আতংকিত হয়ে থাকি কখন কি হয়ে যায়
#পুরো_লাইফটাই_একটা_গল্পের_জুড়ি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম
প্রকৃতির পরিবর্তন কতই না সুন্দর! এই যে এখন শরৎকাল। শরতের ফুলে ফুলে সেজে উঠা প্রকৃতির সাজ দেখে মুগ্ধতা ছেয়ে যায়! মাঝে মাঝে হঠাৎ বৃষ্টির আগমনে প্রকৃতির সাজকে আরও ফুটিয়ে তুলে।
নদী, বিল,পুকুর ও হাওরের স্বচ্ছ পানির ফোয়ারার মাঝে শুভ্র শাপলার পাগল করা হাসি! যেন প্রেয়সীর হৃদয়কাড়া হাসির মতোই মনে হয়।সেই সাথে শিশির ভেজা শিউলি ফুল অপুর্ব সৌন্দর্য নিয়ে ঘাসের বুকে হাসে।
তা কেবলই মাত্র ভোরের সকালে অনুভব করা যায়। কেননা প্রকৃতির সব সৌন্দর্য ছোঁয়া যায় না, দেখা যায় না! কেবল সেটা ফিল করা যায় ভোরের সূর্যদয়ে।
আল্লাহ যে আমাকে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য উপভোগ করার তৌফিক দান করেছেন তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। মহান রাব্বুল আলামীনের এই সৃষ্টির মাঝে কিছু কিছু সৃষ্টি এতোটাই মনোমুগ্ধকর ও পরোপকারী যা জীবনের মানে বুঝাতে সাহায্য করে এবং জীবনের বাস্তবতা কি উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
তেমনি সষ্টার সৃষ্টির সেরাদের মাঝে আমিও পেয়েছি এক অপূর্ব সুন্দর মনের মানুষ যার বিনয়ী আচরণ, লেগে থাকার প্রবল ইচ্ছে শক্তি এবং ধৈর্যের পাহাড় আমাকে করেছে মুগ্ধ এবং যার সৃষ্টির সেরাদের মধ্যে সেরা অনলাইন প্লাটফর্ম #নিজের_বলার_মতো_একটি_গল্প_ফাউন্ডেশন আমাকে দিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ।
আর সেই প্রতিষ্ঠাতার নাম হচ্ছে আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid Sir। স্যার শিক্ষার আলোয় আলোকিত লাখো তরুণ -তরুনী। এবং তৈরি হয়েছে লাখো উদ্যোক্তা যা বাংলাদেশের বেকারত্ব গোছাতে ব্যাপক ভুমিকা পালন করছে।
এমন একজন শিক্ষকের ছায়াতলে আসতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। কেননা একতাবদ্ধতা কি জিনিস তা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার দেখি দিয়েছেন। ৬৪ জেলা হতে ৫৫ টা দেশের মানুষ একই ছাদের নিচে বিনে সুতার বন্ধনে গেঁথে রেখেছেন যা ছিড়ে যাবার ভয় নেইকো।
তার জন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।এবং তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো শব্দ নেইকো আমার ডিকশনারীতে।
এবার আসি স্মৃতির পাতায় ইতিহাস যেটুকু তৈরি হয়েছে সেটাও বা কম কিসের। রংধনুর সাত রঙের ছোঁয়া মেশানো লাইফ ছিল।
কখনও রাতের অন্ধকার স্পর্শ করতে পারেনিকো কেননা সহজ সোজা ভাবনায় জীবন ছিল মুখরিত। কিন্তু পরিস্থিতি কি আর একি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে সে তো পর্দাথের ন্যায় জায়গা দখল করে স্থান পরিবর্তন করে তাই তার উপস্থিতি টা একেক জায়গায় একেক রকম।
আমিও পরিস্থিতির ফ্রেমে বাঁধানো সময়ের কাছে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আটকা পড়ে যাই।সেটা ইচ্ছেকৃত নাহলেও মনের অবচেতনের কারণে আটকে যেতে থাকি মাসের পর মাস বছরের পর বছর।
