স্যারের যে কথায় অনুপ্রাণিত হই
আমার জিবনের গল্প
প্রথমে শুকরিয়া আদায় করি মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি।যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এখনও সুস্থ রেখেছেন।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার পিতা-মাতার প্রতি যাদের মাধ্যমে আমি এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি।
কৃতজ্ঞতা জানাই হাজারো তরুণ -তরুণীর আইডল, উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর, আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক মেন্টর জনাব " ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যার মাধ্যমে আমরা আজ একটা বিশাল পরিবার পেয়েছি ।
আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জিবনের কিছু না বলা কথা শেয়ার করব। আশা করি সবাই আমার পাশে থাকবেন।
আমার জীবনের গল্প
--------------------------------------
আমি মোঃ আসাদুজ্জামান (লাভলু) । আমার জন্ম সাতক্ষীরা জেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই আমি শান্ত স্বভাবের ছেলে। খেজুরের পাতার পাটি হাতে নিয়ে গ্রামের স্কুলে যাওয়া এবং বট গাছের নিচে পাটি বিছিয়ে ক্লাস করেছি। টেমি/হারিকেনের আলোয় পড়াশুনা করেছি। আবার আব্বার সাথে মাঠে যেয়ে মইয়ের উপর বসে মাটিও সমান করেছি। ৪ ভাই বোনের মধ্যে আমি হলাম ২য়। বোন দুই জনই আমার ছোট। আমার আব্বা একজন বেসরকারি কর্মচারী ছিলেন। আমার আব্বা একজন ভালো মানুষ, অত্যন্ত সৎ, এবং দ্বীনদার মানুষ ছিলেন। আব্বাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি ব্যাক্তি। আব্বার অল্প বেতনে আম্মা অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চালাতেন। আব্বার সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতো। আমি প্রায় আব্বার সাথে দাবা খেলতাম। তাছাড়া আব্বার সাথে আমরা সবাই কেরাম খেলতাম। আমাদের আব্বা খুবই মিশুক ছিলেন।
দুর্বীসহ জীবন:
------------------------------
আব্বার চাকরির সুবাদে আমরা ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা শহরে চলে আসি। আমরা থাকতাম ভাড়া বাসায়। ১৯৯৪ সালে আব্বা সাতক্ষীরায় জমি কেনেন। ১৯৯৫ সালে নতুন টিন সেটের বাড়ি তৈরি করি। মিস্ত্রির সাথে আমরা নিজেরাই যোগাড়ির কাজ করি। আমরা নতুন বাড়িতে ১৯৯৫ সালের ১৭ই মার্চ শুক্রবার উঠবো বলে ঠিক করলাম। কিন্তু ১৪ই মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আমার আব্বা হঠাৎ স্টোক করে মারা গেলেন। আমার এইচ এস সি পরীক্ষাও তখন তিন মাস বাকি। আমাদের আর নতুন বাড়িতে উঠা হলো না কারণ তখনো বাড়ির কিছু কাজ বাকি ছিলো। চরম হতাশায় ভরে যায় আমাদের জীবন। আমাদের ৪ জনকে নিয়ে শুরু হয় আমার মায়ের কষ্টের ও সংগ্রামের জীবন। মা শত কষ্টের মাঝেও আমাদের পড়াশুনা ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে লাগলেন। একটা পরিবারে উপার্জন করার কেউ যখন না থাকে তখন সে পরিবারের অবস্থা কেমন হতে পারে বুঝতেই পারছেন। গ্রামের বাড়ির চাচারা সবাই বললেন বাড়ি চলে আসতে। কিন্তু আম্মা রাজি হলেন না। কারণ গ্রামে গেলে আমাদের আর লেখাপড়া হবে না। তখন মাঠে কাজ করে সংসার চালাতে হতো। আমরা সাতক্ষীরাতেই থেকে গেলাম। শুরু হলো আমাদের শহরে টিকে থাকার নতুন যুদ্ধ। আব্বা না থাকার করণে আমরা যেখানে ভাড়া থাকতাম বাড়িওয়ালা খালু আর ভাড়া নিতো না। চার মাস পরে আমরা নতুন বাড়িতে উঠলাম। আব্বার চাকরির সুবাদে সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে বাড়ির বাকি কাজ শেষ করলাম। কিছু টাকা দিয়ে তিন বিঘা জমি বন্ধক রাখলাম যাহাতে বছরের চাল কিনা না লাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাতে লাগলাম। আমার এক ছাত্রের আব্বু তাঁর বন্ধুর কোম্পানিতে চাকরি ঠিক করে দিলো।
