাত্র ক্লাস টুতে পড়ে।তাকেও ভর্তি করা হয়েছিলো কর্ণফুলী জুট মিলস কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। আমি তখন পড়ি ইন্টার প্রথম বর্ষে ।বোন স্কুলে যেতো পল্লিবিদ্যুত উন্নয়ন অফিসার আংকেলের মেয়ের সাথে। আংকেল ওনার মেয়ে সহ ওদের তিন জনকে একসাথে নিয়ে যেতেন। আনার দায়িত্ব ছিলো আমার যেহেতু বাবা ভোরে কাপ্তাই চলে যেতেন আসতেন রাতে। এভাবে চার পাঁচ মাস আমার বোনকে স্কুল থেকে আনার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিলো। ততোদিনে আমার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিলো,, দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস গুলো ঠিক মতো করতে পারিনি।২/১ টা ক্লাস করেই চলে যেতে হতো বোনের স্কুলে। যেহেতু বাসে করে আসা যাওয়া করতে হতো তাই একটু আগেই ওর স্কুলে চলে যেতে হতো।
✍️আমার সংসার জীবন -
তারপর বাবার ট্রান্সফার হয় চাটখিলে। ওখানে গিয়ে আবার নতুন করে গার্লস কলেজে ভর্তি হই। ২০০০ সালে। এর মধ্যে কয়েকটা বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে বাবার ছিলো না। তাই সবগুলো প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলো।যখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠি তখন আবার শুরু হয় বিয়ের প্রস্তাব আসা। যার জন্য প্রস্তাব আনা হয় তিনি ছিলেন কলেজের লেকচারার।ছেলের বাবা খুব করে আমার বাবাকে ধরলেন তিনি আমাকে তার ছেলের বউ করবেনই। তারপরও আমার বাবা ৩ মাস গড়িমসি করেছিলেন বিয়ে দিবেন কি দিবেন না, যেহেতু বাবার অনেক আদরের ছিলাম।শেষ পর্যন্ত ২০০০ সালেই আমার বিয়ে হয়। বিয়ের ১ মাস পর ঢাকায় নিয়ে আসা হয় আমাকে। আমি যেহেতু অন্য রকম একটা পরিবেশে বড়ো হয়েছি তাই চেষ্টা করে গেছি তাদের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার, এবং মানিয়ে নিয়ে সবাইকে আপনও করে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার মন মানসিকতা আর আচার-ব্যবহার দেখে আস্তে আস্তে মনে ভয় ঢুকে গেলো আমি পারবোতো তার সাথে সংসার করতে পারবোতো। তার ম্যান্টালিটি খুব একটা ভালো ছিলো। কথা ছিলো আমি লেখাপড়া করবো কিন্তু কিছু মানুষের কুপরামর্শে সেটা আর হয় নি। কথা ছিলো ২ বছর পরে বাচ্চা নিবো তাও হয়নি মানুষের কুপরামর্শে। ভদ্রলোক মানুষের কথা শুনতেন বেশি। কলেজের লেকচারার হলে কি হবে। যাই হোক ২০০১ সালে আমার প্রথম সন্তান আসে এই দুনিয়ায় সীজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে । তবে কনসিভ করা থেকে ছেলের এই দুনিয়ায় আসা পর্যন্ত জীবন মরন সমস্যার মধ্যে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে অনেক কষ্টের পর ছেলের মুখ দেখে সব কষ্ট ভুলে যাই।
বিয়ের পর থেকে আমার সাথে যা কিছু হতো আমি প্রথম প্রথম চুপচাপ সহ্য করে যেতাম।। কিন্তু যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম হতে শুরু করে তখন আমি কিছু কথা আমার মায়ের সাথে শেয়ার করি। একচুয়েলি আমার বিয়ের সময় আমার বাবা আমাকে ঘর সাজানোর জিনিস দেয়নি এটা ছিলো মূল কারন। আমার বাবা ছিলেন এসবের ঘোর বিরোধী। আমার বাবার কথা হলো মেয়েকে এতো কষ্ট করে লালন পালন করেছি, লেখা পড়া করিয়েছি,, একটা মেয়ে ছেলেদের থেকে কোনো অংশে কম না। তাহলে তাকে যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে হবে কেনো।
