পৃথিবীটা নাকি আজকাল গিভ এন্ড টেক নীতিতে চলে!
❤️❤️ জীবনের গল্প ❤️❤️
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম!
শুরুতেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া যে, মহান আল্লাহপাক ডেঙ্গু মহামারিসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে আমাকে আপনাকে সুস্থ রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!
কৃৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই আমার মা-বাবাকে যারা আমাকে মহান স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি এই সুন্দর পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখিয়েছেন, নানারকম প্রতিবন্ধকতায় ও আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন, মানুষের ন্যায় মানুষ করার জন্য আপ্রাণ চেস্টা করেছেন।
কৃৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি সেই মহান ব্যক্তির যার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং লেগে থাকার কারনে আমরা ভালো মানুষের বিশাল একটা পরিবার পেয়েছি; লাখো তরুণ-তরুণীর আইডল প্রাণপ্রিয় শিক্ষক,প্রিয় মেন্টর, ভালো মানুষ গড়ার কারিগর জীবন্ত কিংবদন্তী শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আবিস্কারক, সময়ের সেরা বিপ্লবী নেতা; যার সুযোগ্য নেতৃত্বে হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি আলো পেয়েছে, লাখো স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, ৪০ লাখ গ্রাজুয়েট বেকার নতুনভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
দোয়া করি স্যারের পরিবার-পরিজনের সকল সদস্যদের জন্য। আল্লাহ স্যারকে আরও শতবছর আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখুক। আমিন!
কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি, টাংগাইল জেলার কোর ভলান্টিয়ার ও মডারেটর ইবনে সাইম রানা ভাই,জেলা প্রতিনিধি ও মডারেটর Khandaker Istiak Ahmed মামা, জেলা প্রতিনিধি Jahid Mridha Md Mukul ভাই ও ভাই, উপজেলা প্রতিনিধি Khadiza Hosen আপু, Sheikh Manik ভাই, Md Mamun JM ভাই, Belal Hossain ভাই, Sharif Akanda Sabuj ভাই, Roksana Khan আপু, Tania Chakladar আপু Mahbubur Rahman ভাই, Maksuda Akter আপু, কমিউনিটি ভলান্টিয়ারসহ প্রিয় সংগঠনের সকল দায়িত্বশীল এবং আজীবন সদস্যদের প্রতি; সবাই আমাকে কোন না কোন সময়ে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন।
চলে যাচ্ছি জীবনের মূল গল্পে...
জন্ম :
জীবনের অলিগলি পেরিয়ে পিছনে ফিরে দেখি সবই ফাঁকা!সত্যিই তাই!জীবনের অলিগলি পেরুতে গিয়ে পদে পদে জানলাম জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়!
আমার জীবন নাটকের শুরুটা ১০ ই নভেম্বর ১৯৯৩ থেকে! শাল-গজারীর সবুজে বেষ্টিত আনারসের রাজ্য টাংগাইল মধুপুরে আমার জন্ম। বলা হয়ে থাকে মধ্যবিত্তরা নাকি একজীবন অভিশপ্ত, তাদের সাধ অনেক কিন্তু সব সাধ পূরণের সাধ্য থাকে না!অথচ গভীর আত্মসম্মানবোধ আমাদের ভূষণ!ঠিক তেমনি একটা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম।
শৈশব জীবন :
শৈশবটা গ্রামেই কাটে। গ্রামের অন্য ৮-১০ জন ছেলেদের মতই স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোয়ার! কিন্তু ওই যে সাধ আছে সাধ্য নেই!ছোট ছোট সাধ পূরণ করতে তাই ছোটোবেলাতেই জীবিকার সন্ধানে বের হতে হয়!পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে খাতা কলমের পাশাপাশি বাবার সাথে কাস্তে হাতে নিতে হয়! মাঝে মাঝে কাজের জন্য পড়াশোনাকেও ছুটি দিতে হতো!
