আমি কি হতে পেরেছি, কি হতে পারবো
☘️☘️
"আসসালামু আলাইকুম
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"
🌺সকল প্রশংসা করুনাময় আল্লাহ তালার প্রতি,উনি আমাদেরকে এতো সুন্দর একটা ধরণীতে পাঠিয়েছেন,"আশরাফুল মাখলুকাত " হিসাবে,এরজন্য মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে শুকরিয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই।
🪷সালাম জানাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) কে।যাঁর উম্মত হবার পরম সৌভাগ্য আমার বা আমাদের সবারই হয়েছে।
💐এখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি।যিনি তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন আমাদের এই প্রাণের ফাউন্ডেশন। 🍀🍀সময়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক,লক্ষ্য তরুন-তরুণীর হ্নদয়ের স্পন্দন এবং যার পরিকল্পনা, প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি এই সুন্দর প্লাটফর্ম।
যেখান থেকে পেয়েছি চমৎকার কিছু ভাই-আপুদের।যার শিক্ষা প্রাণে ধারণ করে লক্ষ্য লক্ষ্য বেকার তরুণ তরুণী আজ বেঁচে থাকার স্পন্দন খুঁজে পেয়ে সাহস করছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার,সাথে লিখতে পারছে নিজের সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প গুলো।
যিনি আমাদের কে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।তিনি আর কেউ নন আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয়
Iqbal Bahar Zahid স্যার।
প্রতিটা মানুষেরই আছে সুখ,দুঃখ,আনন্দ-বেদনায় ঘেরা একটা সুন্দর গল্প।যার ব্যতিক্রম আমিও নই।আমারও আছে এমন একটা গল্প।
যা আজ আমি আমার সম্মানিত ভাই-বোনদের সাথে তা শেয়ার করবো-
আশা করি সকলে আমার জীবনীটি একটু সময় করে পড়বেন☺️,,,,,,
🌿🌿পারিবারিক পরিচয়
আমার জন্মস্থান টাংগাইলের ঘাটাইল থানায়।বাবা ছিলেন কলেজের অধ্যাপক আর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।আমরা এক ভাই,এক বোন।আমিই আমার বাবা মায়ের বড় সন্তান। ভাই আমার ছোট।
❤️❤️শৈশব কাল❤️❤️
বাপী আম্মার বড় সন্তান হিসাবে আমি মনে হয় একটু বেশিই আদর পেয়েছি আমার বাপী আম্মার কাছ থেকে।বড় সন্তান আর একমাত্র মেয়ে বলে কথা,আমি কিন্তু বেশ ডানপিটে ছিলাম ছোট বেলা থেকে। যাই হোক বাপীর কর্মসূত্রে আমরা কালিহাতি আসি,তখন আমি বেশ ছোট।তারপর থেকে আমরা কালিহাতিতেই থাকতাম।
এবার আসি,
🌹স্কুল জীবনে🌹
আমি কালিহাতিরই এক স্বনাম ধন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাস করে যখন থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই তখন কিছুদিন আমাদের ওখানকার গালর্স স্কুলে ভর্তি হই কিন্তু সমস্যা তখন একটাই আমাকে মনে হতো মির্জাপুরের ভারেতশ্বরী হোমস্ আমাকে ডাকছে বারবার,আর এই প্রচণ্ড আগ্রহের দরুন বাপী আম্মা বাধ্য হন আমাকে ভারেতশ্বরী হোমস্ এ ভর্তি করতে,ওখানে আমার ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া হয়,তারপর বাপী আম্মা আমাকে ছেড়ে থাকতে না পেরে ৯ম শ্রেণিতে এনে আবারও গালর্স স্কুলে ভর্তি করান ওখান থেকে মোটামুটি বেশ ভালোই রেজাল্ট করি এস.এস.সি তে।