আমার ওপর যে পরিমানে ম্যান্টালি টর্চার করা হতো, বিভিন্ন ভাবে অপমান করা হতো আমি সহ্য করতে না পেরে আমার মাকে জানাই। কিন্তু আমার মা আমাকে ধৈর্য্য ধরতে বলেন, একটু এডজাস্ট করে নিতে বলেন।কারণ ওখান থেকে এনে আরেক জায়গায় যদি বিয়ে দেন তাহলে আমি যে সুখি হবো তার কোনো গ্যারান্টি নাই। যাই হোক ধৈর্য্য ধরতে ধরতে এডজাস্ট করতে করতে ২০০৬ সালে আমার মেয়ে আসে এই দুনিয়াতে। মেয়েও হয় সীজারে। মেয়ে হওয়ার পর যেহেতু খুব একটা রেস্ট পাইনি তাই শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগলো। মেয়ের বয়স যখন তিন মাস আমি ভীষণ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি, আমার নার্ভের সমস্যা শুরু হয়।যখন নার্ভের চাপ পড়তো তখন প্রায় ১/২ ঘন্টা সেন্সলেস থাকতাম। প্রেসার উঠা নামা করতো। সি এম এইচ থেকে শুরু করে কোনো হসপিটালের ডাক্তার বাদ নেই যে দেখাইনি । এর মধ্যে ডেইলি তো এটা সেটা নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকতো আর আমি ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ সহ্য করে যেতাম। আমার শ্রদ্ধেয় মরহুম শ্বশুর একটা কথা প্রায়ই বলতেন, একটা বউ আনছি তার মুখে বোম মারলে ফিরে আসে অথচ তার মুখ থেকে একটা শব্দ বের হয় না। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুন। আমার মরহুম শাশুড়ীও খুব ভালো এবং বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। আল্লাহ উনাকেও বেহেশত নসীব করুন। তবে সমস্যা ছিলো উনাদের ছেলে উনাদের কথা শুনতো না, বাহিরের মানুষের কথা শুনতো বেশি। তাই ঝামেলাও করতো বেশি।
আলহামদুলিল্লাহ আমার দুজন ছেলেমেয়ে। ছেলে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আর মেয়ে এবার কমার্স থেকে এস এস সি পাশ করলো।
আমার ছেলেমেয়ে দুটো ছোটো বেলা থেকে তাদের বাবার আচরণ দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তারা মাঝে মাঝে আমাকে বলতো আচ্ছা আম্মু নানা ভাইয়া কি আর কোনো ছেলে খুঁজে পেলো না তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য?আমি ওদের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যেতাম। ওরা ওদের বাবার ওপর এতোটাই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো যে ওদের বাবাকে অপছন্দ করা শুরু করলো।বাবাকে নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য করা শুরু করলো। আমি বুঝাতাম বাবা তো বাবাই হয়। বাবাকে নিয়ে এমন কথা বলতে নেই। সব সময় বাচ্চাদেরকে পজেটিভ রাখার চেষ্টা করতাম।
সবার উদ্দেশ্যে বলছি আপনারা দয়া করে কেউ আপনাদের সন্তানের সামনে ঝামেলা করবেন না, ঝগড়াঝাটি করবেন না। এতে করে বাচ্চাদের ওপর মারাত্মক এফেক্ট পড়ে।
আমার মেয়ের বয়স যখন দেড় কি দুই বছর তখন আমার কানের অপারেশন হয়।
