হার না মানা একজন সংগ্রামী নারীর জীবনের গল্প।
""হার না মানা একজন সংগ্রামী নারীর জীবনের গল্প"।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম
শুরু করছি মহান রাব্বুল আলামিনের নামে যিনি আমাকে আপনাকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হিসেবে তৈরি করেছেন এবং এখনো পর্যন্ত সুস্থ স্বাভাবীকভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
কৃতঙ্গতা জ্ঞাপন করছি আমার মা,বাবা ও
Iqbal Bahar Zahid স্যারের সাথে সাথে সকল স্যারদের প্রতি। যারা প্রতিনিয়ত সৎ ও ভালো মানুষ হিসেবে আমাকে তৈরি করতে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন..
....সমাজ, সংসার জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের দিগন্ত ছুঁয়ে দেখতে জীবন চলার গতিকে কর্মের শক্তিতে আবদ্ধ করে প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর নানামুখী বাস্তবতার অলিগলি পেরিয়ে ছুটে চলে স্বপ্ন ও সাফল্যের দিগন্ত নাগালে পেতে।
এমন কঠিন বাস্তবতা চিন্তার দ্বিধা দ্বন্দ্ব জয় করে জীবনের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করাটা আরও ভীষণ কঠিন। কিন্তু এমন কঠিন সব প্রতিকূলতাকে ছুঁড়ে ফেলে সাধারণ জন নারী সমাজে জাগরণ সৃষ্টি করে। যা বাংলার নারী সমাজের জাগরণের অগ্রদূত
"বেগম রোকেয়ার" স্বপ্নের জয়জয়কার বলে মেনে নিতেই হয়।
বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থা ও শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়ানো একজন স্বপ্নবাজ, সফলতার অগ্রগামী ,হার না মানা এক সংগ্রামী নারীর জীবনের গল্প লিখতে যাচ্ছি---
তিনি আর কেউ আমি নিজেই.....
আমি নাজমা নুর,
৪ সদস্য পরিবারে আমার বেড়ে উঠা,বড় হওয়া। আম্মু, আব্বু,আমি আর ছোট ভাই নিয়েই আমাদের পরিবার।
আম্মুঃ সরকারী প্রাইমারিতে(ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্বরত)
আব্বুঃ প্রবাসী( কাতার) আছেন।
আমিঃ পড়ালেখা রানিং + (উদ্যোক্তা)।
ছোট ভাইঃ ইস্টুডেন্ট+(সাউন্ড আরটিস্ট) ।
👉উদ্যোক্তা হওয়ার সুপ্ত মনবাসনা সবার ভেতরেই কম বেশী জাগে। কারন কেউ চায় না অন্য কারও অধীনস্থ্য হিসেবে কাজ করতে। অন্যকারও হুকুম তামিল করতে। কিছু উদ্যোক্তা হওয়ার মত সাহস দেখাতে পারে খুব কম মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে সফলতা পায় এমন মানুষও খুব বেশী নয়। নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে যায় উদ্যোগগুলো।
নারী উদ্যোক্তাদের পথে ঝুঁকির সম্ভাবনা শতভাগ।নিজেদের প্রতিভা দিয়ে এই পথে হাঁটতে হয়।
ঠিক সেই মনবল নিয়েই আমার ছুটে চলা উদ্যোক্তা জীবনে--
আমি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘুমাতাম ৩ ঘন্টা আর বাকী সময় নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ে কাজ করতাম।
এত কষ্ট করার পর ও ইনকামের মুখ দেখা হয়ে উঠেনি।
২০২১ শে ১০,০০০/- কোর্স নিলাম, ভর্তি হলাম হাতে কলমে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো বলে, কিন্তু হাতে কলমে শিখে বের হলাম নেটওয়ার্ক মার্কেটিং।
তবে যত যাই হোক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং আমাকে কথা বলা শিখিয়েছে, কাস্টমার চাহিদা, কাস্টমার কমিউনিকেশন, কাস্টমার কেয়ার, সেল বৃদ্ধি, টিমওয়ার্ক,মেনার্স শিখিয়েছেন। যা অশ্বীকার করবো না।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ে থাকা কালীন "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন গ্রুপ খুজে পাই, তবে ২০২১ থেকে স্যারের অনলাইন ভিডিও শেসন গুলো মাঝে মধ্যে দেখা হতো, ইউটিউবে।
@ইমরান ভাইয়ের মাধ্যমে রেজিস্টেশন করলাম ব্যচঃ১৮, শেসনঃ৭৫ তম দিনে।
এবং সে দিনে কুমিল্লা অনলাই মিটআফে দেখতে পাই
শ্রদ্ধেহ্ ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে।
৫ মিনিটের একটা বক্তব্য শুনলাম, তার আগে একজন আপুর উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প শুনলাম, সে থেকে ঘোষণা করে দিয়েছে নিজের সাথে যুদ্ধ। শুরু হলো নিজের সাথে নতুন যুদ্ধো, কী ভাবে হয়ে উঠবো এক নতুন পরিচয়ে @উদ্যোমী Nazma Nur.