🌼🌼 কলেজ জীবন🌼🌼
বাপী যেহেতু কালিহাতি কলেজের বাংলা অধ্যাপক ছিলেন সেহেতু আমারও ওই কলেজেই ভর্তি হতে হলো,বেশ ভালোই কেটেছে কলেজ জীবনটা সাথে স্যারের মেয়ে এটার তো একটা অহমিকা ছিলোই।আর তার চাইতে বড় কথা কলেজ জীবনে এসে পেয়েছিলাম অনেক বন্ধু-বান্ধব, যাই হোক, বেশ হাসি খেলেই আমার কলেজ জীবনটা কেটেছে,ওখানেও মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করে এইচ.এস.সি পাশ করি।
🍁এবার আসি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আর এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাথেই জড়িয়ে আছে আমার বৈবাহিক জীবন🍁
এইচ.এস.সি রেজাল্টটা তেমন ভালো না হওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে যায় আমার জন্য,এরজন্যই আমি আমার বাপীকে বলি বাপী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই যখন পড়বো তাহলে ইডেন কলেজেই পড়ি?যেহেতু বাপী মেয়ে অন্ত্য প্রাণ ছিলেন তাই উনি রাজিও হয়ে যান,পুরো চারটা বছর বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে শুধু মাত্র ইডেন কলেজে পড়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই পরে আমি দর্শন বিভাগে ভর্তি হই।এখানে বলে রাখা ভালো যেহেতু বাপী আম্মা দুইজনই চাকরি করতেন সেহেতু আমার কিছু করতে হবে এটা মাথা কখনই আসে নাই।যাই হোক,বেশ ভালোই কাটছিলো অনার্স জীবনটা,হঠাৎ করেই যখন আমি অনার্স ২য় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা শেষ করি তখন হঠাৎ ই বাপী আম্মা আমার জন্য বিয়ের পাত্র খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন এবং আমার বিয়েও ঠিক হয়ে যায় আর যেহেতু একটু বেশিই বাপ নেওলা ছিলাম সেহেতু বাপীকে আমি আর বলতে পারি নাই তোমরা আমাকে আরও একটু সময় দাও এই নতুন জীবন নিয়ে ভাবার। যাই হোক বাপী আম্মাকে কষ্ট দিবোনা জন্য রাজিও হয়ে যাই।ছেলে পক্ষরা আকদ করে রাখে,তুলে নিবে দুই মাস পর।সবকিছু ঠিকঠাক ই চলছিলো।দেখতে দেখতে বিয়ের দিনও চলে আসে যথারীতি। আর যেহেতু আমি আমার দাদার বংশের বড় মেয়ে সেহেতু দাদা দাদীর আবদার রাখতেই আমার বিয়েটা বাপী আমার দাদার বাড়িই আয়োজন করেন।আর এখান থেকেই শুরু হয় ছন্দ পতন।আমার গায়ে হলুদের দিন আমি যাই পার্লারে হাতে মেহেদি পড়তে,গ্রাম থেকে পার্লারে যেতে বেশ সময় লাগে।তাই সকালেই আম্মা আমাকে রেডি করে পাঠান পার্লারের জন্য,আর পার্লারের মালিক যেহেতু বাপীর ছাত্রী ছিলো তাই তার নাম ধরে বলেন "ওকে বলো বিকালে তোমাকে সাজাতে যেন তাড়াতাড়ি ই চলে আসে" আসলে আমিও হয়তো জানতাম না ওটা আমার বাপীর সাথের শেষ দেখা আর শেষ কথা ছিলো।আমি যথারীতি হাতে মেহেদি দিয়ে আমাদের ঘাটাইল ডাকবাংলোর অপর প্রান্তে যে বাসা আছে ওখানে যাই আমার চাচীর সাথে আর বাসায় ঢুকতেই কেউ একজন দরজায় কড়া নাড়ে আর দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানিনা দরজায় যে ছিলো সে আমাকেই জিজ্ঞেস করে আমার চাচার নাম ধরে বলে,এটা কি হারুন চেয়ারম্যান এর বাসায়"আমি বলি জ্বি কেন?