তারপর হয় ডায়েরিয়া তখনও জীবন মরণ সমস্যা হয়েছিলো। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী ছিলো হয়তো বাচ্চাদের জন্যই আল্লাহ আমাকে নতুন করে জীবন দান করেছিলেন। এতোটাই মারাত্মক ডায়েরিয়া হয়েছিলো যে ঘন্টায় ৪ টা স্যালাইন পুস করতে হয়েছিলো। ১৪ নাম্বার স্যালাইন নিয়ে হসপিটালে ভর্তি হই। পুরো একদিন ছিলাম হসপিটালে। মেয়ে অসুস্থ শুনে আর থাকতে পারলাম না হসপিটালে। ডাক্তারকে বললাম আমি সুস্থ আমাকে ছেড়ে দিন। আসলে কিন্তু আমি সুস্থ ছিলাম না,, কারণ আমার অবস্থা আবারও খারাপের দিকে যাচ্ছিলো, থাকলে আবারও স্যালাইন দিতো। তারপরও মেয়ের কথা ভেবে হসপিটাল থেকে চলে আসি।
মেয়ের বয়স যখন ৪ বছর তখন আমার শাশুড়ী স্ট্রোক করেন পর পর দুবার। উনাকে নিয়ে হসপিটালে ছিলাম একসপ্তাহ। তারপর টানা দশ বছর ওনার সেবা করি নিঃস্বার্থ ভাবে।
শ্বাশুড়ির সেবা করতে করতে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাই। তারপরও উফ শব্দটাও করিনি। শাশুড়িকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানো, ওয়াসরুমে নিয়ে যাওয়া, ওজু করানো, নামাজ পড়ানো সবই একা হাতে করেছি।
তারপর ২০১২সালে নিজেকে আবার ওটিতে যেতে হলো ব্যাকবোনের অপারেশনের জন্য।
খুব জটিল একটা অপারেশন হয়।৩/৪ ঘন্টা লাগে অপারেশন করতে। তারপর ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছিলো। আমি তো ভেবেছিলাম সেদিনই বুঝি আমার শেষ দিন। কারণ যখন আমাকে ওটিতে নিলো আমি অনেক নার্ভাস ছিলাম।
যাই হোক সুস্থ হলাম, আবার শুরু হলো ছেলে মেয়ে,সংসার আর শাশুড়ির পেছনে দৌড়ানো। এর মধ্যে অশান্তি তো ছিলোই।
ডিভোর্সঃ আমার সংসার জীবন ১৮ বছরের। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি সব কিছু মেনে নিয়ে মানিয়ে চলতে। কিন্তু কথায় বলে না পানি যখন মানুষের মাথার ওপর উঠে যায় তখন শুরু হয় মানুষের বাঁচার আকুতি। আমার বেলায়ও ঠিক তাই হলো। আমি কারো সাথে মিশতে পারবো না, কারো সাথে কথা বলতে পারবো না, টিভি দেখতে পারবো না, এমনকি আমার পরিবারের কারও সাথেও কথা বলতে পারবো না তার ধারনা আমার মা আমাকে উল্টো পাল্টা পরামর্শ দেয়। মানে আমি নিজে এখন যখন ভাবি ১৮ টা বছর আমার কিভাবে কেটেছে আর এখন কিভাবে কাটছে আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই। আমি স্বাধীন ভাবে বড়ো হয়েছি ঠিকই, লেখা পড়া করেছি ঠিকই কিন্তু তারপরও আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি অন্ধকারে বাস করেছি এতোগুলা বছর। আমি যতোটা সেক্রিফাইস আর কম্প্রোমাইজ করেছি আমার জানা নেই কোনো মহিলা এতোটাও করেছে কিনা কিংবা করবে কিনা!একদিন আমার বাবা আপসোস করে কস্টে আমাকে বলছিলেন মারে আমি জানি তোর মতো মেয়ে দেখে এখনও সংসার করছিস অন্য কোনো মেয়ে হলে করতো না।
হাসবেন্ড হিসেবে তাকে কখনো অসন্মান করিনি,সব সময় সন্মান করে গিয়েছি।কিন্তু আমি কখনো তার কাছ থেকে যথোপযুক্ত সন্মান পাইনি স্ত্রী হিসেবে। সে কখনো আমার মা বাবাকে সন্মান করতে পারেনি। তারপরেও সব কিছু মাথা পেতে মেনে নিয়েছিলাম সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে।
তারা ৪/৫ জন মিলে একটা স্কুল দিয়েছিলো।আর মেইন ঝামেলাটা সেখান থেকেই শুরু করেন। আমার বাবা মারা যান ২০১৭ সালে। মানসিক অত্যাচার তো ছিলোই। কিন্তু তার মাত্রা বেড়ে যায় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে।
