তাই সখের কাজটা নিয়েই শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা জীবন
💞 জীবনের গল্প 💞
🙏আমার জীবনের গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইলো 🙏
🙋"আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা তুহু
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
🤲সকল প্রশংসা পরম করুনাময় মহান আল্লাহ্ তাআলার।যিনি আমাকে আশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করেছেন ও সুস্থতার সাথে ইবাদত করার সুযোগ দিয়েছেন।সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) এর প্রতি।যার উম্মত হবার পরম সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।
🥰 আমার নিজের বলার মতো একটা গল্পে আপনাদের স্বাগতম 🥰
💞 আমার মা বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করছি। যারা আমাকে অনেক আদর, যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। যাদের নিঃস্বার্থ মায়া মমতা ও ত্যাগের ঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব না।
💕 💐কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর, শিক্ষক,লক্ষ তরুণ তরুণীর আইডল জনাব "Iqbal Bahar Zahid" স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে ভালোবাসার প্লাটফর্ম " নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন " তৈরি হয়েছে।
💐 শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি 💐
💦 নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সকল দায়িত্বশীল ও আজীবন সকল প্রিয় ভাই বোনদের প্রতি ।
❤💞 কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আবু সাইদ ভাইকে । যিনি আমাকে ফাউন্ডেশনে যুক্ত হতে সাহায্য করেছেন।রিমা আলম রোজা আপু আমার রেজিষ্ট্রেশন ও জেলা ম্যাসেঞ্জারে যুক্ত করে দিয়েছেন।অনেক কৃতজ্ঞতা প্রিয় ভাইয়া ও আপুর প্রতি ৷
🥀(আমার জীবনের গল্প)🥀
✍️আজকে নিজেকে নিয়ে কিছু গল্প বা কথা তুলে ধরবো। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
👪 পারিবারিক পরিচয়ঃ
আমরা দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে আমি ছিলাম সবার বড় । আমার জন্ম হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাতে ।
💞 🙋আমার শৈশবঃ
ছোট্ট বেলা থেকেই আমি ছিলাম সবার আদরের ও চোখের মনি । মধ্যবৃত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আমার মায়ের কাছে শুনেছি আমি জন্ম নেয়ার পর, মেয়ে হয়েছে শুনে আমার বাবা নাকি অনেক বেশি খুশি হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ দাদার বাড়ি,নানার বাড়ি কারো আদরের কমতি ছিল না। দাদার ভালোবাসা কেমন বলতে পারিনা। আমার জন্মের আগেই দাদা মৃত্যু বরণ করেন। ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম মেধাবী, চঞ্চল ও খুব অভিমানী। সব কিছুতে প্রবল জানার ও শেখার ইচ্ছা কাজ করতো সব সময় । আমার মনে পরে যখন আমাকে সবে মাত্র স্বরবর্ণ লেখা শিখানো শুরু হয়েছে। তখন সিমেন্টের পেন্সিল ও সিলেট ছিল। হঠাৎ আমার মাথায় আসলো পেন্সিল
কেনার কি দরকার?এটা তো মাটি দিয়ে আমি বানিয়ে নিতে পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। লাল মাটি খুজে এনে পেন্সিল বানিয়ে চুলার সাইডে দিয়ে শুকিয়ে নেই এবং সেটা দিয়ে শখ করে লিখি। এমন ছিলাম আমি।
😭মা -বাবা আমাদের অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যেও মানুষ করেছেন। দাদীকে নিয়ে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জনের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার বাবা। আমার বাবা ছিলেন একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। যা টাকা আয় হতো তাতে মোটামুটি সংসার ও আমাদের পড়াশোনার খরচ চলতো। আমার বাবা ছিলেন একজন সৎ ও ভালো মনের মানুষ। বাবার এই আদর্শ নিয়ে আমিও গড়ে উঠেছি ছোটবেলা থেকেই ৷ আমাদের ভালো পথে চলতে হবে, ভালো কাজ করতে হবে। আমার পরিবার আমাদের এই শিক্ষাই সব সময় দিয়েছেন।
📚🖍আমার শিক্ষা জীবনঃ
আমার বাবা একটা বাড়ি করেন নারায়ণগঞ্জ কাশিপুর খিল মার্কেটে। ওখানেই একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হই। হঠাৎ করে বাবার শারীরিক ও ব্যবসায়িক সমস্যা দেখা দেয়। তাই বাড়িটা বিক্রি করে দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকায় ভাড়া বাসায় চলে আসি। দেওভোগ পানির টাংকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই । মেধা ভালো ছিল তাই বরাবরই ১-৩ মধ্যে রোল থাকতো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক আমাকে খুবই ভালোবাসতেন । নিজে থেকে কোনদিন বিদ্যালয়ে যাইনি এমনটা খুবই কম হয়েছে আমার। আমার মনে পরে বৃষ্টির দিন বিদ্যালয়ে গিয়েছে ছাত্র-ছাত্রী কম। তাই সোজা প্রধান শিক্ষকের কাছে চলে যেতাম।
আমিঃ স্যার, ক্লাস কখন হবে?