ওনার তখন একটাই কথা ছিলো হারুন চেয়ারম্যানের বড় ভাই যার মেয়ের বিয়ে সে বাইক এক্সিডেন্ট করছেন, আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না,সাথে লোকটা আমাকে বলে,আপনার হাতের মেহেদি টা মুছে ফেলেন,আমিও আমার হাতের মেহেদি মুছে ফেলি,এর মাঝে আমার বন্ধু বান্ধবরা আমাকে কল করছে আমার বাপীর খবর নিতে অথচ আমি তো শুধু এক্সিডেন্ট পর্যন্তই জানতাম,আমি তো তখনও জানতাম না আমার বাপী এক্সিডেন্টের সাথে সাথে আল্লাহ পাকের কাছে চলে গেছেন,সাথে আমার খুব আদরের একটা ফুফাতো ভাইও মারা গেছে।
আমি যখন আমার গ্রামের পথে ঢুকি তখন ও আমি সঠিক জানি না আসলেই কি হইছে।বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখি যেখানে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হইছিলো ওখানে আমার দাদা মরার মতন পড়ে আছেন,আমার দাদীরও একই অবস্থা, আর আমার আম্মা তার জীবন নিয়ে টানাটানি, এরই মাঝে আমার বাপী মৃত্যু খবর শুনে যার সাথে আমি আকদ হওয়া ছিলো তারাও চলে আসে আমার দাদার বাড়ি,আর বাপী মৃত্যুর ৩দিনের দিন আমাদের বিয়েটা সামাজিক ভাবে করিয়ে দেন সব মুরুব্বীরা মিলে,আমি আর বুঝতে পারলাম না বিয়ের আনন্দ কাকে বলে,চাকচিক্যতা কি।আম্মা যেহেতু চাকরি করতেন সেজন্য আমরা আমাদের আবাসস্থলে চলে আসি।বাসায় আসার পর বার বার মনে হতো বাপী কিভাবে একা রইছে কবরে,আল্লাহ পাককে বলতাম আমার বাপীকে দেখে রাখতে,এদিকে দিন পার হচ্ছে আর আম্মা হয়ে উঠলেন একদিকে বাবা অপর দিকে মা,মেয়ের নতুন বিয়ে কত দায়দায়িত্ব মেয়ের শ্বশুর বাড়ির, সাথে আমার একটা ছোট ভাই তার পড়ালেখার খরচ সব আমার আম্মাকেই বহন করতে হতো,আর আমি যেহেতু ঢাকায় পড়ি ঢাকায় থাকি আমাকে তো আমার আম্মাকে একা রেখেই চলে আসতে হতো,আম্মার তার একাকিত্ব সাথে সংসারের টানা পোড়েন থেকে বাঁচতে টিউশনি শুরু করে দেন,আমার আম্মা আমাদের দুই ভাইবোন কে কখনই বুঝতে দিতেন না যে,বাপী নাই।
এবার আসি আমাকে নিয়ে,যেহেতু পড়ালেখা মাঝেই বিয়ে সেহেতু কোন স্বপ্ন দেখার সুযোগ আমি পাই নি,সংসার করছি পড়াশোনা করছি। শুরুতে ই আমার সংসার করাটা খুব কঠিন ছিলো,তখন আমার আম্মা আমার পাশে ছিলেন সর্বদা,এরই মাঝে আমার প্রথম সন্তান আমার গর্ভে আসে তখন আমার ফাইনাল ইয়ার চলে,আমি তো দিশে হারা কারণ চাকরির প্রতি আগ্রহ না থাকলেও পড়ার প্রতি ছিলো প্রচুর আগ্রহ, যাই হোক,আম্মার সহযোগিতা আর বরের আশ্বাসে পড়া চালিয়ে যাই,এরই মাঝে আমি পুত্র সন্তানের মা হই,আর এই মা হওয়ার বাইশ দিন পর থাকে আমার ফাইনাল পরিক্ষা, অনেক কষ্টে এই ছোটবাচ্চা কে নিয়ে সংসারের কাজ সাথে পড়াশোনা করাটা আমার কাছে যুদ্ধের মতন লাগতো,আর বর যেহেতু প্রাইভেট চাকরি করতেন তাই সময়ও দিতে পারতেন না,যাই হোক এরই মাঝেই সকল চড়াই উতড়াই পেরিয়ে পরিক্ষাটা দেই,তবে তত দিনে আমি একটু একটু স্বপ্ন দেখি,আমি ব্যাংকিং জব করবো,এটা আমার বরকে বলিও,উনি বিষয়টা মানতে পারে না,আর আমিও একটা সময় ভেবে দেখলাম, আমিও তো চাকরিজীবী বাবা মায়ের সন্তান ছিলাম,আমার বাবা মা মফস্বলে থাকতেন বলেই হয়তো তাদের জন্য সম্ভব হয়েছে। ঢাকা শহরে কিভাবে সম্ভব মাথায় আসতো না,আম্মা তো আর তার চাকরি ছেড়ে আমার কাছে আসবেন না।