বাধ্য হয়েছি ১৮ বছরের সংসার ভেঙে চলে আসতে। তবে আমার ছেলেমেয়ের পূর্ণ সাপোর্ট ছিলো।আমি আসার একদিন পরে ভদ্রলোক আবার বিয়ে করেন।
কোনো মেয়ে চায় না তার সন্তান, সংসার ভাঙতে কিন্তু কতোটা কষ্ট সহ্য করার পর একটা মেয়ে সংসার ভাঙতে বাধ্য হয় আশা করি সেটা আপনারা সবাই জানেন।
একটা সংসারে অশান্তি বা সংসার ভাঙার জন্য সব সময় মেয়েরা দায়ী হয় না। কিন্তু আমাদের এই সমাজ তা মানতে নারাজ। সবার কাছে একটা অনুরোধ দয়া করে সর্বক্ষেত্রে মেয়েদেরকে দায়ী করা বন্ধ করুন।কারণ সব মেয়েরা একরকম হয় না। আবার সব পুরুষরাও একরকম হয় না। একটা মেয়ে কতোটা ধৈর্য্যশীল হলে একটা পরিবার থেকে সব কিছু ছেড়ে আরেকটা নতুন পরিবারে সম্পূর্ণ নতুন গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে,এবং নিজের সর্ব সুখ বিলিয়ে দেয় পরিবারের মানুষ গুলোর জন্য। একটু ভেবে দেখবেন।
চাকরী জীবন এবং উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ - -২০১৮ সালের শেষের দিকে আমি যখন আমার মায়ের কাছে চলে আসি তখন চিন্তা করতে থাকি এখন কি করা যায়।শুরু হয় আবারো স্ট্রাগল করা। একজন বোনের সহোযোগীতায় একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি নেই। ৩/৪ মাস চাকরি করি। কিন্তু বেতন খুবই কম ছিলো। তারপর একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির অফার পাই। মোটামুটি আমি যা আশা করেছিলাম তাই বেতন পাই।এক বছর চাকরি করি কিন্তু সেখানেও শুরু হয় রাজনীতি। নিজের দক্ষতা দিয়ে যখন আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম শুরু হলো আমাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এবং যারা চেষ্টা করেছে তারা সফলও হয়েছে। নোংরা রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়াতে চাইনি তাই নিজ থেকেই চাকরি ছেড়ে দেই। ২/৩ টা টিউশনি নেই। করোনার জন্য সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও থেমে থাকিনি। তখন করোনাকালীন সময় ছিলো। তাই চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করবো না করবো।
এফবিতে স্ক্রল করতে করতে ২/১ টা উদ্যোক্তা গ্রুপ চোখের সামনে এলো। গ্রুপে ঢুকে ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করলাম তারপর বাসায় ভাই বোনের সাথে আলাপ করে শুরু করলাম হোমমেইড খাবার নিয়ে কাজ করা। শুরু করলাম সবার পোস্ট পড়া, লাইক কমেন্ট করা।সব কিছু যখন ভালো করে বুঝলাম তারপর নিজেও পোস্ট করা শুরু করলাম বিভিন্ন ছোটো বড়ো গ্রুপ গুলোতে। একটাই লক্ষ্য ছিলো নিজেকে সবার কাছে পরিচিত করে তোলা। আলহামদুলিল্লাহ সক্ষমও হয়েছ।আমি টানা ১ বছর সেলের কোনো আশা করিনি। আলহামদুলিল্লাহ অর্ডার আসতে শুরু হলো। কিন্তু ব্যক্তিগতো কিছু সমস্যার কারনে আবার বন্ধ করতে বাধ্য হই আমার কাজকর্ম। কিন্তু আর পারছিলাম না এভাবে থাকতে। চিন্তা করলাম বাঁচতে হলে নিজেকে ভালো রাখতে হলে আমাকে কিছু করতে হবে নিজের জন্য। তাই আবার নতুন করে শুরু করলাম পথ চলা নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সাথে।
যতোই লিখবো আসলে লেখা শেষ হবে না। কারণ মানুষের জীবনের গল্প ২/১ কথায় লিখে শেষ করা যায় না।তারপরও সংক্ষেপে যতোটুকু পেরেছি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
