আর আমার টার্গেটেড কাস্টমার ছিল আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব
__________ আমার জীবনের গল্প __________
Journey from PS to business women.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
খুব সাধারণ একটা কাহিনী তবে কেউ অনেক কিছু শিখতে পারবেন, কারো জীবনের সাথে মিলেও যেতে পারে, কেউবা নস্টালজিক হবেন তাই পোস্ট পড়ে নিজের অনুভূতি কমেন্ট করার বিনীত অনুরোধ করছি।
সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জানাই তিনি আমাকে সুস্থ রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ এবং আরো কৃতজ্ঞতা জানাই আমার শ্রদ্ধেয় মরহুম মা-বাবার প্রতি যারা আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। যাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা না জানালেই নয় তিনি হলেন উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর, এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। তাঁর কল্যাণে আমরা পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের খুব সহজ একটা পথ পেলাম।
ছোটবেলা থেকেই যা চাই তা আমাকে পেতেই হবে এই টাইপ জেদি ছিলাম। তবে ফ্রকের সাথে জাম্প কেডস পড়ার বায়না 😆 ছাড়া অযাচিত কোন কিছুর জন্য জেদ করেছি বলে মনে পড়ে না। জেদি হওয়ার পাশাপাশি একসময় আমি ছিলাম অনেক বেশি চঞ্চল, ডানপিটে, বাচাল, আমোদপ্রবণ, অন্য লেভেলের প্রতিবাদী, কিছুটা সৃজনশীল, খুব মনোযোগী, কোন কিছু জানার আগ্রহ ছিলো প্রচুর। চারু-কারু, বই পড়া এগুলোর প্রতি দারুন ঝোঁক ছিল। কৈশোর পর্যন্ত এই গুণাবলীর অধিকারী হয়ে বীরদর্পে চলছিল আমার জীবন। তখন ভাবতাম বৃদ্ধ হয়ে গেলেও এমনই থাকবো আমি, কখনো নিজেকে পরিবর্তন করবোনা। আহা! স্বপ্নের সেই দুনিয়া আর স্বপ্নে বিভোর আমি! কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়। একে একে জীবনের বাস্তবতার সাথে পরিচিত হয়ে বর্তমানে আমি ত্রিশোর্ধ্ব একজন নারী। সেই বাচাল আর ডানপিটে আমি এখন চুপচাপ স্বভাবের। বুঝেন এবার বাকি গুণগুলো আর কতটুকু বিদ্যমান আছে। তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো কোনো ডিভাইসের built-in version এর মতো মানুষের মাঝে রয়ে যায় যেমন এখনো আমি আমোদ প্রবণ। সবাইকে হাসি খুশি দেখতে ও রাখতে পছন্দ করি। এমন টুকটাক কিছু গুণ রয়ে গেছে আমার মাঝে।
আমার পারিবারিক পরিচিতি এবং শৈশবঃ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে আমার নিজ গ্রাম তবে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিয়ে সবই চট্টগ্রাম শহরে। রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। বাবা ছিলেন একজন সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজসেবক, মা গৃহিণী। বিটিভি, আলিফ লায়লা, সিন্দাবাদ, শুক্রবার দুপুর তিনটায় বাংলা সিনেমা, কুতকুত, কানামাছি, বরফ পানি খেলা, নাম-দেশ-ফুল-ফল খেলা, চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ, এক টাকার ঝাল আচার, আমসত্ত্ব, ছোট কচু হল মুরগির ডিম, মান কচু হলো ছাগল কচু, লোডশেডিংয়ে বাসার বাইরে উঠানে চাঁদকে সাথে নিয়ে হাঁটা ইত্যাদি ইত্যাদি এসবের মধ্যেই কেটেছে আমার শৈশব। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা অল্প বয়স থেকেই জীবনের অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়। তারা একবেলা উপোষ না থাকলেও অভাব কী জিনিস এটা বুঝতে পারে ভালোভাবেই। আমার শৈশবটাও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা। আমার এখনো মনে আছে সেই সময়ে স্কুল ক্যান্টিনে ১ টাকায় বস্তা আইসক্রিম, সিঙ্গারা আর ২ টাকায় বাটার বন পাওয়া যেতো। টিফিনের জন্য বাসা থেকে দেয়া হতো ১ টাকা। প্রতিদিন টিফিন না খেয়ে থাকা তো সম্ভব ছিলোনা তাই মাঝে মাঝে কি করতাম; একদিন টিফিন না খেয়ে ১ টাকাটা জমাতাম আর পরদিন ২ টাকায় বাটারবন কিনে খেতাম। সেই বাটার বনের স্বাদ এখনকার ১৫ টাকার ক্রিম বনেও খুঁজে পাইনা।
বৈবাহিক সূত্রে আমি বর্তমানে মিসেস মার্চেন্ডাইজার এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা।
