আল্লাহ তা'আলা সাহায্য কিভাবে আসে, তা আমি নিজ চোখে না দেখলে, কখনো বিশ্বাস করতাম না
🌿🌿জীবনের গল্প🌿🌿
💚 বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 💚
🌿সবাইকে আন্তরিক সালাম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। সকলের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আমার জীবনের গল্প।
🌿শুরুতেই লাখ ও কোটি শুকরিয়া মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে।যিনি আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
🌿শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমারা বাবা ও মাকে যাদের জন্য আমার পৃথিবীতে আসা।
🌿সেই সাথে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জীবন্ত কিংবদন্তি, অসংখ্য দিকভ্রান্ত মানুষের পথের দিশারি, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে।
🌿আমার বাবা নুরুজ্জামান হাওলাদার।বি.জে.এম.সি.জুটমিলের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার ছিলেন। মা মিসেস শামিম আরা জামান। তিনিও একটি প্রাইভেট ফার্মাসিটিক্যালে এডমিনিস্ট্রেশনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
আমার বাবা ২০০৭ সালে ২১ শে জানুয়ারি না ফেরার দেশে পরপারে চলে যান। আমরা দুই ভাই ও এক বোন। আমি সবার ছোট, এহসানুজ্জামান শাহরিয়ার।
🌿আমার জন্ম ১৯৮১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর। ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম দুরন্ত স্বভাবের।
লেখাপড়া করতে খুব একটা ভালো লাগতো না। এছাড়া বাবা-মা দুজন চাকরিজীবী হওয়াতে, স্বাধীনতা উপভোগ করতাম অনেক বেশি। যখন উপলব্ধি করতে শিখি,তখন থেকেই শুরু হয় সংগ্রামী জীবন। আমার মা তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে কে নিয়ে সম্পূর্ণ নিস্ব অবস্হায় কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হোন।
🌿দুই ছেলে ও এক মেয়ের পড়ালেখা থেকে শুরু করে বিয়ে করানো পর্যন্ত এবং সংসার চালানো দিনকে দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠে। একদিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে অসহযোগিতা, সম্পত্তি বিক্রি করতে না দেওয়া, অন্য দিকে মায়ের বাড়ি থেকে সম্পদের হক, ছোট ভাইয়ের (মৃত্যুর পর) তার বউ আত্মসাৎ করার জন্য জালিয়াতি করে জাল দলিল তৈরি সহ না দেওয়া।
🌿আবার মাথার উপর হাউজ বিল্ডিং এর লোন। এর ভিতরেও আল্লাহতালার কাছে লাখো শুকরিয়া তিনি সবকিছু সুন্দরভাবে এমন অবস্থা থেকে তার অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারা সকল ঝামেলা থেকে আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। একটি মুরগি যেমন তার বাচ্চাদের ডানার নিচে আগলিয়ে রাখে, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের মা ও আমাদের আগলিয়ে রেখেছেন।
🌿পরিবারের যাতে একটা আয়ের উৎস বের হয়, তার জন্য আমি (শাহরিয়ার)২০০০ সালে মাত্র ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কাজে হাত দেই। পরবর্তীতে, লোন নিয়ে এবং আব্বা ও আম্মার অফিস থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের উপর লোন নিয়ে চতুর্থ তলার ভিতরে দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণ করতে পারি। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাই সহ ৮০% কাজ করতে পারি। এরই মাঝে বাবার হাড়ের ক্যান্সার ধরা পড়াতে, সব খরচ বাবার চিকিৎসার পিছনে করতে হয়। আমাদের পরিবারের সবার মধ্যে তখন একটাই চিন্তা, বাড়ি গেলে যাক, তবে বাবাকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।
🌿অবশেষে সাতটি বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে বাবা ২০০৭ সালে একুশে জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান। ফলে হাউজ বিল্ডিং লোনটি চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যায়, ফলে দেনার পরিমাণ বিশাল হয়ে যায়।
🌿বাবার মৃত্যুর ১০-১৫ দিন আগে আমার বড় ভাই বাংলালিংকে সিলেটে পোস্টিং নিয়ে চাকরি করতে চলে যান। আস্তে আস্তে হাউজ বিল্ডিং এর এই দেনা গুলো আমার বড় ভাই ও বোন পরিশোধ করেন।
🌿১৯৯৮ সালে আমার বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়িতে সে ভালোই আছে। কয়েক বছর পর সেও স্বপরিবারে আমেরিকা চলে যায়।
আমার বড় ভাইয়ের সাথে আলাপ করে, বড় বোনও হাউস বিল্ডিং এর লোনের টাকা যখন যা সম্ভব হয়, তা পাঠাতে থাকে।
🌿২০০২ সালে, আমার বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই চলছিলো। আমার বড় ভাই সহ আমি,মা একই ফ্লাটে থাকি।এরি মাঝে আবার আমার মায়ের ইউট্রিয়াছে ক্যান্সারের জার্ম পাওয়া যাওয়ায়, তার জন্য অপারেশন করতে হয়। এবং ২৫টির উপর বেকিথেরাপি দিতে হয়।