জীবনের সংগ্রাম ও সফলতা:
---------------------------------------------------
আমি ডিগ্রী পরীক্ষা শেষ করেই ১৯৯৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে চাকরির জন্য চট্টগ্রাম চলে যায়। বেতন সর্বসাকুল্যে মাসে ১৫০০/= (এক হাজার পাঁচশত টাকা)। আমার চাকরি ছিলো পান্তা কম্পিউটার এন্ড ট্রনিং সেন্টারে। বাড়িতে থাকলো আম্মা, বড় ভাই আর দুই বোন। কঠিন এক বাস্তবজীবনের সামনে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি। নিজের খরচটুকু রেখে প্রতি মাসে মায়ের কাছে ৫০০ করে টাকা পাঠাতাম। এমনও অনেক দিন গেছে দুই টাকা দামের ২/৩টা পেটিস খেয়ে দুপুর পার করেছি, টাকা বাঁচানোর জন্য। যাতে বাড়িতে মায়ের কাছে টাকা একটু বেশি পাঠানো যায়। এভাবে এক বছর পার করলাম। তারপর চাকরির পাশাপাশি শুরু করলাম প্রাইভেট পড়ানো ও কম্পিউটার শেখানো। আস্তে আস্তে চেষ্টা করতে লাগলাম সবার মুখে হাসি ফোটাতে। দুই বছর পর বড় ভাইকে নিয়ে এলাম চট্টগ্রামে। চাকরি দিলাম পরিচিত এক আত্মীয়ের সি এন্ড এফ এ। কোন বেতন দিত না। চাকরি হলো খাদ্যের বিনিময়ে। সেখানে ছয় মাস চাকরি করল। এবার দিলাম পান্তা প্লাস্টিক কোম্পানিতে। আমার প্রতিষ্ঠানের স্যার আমাকে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে এম এম ইস্পাহানি লিঃ কোম্পানির একাউন্টে চাকরি দিয়ে দিল। পোস্টিং রংপুরে। চট্টগ্রামের হেড অফিসে থাকলাম তিন মাস ট্রেনিংয়ে। তারপর ২০০১ সালের ১লা মার্চ চলে গেলাম রংপুরে। বড় ভাই থাকলো চট্টগ্রামে। তিন মাস পরে বড় ভাইয়ের হলো জন্ডিস। ভাই চাকরি ছেড়ে চলে গেল বাড়িতে। রংপুরে ইস্পাহানিতে আমার ভাগ্যের চাকা খুলতে লাগলো। আমি থাকতাম অফিসের বাসায় কোন টাকা দিতে হতো না। অফিস টাইম ৯টা থেকে ৫.৩০ মিঃ। বিকালে খেলাধুলা করতাম। সন্ধ্যার পরে শুরু করলাম প্রাইভেট পড়ানো। কোন টাকা না নিয়ে দুই বেলা খাওয়ার বিনিময়ে (দুপুরে ও রাতে)। অফিসে থাকা ফ্রী, দুই বেলা খাওয়ার ব্যবস্থাও হলো। ইস্পাহানিতে বেতন দিতো সেই সময় ২৮০০/= টাকা। এবার বাড়িতেও টাকা দিতে লাগলাম বেশি করে। এর মধ্যে দুই বোনের বড়টাকে বিয়ে দিলাম। বড় ভাইকেও বিয়ে দিলাম ২০০৪ সালে। বড় ভাইকেও ২০০৫ সালে ইস্পাহানিতে চাকরি দিলাম মার্কেটিং। পোস্টিং দিনাজপুর। ছোট বোন ও অনার্স শেষ করে মাস্টার্স ও শেষ করলো। ছোট বোনকেও চাকরি দিলাম ইস্পাহানিতে ২০১০ সালে অফিসিয়াল। পোস্টিং কুষ্টিয়া। ছোট বোনকেও বিয়ে দিয়েছি ২০১১ সালে। বড় বোন ও বোনাই প্রথমে চাকরি করতো ওয়াল্ড ভিশন এনজিওতে। বড় বোন এখন একজন সফল টেইলার। বড় বোনাইকেও ২০১৪ সালে ইস্পাহানিতে চাকরি দিলাম অফিসিয়াল। পোস্টিং যশোর। আমি রংপুর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবারে খুলনায় বদলি হয়ে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ইস্পাহানিতে বেশ সুনামের সহিত চাকরি করে আসছি। বর্তমানে আমরা সবাই এখন ইস্পাহানি পরিবার।
বৈবাহিক সম্পর্ক:
----------------------------------