আমার পড়ালেখা এবং সেই সাথে ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্নের পরিবর্তনের ধারাঃ আমার হাতেখড়ি শুরু হয় আমার মায়ের কাছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মা-ই ছিলেন আমার শিক্ষক এরপর মেঝ বোনের কাছে পড়েছি। আমাকে সরাসরি প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয় পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানের শিক্ষার্থী ছিলাম। বাসা পরিবর্তনের কারণে অষ্টম শ্রেণির মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামের মুরাদপুরস্থ বন গবেষণাগার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। যখন আমি পাথরঘাটা স্কুল থেকে বিদায় নিতে গিয়েছিলাম পুরো ক্লাস এমনকি স্যার পর্যন্ত কান্না করেছিলেন। সেই দিনের দৃশ্যের কথা ভুলবোনা কখনো। কয়েকজন বান্ধবীর সাথে বই এক্সচেঞ্জ করে নিয়েছিলাম স্মৃতি হিসেবে। বান্ধবীদের দেয়া বিদায় বেলার চিঠিগুলো এখনো আছে আমার কাছে। TC নিতে গিয়ে জানতে পারি আমার ক্লাস টিচার উপস্থিতির খাতা থেকে আমার নামটা শুধুই কেটে দেননি একেবারে ফ্লুইড দিয়ে মুছে দিয়েছিলেন। খুব কড়া স্যারটা যে আমায় এভাবে মিস করবেন ভাবিনি। আমি তো অবাক হয়েছিলাম-ই, অফিসের কেরানি স্যারও অবাক হয়েছিলেন। নতুন স্কুলের নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে বেশি সময় লাগেনি কারণ সবাই আন্তরিক ছিলো।
ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো, গরিবদের ফ্রি চিকিৎসা দিবো আর বড়লোকদের কাছ থেকে অনেক ফি নেবো 😂। স্বপ্নের পরিবর্তন হয় নবম শ্রেণীতে বিভাগ নির্বাচন করতে গিয়ে। স্কুল থেকে চাইছিলো আমি বিজ্ঞান বিভাগ নিই আর আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমাকে উকিল বানাবেন তাই বাবা চেয়েছিলেন মানবিক বিভাগ নিই। আমি বিজ্ঞান বিভাগ নিতে ইচ্ছুক হলেও পরে যখন জানতে পারি বিজ্ঞান বিভাগের প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হয় তখন কিছুটা বিবেচনা করলাম। যখন আরো জানতে পারি উচ্চতর গণিত পড়তে হবে তক্ষুণি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। সাধারণ গণিতেই বাঁচি না, আবার উচ্চতর গণিত! এই গণিতভীতি আমার মধ্যে এখনো আছে 😔। সকল জল্পনা-কল্পনা, তর্ক-বিতর্ক শেষে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে রেজিস্ট্রেশন করলাম। কারণ মানবিক বিভাগে বড় দুই বোনকে পড়তে দেখেছি। এত সাল আর ইতিহাস আমি পড়তে পারবোনা বাপু আর গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের সূচিকর্ম, রান্নাবান্না ওসব আমার কম্মো নয় আর উকিল হওয়ারও কোন ইচ্ছা আমার নাই। ওদিকে গণিতের ভয়ে ডাক্তারও হইতে পারবোনা। কাজিনের কাছ থেকে শুনেছিলাম চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হলে গাড়ি-বাড়ি সব হয়, জীবনে কোনো অভাব থাকেনা সুতরাং আমি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগই নিবো এবং ঐচ্ছিক বিষয়ে কৃষি শিক্ষা। আহা! কত সিম্পল সমীকরণ! সামনে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে তা কি আমি জানতাম! মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় গণিত পরীক্ষা যথারীতি তেমন ভালো হয়নি। ভেবেছিলাম ফেল্টুশ হবো আর এই চিন্তায় পরবর্তী বিষয় সাধারণ বিজ্ঞান আমার প্রিয় বিষয় হলেও আশানুরূপ ফল আসেনি। কৃষি শিক্ষা পরীক্ষার আগে দুর্ঘটনাবশত বটিতে পায়ের তালু কেটে চারটা সেলাই হয় তবে এই বিষয়ে A+ পেয়েছিলাম 😁। অবশেষে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় A- গ্রেডে উত্তীর্ণ হই। বিপদ আসে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার সময়। আম্মু হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আর এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম কলেজ আর মহসিন কলেজ ছাড়া অন্য কোন কলেজ থেকে ভর্তি ফরম নেয়া হয়নি। ভর্তির ফলাফল-মানবিক বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ। ভাগ্যের এই সিদ্ধান্তের জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলামনা। এত যুদ্ধের পর ঘুরেফিরে সেই মানবিক বিভাগ! প্রিয় বিষয় accounting-এর মায়া আমাকে ছাড়তে হবে, আমার CA হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হবেনা মানতে পারছিলামনা। সেই থেকে পড়ালেখার প্রতি চরম অনীহা জন্মায় আমার। 'যুক্তিবিদ্যা' বিষয়টা ছিল বলে রক্ষা। অর্থনীতি, পৌরনীতিতে কোন মজাই খুঁজে পেতামনা আমি। ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন দেখাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম তখন। বাবার ভয়ে কোনোমতে পড়ালেখা চালিয়ে যাবো এই ছিল সিদ্ধান্ত। এরপর টুইস্ট উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে আমার টাইফয়েড। দীর্ঘ একমাস শয্যাশায়ী ছিলাম। আমি ভাবতাম শুধু র্যাংকে থাকতাম বলে মা-বাবা আমাকে একটু আলাদা চোখে দেখতেন, বেশি ভালবাসতেন কিন্তু অসুস্থতার দিনগুলোতে আশানুরূপ ফলাফল না করা এই আমাকে হারানোর ভয় আর চিন্তা দেখেছিলাম তাদের চোখে মুখে। পাঁচটা ডাক্তার, ডজন খানেক সিরিঞ্জ রক্ত, এত্তগুলো ওষুধ আর এন্টিবায়োটিকের পর আল্লাহ শাফা দান করলেন। সুস্থ হয়ে প্রায় ২ মাস পর কলেজে গিয়ে জানতে পারি আমার প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার আর ১ মাসও বাকি নেই। হইছে নি কামডা এবার 😔! সিলেবাসের অর্ধেকও শেষ হয়নি তার ওপর অর্থনীতির অ-টাও মাথায় ঢুকেনা আবার পৌরনীতির গাদা গাদা সাল! এদিকে ডাব্বাগুল-ও হওয়া যাবেনা সব মিলিয়ে আমার মাথায় বাজ পড়লো। জানিনা কীভাবে পরীক্ষা দিয়েছি তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেলাম। পরীক্ষার রেজাল্টের পর উপলব্ধি করলাম যে সাবজেক্টগুলো এতটাও বোরিং না। চাহিদা, যোগান, জিডিপি, ব্রিটিশ-ভারত আন্দোলন, ছয় দফা ইত্যাদির মধ্যে তখন পড়ার মজাটা খুঁজে বের করতে লাগলাম। ওই সময়ও কিন্তু জীবনের লক্ষ্য নিয়ে মাথা ঘামাইনি তবে বিএনসিসি জয়েন করতে চেয়েছিলাম অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি ঝোঁকের কারনে। বাবা রাজি হননি তাই আর জয়েন করা হয়নি। পরীক্ষায় পাস করার উদ্দেশ্যে কলেজের ক্লাস, ইংলিশ প্রাইভেট এগুলোতে সময় দিচ্ছিলাম আর দেখতে দেখতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসলো। ভালোভাবেই চুকলো উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের পর যে সময়টুকু পেয়েছিলাম তখন বেড়াতে গিয়ে, টিভি দেখে সময় কাটিয়েছি। তখন যদি কেউ বলতো এসব অনুৎপাদনশীল খাতে সময় ব্যয় না করে কোনো কোর্স করতে! অন্তত ইংলিশ কোর্স করতে পারতাম কারণ একদম স্কুল জীবন থেকে ইংলিশ আমার প্রিয় বিষয় ছিল, দক্ষতা আরো বাড়াতে পারতাম। কিন্তু এসব তো মাথায়ই আনিনাই। এই সময়ে একদিন পত্রিকায় এয়ার হোস্টেস ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা নিয়ে একটা আর্টিকেল দেখলাম। এবার এয়ার হোস্টেস হওয়ার ভূত মাথায় চেপে বসলো কারণ যে যোগ্যতার কথা পত্রিকায় উল্লেখ ছিল তার সবই আমার মধ্যে ছিল। বাবা প্রথম দিকে রাজি হলেও পরে কারো নেতিবাচক মন্তব্যে আর এগোতে দিলেননা। এবার এয়ার হোস্টেস হওয়ার স্বপ্নও ত্যাগ করলাম। এক আত্মীয় পরামর্শ দিলেন বি. এড করার কিন্তু শিক্ষকতা পেশায় আমার কোন আগ্রহ ছিলোনা। জীবনের কোন লক্ষ্য নির্ধারণ ছাড়া শখের বসে হোক বা টানের কারনে, ইংলিশে অনার্স পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানেও বিধি বাম 😔! ইন্টারভিউতে গিয়ে বাইরে থেকে জানতে পারি ইংলিশে সিট খালি নাই। আমার সম্ভাব্য বিষয় হলো বাংলা, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান। মাথা গরম করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত না আর এই ভুলটাই করে বসলাম আমি। ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত আর গেলামই না, চট করে পাস কোর্সের ফরম নিয়ে সেখানে ভর্তি হয়ে গেলাম। যদি ইন্টারভিউতে স্যার/ম্যাডামদের মুখোমুখি হতাম তাহলে হয়তোবা আজ অনার্সের সার্টিফিকেট থাকতো। অবশ্য এগুলো নিয়ে আর মাথা ঘামাইনা এখন। স্নাতকে থাকাকালীন আমার বন্ধুদের কেউ কেউ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলো আর আমি ক্লাসের বিরতিতে কলেজের মেইন গেট থেকে প্যারেড কর্নার, প্যারেড কর্নারের এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্ট ঘুরে বেড়াতাম প্রিয় বান্ধবীর সাথে। ওই যে জীবনের লক্ষ্য ছাড়া এগিয়ে যাচ্ছি তারই আউটপুট এগুলো সব। দ্বিতীয় বর্ষে কলেজের রেড ক্রিসেন্টে যোগ দিলাম। পরবর্তীতে আমাকে চট্টগ্রাম কলেজ ইউনিটের প্রশিক্ষণ বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা হয় ☺️। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে রেড ক্রিসেন্টে জয়েন করার পর। স্নাতক ফাইনাল দেয়ার পর কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। প্রয়োজনটা হল চাকরির যোগ্যতা। কী চাকরি করবো জানিনা তবে কম্পিউটার জানলে চাকরি পেতে সুবিধা তাই কম্পিউটার কোর্স করবো মানে এখনো উদ্দেশ্যহীন আমি। জাতীয় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ছয় মাসের Diploma in Computer Science and Engineering বিষয়ে কোর্স করলাম। এরই মধ্যে আমার স্নাতকের ফলাফল বের হলো। ফলাফল পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আমি চট্টগ্রামের স্বনামধন্য একজন শিল্পপতির PS হিসেবে চাকরি পেয়ে যাই। তারপর চলতে থাকে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, কখনো ৮টা পর্যন্ত আমার চাকরিজীবন। এদিকে কিছুদিন পর প্রাইভেট চাকরি আর ভাল্লাগেনা। এখন কী করব- সরকারি চাকরি। এইবার পড়াশুনা করতে লাগলাম কিন্তু........., মনে আছে আমার গণিত ভীতির কথা? 🙄 এক পর্যায়ে বোকার মত গণিতের শর্টকাট মুখস্ত করতে লাগলাম। মুখস্ত করে কি হবে যদি গণিতকে বুঝতে না পারি! বেশ কয়েকটা সরকারি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে টাকাটা জলে ফেললাম। জলে ফেললাম বলছি কারণ আমার বুঝা উচিত ছিল যেখানেই যাই a square+2ab+b squar ইত্যাদি থেকে বাঁচতে পারব না। চাকরিরত অবস্থাতেই চট্টগ্রাম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করি। এখানেও ঘটনা আছে। ইংলিশে মাস্টার্স করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাস কোর্সে English literature কি applied English ঠিক মনে নেই এখন, এই বিষয়টা যাদের ছিলনা তারা ইংলিশে মাস্টার্স করতে পারবেনা। লে হালুয়া! দর্শন বিভাগে ভর্তি হতে চেয়েছি, সেটা কেন হয়নি তাও এখন মনে পড়ছে না। পৌরনীতি মানে উচ্চমাধ্যমিকে যে বিষয়টাতে আমার অনাগ্রহ ছিল সে বিষয়ের উপর মাস্টার্স করছি আমি ভাবা যায় 😔! সারাবছর বইয়ের ধারে কাছেও ছিলামনা। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতাম। অ্যাসাইনমেন্ট, টেস্ট, ফাইনাল পরীক্ষার সবগুলোই পরীক্ষার আগের দিন অফিস থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। মাস্টার্সে পরিসংখ্যান বিষয়টা ছিল যার আগামাথা কিছুই জানতাম না। পরীক্ষার কিছুদিন আগে অফিস থেকে বাসায় এসে ছোট বোনের কাছে পরিসংখ্যান ক্লাস করতাম। সে আবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ভালো ছাত্রী। আমি কখনো গাইডবই সম্পূর্ণ ফলো করে পড়িনি। স্কুলের বাংলা রচনা হোক বা উচ্চ মাধ্যমিক থেকে পাস কোর্সের বিষয়গুলো হোক সবই নিজে সাজেশন তৈরি করে নতুন, পুরনো কয়েকটা বই একসাথে করে নিজেই হ্যান্ডনোট তৈরি করে পড়েছি। মাস্টার্সে সেই সুযোগটা হয়নি তাই বাধ্য হয়ে সরাসরি গাইডবই থেকে পড়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম আর এটাতে আমার কষ্ট হয়েছিল প্রচুর কারণ গাইড বইয়ের পড়া গুলো কেমন যেন অসম্পূর্ণ লাগতো। হ্যান্ডনোট থেকে পড়ার অভ্যাস তাই একটা অসন্তোষ কাজ করছিল কিন্তু এই অসন্তোষের পরীক্ষার ফলাফল আবার খুবই সন্তোষজনক ছিল- ফার্স্ট ক্লাস 😌। আমার মা খুশিতে কেঁদেছিলেন যখন আমি তাকে আমার ফলাফলের কথা জানাই। আব্বু যদি বেঁচে থাকতেন হয়তো তিনিও সেদিন কাঁদতেন। মাস্টার্সের পর এবার তো পিএসের চাকরি থেকে ভালো অবস্থানে যেতে হবে। বিভিন্ন জব সাইটে চাকরি খুঁজতে লাগলাম কিন্তু অনার্সের সার্টিফিকেট ছিলোনা আর Masters in any discipline ক্যাটাগরির চাকরি আমার পছন্দ হচ্ছিলোনা। এই করতে করতে এক সময় আশা ছেড়ে দিলাম, ধরে নিলাম আমার আর জব সুইচ করা হবে না। সেই সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে পারি এফবি থেকে। একটু স্টাডি করলাম এটা নিয়ে। ইউটিউবে সার্চ করে SEO, ফ্রিল্যান্সিং এসব সম্পর্কে জানতে পারি। ব্যস, এবার আমি চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হব। যেহেতু মোবাইল কম্পিউটারের প্রতি আগে থেকেই ঝোঁক বেশি তাই আমার জন্য এটাই পারফেক্ট। আজ থেকে ৭-৮ বছর আগের ইউটিউব এত তথ্য সমৃদ্ধ ছিল না এবং ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে অফলাইনে ট্রেনিং হয় কিনা সেটা আমার মাথায় ছিলনা তাই খোঁজও নেইনি। ফলাফল- এসব আমার দ্বারা হবে না। সত্যি বলতে আমি তখন চাকরির পাশাপাশি কিছু একটা করার চিন্তা করছিলাম কিন্তু কী করবো জানিনা। এরই মধ্যে আমার আম্মু আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি দেন, আমার বিয়ে হয়, আমি মা হই। মা হওয়ার পর যেকোনো কারণে চাকরিটা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হয়নি। ব্যর্থতা যেনো আমার পিছু ছাড়েনা। না পারছিলাম চাকরির মায়া ছাড়তে না পারছিলাম সন্তানের মায়া ছাড়তে 😢!