যাই হোক এভাবে দিন চলছিলো,এরই মাঝে আমি মাস্টার্স ভর্তি হই,ছেলে সংসারটা নিয়ে আবারও সমস্যা পড়ি,একদিকে আমাকে মাস্টার্স শেষ করতে হবে অন্য দিকে সংসারের ঝামেলা,ছেলেটাকে কার কাছে রেখে যাবো ক্লাসে,মাঝেমাঝে ওকে সাথেই নিয়ে যেতাম, যেহেতু যাত্রাবাড়ী বাসা ছিলো।যাত্রাবাড়ী থেকে আজিমপুরের বাসে যাতায়াত করতাম আমার ওই ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে,ওর অনেক কষ্ট হতো,এভাবে পরিক্ষার সময় আসে আমার আম্মা পরিক্ষার সময় তিন দিনের ছুটি নিয়ে এসে থাকতে,ওই তিনটা দিন পড়ে আমি পরিক্ষা দিতে যেতাম,বেশ ভালো রেজাল্টও করি,এর মাঝে একটা কথা না বললেই না,আমার মাস্টার্সের কোন এক ভাইভা পরিক্ষার দিন ছেলেটাকে নিয়েই যাই পরিক্ষা দিতে,অনেকটা সময় পর যখন আমার নাম আসে আমি বাবু সহই ঢুকি পরিক্ষার হলে,আমার যিনি ডিপার্টমেন্টের হেড ছিলেন,ওনার যেন কি হলো আমাকে প্রশ্ন না করে শুধু জিজ্ঞেস করছিলেন আমি কখন আসছি,আমি উত্তরে বলছিলাম সকালেই, আমার মিস আমাকে এক রকম বকে হল থেকে বের করেন,আর বলেন জীবনের বড় ভাইভাতে তুমি পাস করেছো বাবুকে নিয়ে বাসায় চলে যাও,যদিও আমি ওই সাবজেক্টের ভাইভা নম্বর পুরোটা ই পেয়েছিলাম, যাই হোক পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর কেন যেন চাকরিটা আমাকে টানতো না,আমার আম্মা খুব কষ্ট পেতেন উনি চাকরি করেন তার মেয়ে চাকরি করি না।এভাবে দিনকাল ভালোই কাটতে থাকে।এরই মাঝে আমাদের ছোট ছেলে আসে আমার জীবনে,সবমিলিয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো দিনকাল আলহামদুলিল্লাহ্
তবে আমার বাপী মরা যাওয়ার পর আমার আম্মা একদমই অন্যরকম একজন মানুষ হয়ে যান,ওনার নিজের জীবনের প্রতি তেমন কোন মায়া ছিলো না,শরীরে হাজারটা রোগ বাসা বেঁধে ছিলো কখনই তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিতে পারতাম না।এরই মাঝে ২০১৬ এর অক্টোবর মাসে আম্মার শরীর অনেক খারাপ হয়,আম্মাকে মফস্বলেরই একটা ক্লিনিকে নিয়ে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষা করানো হয় ওখানে আলট্রাসোনতে ধরা পড়ে আম্মার লিভারে বড় রকম সমস্যা আছে তখন দেরি না করে ঢাকায় নিয়ে এসে বি আর বি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তারা জানান আমার মায়ের লিভার ক্যান্সার শেষ পর্যায়, তারপরও অনেক চেষ্টা করা হয় ছয় দিন হাসপাতালের আই সি ইউ তে জীবন মরণের সাথে যুদ্ধ করে আমার আম্মা ওই বছরের নভেম্বরের এক তারিখে চলে যান আল্লাহ পাকের দরবারে,আমি নিজের চোখে দেখেছি আই সি ইউ এ থাকা অবস্থায় প্রতিটা মেশিন কিভাবে বন্ধ হলো আর আমার মায়ের প্রাণ ভ্রমরাটা বের হয়ে গেলো,সাথে আমার জীবনের আবারও ছন্দ পতন, এবার একবারেই একা হয়ে গেলাম আমি।
এরপরও যখন সবকিছু মেনে নিয়ে বেঁচে থাকা শুরু তখন আসে আরেক বিপদ।
জীবনে বাপী আম্মাকে হারিয়ে কেমন যেন একা একা লাগতে থাকে ঠিক ওই সময় টাতেই পাশে ছিলো ওই মানুষটাই যে মানুষটা আমার বাপী মারা যাওয়ার দিন থেকে ই আমার পাশে ছিলো,সে আমার বর
🪷সংগ্রামের জীবন শুরু হয় এখান থেকেই
বেশ ভালোই কাটছিলো বাপী আম্মাকে হারানোর পরও,হঠাৎ আমার জীবনে নেমে আসে এমন এক দুর্যোগ যেটা আমি বা আমার সন্তানরা বয়ে চলেছি আজও।
এখন আসি মূল কথায়🌴
