চট্টগ্রামের রাবেয়া আক্তারের জীবনের গল্প।
❣️বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম❣️
(🎈জীবনের গল্প 🎈)
🌹আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা ।🌹
👍আমার জীবনের গল্প টা পড়ার অনুরোধ করবো সবাই কে।
☺️সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন এবং দরুদ শরীফ পেশ করছি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যার উম্মতি হয়ে আমি গর্বিত।
❣️❣️মা - বাবা: অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি আমার প্রিয় আম্মু আব্বুর প্রতি যাদের ভালোবাসায় আমি এই পৃথিবীর আলো বাতাস দেখেছি এবং সুন্দর ভাবে বড় হয়েছি।
👏কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি এতো সুন্দর প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন আমাদের কে, যেই প্লাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যেক্তা ও ভালো মানুষ। আজ থেকে তিন বছর আগে বাসায় ওয়াইফাই ব্যবহার করি, তো ইউটিউব দেখতে দেখতে স্যারের একটা ভিডিও আমার সামনে আসে এবং সব ভিডিও গুলো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতাম আর শুনতাম একজন মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর করে কথা বলে মানুষের কল্যাণে, তখন ফেইসবুক ছিলনা আমার, পরে যখন ফেইসবুকে আসি তখন নাজমুল ইসলাম ভাইয়া আমাকে রেজিস্ট্রেশন করে দেন, এবং আবদুল্লাহ ভাইয়া আমাকে মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত করেন, সেই থেকে আমি টানা ৯০ দিনের ১৮০ টা সেশন চর্চা করি।
🏨😍আমি আরো ভালোবাসা জানাচ্ছি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রিয় ভাই ও বোনদের প্রতি যারা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন নিজের গল্প লিখার জন্য।
এর মধ্যে আত্ববিশ্বাসী এন আর বি ওমান টিমের সকল ভাই ও বোনেরা যেমন
আবদুল্লাহ ভাইয়া
আনজুমান আরা আপু সহ সবাই।
🖊️🖊️এবার আসি মূল গল্পে:-
আমি চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ের ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের ভূঁইঞার তালুক গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি, আমরা তিন ভাইবোন, আমার দুই ভাই আর আমি একজন,
আমার আব্বু রেলওয়ে সরকারি চাকরি করতেন, আর আম্মু গৃহিণী, আমার নানুর বাড়ি ফেনীর চিলনিয়া মাইজবাড়িয়া খায়েজ আহমদ মোল্লা বাড়ি। সেই ছোট্ট বেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে নানুর বাড়ির এলাকার।
🏩শিশু কাল:- আব্বু রেলওয়ে চাকরির সুবাদে শিশুকাল কেটেছে পাহাড়তলী তবে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির আগে চলে আসেন গ্রামে এবং শুরু হয় স্কুল (খোরমাওয়ালা প্রাইমারি স্কুল)এবং গ্রামীণ জীবন,
আমার এখন ও মনে আছে যেদিন প্রথম স্কুলে যাচ্ছিলাম সেদিন দুই ভাইবোন কে আম্মু শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যে কোনো মুরুব্বি দেখলে যেন সালাম দিই সেই দিন থেকে আমরা দুজন ভাই বোনের এলাকায় খুব সুনাম ছিল সালাম দেওয়া নিয়ে,