স্যারঃ আরও ছাত্র-ছাত্রি আসলে ক্লাস হবে। না আসলে আজকে ছুটি!
আমিঃ আশেপাশে যাদের বাড়ি চিনতাম! প্রধান শিক্ষক বলছে ক্লাস হবে। একথা বলে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসতাম।
আমার একটা অভ্যাস ছিল,সবসময় গণিত পরীক্ষা দিয়ে প্রতিটা প্রশ্নের পাশে উত্তর লিখে আনতাম। পরীক্ষা শেষে বাসায় এসে পুরো বই ঘাটাঘাটি করে আগে উত্তর মিলানো হতো। ভাত খাবার কোন খবর থাকতো না। যখন দেখতাম ৮ টা অংকের উত্তর মিলে গেছে খুশিতে কি যে্ লাফালাফি করতাম। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে আমি বৃত্তি পরীক্ষা দেই । বৃত্তি অবশ্য পাইনি। তবে এজন্য মন খারাপও হয়নি! আমার মনে হয়েছে, বৃত্তি পাইনি তাতে কি? বৃত্তির জন্য এক্সট্রা অনেক বিষয়ে পড়েছি। তাতে আমার অনেক কিছু শিখা হয়েছে! কত মধুর স্মৃতি আজও খুব মিস করি সবাইকে।
শিখ
📚🖍প্রাথমিক ভালোভাবে পাশ করে ভর্তি হই নারায়নগঞ্জ মর্গান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ।আগেই বলেছিলাম আমি খুব চঞ্চল ছিলাম ।পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, হাতের কাজ শিখা নেশা ছিল আমার । একবার বার্ষিক ক্রীয়া প্রতিযোগিতায় নবম শ্রেণীর আপুদের লং জাম্পিং খেলা চলছিল। আমি দাড়িয়ে দেখছিলাম। হঠাৎ ইচ্ছে হলো আমিও একটা জাম্প দেই। মজার বিষয় হলো । বয়স কম হলেও আমাকে দেখতে ও উচ্চতায় নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া আপুদের মতো লাগতো । তাই ম্যাডামকে বলার সাথে সাথে আমাকে জাম্পিং দেয়ার সুযোগ দেয় । জাম্পিংয়ে আমি সহ আরও এক আপু তৃতীয় স্থানে ছিলাম। তাই ম্যাডাম দুজনকেই তৃতীয় পুরষ্কার দেন। আলহামদুলিল্লাহ পড়াশোনায় বরাবরই ভালো রেজাল্ট করি।
🏘😪নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে হয়ে য়ায। বিয়ের পর শত চেষ্টার পরেও আর পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারিনি। শ্বশুর বাড়ির সকলেই আমাকে অনেক আদর করতো।
আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ছিলাম।
🌈🌻উদ্যোক্তা জীবনঃ
আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। বাবাকে বলে শখের বসত টেইলারিং কাজটি শিখি। ভালো বুঝতাম তাই ১৫ দিনের মধ্যে কাজটি আমি শিখে ফেলি। আমি হাতের কাজ পারি। একথা শুনে আমার স্বামী আমাকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেয়। পরিবারের সবাই অনেক সাপোর্ট করতো। তাই সখের কাজটা নিয়েই শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা জীবন। কিছুদিন যেতে মনে হলো আমার আরও কিছু কাজ শিখে রাখা দরকার। তাই টেইলারিং এর পাশাপাশি পার্লার,বাটিক,বুটিকস,বেতির ও পুঁথির ব্যাগ বানানো,নানান শো পিছ,কুশি কাঁটার বডি সহ আরও টুকিটাকি কাজ শিখেফেলি। এই কাজ গুলো করেও অনেক সেল করি। পাশাপাশি কিছু টাকা সঞ্চয় করি ।
😭আমার প্রথম ভুলঃ
২০১৬ সালে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে থ্রিপিছ ও চাদর নিয়ে কাজ করা শুরু করি এবং ছয় মাসের মাথায় বন্ধ করে দেই।