আমার বর ২০১৭ সালের কোরবানির ঈদের একদিন পর অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন।যদিও উনি অসুস্থ হবার বেশ কিছুদিন আগে থেকে একটু একটু অসুস্থ থাকতেন যার দরুন ওনাকে বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো হয়,তো ডাক্তাররা পরিক্ষা নিরীক্ষা করে ওনাকে গ্যাস্ট্রোলিভারের ডাক্তার দেখাতে বলা হয়,সেই অনুযায়ী আমরা গ্যাস্ট্রোলিভারের ডাক্তারের কাছে যাই,তো উনি অনেক পরিক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন উনার লিভারে সমস্যা আছে,কিন্তু কি সমস্যা তা তারা ধরতে পারছেন না।এরই মাঝে উনি ওই ইদের পরের দিন অসুস্থ হন,অসুস্থতা টা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে মানুষটার পুরো বারোটা ঘণ্টা কোন সেন্স ছিলো না,আর যেহেতু গ্রামের বাড়িতে ঘটনাটা ঘটে আর রাতও অনেক ছিলো তাই কিছুই করার ছিলো না,চোখের সামনে তার চলে যাওয়া দেখা ছাড়া,তবে আল্লাহ পাক আসলেই অনেক দয়াবান আমার এক দেবরের মাধ্যমে আমি ওই মৃতপ্রায় মানুষটা কে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি,আমাদের টাংগাইলের সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় কিন্তু ইদে পর বলে তেমন কোন ডাক্তার ই ছিলো না,আমি আমার ছোট ছোট বাচ্চা দুটো নিয়ে অসহায়ের মতন হাসপাতালের বারান্দায় অপেক্ষা করি,একটা ডাক্তারের আশায়,তবে আমি আমার সাথে ওনার ডাক্তার দেখানোর কাগজ গুলো সাথেই রাখতাম ওইদিনও ছিলো,অপেক্ষার পালা শেষে একজন ডাক্তার আসেন,তবে ডাক্তার ওনার কাগজ দেখে সরাসরি ওনাকে ঢাকা কোন এক ভালো গ্যাস্ট্রোলিভারের ডাক্তার দেখাতে বলেন,আমরাও তাকে নিয়ে আসি ঢাকা,এতো সময় এতো কিছুই সহ্য করলাম,আমি আমার দিক থেকে একা,না ছিলো বাবা,না ছিলো মা,না ছিলো ভাই,তবে তাদের বাড়ির অনেকেই ছিলো তারজন্য। যাই হোক হাসপাতালে ৪দিন থাকার পর মানুষটাকে নিয়ে বাসায় আসি,এসব আমার ছোট কাকা যে কিনা এখনও আমার পাশে আছেন,উনি আমাকে প্রস্তাব দেন,মা তুমি মোশাররফ কে একটু সুস্থ করে বিমানে উঠার মতন অবস্থায় আনো,আমি মালয়েশিয়া থেকে আসছি ওকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দেখাবো,আমার কাকা হতো বা তার জায়গা থেকে হিসাব করেছিলেন,আমার যেহেতু কেউই নাই,আজ যদি ওনার কিছু হয় তবে আমার কি হবে,তার সেই ভাবনা থেকেই ওনাকে সিংগাপুর পাঠানো,যদিও শ্বশুর বাড়ির মানুষের তেমন মত ছিলো না,আমার আর আমার ছোট কাকার জন্যই ওটা সম্ভব হয়েছিলো। সিংগাপুর গিয়ে তার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ওই চিকিৎসাতে ধরা পড়ে ওনার লিভার সিরোসিস ২য় ধাপে আছে,এমত অবস্থায় সিংগাপুরের ডাক্তার বলেই দেয় উনি আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পাবেন না,আর শুধু আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করা ছাড়া কিছুই নাই,এই অবস্থাতেও চাকরিটা করে যাচ্ছিলেন করোনা পর একদিন তাকে ওনার বস ডেকে নিয়ে চাকরি থেকে বাদ করে দেন,আমি যখন শুনি একথা আমার মাথায় হাত,এরপর আবার চেষ্টা তদবির করে আরেক জায়গায় চাকরি হয় কিন্তু এবার বাদ সাধে তার শরীর,মাঝেমাঝে ই অসুস্থ হতেন কিন্তু সে বার এমন অসুস্থ হন যে নিজে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন,আমি তখন আর কোন কূলকিনারা পাই না,নিজেও সেই ২০১৭ সাল থেকে একটা চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করছি,আর ২০২২ এ এসে যখন কোনকিছুই বুঝে উঠতে পারি নাই,তখন অনেকের কাছেই চাকরি চাইতাম এখন তাদের উত্তর থাকতো বুড়া বয়সে কে নিবে তোমাকে চাকরিতে। আমি আরও ভেংগে পড়ি,আর ওনার শরীরের অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো সবসময়ই টেনশনে থাকতাম,আজও থাকি