🧑🤝🧑ভাইয়া আর আমি ক্লাসমেট ছিলাম, যেদিকে যেতাম একসাথে ছুটতাম দুজন জমজের মতো , কত মধুর স্মৃতি দুই ভাইবোনের , ছোট বেলায় সব ধরনের খেলায় ছিলাম পারদর্শী এবং লেখা পড়ায় ও বরাবরের মতো ভালো ছিলাম। এভাবে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ করেছি প্রাইমারি স্কুলের জীবন।
💗কৈশোর:- যখন হাইস্কুলে ভর্তি হলাম তখন অনেক স্কুলের বাচ্চারা ভর্তি, আবুতোরাব হাইস্কুল টা অনেক বড় স্কুল,অনেক হৈচৈ এর মধ্যে নিজের সব চঞ্চলতা কমিয়ে খুব চুপচাপ হয়ে শুধু পড়ালেখায় মনোযোগী হই।
ক্লাসে শান্ত শিষ্ট হিসেবে অনেক স্যারের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
🖊️কলেজ:- ১৯৯৯ সালে শুরু হলো কলেজ জীবন, পড়ালিখার পাশাপাশি শখ করে শুরু করি বান্ধবীর কাছ থেকে সেলাই শিখা, ব্লক বাটিক এর কাজ, আরো শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া ও পাঞ্জাবি তে শুতা দিয়ে হাতের কাজ।
বাড়িতে আসলে অবসরে পাটি বোনা, মোড়া বানানো সব কাজ শিখেছি, সবসময় আমার ভিতরে কাজ শিখার টেনডন্সি কাজ করতো তাই শিখা,
কলেজে যাওয়ার পর থেকে ছোট ছোট কবিতা, গল্প, দেয়াল লিখন সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলাম, আমাদের একটা টিম ছিল নাম কবিতা পরিষদ।
দুইবার নাটকে মা চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলাম,
জোরারগঞ্জ একুশে গ্রন্থমেলা মেলায়, জ্বীনের বাদশা নাটকে মা চরিত্রে অভিনয় করে, প্রথম হই, কবিতা আবৃত্তি তে ও প্রথম স্হান অধিকার করি, এখন ও মিরসরাই সদরে মা রাবু নামে বেশিরভাগ মানুষই আমাকে চেনেন।
❤️প্রেমে পড়া:- শুরু হলো ২০০০ সাল, এতদিন প্রেম ভালোবাসা আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, কারণ ছোট অবস্থাতেই আমার ছোট মামা বলেছিল যে সুন্দর ভাবে লেখা পড়া করবে, যখন ডিগ্রি পাস করবা তখন আমরা বিয়ের চিন্তা করবো, আমি খুব ভালো মেয়ে হিসেবে মা বাবা, মামা মামী আত্বীয় স্বজনের কাছে জনপ্রিয় ছিলাম। তাই ভয়ে এদিক ওদিক তাকানো হয়নি,
🌹২০০০সাল ২৯জুলাই একটা বিয়ে বাড়িতে যাই,
বিয়ে বাড়ীতে আমরা কয়জন মাইক্রো তে আটকা পড়ি, একজন ভদ্রলোক ১ঘন্টা চেষ্টা করে আমাদের কে উদ্ধার করে, তখন ভাবলাম লোকটা বেশ ভালো, তখন উনাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলাম, আর কোনো কথা হয়নি, বিয়ে বাড়ি থেকে দুদিন পর চলে আসলাম, তারপর ঐ ভদ্রলোক ৩ আগস্ট আমার ভাইয়া কে বাজারে দেখা পেয়ে উনাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে বিস্তারিত বললো, এবং আমার ব্যাপারে বললো, আমাকে উনার পছন্দ হয়েছে সেটা আমার আম্মু কে বলতে বললো, আরো বললো আমার মতামত যদি থাকে পরদিন যেন দেখা করি কলেজে যাওয়ার পথে, ভাইয়া বাড়িতে এসে বললো, আম্মু অনুমতি দিল যেতে, আমার ছোট ভাইকে নিয়ে কলেজে যাওয়ার পথে দেখা হলো, উনি আমার কাছে জানতে চাইলো কারো সাথে সম্পর্ক আছে কিনা আর উনার ব্যপারে কি মতামত,