কলেজ লাইফ পেরিয়ে যখনই পা রাখি ভার্সিটি লাইফে তখন জীবনে নাটকীয় মোর নিতে শুরু করে। মনে হচ্ছিল ভবের এই রঙ মঞ্চে অভিনয় টা হচ্ছে আমার পরিচয়। আমি কি রকম পারফরম্যান্স দিচ্ছি সেটার ভিত্তিতে আমার আইডেন্টিটি তৈরি হচ্ছে।
তবে পারফরম্যান্স যাইহোক সেটার পেছনে তো কলকাঠি নাড়ে মনের ভেতরের রঙিন স্বপ্নগুলো।
এবার আসি সেই স্বপ্নের রাজ্যে যেখানে অনাবিল সুখ আর সমৃদ্ধির পাহাড়।
স্বপ্ন ছিল টিচার হবার দেশের শিক্ষত জাতি গড়ার কারিগর হবো সেই সাথে ছিল ডিজাইনার হবার স্বপ্ন। কিন্তু পড়াশোনা করি বিজ্ঞান বিভাগে। স্বপ্নের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে পা রাখলাম সরকারি জবের ইন্টারভিউ জগতে।
কিন্তু সব স্বপ্ন কি আর সত্যি হয় কিংবা সব জায়গায় কি মেধার বিকাশ ঘটে! ঘটে নাকো, আমারও লাইফে মেধার বিকাশ ঘটেনি। জবের স্বপ্নের গুটিয়ে নিয়ে হাটঁতে শুরু করি আবারও স্টাডি লাইফে। বেশ ভালোই কাটছিলো দিনগুলো।
কিন্তু যেহেতু ঋতুর পরিবর্তন ঘটে দু মাস পর পর এমনকি ৩০ দিনের মধ্যে চাঁদের ১৫ দিন থাকে আলোয় ঝলমলে আর বাকি পনেরো দিন থাকে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। আবার নতুন আলোর মুখ দেখার অপেক্ষায়।
আমার জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ বা প্রতিটা মূহুর্ত সেই রকম পরিবর্তীত হতে থাকে প্রকৃতির মতো।কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি আবার কখনও ঝলমলে আলোয় সোনালী রোদের হাসি।
এই সবকিছুর মিশ্রনের ফলে সিচুয়েশন অনুযায়ী এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন সমীকরণ টি প্রমাণ করে দেয় যে কি কি ঘাটতি ছিল জীবনে! লাইফে কি কি উপাদান মিসিং ছিল!আর নতুন এমন কি কি অধ্যায় আছে যা জীবনের সাথে যোগ হলো! তো আমার লাইফে নতুন উপাদান যোগ হল মোবাইল ফোন।
পরিচিত হলাম মোবাইলে ফোনের সাথে। সেটাকে নিয়ে শুরু হল হাজারো কল্পনা। সঙ্গী হিসেবে নতুন এড হলো ফেইসবুক, ইউটিউব, ইমো,হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেনঞ্জার।
পড়াশোনার জগতে ব্যস্ততার পাশাপাশি মোবাইলে বেড়ে গেল প্রচুর ব্যস্ততা সেই সাথে বেড়ে গেল বকার পরিমাণ। কেননা এতোটাই মোবাইল নিয়ে বিজি থাকতাম যে, কে আসলে কে গেল কি ঘটছে সেটার প্রতি কোন খেয়াল থাকতো না।
শুধু একটা কাজ নিয়ে বিজি থাকতাম অন্য কোন কাজে মনযোগী হতে পারতাম না।এমনকি পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ি। আর ঠিক তখনই আগমন ঘটে আরেক মহাবিপদ যার ভয়ংকর রুপ আমার লাইফে অনেকটা প্রভাব ফেলে।
সেই ভয়ংকর রুপের নাম হচ্ছে আমাদের এলাকার বখাটে কিছু বড় ভাইয়ারা।তাদের নজরে পড়ে যাই।যার ফলাফল হিসেবে ভোগ করতে হয় বন্ধী জীবন যাপন। স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি নিজের বাড়িতে নিজেই বন্ধী।
এর আরও একটা সাইড এফেক্ট হল বান্ধবীদের সংখ্যা কমে আসা। একটা সময় উপলব্ধি করি যারা সবচেয়ে আমার কাছের বান্ধবী ছিল যাকে বলে এক কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড ওরাও সেই ভাইয়াদের দলে ভিড়ে যায়। তখন অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের দেখছি কি করে এতোটা পরিবর্তন চলে আসতে পারে মানুষের জীবনে।