আমি বিয়ে করেছি ২০০৮ সালে। আমার স্ত্রীর নাম মেফতাফুন আহমেদ জ্যোতি। শশুর সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন। বর্তমানে কবুতর ও একুরিয়াম ফিসের ফার্ম করেছেন। শশুর বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো। আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে আর ছেলে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। কথায় বলে যার প্রথম সন্তান মেয়ে, সে ঘরে লক্ষী বাস করে। আলহামদুলিল্লাহ সবাইকে নিয়ে আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের চার ভাই বোনের সবার এক ছেলে এক মেয়ে।
মায়ের দোয়া ও ভালোবাসা:
------------------------------------------------
আলহামদুলিল্লাহ আমার আম্মাও ভালো আছেন। আমাদের আব্বার তৈরি পুরাতন টিন সেটের বাড়ি ভেঙে সেখানে চারতলার ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলা পর্যন্ত বিল্ডিং করেছি। প্রতিটি ফ্লোর দুই ইউনিটের। তিন ইউনিট ভাড়া দেওয়া আছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে ১৩৫০০/= টাকা ভাড়া পাই। মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো দুই তলা বাড়িতে থাকার। আল্লাহ মায়ের সেই ইচ্ছা পুরন করেছেন। মায়ের দোয়া আছে বলেই কয়েকবার গাড়ির কঠিন এক্সিডেন্ট করেও জীবনে বেঁচে গিয়েছি তেমন কোন ক্ষতি না হয়ে। আর একবার দিনাজপুর থেকে রংপুর আসার সময় ভোরে পাঁচ মিনিট দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে প্রথম টিপের গাড়ি ধরতে পারি নাই। দ্বিতীয় গাড়িতে আসার সময় দেখি সেই গাড়ি ব্রিজের ওপর থেকে পড়ে ধানক্ষেতে উল্টে পড়ে আছে। এই বেঁচে যাওয়াটা মায়ের দোয়ার করণে। মায়ের দোয়া ও ভালোবাসার কারণে আজ আমরা চার ভাইবোন সবাই চাকরি করছি ও ইনকাম করছি। এবং বেশ কয়েকজনকেও চাকরি দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।
প্লাটফর্ম থেকে শিক্ষা:
---------------------------------------
আমি ২০ তম ব্যাচ থেকে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত আছি। আমি প্লাটফর্ম থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমি আগে কারো সাথে কথা বলতে পারতাম না, কিন্তু এখন আমি কথা বলতে পারি। অনেক অনেক ধন্যবাদ খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা টিমকে, নিয়মিত সেশন চর্চার ক্লাসের আয়োজন করার জন্য। স্যারের সেশন যখন পড়ি অনেক সেশন মনে হয় আমার জন্যই লেখা। চাকরি করার কারণে এখনো কোন উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারি নাই। তবে স্যারের শিক্ষা নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটা ভাইবোন খুবই আন্তরিক। আমি সবসময় তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
স্যারের যে কথায় অনুপ্রাণিত হই:
--------------------------------------------------------
১। স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন,শুরু করুন, লেগে থাকুন,সফলতা আসবেই।
২। চাকরি করবো না, চাকরি দিবো।
৩। বৃষ্টি সবার জন্য পড়ে, ভিজে কেউ কেউ।
৪। নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে হবে।
৫। আমরা সবাই ভালো মানুষ।
তাছাড়াও প্রিয় প্লাটফর্মের শপথ বাক্য নতুন করে অনুপ্রেরণা দেয়।
সবশেষে মহান আল্লাহর কাছে সকলের সুস্বাস্থ এবং সুন্দর জীবন কামনা করি।
আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
লেখার মাঝে ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৬২
তারিখ ১৩-০৯-২০২৩ ইং
আমার পরিচয়:
--------------------------------
আমি মোঃ আসাদুজ্জামান
ব্যাচ: ২০
রেজিষ্ট্রেশন নং: ১০৯১৮১
নিজ জেলা: সাতক্ষীরা
বর্তমান অবস্থান: দৌলতপুর খুলনা
চাকরি: ইস্পাহানি টি লিঃ কোম্পানিতে
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের একজন আজীবন সদস্য।