একটু বলে রাখি ফেসবুকে তখন হাতেগোনা অনলাইন পেইজ ছিল আর অফিসে কাজের ফাঁকে আমি ফেসবুকেই বেশিরভাগ সময় কাটাতাম এবং গার্লস গ্রুপ গুলোতে অনেক বেশি একটিভ ছিলাম। একটা পেইজে দেখেছিলাম ক্যাটালগের ড্রেস যেগুলো মার্কেটে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা দাম সেগুলো ১৬০০ থেকে ১৯০০ টাকায় সেল দিচ্ছে। তখন শুধু দেখার জন্যই দেখতাম ড্রেসগুলো, সুন্দর লাগতো।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমি আমার চাকরিজীবনের ইতি টানি আর নভেম্বরে ব্যবসায়ী জীবন শুরু করি। ব্যবসায়ী শুরু করার পূর্বে আমার মি. মার্চেন্ডাইজার স্বামী এবং ডিজিটাল প্রোডাক্টের ব্যবসায়ী আমার দেবরের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করি। দুজনেই উৎসাহ, পরামর্শ দেয়। মজার ব্যাপার হলো আমার প্রথম ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছিল ওই যে একটা পেইজে ড্রেস দেখেছিলাম সেখান থেকে ১৬০০ টাকার ড্রেসগুলো কিনে এনে ২০০০ টাকায় সেল করা। মার্কেটে তো তিন হাজার টাকা প্রাইস। কত সহজ আর সাধারণ সমীকরণ 😆! স্বামী আর দেবরের সাথে আলাপের পর জানলাম প্রত্যেকটা জিনিসের পাইকারি বাজার থাকে এবং ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে সংগ্রহ করে পণ্য বিক্রি করে। এরপর আমি স্টাডি শুরু করি ব্যবসায় কিভাবে শুরু করা যায়, কিভাবে আর কোথা থেকে ড্রেস সংগ্রহ করা যায়। এগুলো নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে সারাদিন মোবাইলে google আর youtube নিয়ে পড়ে থাকতাম। আম্মু ছিলেন বলে সংসার রক্ষা। একটা পাইকারি দোকানের ভিডিওতে কিছু শাড়ি খুব ভালো লেগে গেলো। একটা অর্ডার করে কোয়ালিটি দেখলাম ভালোই। ২০১৮ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে বর আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। বাবুর বয়স তখন ৬ মাস। পরিকল্পনা- ইসলামপুর থেকে ড্রেস কালেকশন। ল্যাপটপের ব্যাগ আর ছয় মাসের বাবু দুটোই আমার বর বহন করেন আর আমি ড্রেস খুঁজতে থাকি। আমার প্রথম বাজেট ছিলো বিশ হাজার টাকা। কিন্তু ইসলামপুর থেকে পাকিস্তানী লন কাপড়ের আনস্টিচ ওয়ান পিস ছাড়া কিছুই কিনতে পারলাম না। সুতি থ্রি পিস, পাকিস্তানি ব্র্যান্ডের থ্রি পিসের দোকান কিছুই বাদ দেইনাই কিন্তু মিলাতে পারলামনা। সুতি থ্রি পিসের যে দোকানগুলোতে গিয়েছিলাম সেখানে ফেব্রিক মানসম্পন্ন মনে হয়নি। ব্র্যান্ডেড যে থ্রিপিসগুলো ১৫০০ টাকায় বড় বড় পেইজে সেল করে সেগুলো ইসলামপুরেই ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা দাম পাইকারি। অরিজিনাল আর রেপ্লিকা সম্পর্কে তখনও ধারণা ছিলোনা, পরে যে কাজিনের বাসায় উঠেছিলাম তার কাছ থেকে জানতে পারি। একই দিন ঢাকার গাউছিয়া মার্কেট থেকে শাড়ির যে স্যাম্পল এনেছিলাম সেই দোকানে গিয়ে দেখলাম যেটা আমি কিনেছিলাম সেই শাড়িগুলো স্টক আউট। অন্য শাড়ি দেখালেন তারা। আমার পছন্দ হলোনা প্রথমে, পরে দোকানির কথায় কনভিন্স হয়ে কেন যেন কিনে ফেললাম দুই ধরনের ছয়টা শাড়ি। এত ঘাঁটাঘাঁটির পরেও পাইকারি বাজারের বান্ডেল হিসাব আমার অজানা ছিলো আর দোকানিও বুঝতে পেরেছিলো, "এই মহিলা ব্যবসায়িক লাইনে নতুন এবং বোকা" 😒। এরপর বরের এক পরিচিতের রেফারেন্সে কারচুপি ওয়ান পিস নিলাম। ভালোই ছিলো সেগুলো। এবার বাসায় গিয়ে তো আমার পুরাই মন খারাপ, "এত দূরে এসে ১২টা ওয়ান পিস আর ছয়টা শাড়ি নিয়ে চলে যাবো? থ্রি পিস তো কেনাই হলোনা এদিকে হাতে সময়ও নেই যে বাবুরহাটে গিয়ে একটু দেখবো।" আমার মুখ ভার দেখে স্বামী, তাঁর কাজিন আর দুলাভাই আমাকে আবার নিয়ে গেলেন গাউছিয়া মার্কেট। আপুর কিছুটা ধারণা ছিল পাইকারি বাজার সম্পর্কে এবং কিছু পরিচিত দোকানও ছিলো। গাউছিয়া, মৌচাক এই দুই মার্কেট ঘুরে অবশেষে একটা দোকান থেকে এমব্রয়ডারি কিছু থ্রি-পিস খুব পছন্দ হয়ে গেলো, কিনে নিলাম। এবার আমি