কাউকে কিছু বলতে পারছিনা বুঝাতে পারছিনা কি করবো শেষমেশ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একা একা হাঁটতে শুরু করলাম।নেই কোন আড্ডা নেই কোন আনন্দ উল্লাস।
পথের সীমানা তৈরি হয়ে গেল রান্না ঘর থেকে বাথরুম পর্যন্ত এর মাঝে খানে যে কয়টা রুম থাকে আরকি। মাঝে মাঝে উঠানে বের হতাম খোলা আকাশের উন্মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিঃস্বাস নিতে।
তারপর আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছি নিজেকে একাকিত্বের সাথে।
তারপর যখন এক্সাম শুরু হতো শুধু গিয়ে এক্সাম দিয়ে আসতাম। কিন্তু ছিল না কোন কথার আড্ডা ছিল না কোন হই হুল্লোড়।
আর ঠিক তখনই আমার একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে মোবাইল ফোন।তারপর হাতের কাজের প্রতি মনযোগী হয়ে পড়ি। এমনকি শখের বসে ব্লক,বাটিক,হ্যান্ড পেইন্ট, স্ক্রিন প্রিন্টের কাজের প্রশিক্ষণ নেই ৬ মাসের র্কোস করে সার্টিফিকেট অর্জন করি।
তারপর আস্তে আস্তে সব উপকরণ নিয়ে আসে কাজ করার জন্য তবে সেটা বিজনেস এর জন্য নয় নিজের ব্যবহৃত জিনিসের জন্য। সবসময় মাথায় কাজ ইউনিক কিছু করবো। আমার যে জামাটা তৈরি সেটা অন্য কারোর হতে পারবে না।এক রকম জেদ ছিল বটে।কিন্তু মার্কেটে তো আমার চাহিদা মতো ডিজাইন করবে না ওয়ান পিছ।
ঠিক সেই কারণে হাতের কাজের প্রতি মনযোগী হয়ে উঠে যে আমি যা পড়বো নিজে ডিজাইন করে পড়বো, সেটার কোন কপি থাকবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ করা। তারপর দেখলাম কিছু কিছু আপুরা হাতের কাজের পণ্য তৈরি করে ঘরে বসেই বিজনেস করছে।
আমরাও শখ হল কিন্তু তেমন জোরালো ছিল না।তবে তখনই ফিল করি যে একটা মেয়ের নিজের পরিচয় থাকা দরকার।
যখন দেখলাম আমারই বড় বোনের মেয়ে হয়েছে বলে তার স্বামী তাকে গ্রহণ করেনি। এমনকি মেয়ের মুখ পর্যন্ত দেখেনি। দায়িত্ব নেওয়া তো দূরের কথা। মা মেয়ে দুজনেই বাবার সংসারের আশ্রয় নেন।
কিন্তু একটা মূর্হুতে দেখা গেল আপু কেমন অসহায় ফিল করছে কিছুর প্রয়োজন হলে কখনও বাবার কাছে কখনও ভাইয়াদের কাছে বলছে আমার এটা দরকার।
তখন ওরা কোনদিন না বলেনি কিন্তু যে সময়টাতে দরকার তখন না দিয়ে পরে দিত।সেই জিনিস টা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলে। ওর ছোট্ট মেয়েটার চাহিদা পূর্ণ করতে হলে সেই বাপ - ভাইয়ের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে।
তখনই দুই বোন মিলে প্রতিজ্ঞা করি আমরা নিজদের একটা পরিচয় তৈরি করবো।আপু বলে তুই পড়াশোনা চালিয়ে যা আমি কাজ শুরু করি। তাই করলাম।
তবে আমার বাবা আমাদের কোন আবাদার ফেলে দেন নি যখনই যা চেয়েছি তাই এনে দিতেন।আপুকে একটা সেলাই মিশন কিনে দেন।আপু প্রশিক্ষণ নেয় সেলাইয়ে উপরে। এবং কাজ শুরু করেন আস্তে আস্তে আপুর আয়ের পথ তৈরি হয়।একসময় দেখা যায় আপু মাসে ১০/১৫ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করে নেয়।
সেটা দেখে খুবই ভালো লাগে এবং মাঝে মাঝে আপুকে আমি সাহায্য করতাম। আর সাহায্য করতে করতে এক সময় আপুর কাছ থেকে আমি সেলাইয়ের কাজ শেখে নেই।এখন আপু অসুস্থ হলে আমি কাভার দিয়ে থাকি।
আর তখনই উদ্যোক্তা জীবনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করি। এবং পড়াশোনা পাশাপাশি খুঁজতে থাকি। এবং সব রকমের হাতের কাজ আয়ত্ব করে নেই শোপিছ থেকে শুরু করে গয়না তৈরি পর্যন্ত।