সাথে সাথে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ছেড়ে দিলাম, অবশ্যয় আমাদের কোম্পানীগন্জ্ঞ এ্যম্বাসেডর ও খুব সাহায্য করেছেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে।
হঠাৎ কাজ ছেড়ে দিয়ে প্রচুর ডিফ্রেশনে পড়ে যায়। সময় যাচ্ছে না, বিরক্ত লাগতো সব, কারো সাথে কথা বলতাম না, শেসনে আসতাম না। খাবার,ঘুম সব চেড়ে দিয়েছি। সারা দিনে আমি ১০টা কথাও বলতাম না, রাতে বেলকনিতে শুয়ে শুয়ে তারা দেখতাম, দিনে রুমের দরজা, জানাল ,লাইট অফ করে শুয়ে থাকতাম।
শুধু একটা কথাই মাথায় গুরতো, আমার আর কোনো পরিচয় নাই। মানুষকে আমি কি নামে পরিচয় দেবো? মানুষ আমাকে কি নামে চিনবে?
শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়লাম, দীর্ঘদিন অসুস্থতা কাটিয়ে, শুরু হলো আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময়।
এর মাঝে শেষ হয়ে গেলো ১৯,২০,২১, ২২ তম ব্যচ।
ফাইনালি, শুরু করলাম অক্টোবর 2022ইং এর দিকে রিসেলার হিসেবে কাজ করার, প্রাইজ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলো না, কারণ ছোট থেকে এত বড় হয়েছি কখনো একটা সেইফটিপিনের জন্য ও আমি মার্কেটে যেতাম না। নিজে প্রছন্দ করে কিছু ব্যবহার করার কোন ইচ্ছা আমার ভেতর আজ ও কাজ করে না।
অক্টোবর, নভেম্বর মাস কাজ করি জহিরুল ভাইয়ের সাথে, কিন্তু ভাই অফিসের জন্য টেক্সটের রিপ্লাই দিতে পারতেন না,অনেক কাস্টমার হারিয়েছি, তাই আমি কাজ চেড়ে দিলাম,তখন শুধু কাজ করতাম কোম্পানীগন্জ্ঞ এ্যম্বাসেডরের সাথে জেন্টস আইটেম নিয়ে। মোটামুটি সাড়া পেলাম, পরে তিনি বললেন উনার বোনের সাথে কাজ করতে, শুরু করলাম আপুর সাথে কাজ করা, ১২ই ডিসেম্বরের থেকে আপু ক্যশমেমোর সাথে ড্রেস পাঠায় দিতেন, কোন পেমেন্ট ছাড়াই। তবে ৫ বা ৭ দিন পরে কিছু টাকা পেমেন্ট করতাম। পুরে ডিসেম্বর মাস সেল করলাম আপুর পণ্য।
👉এরপর, আমি এমন বাজে ভাবে ঠকে গিয়েছি যে, ব্যবসা তো দূরের কথা আমাকে বেঁচে তোলা তখন একটা চ্যালেন্জের বিষয় হয়ে উঠেছে ডাক্তারদের কাছে। আর সে ভোগা আমাকে মৃত্যু পর্যন্ত ভুগতে হবে।
আপুর সব পণ্য ফেরত পাঠিয়ে একা একা পড়ে আছি।
তখনো খারাপ লাগতেছে চটপট করতেছি। ভেতরে ভতরে জেদ কাজ করতেছে
আমি তো নিজেকে নিজে কথা দিয়েছিলাম, এক উদ্যোমী নারী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করবো।
কিন্তু আজ আমি বিচানাই পড়ে আছি।
নিজের কাছে হেরে যাবো তা মেনে নিতে পারছিলাম না।
এরপর ২১ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখ থেকে শুরু করলাম আবার যাত্রা, নিজস্ব মূলধন ২০,০০০ নিয়ে।
৩ দিনে সব ইস্টক শেষ। আবার ৪০,০০০টাকা ইনভেস্ট করলাম তা ও টোটাল ৭দিনে সেল করে পেলছি, এইভাবে পুরো ১ মাসে সেল করলাম একাই
১,৫০,০০০ টাকার পণ্য।
সর্বশেষ সেল করছি
২৬ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত ।
১মাসে সেল করেছি 1,50,000 টাকার প্রোডাক্টস।
শুধু লেডিস ড্রেস আইটেম।
👉জেন্টন্স আইটেম ও ছিল ২০,০০০ টাকার একটা হিসাব আছে,শুধু পান্জ্ঞাবী আইটেমের বাকি গুলা হিসাব ছাড়া।
💢 অনলাইন এবং অফলাইন কাস্টমার ছিল।
ইভেন, নিজে গিয়ে ডেলিভারি পৌঁচায় দিতে হয়েছে।
এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। আলহামদুলিল্লাহ্।
এখন ৮-১০ জন স্বপ্নবাজ আপু এবং ভাইয়াদের দায়িত্ব নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে হাঁসি ফোঁটাতে একজন উদ্যোমী নারী উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
💌 বর্তমানে ২টা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি Nur Shop BD, এবং Nur E jannat Organic food & Care.
