সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ -বেদনা,পাওয়া-নাপাওয়া সব মিলেই আমাদের জীবন।
💙 জীবনের গল্প 💙
💗💗 সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবংএখন পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন, ভালো রেখেছেন।
💚 💚 শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে স্মরণ করছি আমার মা ও বাবাকে, যাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং ঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব নয়।
💖 💖 শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রিয় শিক্ষক, মেন্টর, ভালো মানুষ গড়ার কারিগর, জীবন্ত কিংবদন্তি, লাখো তরুণ - তরুণীর আইডল, জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা পেয়েছি চমৎকার একটি প্লাটফর্ম " নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন "। পেয়েছি অসংখ্য ভালো মানুষের একটি পরিবার।
👉👉 চলে যাচ্ছি গল্পের মূল পর্বে........
🕛🕛 সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ -বেদনা,পাওয়া-নাপাওয়া সব মিলেই আমাদের জীবন। কিছু অপূর্ণতা, কিছু হারানোর বেদনা জীবনে থাকতেই পারে। কারণ, জীবন পুষ্প শয্যা নয়। বাস্তবতার সাথে মানিয়ে চলাই জীবন।
🌹🌹 জন্ম পরিচয়ঃ
আমি শিরিন সুলতানা। পিরোজপুর জেলার, নাজিরপুর থানার একটি ছোট্ট সবুজ গ্রামে আমার জন্ম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপা তালতলা নদী। নদীর সাথে আমাদের গ্রামের মানুষের জীবন ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিল। আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, মা গৃহিণী। আমরা আট ভাই-বোন। ছয় বোন দুই ভাই।
☘️🌺 শৈশব জীবনঃ
আমার শৈশব জীবনটা ছিল ভীষণ মধুর। আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, যেটি ছিল গ্রামের শেষ প্রান্তে। এতটা দূরে যাওয়া বাচ্চাদের জন্য কষ্টকর। তাই আমার বাবা গ্রামের বাচ্চাদের জন্য একটি পাঠশালা করে দিলেন। সেই পাঠশালাতেই আমার পড়াশোনার হাতে খড়ি।
আমরা ছোট তিন ভাই-বোনই ছোটবেলায় এই পাঠশালায় পড়াশোনা করি। আমি এখানে ভোর বেলা আরবি পরতাম এবং দশটা থেকে বাংলা পড়তাম। সবাই বলে, ছোট থেকেই আমি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলাম। আরবি এবং বাংলা দুইটাতেই ভালো করতাম, তাই শিক্ষক, মা-বাবা সবাই খুব আদর করতেন।
তবে শৈশবের সবচেয়ে মধুর স্মৃতি হচ্ছে বন্ধু-বান্ধব, ভাই -বোন, সমবয়সী চাচতো ভাই-বোন সবাই মিলে খেলা করা। সারাদিন খেলা করতাম। জীবন নিয়ে কোন চিন্তা ছিলনা। ছিলনা কোন প্রতিযোগিতা। খেলতে খেলতে কারো সাথে ঝামেলা হলে একটু পরেই আবার মিটে যেত। এগুলো কেউ ধরে রাখতামনা। নদীতে সবাই মিলে গোসল করতাম, হৈহুল্লোর করে মজা করতাম। সত্যিই অসাধারণ আমার শৈশব স্মৃতি।
📒🖊️ পড়াশোনাঃ
পাঠশালাতেই শিশু শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উঠলাম। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে, ছয় মাসের মধ্যেই আমার প্রথম শ্রেণীর সব পড়া কমপ্লিট হয়ে গেল। স্যার আমার বাবাকে বললেন প্রাইমারি স্কুল থেকে আমার জন্য দ্বিতীয় শ্রণীর বই আনতে। বাবাও তাই করলেন। বাকি ছয় মাসে আমার দ্বিতীয় শ্রণীর পড়াও কমপ্লিট হয়ে গেল। এবার বাবা আমার কেবল বড় ভাইয়ের সাথে আমাকে তৃতীয় শ্রণীতে, বাড়ী থেকে একটু দূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলেন। নুতন স্কুল, নুতন পরিবেশ সবমিলিয়ে ভালোই চলছিল। এখানেও আমি সব ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করলাম আলহামদুলিল্লাহ্।
এরপরে আমি মালিখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি তে ভালো রেজাল্ট করি। উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য আমাকে পিরোজপুর মহিলা কলেজে ভর্তি করা হল। এখানেও আমি ভালো রেজাল্ট করি, আলহামদুলিল্লাহ্। আমার মা-বাবা, ভাই-বোনেরা সবাই খুবই খুশি হল। বাবা অনেক বেশি খুশি হলেন এবং মাকে বলতেন দেখো আমার মেয়ে ভবিষ্যতে অনেক বড় হবে।
এখানে একটা কথা না বললেই নয়,,, আমার বড় ভাইয়ার কথা।