তারপর ফিল করলাম কিছু কিছু মানুষের হিংসার দাবানলে পড়ে গেছি।যার প্রভাব মারাত্মক আকারে ধারণ করে। আমাকে কিছু না বলে বাবা-মাকে, ভাইয়াদের উস্কানিমূলক কথা বলতে থাকে।
মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দেন না কেন? পড়ে বয়স হয়ে গেলে কেউ নিবে না। এতো পড়ালেখা করে কি হবে।
তারপর সেটা আস্তে আস্তে পরিবারের মানুষগুলো তাদের হৃদয়ে ধারন করে নিয়েছে।এবং আমাকে সেই ভাবেই র্ফোস করতে লাগলো। আমি তো বলে যাচ্ছি আরেকটু সময় দরকার।
এভাবে পরিবারের মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলি। এক সময় নিজের পারসোনাল বিষয় নিয়ে পরিবারের মানুষের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি।আমি একা আর পুরোপুরি পরিবার এক দিকে। যার জন্য যুদ্ধে সামিল হই সে আমাকে এমন পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দিল বলার ভাষা নেই।
তারপর বাবা-মা এমন একটা সিদ্ধান্ত নিল যা মেনে নিতে পারিনি একদম জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেবে।দেখলাম আমার হাতটা শক্ত করে ধরার মতো কেউ নেই। শেষমেশ বেঁচে নিলাম আত্মহত্যার পথ।
খুঁজে বেড়াচ্ছি কি করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায়। তারপর দেখলাম মায়ের ব্যাথার ঔষধ আছে সেই সাথে ঘুমের ঔষধ এবং দেখতে সেটাতে সিলিকা জেল যা খেলে শরীরের পানি শোষণ করে নেয়।
সেটাই খেয়ে নেই সাথে ঘুমের ঔষধ তারপর আমার সাথে কি ঘটেছিল কিছুই মনে নেই।যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি।যেই কথা বলতে যাবো তখনই আটকে যাই কথা বলতে পারিনা।
তখন দুনিয়া ভেঙে কান্না পাচ্ছে কাউকে কিছু বলতে পারছি না।সবাইকে দেখছি সবার কথা শুনছি কিন্তু কিছু বলার মতো শক্তি আমার নেই।তখন ডাক্তার বললো কন্ঠনালী ব্লক হয়ে গেছে তাই কথা বলতে পারছি না। কারণ আমার প্রচুর জ্বর ছিল সাথে কাশি গলা ব্যাথা তার উপরে অতিরিক্ত মেডিসিন।তখন ডাক্তার বললো কন্ঠনালীতে ইনফেকশন কারণে গলার স্বর অস্পষ্ট তাই কথা বলতে পারছি না। ৬ মাসের র্কোসের মেডিসিন দিয়েছে এবং প্রচুর পরিমানে পানি খেতে বলে যদি ভালো হয় তো ভালো নাহলে অপারেশন করতে হবে।
তারপর দেখলাম পরিবারের লোকও তাদের ভুল বুঝতে পারে।জোর করে কোন কিছু হয় না।আমাকে সাত্বনা দিচ্ছেন কিছু হবে সব ঠিক হয়ে যাবে। যে পরিবারের লোকজনের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে ছিলাম আজ তারাই আমার পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারপর ভেতরে অশান্তি শুরু হয়ে যায় টেনশনে ভোগতি থাকি কি হল আমার সাথে কেন হল? আমার জীবন টা কেন এমন হলো? আমি তো কারো কোন ক্ষতি করিনি? কি রকম অনুশোচনায় ভুগতে থাকি।
সেই সাথে নিরবতা ঘ্রাস করে নেয় আমাকে। আমি যেমন সাইলেন্ট মুডে চলে যাই তেমনি চুপচাপ সবার বিচরণ দুচোখ ভরে দেখতে থাকি।
তবে আমার চুপ থাকা মানে এই ছিল যে আমি যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। যেখানে নিজেকে প্রমাণ করার আর কিছু বাকি রইলো না কিংবা নিজেকে ব্যাখ্যা করতে করতে আমি ক্লান্ত।