২০১৮ সালে আবার পরী ফ্যাশন নামে একটা টেইলার্স শপ দেই এবং এগারো মাস পর বন্ধ করে দেই । ২টা বিজনেসে প্রায় দুই লখ টাকা শেষ হয়। ২০২১ সালে ২রা জুলাই শুরু হলো আমার ঠান্ডা,জ্বর। তারপর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা।কিন্তু রিপোর্টে সব কিছু ভালো আসে। চিকিৎসা চলছে কিন্তু দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে । এক সময় আমার কথা বলা বন্ধ, চোখ দেখা বন্ধ হয়ে যায়। এমন কি এক চামচ পানি খাওয়া ও বন্ধ হয়ে যায়। আমাকে জিজ্ঞেস করতো আমার কি খেতে মন চায়। তাই এনে দিবে। কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো! আমার ব্রেন এতটাই ডেমেজ হয়ে গিয়েছিল যে,ওই সময় পৃথিবীর একটা খাবারের নামও আমি মনে করতে পারি নাই। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল হসপিটাল ভর্তি হই । সবশেষে ধরা পড়ে বুকে কফ জমে ইনফেকশন হয়ে গেছে। থাইরয়েড এর প্রবলেম। আল্লাহর রহমতে ও সকলের দোয়ায় আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠি। সুস্থ হওয়ার পর বুঝতে পারি আমাকে দিয়ে টেইলারিংয়ের কাজ আর হবে না। কারণ আমি অনেক কিছু মনে রাখতে পারতাম না। ভুলে যেতাম। তখন অনেক ভেঙে পড়ি। মন খারাপ থাকতো। একা একা বসে থাকতাম আর ভাবতাম! কতো স্বপ্ন, কতো আশা সব শেষ! কিছুই করা হলো না আমার!
💞💝ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষাঃ
একদিন আমি মোবাইলে ভিডিও দেখছিলাম।হঠাৎ আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব " ইকবাল বাহার জাহিদ " স্যারের একটা ভিডিও আমার সামনে আসে।এর পর আমি আরও অনেকগুলো ভিডিও দেখি এবং কিছু সেশন পড়ি।
🍒স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন,শুরু করুন,লেগে থাকুন, সফলতাআসবেই।🍒
স্যারের এই একটা কথায় আমি অনেক সাহস পাই।শুরু হলো আবার নতুন স্বপ্ন দেখা। অনেক চেষ্টার পর যুক্ত হই নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে। ২২ তম ব্যাচে টানা ৯০ দিনের সেশন ক্লাস করি। প্রিয় স্যার প্রতিদিন দুটি করে ৯০ দিনে ১৮০ টি সেশন দিয়েছেন।স্যারের শিক্ষা ফাউন্ডেশন থেকে আমি যা শিখেছি তা হলো, কিভাবে কথা বলতে হয়। কিভাবে বিজনেস করতে হবে। আগের বিজনেস গুলোতে কি কি ভুল ছিলো তা বুঝতে পেরেছি।আরও অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পেরেছি।
💝🤲বর্তমানে উদ্দ্যোক্তা জীবনঃ
ফাউন্ডেশন থেকে স্যার এর শিক্ষা নিয়ে শুরু করি উদ্যোক্তা জীবন। সেফ কোর্সটি শেষ করি। পরী কিচেন এন্ড কেটারিং নামে একটি পেইজ দিয়ে শুরু করি আমার নতুন উদ্যোগ হোম মেইড খাবারের কাজ।
আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার অফলাইন মিটআপ ও নব নিযুক্ত কোর ভলেন্টিয়ার ও জেলা এম্বাসেডর দের অনুষ্ঠানে আমার পরী কিচেন এন্ড কেটারিং পেইজে খাবারের অর্ডার পাই। খাবারগুলো আমি নিয়ে যাই ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। আমার নিজ হাতের তৈরি করা খাবার খেয়ে প্রিয় ভাই-বোনেরা এতো এতো রিভিউ দিয়েছেন। যেটা আমি কল্পনাও করি নাই। অনেক ভাই- বোনেরা আমার কাছে অর্ডার করেন।
অনেকেই বলেছেন, আমাকে দিয়ে হবে না। আমি পারবো না। ইনশাআল্লাহ স্যারের শিক্ষা নিয়ে লেগে আছি। বর্তমানে অনেক অর্ডার পাচ্ছি। অফলাইনে থ্রিপিছ, বিছানার চাদর নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি টেইলারিং এর প্রশিক্ষণ আমি নিজেই দিয়ে থাকি। বর্তমানে পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
💐শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি💐
💞নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সকল দায়িত্বশীল ও আজীবন সদস্য প্রিয় ভাই-বোনদের প্রতি। যাদের সহযোগিতায় আমি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পেরেছি। সকলের প্রতি অনেক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৬৬
তারিখ ১৫-১০-২০২৩ইং
☘️আমিঃ রুমি আক্তার পরি
☘️ব্যাচঃ ২২
☘️রেজিঃ ১১৮৬৩০
☘️নিজ জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