বেজায় খুশি। ওয়ান পিস, থ্রি পিস, শাড়ি সব নিয়ে ফেলেছি এবার জুয়েলারি বাকি কিন্তু টাকা শেষ। সমস্যা নাই, পরে কিনবো। মানে আমার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা- আমার একটা পেজ থাকবে সেই পেইজে মহিলাদের বিভিন্ন রেঞ্জের ড্রেস থাকবে যার ৫০০ টাকার ড্রেস লাগবে সেও আমার কাছ থেকে কিনবে যার ২০০০ টাকার ড্রেস লাগবে সেও আবার শাড়ি, জুয়েলারি যা লাগে সব আমার কাছে পাবে। শুধু আমি আর আমি একমাত্র সমাধান। আর কারো কাছে যাওয়া লাগবে না। হা হা হা 😝! আর আমার টার্গেটেড কাস্টমার ছিল আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব 🙄। বলাই বাহুল্য ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করার সময়ও আমি ব্যবসায়ের 'ব' জানতামনা তবে এটা বুঝতে পারি অনেক পরে। যা-ই হোক, সেদিন রাতেই মিরপুরের কিছু গার্মেন্টস ভিজিট করলাম ওয়ান পিসের কিছু ভালো কালেকশনের জন্য যাতে পরবর্তীতে নেয়া যায়। ওয়ান পিস তো ম্যাচ করতে পারলামনা, সেখানে এক ব্যক্তি তাঁতের শাড়ির কথা জানালেন যে তার একদম অরিজিনাল সোর্স আছে তাই তিনি সরাসরি টাঙ্গাইল থেকে সরবরাহ করতে পারবেন। Okay done. সেদিন তো আমি মহা খুশি আর খুশির ঠেলায় উনাকে অর্ডার দিয়ে দিলাম ছয়টা শাড়ি। চট্টগ্রামে ক্যাশ অন ডেলিভারিতে নিবো। মনে মনে ভাবলাম সমস্যা তো নাই, আমার ব্যাংকে কিছু টাকা এখনো আছে আরো ইনভেস্ট করবো। কিছুদিনের মধ্যেই এই টাকা ডাবল হয়ে যাবে। ওই ব্যক্তিও বুঝতে পেরেছিলেন "এই মহিলা ব্যবসায়ে নতুন এবং বোকা" 🙄। যাক, খুশি মনে চট্টগ্রাম ব্যাক করলাম। প্রথমে ডোমেইন কিনলাম, তারপর পেইজ তৈরি করলাম। আত্মীয়দের মাধ্যমে প্রথম দিনে অফলাইনে আমার সেল হয়েছিল ১২০০০ টাকার মত। আমারে আর পাই কে! আমি তো ওভার কনফিডেন্সের হাওয়ায় ভাসতেছি তখন। হাওয়াই ভাসতে থাকা আমি ধপ করে মাটিতে পড়লাম যখন ফটোশুট, পেইজ বুষ্ট, দুই/একটা গ্রুপে পোস্ট এতসব করার পরেও বেশকিছু product ঘরেই রয়ে গেল। আমার পেইজ আভরণের বয়স তিন মাসেরও বেশি। পরিচিত ছাড়া বাইরের কোন কাস্টমারই নাই আমার। কারচুপি ওয়ান পিস একটাও সেল হলোনা, শাড়ি দুইটা সেল হয়েছিল আর লন ওয়ান পিস, থ্রি পিস মিলিয়ে চার থেকে পাঁচটা। এবার কি করবো? আমার তো প্ল্যান ছিল সব সেল করে নতুন কিছু স্টক করবো। আমি হতাশ তবে এর মধ্যে আমার অনলাইনে সোর্সিং খোঁজা কিন্তু থেমে ছিলোনা। হতাশায় ব্যাংকের টাকায় হাত দিতে ইচ্ছে করছিলোনা। একটা সময় পরে বুঝলাম আমার এই প্রোডাক্ট মার্কেটে চলবেনা, নতুন প্রোডাক্ট স্টক করতেই হবে। এরই মধ্যে ভালো সোর্সিং পেয়ে গেলাম, কিনে না ঠকার মত সোর্সিং। নতুন প্রোডাক্টের সেল মোটামুটি ভালই হলো। গ্রুপ পোস্ট, পেজ বুস্টিং সব মিলিয়ে ওয়ান পিস, থ্রি পিসের নতুন স্টকের প্রায় সোল্ড কিন্তু প্রথম স্টকের অনেক কিছু তখনও রয়ে গেছে। ওগুলো পরবর্তীতে গিফটের জন্যই ব্যবহার করেছি, সেল করার আর চেষ্টাও করিনি। ব্যবসা মোটামুটি ভালো চলছে। স্বামীর পরামর্শে ও সহায়তায় এক্সেল শীটে স্টক আপডেট রাখছি, টাকার হিসাবও রাখছি কিন্তু আমি বিরাট একটা ভুল করছিলাম অজান্তেই আর সেটা হল টাকা গুছিয়ে না রাখা। সেল হচ্ছে কিন্তু আমার অ্যাকাউন্টও খালি হচ্ছে। টাকা সব যাচ্ছে কই সেই খেয়াল আমার নাই। থাকবে কোথা থেকে? ব্যবসায়ের পুঁজি, লাভ সব তো ব্যক্তিগত খরচে উড়াইয়া ফেলতেসিলাম। ফলাফল- হাতে টাকা নাই, ভালো পরিমাণের টাকা প্রোডাক্ট স্টক হিসেবে ঘরে আটকা। এভাবে আভরণের বয়স এক বছর হয়ে গেল প্রায়। এর মধ্যে কিছু সেল করেছিলাম আর ভুল বুঝতে পেরে সেই টাকাটা একদম নাই মনে করে জমা করেছিলাম। কিছু পেইজে রিসেলার হিসেবেও কাজ করেছি কিন্তু এডমিনের অসহযোগিতা এবং প্রাইস বেশি হওয়ার কারণে সেল করতে পারিনি তেমন।