সবশেষে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি Nasir Mirza ভাইয়া এবং MD Naim Hossain Shihab ভাইয়া তাদের সহোযোগিতায় নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর জেলা টিমের সাথে সেশন ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছি।এবং এখনও করছি। Nasir Mirza ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানালেও কম হবে কারণ ভাইয়া আমাকে প্রমোশন পোস্ট লেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ২০০০ তম দিন উদযাপন উপলক্ষে যারা স্পন্সর নিয়েছিলেন সেইসব আপু ভাইয়াদের। ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না, তবে আপনার জন্য সব সময় মন থেকে দোয়া এবং ভালোবাসা থাকবে।
মতিঝিল জোনের সকল আপু ভাইয়াদের জন্যও অনেক অনেক ভালোবাসা। কারণ আমাকে প্রথমে যুক্ত করা হয়েছিলো মতিঝিল জোনের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে।ভাইয়া এবং আপুদের আন্তরিকতায় আমি সত্যি মুগ্ধ। আমার উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম অফলাইন মিটআপ ছিলো মতিঝিল জোনের সাথে।খুব সুন্দর একটা মূহুর্ত কাটিয়েছিলাম তাদের সাথে।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের ২২তম ব্যাচের সাথে মিটআপ ৯০দিনের সেশন ক্লাস থেকে যতোটুকু এই পর্যন্ত শিখেছি----যদিও এখনও আমার ৯০ দিন পূর্ণ হয়নি...
*আমার কথা বলার জড়তা কাটাতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
*আমাকে মতিঝিল জোন থেকে কয়েকবার সেশন ক্লাস সঞ্চালনার কথা বললেও আমি কখনো করিনি কারন মনের মধ্যে একটা একটা ভয় কাজ করতো ভুল হলে সবাই কি ভাববে, আলহামদুলিল্লাহ সেই ভয়টা কেটে গেছে এখন অনায়াসে এবং নির্ভয়ে সঞ্চালনা করতে পারি।
*আমরা পণ্য নয় বিশ্বাস বিক্রি করি।
*নিজের স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় হয় লেগে থাকতে হয় তা শিখেছি।
*বৃষ্টি সবার জন্য পড়ে কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।
*শিখেছি কিভাবে বিনয়ী হতে হয়।
*শিখেছি কিভাবে আন্তরিকতার সাথে সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে হয়।
নিয়মিত সেশন চর্চা ক্লাস করে, আমি আরও অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
যা বিজনেসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা সেশনেই নতুন নতুন তথ্য যোগ করা হয়েছে,এবং তা বাস্তব ভিওিক।
আমি ব্যক্তিগতো ভাবে মনে করি এখানেই শিখা শেষ নয়, এখনও অনেক কিছু শিখার আছে আমার।
আমার জীবনের গল্প- সময় নিয়ে পড়ার জন্য আবারও সকল প্রিয় ভাই বোনদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সকলের সফলতা কামনা করছি এবং সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৫৫
তারিখ ০২/০৮/২০২৩ ইং
ফারজানা শারমিন
ব্যাচ নং -২২
রেজিষ্ট্রেশন নং-১১৯১৮৫
নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর
বর্তমান অবস্থান রামপুরা ঢাকা
মতিঝিল জোন
কাজ করছি ফ্রোজেন ফুড আইটেম এবং মেয়েদের শাড়ি, নামাজের হিজাব নিয়ে।
আমার পেইজ -
Tilottoma by Farjana