এমনকি নিজেকে ব্যাখ্যা করার মত আর কোন শক্তি আমার কাজ কাজ করছে না সেই মন-মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছি। জীবনের অবধারিত প্রত্যেকটা পরিবর্তনগুলো আমি মেনে নিয়েছি।
কারো প্রতি কোন অভিযোগ ছিল না ভেবেছিলাম নিয়তি নিশ্চয়ই আমার সাথে পরিহাস করছে। তাইতো এই রকম সিচুয়েশনে দাঁড়িয়ে আছি।
তবে মনের ভেতর এইটুকু সাত্বনা ছিল আমি হয়তো শূন্য থেকে আবারও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছি। কারো কাছ থেকে আর কোন প্রত্যাশা নেই। সম্মানের সঙ্গে নিজের আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা টা বুদ্ধিমানের কাজ।
আবারও এডমিশন নিলাম মাস্টার্সে। ক্লাস করতে কষ্ট হয় কারণ কোন কিছু জিজ্ঞেস করার শক্তি নেই হারিয়ে ফেলেছি। শুরু হল নতুন যন্ত্রণা কাউকে কিছু বুঝাতে পারি না।খুব রাগ হতো নিজের উপর।
তারপর ব্লাকবোর্ড কিনে আনা হয় টাঙানো হয় রুমে আমার যা প্রয়োজন পড়ে লিখে দেই। সেই আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়ি।
অসুস্থ আরও গ্রাস করে নেয়। প্রচুর মাথা ব্যাথা হতো সেই সাথে মাঝে মাঝে জ্বর চলে আসতো। সপ্তাহে ৩ দিন পড়ে থাকতে হতো বিছানায়।
টেনশন, হতাশা,অসুস্থতা আমাকে গ্রাস করে নিয়েছে।তারপর আবার মোবাইলে প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। সেটাই সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়।
তবে নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন যুক্ত ছিলাম অনেক আগেই থেকে কিন্তু সেটাকে হৃদয়ে ধারন করতে পারিনি।স্যারের কথা গুলো বুকে লালন করে নিলে হয়তো সিচুয়েশন টা অন্য রকম হতো।
রোজ স্যারের সেশন পড়তাম সেখান থেকে একটু একটু করে নিজেকে মোটিভেট করতে থাকি।
তারপর সেশন ক্লাসে যুক্ত হই সবার সাথে পরিচিত হই।আমি খুব লিখতে ভালোবাসি।সম্মানিত মডারেটর Mohammed Motaleb ভাইয়া রোজ বলেন সেশন নিয়ে পোস্ট করতে। আমিও ওনার কথা শুনে পোস্ট লিখি বেশ ভালো সাড়া পাই।
সবাই প্রশংসা করতে থাকে আপু কন্টিনিউ করে যান। আমারও লেখার উৎসাহ বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচিত বাড়ে মনে জোর চলে আসে। সবাই কত ভালোবাসে খোঁজ নেয় রোজ। তাদের নাম না বললেই নয়।সম্মানিত মডারেটর Iqbal Hossain ভাইয়া,সম্মানিত কোর ভলান্টিয়ার ও মডারেটর Sagar Banik দাদা, Hamida Akther আপু. Sonia Sultana আপু,@ Mohammed Moinuddin ভাইয়া, Ajmat Miah ভাইয়া তারা সবাই খুব কেয়ার করতেন।
তাদের এই ভালোবাসা পেয়ে আমি কিছু টা স্বস্থির নিঃস্বাস ফেলি। তখন আরও বেশি সময় দিতে শুরু করি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে হাহাকার ছিল। সবাই কথা সুন্দর করে কথা বলছে আমি পারছি না। কেমন জানি মানসিক চাপ টা আরও বেড়ে যায়।
এবং মাথা ব্যাথা প্রকট আকারে ধারণ করে। আবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হই।
প্রথমে মৌলভীবাজার তারপর সিলেটে শেষমেষ ঢাকা।তবুও থেমে থাকিনি কো হেটে চলেছে সবার সাথে। তারপর মোতালেব ভাইয়া " হাট মনিটরিং টিম যুক্ত করে দেয় সম্মানিত মডারেটর ও কোর ভলান্টিয়ার #Mezbah_Uddin ভাইয়ার মাধ্যমে। তাদের সাথে পরিচিত হতে পেরে আরও মনে সাহস ও সঞ্চয় তৈরি হয়। এবং " হাট মনিটরিং টিম" এর সবাই খুব ভালোবাসা দিয়েছে Kh Istiak Ahmed Shajib ভাইয়া,তারপর Abdul Hakim ভাইয়া, স্মৃতি খাতুন আপু, Tania Chakladar , Salma Akter আপু