শিক্ষাজীবন :
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক :
শিক্ষাজীবনের শুরুটা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলটা ছিলো বাড়ির কাছেই।সম্ভবত মায়ের হাত ধরেই প্রথম স্কুলে যাওয়া। ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম বলে স্কুলের শিক্ষকগণ আমাকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়তা করতেন!
প্রাইমারী শেষ হলো ভালোভাবেই! কিন্তু এবার কি হবে...???চিন্তার ভাজ পড়ল! লেখাপড়াটা চালিয়ে নিতে পারবো তো...???অনেক কষ্টে বাবা মা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত চালিয়ে নিলেন!তারপর নিজের কিছুটা দায়িত্বভার নিজের কাঁধেই নিতে হলো!অষ্টম শ্রেণি থেকেই টিউশন করা শুরু করলাম! এমনও অনেক সময় গেছে যখন আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমিতে চুক্তিতে কাজ করেও পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়েছে!হাই স্কুলের দূরত্ব ছিলো বাড়ি থেকে ৩কিলোমিটার। আসা যাওয়ায় ৬ কিলোমিটার!বাবা টিফিনে হালকা কিছু খাওয়ার জন্য ২/৫ টাকা করে দিতেন।সেগুলো খরচ না করে জমিয়ে রাখতাম। যাতায়াতের খরচ বাঁচাতে প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে যেতাম! স্কুলের বেতন তো কোনোরকম যোগাড় হতো!কিন্তু বাঁধ সাধলো ফর্ম ফিলাপের সময় ।এতগুলো টাকা একবারে যোগাড় প্রায় অসম্ভব! আমার জমানো কিছু টাকা আর আমার এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় ফর্ম ফিলাপ সম্পন্ন হলো! মাধ্যমিকে ৪.৬৩ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে মাধ্যমিক শেষ করলাম।
কলেজ :
আমি এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত কেউ ছিলোনা বললেই চলে। তবুও পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন, শিক্ষক মহোদয়ের আন্তরিকতা এবং আমার অদম্য ইচ্ছায় ৪.২০ GPA নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি শেষ করলাম!
স্নাতক:
আসলে অদম্য ইচ্ছে শক্তি অনেক অসম্ভবই সম্ভব করতে সহায়তা করে! একটাই ইচ্ছে ছিলো যত কষ্টই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যাবো।স্বপ্ন ছিলো ভালো কোনো জায়গায় ভর্তি হবো। কিন্তু ঐ যে অর্থ সংকট, তাই সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।স্থানীয় কলেজে স্নাতকে ভর্তি হয়ে গেলাম। তবে খরচের কি হবে এ চিন্তা তো আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী!এবার একটা প্রাইভেট জবে জয়েন করলাম!চাকরি-পড়াশোনা পাশাপাশি চলছে!প্রাইভেট জব করে সময় বের করা খুবই কষ্টকর! তবে ওই যে, আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেই হবে,তাই হাড়ভাঙা খাটুনি আর পড়াশোনা সমান তালে চলছিলো!
অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে স্নাতক শেষ করলাম!
নিজের সততা,যোগ্যতা,বিনয়, পরিশ্রম আর বাবা মার দোয়ায় চাকরিতে খুব অল্প সময়ে পদোন্নতি প্রাপ্ত হলাম! আলহামদুলিল্লাহ আমার পরিবার সুখের মুখ দেখতে শুরু করলো।
ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হওয়া:
মোটিভেশনাল স্পিচগুলো আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিতো। একদিন ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটা ভিডিও আমার সামনে আসে!সেখান থেকেই জানতে পারি প্রাণের প্লাটফর্ম নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন 'সম্পর্কে!ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়া,রেজিষ্ট্রেশন করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সার্বিক সহায়তা করেন ইশতিয়াক আহমেদ সজীব ভাই।
ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষা :
বৃষ্টি সবার জন্য পড়ে তবে ভিজে কেউ কেউ! চাকুরী করবো না, চাকুরী দিব!