🌿২০১১সালে আমার বিয়ে হয়ে যায়। তখন সবেমাত্র আমি মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হতে মার্কেটিং এর উপর এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করি।আমার স্ত্রী, আমি ও আমার মা ২০১৩ সাল পর্যন্ত বড় ভাইয়ের সাথে যৌথ সংসারে থাকি।বড় ভাইয়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে।বড় ভাইয়ের সংসার বড় হয়ে যাওয়ায় আমি, আমার স্ত্রী ও আম্মা চতুর্থ তলায় চলে আসি।
🌿 বিয়ে হয়, চাকরি নাই বেকার, কি এক বাজে পরিস্থিতি। বিয়ের তিন মাস পরেই একটি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেইথ ফরওয়ার্ডিং এজেন্সিতে আমার চাকরি হয়। সেখানে পাঁচ বছর নিয়োজিত ছিলাম। পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স কুয়েত এয়ারওয়েজে ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত চাকরি করি অ্যাসিস্ট্যান্ট কার্গো অফিসার হিসেবে।
🌿২০২০ সালের করোনা প্যানডামিক সিচুয়েশন ও কুয়েত এয়ারওয়েজের জি.এস.এ মেয়াদ একই সাথে শেষ হয়। এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদের মতো অনেকেরই চাকরি চলে যায়।
পরবর্তীতে, যেখানেই চাকরি করতে ইন্টারভিউ দেই, সবাই ফ্রেসার হিসেবে নিতে চায়।তাই কিছুদিন বড় ভাইয়ের ব্যবসায় কাজ করি ডিস্ট্রিবিউশন হাউজে চকলেট, শ্যাম্পু। এক বছর চালানোর পর, তাতে লস আসে। তাই ওই ব্যবসা বন্ধ করে, পরবর্তীতে বাংলা লিংকের ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ নেওয়া হয়। কিছুদিন কাজ করি। এই ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ সম্পর্কে আমার কোন বিজনেস নলেজ নাই। আর আমার কাছে ভালোও লাগত না।
🌿সত্যিকথা বলতে, অভাব অনটনের সংসারে যখনি টাকার প্রয়োজন পড়েছে, তখনই আল্লাহ তা'আলা তাঁর গাইবি মদোদ দ্বারা, বিশেষ দূত মারফত (মানুষের মাধ্যমে)আমাদের সমস্ত অভাব পূরণ করেছেন। এরকম অনেক সময় এসেছে, কি করব বুঝতে পারছিলাম না, দিশে হারা অবস্থা,ঐ অবস্থা থেকেও তিনি আমাদের উওরোন করেছেন।
🌿আল্লাহ তা'আলা সাহায্য কিভাবে আসে, তা আমি নিজ চোখে না দেখলে, কখনো বিশ্বাস করতাম না।
🌿আমার মা, আমার জীবনের সব। তিনি আমার বন্ধু। পরিবারের যে কোন সমস্যা ও তার সমাধানে আমি ও আমার মা, কিভাবে তা থেকে উত্তরণ হওয়া যায়? সেদিক আলোচনা করি। জীবনের শেয়ারিং ও কেয়্যারিং, সব কিছু মায়ের কাছে পেয়েছি।
আর এমনিভাবে, চড়াই-উতরাই করে, নেট জগতে প্রবেশ করে, আমাদের নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের, আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার, ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সেশনগুলো চোখে পড়ে। মনে নতুন করে আশার আলো দেখতে পাই। স্যারের তিনটি কোটেশন আমার জীবনকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।
যেমন:১) স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন।
২) বৃষ্টি সবার জন্য পড়ে, ভিজে কেউ কেউ।
৩) বুক ফুলিয়ে বলতে পারা, আমি একজন ভালো মানুষ।
🌿মিরপুর মডেল জোনের সন্মানিত জেলা এ্যাম্বাসেডর মেজবাহ ভাই,জেলা এ্যাম্বাসেডর হামিদা রহমান আপু,জোন এ্যাম্বাসেডর ও মডারেটর জেসমিন আক্তার জুঁই আপুর, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা, গাইড লাইন। রক্ত যোদ্ধা জাহিদুর রহমান ভাই, নার্গিস নাহার আপু, আলতাফুনন্নেসা আপু, আতিকুর রহমান ভাই সহ মিরপুর মডেল জোনের সকল ভাইয়া ও আপুদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।এ যেন আমার নিজের একটা পরিবার।
🌿১৮ ব্যাচে ৯০ দিনের কোর্স সম্পূর্ণ করি। এবং আজ অবধি প্রতিটি সেশনে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।
আমার নতুন উদ্যোগ হিসেবে আছে:
১) সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু।
২) কাঠের ঘানিতে ভাঙ্গা সরিষার তেল।
৩) এছাড়া বিদেশে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেইথ ফরওয়ার্ডিং,সি.এন.এফ, ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে , যে কোন দেশে পণ্য আনতে ও পাঠাতে আমি সার্ভিস দিয়ে থাকি।
🌿অবশেষে,মহান রাব্বুল আলামিন,তিনি আমাকে এমন একটি ফাউন্ডেশন দিয়েছেন, এমন একজন সম্মানিত অভিভাবক দিয়েছেন (আমাদের সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার) এমন কিছু ভালো মানুষের প্লাটফর্মে, আমাকে সামিল করেছেন। তাই মন থেকে আবারও বলছি,
"শোকর আলহামদুলিল্লাহ "।
শেষে আবারো সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
স্যাটাস অফ দ্যা ডে- ৯৭১
তারিং ০৮-১২-২০২৩
এহসান শাহরিয়ার
রেজিঃ ৯৪৮০৪/১৮
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন
আজীবন সদস্য
নিজ জেলা: লক্ষ্মীপুর
বর্তমান অবস্থান: মিরপুর -৬
মিরপুর মডেল জোন
পল্লবী থানা