মাহমুদা আক্তার মুক্তার জীবনের গল্প।
"আসসালামু আলাইকুম "
লাখো কুটি শুকরিয়া মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি, যিনি আমাকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এই সুন্দর ভুবনে পাঠিয়েছেন।
সালাম ও দুরুদ পেশ করছি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি।
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমার শ্রদ্ধেয় মা-বাবার প্রতি।যারা আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন।যাদের ঋন কখনো শোধ করতে পারবো না।
আরো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের সবার প্রিয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর প্রতি, যিনি আমাদের কে এতো সুন্দর একটি প্লাটফর্ম দিয়েছেন।
আমার জন্ম কুমিল্লা, আদর্শ সদর, মোগলটুলি।আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন।চাকুরির কারনে মোগলটুলি সরকারি কোয়ার্টারে থাকা। আমার বাবা চাকরি করতেন টি এন টি অফিসে। যার অবস্থান ছিল পুরাতন চৌধুরী পারা,কুমিল্লা।
আমরা তিন ভাই,তিন বোন,আমি ভাই-বোনদের মধ্যে চতুর্থ। বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। আমি আমার বাবার খুব আদরের ছিলাম।😊অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি বাবাকে,তারপরও কখনো গায়ে হাত তুলেননি।
আমার শিক্ষা জীবন শুরু করি রেওয়াজ উদ্দিন প্রাইমারি স্কুলে। কুমিল্লা হাইস্কুল ছিল আমাদের বাসার সামনে।তাই কাছে থাকার সুবাদে হাইস্কুলে ভর্তি হই।হাইস্কুল থেকে আমি এস এস সি সম্পন্ন করি।
ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হলাম।এর মাঝে বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেল।তারপর উঠে পড়ল আমার বিয়ের জন্য।
টেস্ট পরিক্ষা চলাকালীন আমার বিয়ে হয়ে গেল।শুরু হলো জীবনের নতুন অধ্যায়।
২০০১ সালে বিবাহিত জীবন শুরু।আমার স্বামী শ্রীমঙ্গল কন্টেকটারী করতেন। সেই সুবাধে চলে যেতে হলো শ্রীমঙ্গল।শুরু হলো দুজনের জীবনযাত্রা। এর মাঝে এইচ এস সি পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের সময় পার হয়ে গেল।😢দেওয়া হলো না পরীক্ষা।😢
২বছরের মধ্যে আমি একটি পুত্র সন্তানের মা হলাম।ভালোই চলছিলো জীবনযাত্রা।আমার স্বামী আমাকে বুঝার চেষ্টা করতেন। যেহেতু বয়স কম ছিল।
কিন্তু ২০০৪সালে কঠিন পরিস্থিতির সমুক্ষীন হতে হয়।আমার স্বামী একজন সহজ সরল মানুষ। উনার কাজের অবস্থানে ঝামেলার কারনে আমরা শ্রীমঙ্গল থেকে চলে আসি।
শুরু হয় কঠিন জীবনযাত্রা ।কুমিল্লা শশুর বাড়ি চলে আসি ।
যা টাকা ছিল কিছুদিন চলতে পারি। তারপর আমার শাশুড়ি আমাদের জন্য যথেষ্ট করেছেন।আমার শশুর ছিলো রিভিনিউ সার্কেল অফিসার।উনি মারা যাওয়ার পর আমার শাশুড়ি পেনশনের টাকা পেতেন। সেই টাকা দিতে কখনো উনি কার্পন্ন করেননি।কিন্তু আশেপাশের মানুষের কথা শুনতে হতো খুব।
বিপদে পড়লে আসলে মানুষ চেনা যায়।
আমার বাবার বাড়িথেকেও টুকিটাকি সাহায্য সহযোগিতা করতেন।
আসলে নিজের চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য অনেক কিছু প্রয়োজন হতো সেটা কাউকে আসলে খুলে বলা যেত না, তখন থেকে রাত দিন ভাবতে শুরু করলাম কি করতে পারি। ঘুরে দাঁড়াতে হলে আমাকে একটা না একটা কিছুই করতে হবে।
তখন একটি কথা মনে পড়ে গেল,
আমরা নারী আমরা পারি সেই স্লোগানকে বিশ্বাস
করে প্রতিজ্ঞা শুরু করে দিলাম!!!