২০১৯ সালের নভেম্বরে সানজি নকশি ঘরের স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম কথা হয়। আমার সদ্যজাত মামাতো ভাইয়ের জন্য নিমা, ন্যাপি, কাঁথা অর্ডার করলাম। উদ্দেশ্য দুইটা- গিফট দেয়াও হবে এবং আমার যে তাঁদের পণ্যের মান নিশ্চিত হবো। যেকোনো কারণে ভাইয়া সেদিন নিজে আমার প্রোডাক্টগুলো নিয়ে এসেছিলেন। কথাবার্তায় জানতে পারলাম সানজি নকশি ঘরের টিম আছে এবং আমি চাইলে জয়েন করতে পারি। আমি ভাইয়াকে পে করার আগে প্রোডাক্ট চেক করে নিয়েছিলাম, ভালোই লাগলো। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চেক করে নিলাম কোন খুঁত আছে কিনা, কিছু পেলাম না 😊। সেদিনই গিফটের ফিডব্যাক নিলাম পছন্দ হয়েছে কিনা, মান ঠিক আছে কিনা। ফিডব্যাক ভালো ছিল আর আমার দ্বিধাও একদম কিলিয়ার। সেই থেকে সানজি নকশি ঘরের একজন ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে আমার পথ চলা শুরু। আমার নকশিকাঁথার পেইজের পিছনেও একটা ঘটনা আছে।
আমার বাবুর জন্য আমার বড় বোন কিছু কাঁথা নিজে সেলাই করেন। তার আবার আঁকার হাত ভালো, হাতের কাজও। তখন আমি তাকে আইডিয়া দেই যেন বেবি কাঁথার বিজনেস শুরু করে। মার্কেটিংয়ে আমি সহায়তা করব কারণ আমি চাকরিজীবন থেকেই পেইজের খুঁটিনাটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতাম। সেই উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে অর্থাৎ আমার পেইজ আর বিজনেস শুরুর আগে বড় বোনের জন্য 'Beauty Nokshi Katha' নাম দিয়ে পেইজ খুলে দেই। যেকোনো কারণেই হোক আমার বোন কাঁথার কাজ শুরু করতে পারেননি। আল্লাহ কার রিজিক কোথায়, কিভাবে রেখেছেন তিনি ছাড়া আর কেউ জানেনা। বড় বোনের জন্য তৈরি করা পেইজ এখন আমার Baby Katha & Nokshi Products 😊। কাহিনীটা এতটুকুতে শেষ হতে পারতো কিন্তু পিকচার আভি বাকি হ্যায়। আভরণের সাথে সাথে নতুন পেইজের কাজ তো শুরু করলাম কিন্তু সঠিক পথ না জানার কারণে সাড়া পেলামনা তেমন। এদিকে দুই পেইজে সময় দিতে হচ্ছিলো, দুই ধরনের প্রোডাক্টের মার্কেটিং করতে হচ্ছিল তাই ফোকাস ঠিক রাখতে পারছিলামনা ফলে তিন মাসের মাথায় আবার হতাশা আমাকে গ্রাস করতে থাকে। কি করবো আমি! আমার দ্বারা না চাকরি করা সম্ভব হলো এখন না বিজনেস হচ্ছে না সংসার। কোন কিছুই তো ঠিক মতো করতে পারছিনা। এদিকে স্বামীর উপার্জনের উপর শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে থাকার ইচ্ছে আমার নেই যদিও তিনি ভালো মনের একজন মানুষ তবুও আমার নিজের উপার্জন চাই কেননা একসময় নিজে উপার্জন করেছি তাই এর স্বাদটা খুব ভালোভাবে জানি। এইসব ভাবাভাবির মধ্যে বিজনেস বন্ধ রেখে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যথারীতি ডাব্বাগুল। হতাশা কাকে বলে, হতাশার ভয়াবহতা সেই সময় উপলব্ধি করেছি। দিন দিন বিষন্নতা, সংসারের উপর বিরক্তি ভর করছিল আমার ওপর। আমি আমার জীবন নিয়ে এতই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে নিজেকে শেষ করে দেয়ার মত মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল আমার জীবনের কোন মূল্যই নাই, I am good for nothing। তবে মারাত্মক সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারিনি। সেখানেও আমার সন্তানের কথা ভেবে ব্যর্থ হতে হয়েছে। তারপর ভাবলাম দুইটা পেজই ডিলিট করে দেবো আর পুরোপুরি সংসারী হয়ে যাবো কিন্তু মন থেকে তো সায় দিচ্ছিলোনা। আলতু ফালতু চিন্তায় প্রায় দুই মাস আমি অনলাইন থেকেই দূরে ছিলাম তারপর একদিন খোরশেদ ভাইয়া নক দিলেন খোঁজ নেয়ার জন্য। ভাইয়ার সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করলাম। তিনি আমাকে বুঝালেন, সাহস দিলেন। আবার কাজ শুরু করলাম। ততদিনে সানজি নকশি ঘরের সিস্টেমে পরিবর্তন এসেছে। প্রতি শুক্রবার দুপুর তিনটায় সাপ্তাহিক মিটিংয়ের মাধ্যমে ভাইয়া ব্যবসায়ের খুঁটিনাটি সবকিছু এবং মোটিভেশনাল ট্রেনিং দিতে লাগলেন। আমি একটু একটু করে বুঝতে পারলাম তখন আমার ভুলটা কোথায়। আবার উঠে দাঁড়ালাম এবং নিজেকে তৈরি করতে লাগলাম। বর্তমানে দিলশাদ সুলতানা অনেকের 'কাঁথা আপু' আলহামদুলিল্লাহ। 😇 অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আমার পেইজের পাঁচ হাজারের বেশি লাইকের মধ্যে মাত্র ৬০০ বা ৭০০ লাইক পেজ প্রমোটের অ্যাড দিয়ে পাওয়া, বাকি সব আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার পরিশ্রমের ফসল আলহামদুলিল্লাহ।