আমার পড়াশোনার এবং সামনে চলার সব গাইডলাইন দিতেন আমার বড় ভাইয়া। ভাইয়া তখন কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অনার্স পড়তেন। ভাইয়া আমাকে খুব ভালোবাসতেন।
ইন্টারমিডিয়েট পাশের পরে অনার্স পড়ার জন্য আমি ইডেন মহিলা কলেজে, ইংরেজি বিষয়ে চান্স পেলাম। সবাই খুব খুশি হল।
😭😭 কিন্তু এরপরেই আমাদের পরিবারের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে যায়। হঠাৎ এক রাতে বাবা ঘুমের ভিতর স্ট্রোক করে আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে যান😥। আমাদের মাথার উপরের ছায়াটা চলে গেল। সবাই ভীষণ দুঃখের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ বড় সন্তান হওয়ায় বড় ভাইয়া এবং বাবার মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পরে বড় ভাইয়া ভীষণ ভেঙ্গে পড়ে।
এর ভিতরে আমাদের পরিবারের উপর দিয়ে বয়ে গেল আরেকটি তান্ডব লীলা। বাবা মারা যাওয়ার আড়াই মাস পরেই বড় ভাইয়া আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ওপারে চলে গেলেন😭। ভাইয়ার এপেনডিসক অপারেশন করতে গেছিল, অপারেশন শেষে ভাইয়ার জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার বলেছে ভাইয়া হার্ট অ্যাটাক করেছে।
এত অল্প বয়সে, এত তাড়াতাড়ি ভাইয়া আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে, কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। মূলত হায়াত-মউত সবইতো আল্লাহর হাতে।
তবে এই শোক আমরা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না।আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।আমার মা শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে স্বামী এবং বড় ছেলেকে হারিয়ে আমার মায়ের অবস্থা ছিল তখন পাগল প্রায়। সবকিছু যেন থমকে যায়। এরপরে প্রায় দুই বৎসর পর্যন্ত প্রতি রাতে আমি কাঁদতাম। এখন পর্যন্ত এই শোক আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
যাইহোক, বাবা এবং বড় ভাইয়া চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনে অনেক বাঁধা-বিপত্তি চলে আসে। অনেকে ভাবে এখনতো আমাদের শক্ত কোন গার্ডিয়ান নাই, এই সুযোগটা তারা নিতে চায়। আমার পড়াশোনার উপরও এর প্রভাব পরে। কিছু মানুষ বলতে শুরু করে, মেয়ে মানুষের আর পড়াশোনা করার দরকার নাই। কিন্তু আমার পড়াশোনার প্রতি ভীষন ভালোবাসা ছিল। আমি কিছুতেই পড়াশোনা ছাড়তে রাজি ছিলামনা। যতবার বাঁধা আসতো, আমি ততবার আরো বেশি উদ্দীপনা নিয়ে পড়াশোনা করতাম। তখন আমি বুঝতে পারি, আমাদের এই সমাজে মেয়ে হয়ে সামনে এগিয়ে চলা কতটা কঠিন। তার উপরে মাথার উপরের ছায়া বাবা-বড় ভাই না থাকলে জীবনটা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
যাইহোক, আমি হাল ছাড়িনি। সব বাঁধা অতিক্রম করে আমি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়েছি। অনার্স এবং মাস্টার্সে ভালো রেজাল্ট করি, আলহামদুলিল্লাহ্।
☘️🌻 চাকরি জীবনঃ
ইংলিশে অনার্স এবং মাস্টার্স করার পরে আমি স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে নিবন্ধন পরীক্ষা দেই। এবং আল্লাহর রহমতে দুইটাতেই সফলতার সাথে কৃতকার্য হই, আলহামদুলিল্লাহ।
এরপরে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে আমি কলেজ পর্যায়ে সিলেক্টেড হই।
💖 বর্তমানে আমি একটি প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছি। আলহামদুলিল্লাহ্।
💠 পারিবারিক পছন্দে আমার বিবাহ হয়। আমার বর একটি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে চাকরী কMoবর্তমানে তিনি এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে স্যারের দেওয়া সেশন থেকে শিক্ষার্জন করছেন এবং পাশাপাশি একটি অনলাইন বিজনেস শুরু করেছেন।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
☘️🌺 নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের সাথে পরিচয়ঃ
এই ফাউন্ডেশনের ইংরেজি ট্রেইনার Mr. Kamrul Riyad স্যারের কাছেই প্রথম এই ফাউন্ডেশনের নাম শুনি। স্যারের English Lifetime এ আমি স্পোকেন কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। স্যার অত্যন্ত ভালো মানুষ। স্যারের মুখে এই ফাউন্ডেশনের নাম শুনে আমি রেজিষ্ট্রেশন করতে আগ্রহী হই। আমি ২২তম ব্যাচে এই গ্রুপে রেজিষ্ট্রেশন করি। আমার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ১,১৮,২৭৩।