দোয়া করবেন যেন, সতভাবে লেগে থাকতে পারি।
নারী উদ্যোক্তাদের যদিও অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়,তবুও আমি ধৈর্য্য হারাই নি।
আমার আম্মু,আব্বু সবসময়ই বলেতেন আমি নাকি ছোট বেলা থেকেই খুবই ধৈর্যশীল ,আর চুপচাপ থাকতাম এজন্যই নাকি আমি জীবনে ভালো কিছু করতে পারবো।তাই আমার আম্মু -আব্বুর দোয়া ও সাপোর্ট, এবং আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসা নিয়ে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবো। ইনশাআল্লাহ্।
👉 আমি আমার মতো নারী উদ্যোক্তাদের বলতে চাই,একজন পুরুষের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হলেও বাংলাদেশে শুধুমাত্র নারী বলে বিভিন্ন আচরণের সম্মুখীন হতে হয় একজন নারী উদ্যোক্তাদের।তাই বলে থেমে গেলে হবে না কি?
প্রতিষ্ঠিত বা পরীক্ষিত পথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। উদ্যোক্তা হতে লাগে--
১. সুযোগ সন্ধানী: ব্যবসা সংক্রান্ত নতুন নতুন সুযোগ দেখা । এ গুলির উপর কাজ করা এবং তা বাস্তবায়ন করা । আর্থিক সংস্থান, যন্ত্রপাতি, জমি, কর্মসংস্থান বা অন্যান্য সাহায্য লাভের জন্য লক্ষ্যনীয় সুযোগ গুলি ব্যবহার করা ।
২. অধ্যবসায়: যে কোন বাঁধা দূর করা অথবা যে কোন চ্যালেন্জ মোকাবিলা করতে বার বার পদক্ষেপ নেয়া। লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য বিকল্প পথ সন্ধান করা।
৩. কাজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা: গ্রাহকদের জন্য কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে উদ্ভুত সমস্যাবলীর দায়-দায়িত্ব নেয়া। শ্রমিকদের সাথে কাজে লেগে থাকা এবং তাদের মাধ্যমে কাজগুলি করিয়ে নেয়া যাতে গ্রাহকগণ সর্বদা সন্তুুষ্ট থাকেন।
৪. গুনগতমান ও দক্ষতার চাহিদাঃ উন্নত, দ্রুত এবং সস্তায় পন্য সরবরাহের জন্য পথ খুজে বের করা। অতীতের সকল উৎকর্ষতাকে হার মানিয়ে নতুন এবং সবচাইতে ভালো ক্রেতা যে রকম চায় সেই রকম ভাবে পন্য দিতে সর্বচ্ছ চেষ্টা করা ।
৫. ঝুঁকি গ্রহনঃ ঝুঁকি গ্রহন করার মনোভাব থাকতে হবে । একজন সফল উদ্যোক্তার নিজের মত অনুযায়ী সহনীয়/পরিমিত ঝুঁকি গ্রহন করবে।
৬. তথ্য অনুসন্ধান: ব্যক্তিগতভাবে গ্রাহক, সরবরাহকারী ও প্রতিযোগী সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা । তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজের এবং ব্যবসায়িক বিভিন্ন ব্যক্তি বা নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো
৭. লক্ষ্য নির্ধারন: পরিস্কার ও দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারন করা । একজন উদ্যোক্তা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা করা ।
৮. সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পরিচালনা: লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা করা এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত করা। বড় কোন কাজকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে ছোট ছোট অংশে করে ফেলা ।
৯. সম্পর্কস্থাপন: অন্যকে অনুপ্রাণিত বা প্রভাবিত করতে সঠিক কৌশল ঠিক করা । নিজের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত যোগসূত্রসমূহ ব্যবহার করা ।
১০. আত্মবিশ্বাসঃ নিজের ক্ষমতা ও যাবতীয় গুনাবলীর উপর শক্ত বিশ্বাস রাখা । কোন কঠিন কাজ বা চ্যালেন্জ মোকাবিলা করার জন্য নিজের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখা ।
☘️ উদ্যোক্তা হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তার কোনো বিকরল্প নাই। তিল তিল করে গড়ে তোলা বিজনেস এক সময় বিশাল শিল্প সামাজ্য করে সাজাতে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। অধিক পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। কোনো কারণে কাজে সফল না হতে পারলে হাল ছাড়লে চলবে নাউদ্যোক্তা হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তার কোনো বিকরল্প নাই। তিল তিল করে গড়ে তোলা বিজনেস এক সময় বিশাল শিল্প সামাজ্য করে সাজাতে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। অধিক পরিশ্রম করার।অধিক মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি, আমার উদ্যোক্তা জীবনের সংগ্রামী গল্পের কিছু অংশ।
ধন্যবাদ
আমার শুভাকাঙ্ক্ষী বৃন্দুরা।
নামঃ নাজমা নুর
ব্যচঃ ১৮,
রেঃজিঃ নংঃ ১০১১৮৮
কোম্পানীগন্জ্ঞ,নোয়াখালী