Md Aliakber ভাইয়া,এবং সবচেয়ে বেশি Mezbah Uddin ভাইয়ার কাছ থেকে এক কথায় সবার ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা আমাকে আরও সাহস যুগিয়েছে। বাঁচার স্বপ্ন ফিরে পেয়েছি।তাইতো সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।
তারপর সবার ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে এক সময় উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন পেয়ে বসে। তখন স্যারের সেশন থেকে বুঝতে পারি আগে নিজেকে ব্রান্ডিং করতে হবে। নিজেকে ব্রান্ডিং করে নিলে পণ্যের ব্রান্ডিং অটোমেটিক হয়ে যাবে।
তো সেই চিন্তা ভাবনা থেকে আমি সবার আগে ক্রেতা হয়ে উঠি যে আমরাই ক্রেতা আমরাই বিক্রেতা। সেই বাণীতে ফাউন্ডেশনের অনেকর কাছ থেকে নিজের জন্য প্রোডাক্ট কিনতে থাকি।
এতে করে পোশাক সম্পর্কে আইডিয়া চলে আসে সেই সাথে সবার সাথে গড়ে উঠে সুসম্পর্ক। ফ্রেন্ড সার্কেলের সংখ্যা বড় হতে থাকে। নতুন করে বাঁচার আগ্রহ জেগে ওঠে।
সেই সাথে উপলব্ধি করি প্রিয় ফাউন্ডেশনের কিছু উদ্যোক্তাদের গল্প পড়ে। তারপর দেখা পাই হুইল চেয়ারে বসা দুই ভাইয়া যদি উদ্যোক্তা হতে পারে তাহলে আমি নয় কেন?
তারপর সেই অনুপ্রেরণা থেকে এই ফাউন্ডেশন থেকে পাইকারি রেটে পণ্য কিনে উদ্যোক্তা লাইফে যাত্রা শুরু করি।কিন্তু সিচুয়েশন যে পরিবর্তনশীল আবারও নেমে আসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ধরা পড়ে ব্রেন টিউমার।শুনে তো যেটুকু শক্তি সঞ্চয় করেছিলাম সেটুকু হারিয়ে ফেলেছি।
এখন সেল পোস্ট দিতে ইচ্ছে করে না রং তুলি পড়ে আছে কাপড় আছে কেনা পণ্য সিগনেচার পণ্য পাঠের শোপিছ। মনে হয়েছে জীবনের তো শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আর উদ্যোক্তা হয়ে কি করবো?
কিন্তু এই ফাউন্ডেশনের কিছু ভাইয়ারা আপুরা রোজ আমাকে মোটিভেট করে যাচ্ছে তুমি পারবে।তোমাকে দিয়ে হবে মনের জোর রেখ।ভালো ট্রিটমেন্ট নাও তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
সেই আশায় বুক বেধে আছি আবারও আমি উঠে দাড়াবো নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
সেই চিন্তা ভাবনা আবারও হাত কাজ তুলে নেই যখন ভালো লাগে সুস্থ বোধ করি তখন কাজ করি আর যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন মনে এই বুঝি শেষ।
এভাবেই জীবনের চাকা ঘুরছে আতংকিত হয়ে থাকি কখন কি হয়ে যায়। তবে মনের ভেতর জোর আছে পারবো। আমি হেরে যেতে চাইনা। আমি লড়াই করবো সবকিছুর সাথে।
তাইতো রোজ সেশন ক্লাসে আসে মেগা মিট আপে যাই স্যারের কথা শুনলে মন ভরে উঠে সাহস পাই শক্তি পাই।
এই ছিল জীবনের গল্প বাকিটা জানিনা কোন আকার ধারণ করবে।আমার লেখার মাঝে কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর পোস্ট পড়ে সবার অনুভূতি টুকু শেয়ার করবেন।
📌 স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৬২
তারিখ ১৩-০৯-২০২৩ ইং
নোহা চৌধুরী
ব্যাচ -২১
রেজি-১১৪৮৭৭
জেলা- মৌলভীবাজার বাজার।