শুরু করি কর্মজীবন >
তখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
আগে থেকেই সেলাই কাজ শিখার খুব আগ্রহ ছিল। শশুর বাড়িতে সেলাই মেশিন দেখে আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। শুরু করে দিলাম নিজের জামার মাপ দিয়ে কেটে সেলাই করা।ভালোই হলো, তারপর একের পর এক সেলাই করতে করতে খুব পারদর্শী হয়ে গেলাম।অর্ডারি নিয়ে কাজ শুরু করেদিলাম আশেপাশের মানুষের। কিছুটা সাহায্য হলো।তারপর আমার সাহেবের একটা চাকরি হলো কুমিল্লা। দুজনে মিলে মুটামুটি চলছিল।এর মাঝে আবার মনে হলো পড়াটা শেষ করবো।
ভর্তি হয়ে গেলাম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। এইচ এস সি,বি এ, মাষ্টার্ষ সম্পন্ন করি।
২০০৮সালে ঢাকা চাকুরি হয়ে গেল আমার সাহেবের।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর দরবারে। তারপর একটু ভালোভাবে চলা শুরু। মানুষের কথা শুনার অবসান ঘটলো।২০১৪ সালে আমার কোল জুড়ে আসে আমার আরেকটি সন্তান।
সেলাই কাজ কিছু দিন বন্ধ রাখি, তারপর আবার শুরু করি।
চাকুরি করার ইচ্ছে থাকলেও সংসার সন্তান নিয়ে আর করা হলো না। তবে সবসময় কিছু না কিছু করার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই দীর্ঘ সময় পর ২০২০ সালে ব্যবসা জীবন শুরু করি।
তারপর হঠাৎ একদিন "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের "সন্ধান পাই, চাঁদপুরের হারুন মোল্লাহ ভাইয়ের মাধ্যমে।।😊তিনি আমাদের আত্মীয় ছিলেন।বললো আপনি যেহেতু ব্যবসা শুরু করেছেন এই গ্রুপে যুক্ত হলে ভালো হবে।উনি লিংক দিলেন,আমিও আর দেরি করিনি।কমেন্ট করলাম রেজিষ্ট্রেশন করতে চাই।
রিচ হাকিম ভাইয়ের সহযোগিতায় প্রিয় ফাইন্ডেশনে কুমিল্লা গ্রুপে যুক্ত হতে পারি।
আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ,পেয়ে গেলাম আরো একটি পরিবার যেখানে সবাই খুবই আন্তরিক।
এখান থেকে যেন আরো এক ধাপ স্বপ্ন বেড়ে গেল,
কারণ এখানে সকলেই পজেটিভ মানুষ প্রতিদিন দেখছি নতুন নতুন স্বপ্ন। মনে পড়ে গেল স্যারের স্লোগানের কথা,
সময় নিন সময় দিন সময় বদলে দেবে সবকিছু।
এই পরিবারের মধ্যে যেন হারিয়ে যাই সেই ভাবে শুরু করে দিলাম কিছু নূতন পণ্য যুক্ত করা। আমার পণ্যগুলো হচ্ছে-------
প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের লিখা বই,থ্রীপিছ,বিছানার চাদর,নামাজি হিজাব।
সকলে বোন হিসেবে ভালোবেসে আমার এই গল্পটুকু পড়ে একটি গঠনমূলক কমেন্ট করবেন, আপনার সেই কমেন্ট হতে পারে আমার জীবনের গল্প তৈরি করার জন্য একটি মূল্যবান মেসেজ। সব সময় সহযোগিতা করে পাশে থাকবেন।
আপনাদের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার গল্পটুকু পড়ার জন্য ভালোবাসা অবিরাম। সকলের জন্য রইল অনেক অনেক দোয়া। আবারো আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন। যেন লেগে থাকতে পারি শেষ পর্যন্ত। ----
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে-৯৭১
তারিখ -০৮/১২/২০২৩ ইং
নামঃমাহমুদা আক্তার মুক্তা
ব্যাচঃ১৬
রেজিস্ট্রেশনঃ৭৭৬৭৬
জেলাঃকুমিল্লা
উপজেলাঃ আদর্শ সদর