আমার উঃ ছিল, আমার কারো সাথে সম্পর্ক নেই, আর আপনার ব্যাপার টা আমার গার্ডিয়ান যা বলবে তাই হবে, তারপর উনি আমার গার্ডিয়ান কে
জানিয়ে ওমানে চলে যায়, এবং আমার ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে।
😭অসুস্থতা:-একদিন হঠাৎ আমার মুখে মাছির মতো কি যেন একটা ঢুকে যায় এবং খুব বমি হয় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি, সে যেন আমার জীবনের কালো অধ্যায়, আমি সুস্থ হচ্ছিলাম না, প্রতিদিন বুকের ভিতর খাবার আটকে যেতো আর বমি হতো এভাবে চলতে চলতে একবছর ছয় মাস একটানা বমি আমার আম্মু ডা: হুজুর দেখাতে দেখাতে অস্থির হয়ে গেল, আব্বু চাকরিতে রিটায়ার্ড করে দুই বছর আগে সৌদি তে যায়, সেখানে আমার অসুস্থতার খবর শুনে আব্বু দেশে আসে চিকিৎসা করাতে, আব্বু ও দেখলো আমার ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই ২/৩ মাস বিছানায় শোয়া, এদিকে ঐ ভদ্রলোক ফোন করলে আম্মুকে আমার অবস্থা বলতে নিষেধ করেছি, তখন তো এতো ফোন ছিল না, চিঠি লিখতো, চিঠিতে আমি বলতাম না, কারণ আমি চাইনি আমার জন্য উনার ক্যারিয়ার নষ্ট হোক,
আমার আম্মু প্রতিনিয়ত আল্লাহ পাক দরবারে কান্নাকাটি করতো আমাকে কোরআন পড়ে পড়ে ফু দিত, আমার ও নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে গেল, আমার আব্বু ৭ বছর বয়স থেকেই সাথে নিয়ে আমাকে নামাজ পড়তো, আমি ও রিগুলার নামাজ কোরআন শরীফ পড়তাম,
ইতিমধ্যে আমার পানি পান করা ও কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল, তখন ঐ ভদ্রলোক ফোন করলো আমার আব্বু বলে দিল আমার মেয়েতো বাঁচবে না, তখন তো উনি আমার সাথে কথা বলতে চাইলো, আমি কথা বলতে পারছিলাম না, আমাদের ঘরে সিরিয়াস অবস্থা সবার কান্নাকাটি এলাকার সব মানুষ জড় হয়ে গেল,
আব্বু বললো হে আল্লাহ পাক আমি আমার মেয়েকে ক্ষমা করে দিয়েছি আপনি তাকে আর কষ্ট দিবেন না নিয়ে যান, আমার আম্মু খাট থেকে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেললো।
👍এমতাবস্থায় উনি ওমান থেকে একসপ্তাহের মধ্যে দেশে আসলো, এবং উনার ফ্যামিলি তে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলে, ফ্যামিলি বললো আমরা খবর নিয়েছি মেয়েটা বাঁচবে না, উনি বললো আপনারা প্রস্তাব নিয়ে যান, আমার কপালে যা আছে তাই হবে এবং উনি ও বিভিন্ন ডা: হুজুর দেখাতে লাগলো ।
আমি একটু একটু করে সুস্থ হতে থাকি এবং দুই মাস পর আমাদের বিয়ে হয়, অনেক বড় আয়োজন করেছিলেন উনি। তখন মনে মনে ভাবি যে মানুষ টা আমি অসুস্থ জেনেও বিয়ে করতে পিছপা হননি, তাকে জীবনে কখনো অসম্মান করবো না,
🤲আলহামদুলিল্লাহ আমার বিয়ের ২০বছর পূরণ হতে চলেছে, এখনো দুজনের মতের অমিল হয়নি, সবার কাছে দোয়া প্রার্থী 🤲
❣️এর আট মাস পর আমাকে ওমানে নিয়ে আসে এবং আমি একটু আগের চেয়ে সুস্থ হতে থাকি। আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছি, মহান আল্লাহ পাক আমাকে তিন সন্তান উপহার দিয়েছেন ❣️