ফাউন্ডেশনে আমার যাত্রার শুরু এবং ফাউন্ডেশন নিয়ে অনুভূতিঃ নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন গ্রুপে আগে থেকেই জয়েন ছিলাম কিন্তু পোস্ট করা হয়নি কখনো। আমার এক প্রিয় ভাই Rasel Nk -র অনুপ্রেরণায় ও উৎসাহে আমি ১৯তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেশন করি। ভাইয়ার একটা কথা আমার মনে থাকবে সবসময়, "আমি শিওর দিলশাদ আপু একদিন অনেক উপরে উঠতে পারবেন। আপনার ভেতরে সেই প্রতিভা আছে। হাল ছাড়বেন না কখনো।" রাসেল ভাইয়ের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনে সর্বপ্রথম পরিচয় হয় বায়েজিদ জোন অ্যাম্বাসেডর Kazi Md. Amzad Hosain ভাইয়ের সাথে। প্রথম সেশন চর্চায় আমজাদ ভাই ছাড়াও Bibi Ayeshaআপু, Habiba Sultana আপু, Mizanur Rahman ভাই এবং Mojammal Newaz ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। সেদিন নিজের পরিচয় দেয়া ছাড়া কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে ভালো মনের মানুষগুলো শিখিয়ে-পরিয়ে দিলেন। অল্প দিনের মধ্যে সঞ্চালনার দায়িত্ব পেলাম।
স্যারের সেশনগুলো পড়ে আমার অনুভূতি এক কথায় 'আফসোস'। আফসোস এই ভেবে যে, ছাত্রজীবনে যখন উদ্দেশ্যহীনভাবে সময় পার করছিলাম তখন এই মূল্যবান কথাগুলো আমি কেন পাইনি! আচ্ছা ছাত্রজীবনে না হোক, চাকরিজীবনে যখন বসের ঝাড়ির ওপরে অতিষ্ঠ জীবন যাপন করছিলাম তখন কেন পাইনি! আচ্ছা চাকরিজীবনে না হোক, যখন হতাশ হয়ে একটার পর একটা ভুলের মধ্য দিয়ে বিজনেস করছিলাম আর ক্যারিয়ার নিয়ে কনফিউজড ছিলাম তখন কেন পাইনি! জীবনটা কত সহজ হতো যদি এই সময়গুলোতে আমি ফাউন্ডেশনের খোঁজ পেতাম! আজ সেশনচর্চার মাধ্যমে নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি ফেলে আসা কিছু স্মৃতি, অভিজ্ঞতা আবার চোখের সামনে ভাসে। কিছু ক্ষত তাজা হয়, আমি যে কত বোকা ছিলাম সেটা আবার উপলব্ধি করি, আমার এতদিনের অর্জিত জ্ঞান শাণিত হয়। সবশেষে সান্তনা নিজে হয়তো মিস করে গেছি কিন্তু এখন সেশন সঞ্চালনা, বিশ্লেষণ এসবের মাধ্যমে ০.১ ভাগ হলেও অন্যের উপকার করতে পারছি হয়তোবা। ২৩তম ব্যাচের Moin Uddin ভাই যখন বলেন তিনি যাদেরকে অনুসরণ করে সঞ্চালনা শিখেছেন তাদের মধ্যে দিলশাদ আপুও একজন তখন অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে। সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ! 🥰
আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর লিস্টটা অনেএএএএএক বড়। মহান আল্লাহর রহমত, আমার মা-বাবাসহ সকলের দোয়া আমাকে জীবনের প্রতিটা পদে পদে দেরিতে হলেও একজন পথপ্রদর্শক দিয়েছে। ঠকেছি, ঠেকেছি কিন্তু দমে যায়নি। নিজেকে সফল ব্যবসায়ী বলবো না কারণ পিকচার আভি বাকি হ্যায় 😁। এখনো অনেকটা পথ বাকি। এই চলার পথে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। 🙂
📌 স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৯৬৯
তারিখ - ১৩-১১-২০২৩ ইং
দিলশাদ সুলতানা
🍂 ব্যাচ- ১৯
🍂 রেজিঃ নং- ১০৭৬১৭
🍂ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য
🍂এগ্রোফোরামের সদস্য
🍂 ব্লাড ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্য
🍂 জোন- বায়েজিদ
🍂 নিজ জেলা- চট্টগ্রাম
🍂 পেইজ- Baby Katha & Nokshi Products
নবজাতকের নিমা, ন্যাপি, কাঁথা এবং নবজাতকের পরিবারের জন্য নকশি কাঁথা, নকশি চাদর, নকশি কুশন কভার, তুর্কি কভার নিয়ে আছি আপনাদের পাশে। সারাদেশে নিজস্ব প্রজেক্টে তৈরি সর্বোচ্চ মানের পণ্য সরবরাহ করি আলহামদুলিল্লাহ।