আমার ছেলে দুইটাও তেমন বড় না,ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না,গত দেড়টা বছরে আমার বাসার পরিবেশ টাই বদলে গেছে,আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানিতে ওনি এখন মোটামুটি সুস্থ, তবে চাকরির কোন ব্যবস্থা হয় নাই বলে,আমি চিন্তা করতাম কি হবে,কি করবো মনে হতো আমি ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি। এরই মাঝে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে আমি এই ফাউন্ডেশনের কথা শুনি।
🥀🥀 ফাউন্ডেশনে শুরু কথা
আমি এই ফাউন্ডেশনের শুরু দিকে ঢুকে শুধু মানুষের পোস্ট পড়তাম, দেখতাম, আমাদের স্যারের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতাম, আমার কাছে তখন মনে হতো আমাদের স্যার কি প্রতিটা মানুষের মনের কথা পড়তে পারেন নাকি,তা না হলে কিভাবে সবকথা মিলে যায়।স্যারের কথা,এখানকার আপু ভাইয়াদের উদ্যোগ, উদ্যোক্তা জীবন দেখে শুনে আমি ১৯তম ব্যাচের রেজিস্ট্রেশন করি।আমাকে কোন এক ভাইয়া রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেন,আর আমি টাংগাইলের শুনে আসমা আলো আপু আমাকে অদম্য টাংগাইলের মেসেন্জার গ্রুপে যুক্ত করে দেন,আর ঢাকায় থাকি বলে রিমা খান আপু সহায়তায় মতিঝিল জোনে যুক্ত হই।
🌷🌷এখন ফাউন্ডেশন নিয়ে কিছু কথা
ফাউন্ডেশনে যুক্ত হবার পর প্রতি দিন যে নিয়ম করে সেশনক্লাস হয় সেটাতে যুক্ত হয়ে শপথনামা থেকে সেশন পাঠ,সেশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে শুরু করি,সাথে ব্যবসার বিষয়ে অনেক কিছু যেমন জানতে পেরেছি তেমনি ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি প্রতিটা নতুন নতুন সেশনে,যা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। এরজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের স্যারকে।
🍁🍁আমার প্রাপ্তি
আমি কি হতে পেরেছি, কি হতে পারবো তার চাই বড় হচ্ছে এই ফাউন্ডেশন আমাকে দিয়েছে অনেক কিছুই, আমি টানা ৯০ দিন সেশনক্লাস করে,আমার আগে যুক্ত হওয়া অনেক আপু ভাইদের কথা শুনে মনের জোরটা বেড়েছে,পরের যুক্ত হওয়া আপু ভাইয়াদের থেকেও শিখছি অনেক কিছু,এখন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তোমার এই অবস্থা তুমি কি করবা ছেলে দুটো নিয়ে,আমি এখন সামান্য একটু জোর দিয়ে বলতে পারি ব্যবসা করবো উদ্যোক্তা হবো,এটা শুধু ই সম্ভব হয়েছে আমাদের ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্য এরজন্য আবার তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
🌸🌸🌸আমার জীবনের গল্পটা আপু এবং ভাইয়া সময় নিয়ে পড়ছেন বলে আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।সকল আপু এবং ভাইয়ার ব্যবসায়ীক জীবনের সফলতা কামনা করছি।
🔰স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৫৫
তারিখ ০২-০৮-২০২৩ ইং
শুভেচ্ছান্তে,
আমি,
মুনমুন আরা হালিম
ব্যাচ-১৯
রেজিঃ নং-১০৮৯৮৯
থাকি-বাসাবো, সবুজবাগ
মতিঝিল জোন।
নিজ জেলা-টাংগাইল
কাজ করি-টাংগাইলের ঐতিহ্য বাহী তাঁতপন্য,বাটিকশিল্প, হিজাব এবং অন্যান্য সকল প্রকার থ্রিপিস নিয়ে
পেইজ- Nazara shop