🌶️🍅ওমানে আমার হাজব্যান্ড এর সবজি বাগান, কলা বাগান, সার ঔষধের দোকান রেস্টুরেন্ট সব ছিল, এবং উনার সব আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে আসেন, এবং তাদের দ্বারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়েছেন সেসব কথা নাই বা বলি, তারপরও বাড়ি জমি সবি করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
যদিও ওমানে বাঙালি মেয়েদের করার কিছু থাকে না, তারপরও আমি হাঁস মুরগির খামার শুরু করি ২০০৮ সাল থেকে, আলহামদুলিল্লাহ ইনকাম করেছি, দেখতে দেখতে আমার খামারে ডিমের সহ ২০ হাজারের বেশি মুরগি পালন করি, এবং এর পাশাপাশি একটা নার্সারি ও শুরু করি ২০১৭ সালে, মাশাআল্লাহ অনেক চারা রেডি করি, বিক্রিও অনেক ভালো হচ্ছে, ইতিমধ্যে ৪০ হাজার চারা রেডি, ২০২১ সালে ৩ অক্টোবর শুনা যাচ্ছে ঘুর্নিঝড় হবে তবে কোন এলাকায় হবে কারো জানা নেই, বিকেল ৫ টায় আকাশে চকচকে রোদ, কিন্তু সন্ধ্যা ৬ টায় প্রচন্ড গতিতে বাতাস শুরু হলো, রাত হয়ে আসলো, কারেন্ট চলে গেল এবং রাত ৩ টা পর্যন্ত চলে একটানা ঘুর্নিঝড়, ভাবছিলাম আর বাঁচবো না, কিন্তু সকালে দেখি আমার খামার এবং নার্সারি তে অবশিষ্ট কিছুই নেই, হিসেবে ১ কোটি টাকার সম্পদ সব শেষ, ১৩ দিন খানা, পানি, কারেন্ট কিছুই ছিলো না 😭
এই নিয়ে প্রবাস টাইম সংবাদ প্রকাশ করলো, সবাই খবর টা দেখলো,
🥲সব চাইতে অবাক করা বিষয় হলো ওমান সরকার বাঙালিদের জন্য কোনো ত্রান বা ক্ষতিপূরণ কিছুই দেয়নি,
🥲সেই থেকে ওমানে থাকার ইচ্ছে জাগে না, তারপরও আবার সব কিছু শুরু করছি আল্লাহর রহমতে,
🌺আমার সপ্ন:- আমি সন্তানদের লেখাপড়া শেষে শীঘ্রই দেশে ফিরবো, খামার এবং আরো কিছু কার্যক্রম করবো ইনশাআল্লাহ, বিজয়ের মঞ্চে সেরা উদ্যেক্তার পুরস্কার নিব।
❤️কারণ প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের বানী :-
স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।
সফলতা হচ্ছে:-সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, সুখ ও সম্পদ।
জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হওয়া।
🥰শখ:- অসহায় মহিলাদের ভাগ্য বদলাতে কাজ করা।
😍প্রিয় ব্যাক্তি:- বাবা, আমার বাবার সরলতা আমাকে মুগ্ধ করে।
🔴⚫প্রিয় রঙ:- লাল, কালো, ক্ষেত্রভেদে আরো দু একটা হতে পারে।
🌶️🍅প্রিয় খাবার:- গরুর মাংস, কচুর শাক।
🚊যানবাহন:- ট্রেন, আব্বু রেলওয়ে চাকরির সুবাদে অনেক যাতায়াত করছি ট্রেনে।
🥻প্রিয় পোশাক:- শাড়ি।
🎇শীত বর্ষা ও বসন্ত আমার ভীষণ প্রিয়।
❣️আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার এই এলোমেলো কথা গুলো আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
আশা করছি সারাজীবন সাপোর্ট করে পাশে থাকবেন ইনশাআল্লাহ ☺️।
আমি:- রাবেয়া আক্তার
ব্যাচ:-২১তম
রেজিঃ:-১১৩৩৫৪
মিরসরাই চট্টগ্রাম
বর্তমান অবস্থান ওমান।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে -৯৬৭
তাং- ১৯-১০-২৩ ইং