🫶🫶 গ্রুপে রেজিষ্ট্রেশন এবং জেলা মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হতে সাহায্য করেন, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি ও মডারেটর মোঃ রাইসুল ইসলাম সাকিল ভাইয়া, Ohida Moni আপু, Salma Akter আপু।
সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।
💕💕এ গ্রুপে যুক্ত হয়ে সেশন চর্চা ক্লাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে অনুপ্রানিত করে যাচ্ছেন, বরিশাল বিভাগীয় মডারেটর এবং কোর ভলান্টিয়ার A M Saiful Islam ভাইয়া, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি ও মডারেটর মো. রাইসুল ইসলাম সাকিল ভাইয়া, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি Ohida Moni আপু, সৌদি আরবের কান্ট্রি এম্বাসেডর Toriqul Islam ভাইয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলা এম্বাসেডর Salma Akter আপু, স্বরূপকাঠি উপজেলা এম্বাসেডর Shahidul Khan ভাইয়া, Md. Abdullah ভাইয়া, Md. Rasel Sheikh ভাইয়া সহ আরো অনেকে।
সবাইকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। আশা করি সবাই এভাবেই সবসময় পাশে থাকবেন।
🌿💗 ফাউন্ডেশন থেকে যা পেলামঃ
২২তম ব্যচে যুক্ত হয়ে টানা ৯০ দিনের স্যারের দেওয়া সেশন গুলো পাঠ করেছি এবং নিয়মিত সেশন চর্চা ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছি। প্রতিনিয়ত অনেক অসাধারণ কিছু শিখছি এই ফাউন্ডেশন থেকে। এখনও প্রতিদিন স্যারের দেওয়া সেশন গুলো পাঠ করি এবং স্যারের দেওয়া নির্দেশনা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করি।
🥀🥀স্যারের যে কথাটি আমার সবথেকে বেশি ভালোলাগে......
" জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হওয়া। "
স্যারের দেওয়া সেশন গুলো পাঠ করে অনুপ্রাণিত হয়ে একজন ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। এবং শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই।
আবারো শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি, যিনি নিঃস্বার্থ ভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের সেশন গুলো দিয়ে যাচ্ছেন বিনামূল্যে। যিনি লাখো বেকার তরুণ-তরুণীকে আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা পেয়েছি এই ভালো মানুষের পরিবার।
💖💖 প্রিয় স্যারের যে কথায় অনুপ্রাণিত হইঃ
✅ জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হওয়া।
✅ স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন..... সাফল্য আসবেই।
✅ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে সততা ও কমিটমেন্ট।
✅ সার্টিফিকেট নয়, দরকার দক্ষতা ও কাজ শেখার শিক্ষা।
✅ হয় জিতবেন অথবা শিখবেন, হারবেন না কখনো, সুতরাং কখনো থেমে যাওয়া যাবে না।
💕💕প্রিয় স্যারের এই কথাগুলো প্রতিনিয়ত আমাকে অনুপ্রাণিত করে, আমাকে স্বপ্ন দেখায় একজন ভালো মানুষ হতে।
আমার স্বপ্ন আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হব এবং অসহায়, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াব। সকলের কাছে দোয়া চাই, আমি যেন সফলতা অর্জন করতে পারি।
আবারো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রিয় স্যারের প্রতি, এত চমৎকার একটি প্লাটফর্ম আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।
☘️🌺 এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে আমার গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার লেখায় কোন ভুল - ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। সবার জন্য দোয়া এবং শুভকামনা রইল।।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৬১
তারিখ ৯-৯-২০২৩ ইং
🌿🌿 ধন্যবাদান্তে.......
নামঃ শিরিন সুলতানা
নিজ জেলা এবং বর্তমান অবস্থানঃ পিরোজপুর
থানাঃ নাজিরপুর
ব্যাচঃ ২২
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারঃ ১,১৮,২৭৩।