স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন,লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই। কেবল একটা চাকুরীর জন্যই আপনার জন্ম হয় নি; আবার বললেন, প্রত্যেকের নিজের বলার মত একটা গল্প থাকা দরকার!
কথাগুলো মনে গেঁথে যায় আমার । মনে হয় স্যারের প্রতিটা কথা আমার জন্যই লেখা! ফাউন্ডেশনে সময় দিতে লাগলাম!ক্রমেই ভলো লাগা কাজ করতে লাগলো!স্যার যেমন কাজের প্রেমে পড়তে বলেছেন
আমি ফাউন্ডেশনের প্রেমে পড়ে গেলাম।চাকরি সুবাদে জামালপুরে অবস্থান করায় সেখানকার ভাইবোনদের সাথে পরিচিত হতে শুরু করলাম!বিশেষ করে কোর ভলান্টিয়ার ও মডারেটর Mohammad Asadul Islam Ashad ভাই, দুবাই কান্ট্রি এম্বাসেডর Sabbir Ahmad ভাই,জেলা প্রতিনিধি ইমতিয়াজ মোরাদ ইমতি ভাই, Md Nayeem Hossen ভাই, Mafy Sarkar ভাই, Mazharulভাই,উপজেলা প্রতিনিধি Suborna Chowdhury Chaina আপু, Rashedul Hasan Rasel ভাই, Mir Jahidul Islam ভাই, উনারা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিতেন এবং বিভিন্ন ভাবে সহয়তা করতেন।সময় করে প্রতিদিন জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার সেশন চর্চা ক্লাশে যুক্ত হতে থাকি। এতে করে যেভাবে উপকৃত হই:
শপথ বাক্য পাঠ, সেশন পাঠ, সেশন বিশ্লেষন, সঞ্চালনার মধ্য দিয়ে কথা বলার জড়তা কাটালাম,
পাবলিক স্পেচ এ কথা বলা শিখলাম। শিখেছি গুছিয়ে কথা বলা। কারো সাথে প্রতারণা না করা
নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করা,পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি।
সর্বোপরি, একজন ভালো মানুষ হওয়া!
আমার জীবনে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের ভূমিকা:
পৃথিবীটা নাকি আজকাল গিভ এন্ড টেক নীতিতে চলে!
সেখানে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটা প্লাটফর্ম। এ উদ্যোক্তা তৈরি কেন্দ্র আমাকে শুধু দিয়েই গেছে বিনিময়ে নেয়নি কোনোকিছু।এ ফাউন্ডেশন থেকে পেয়েছি পরিবারের মতো ভালোবাসা, সম্মান,স্নেহ!পেয়েছি অনেক ভালো মানুষের সান্নিধ্য! ফাউন্ডেশন টা যেন আমার আরও এক পরিবার!এ ফাউন্ডেশনে যুক্ত না হলে হয়তো শেখাই তো কিভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয়,কিভাবে বিনয়ী হতে হয়,কিভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হয়,কিভাবে নিয়মানুবর্তী হতে হয়!সর্বোপরি জীবন চলার পথের গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় এই ফাউন্ডেশন ই আমাকে দিয়েছে!
ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্তি :
প্রচুর নেটওয়ার্ক গ্রো করা, পরিচিতি বৃদ্ধি, বিজনেস নিয়ে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে সম্যক জ্ঞান। অর্থাৎ, এক কথায় বললে ১ টা বিজনেসের স্টার্টআপ থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে কিভাবে পর্যায়ক্রমে লাভজনক অবস্থানে নিয়ে নেওয়া যায়। আলহামদুলিল্লাহ, আমার যেকোনো উদ্যোগের ব্যাপারে আমি এখন প্রস্তুত।কারণ আমি বিশ্বাস করি আমার উদ্যোগের শুরু, মাঝখান সব সময় আমার পাশে আছে আমার প্রিয় মেন্টর আমার প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এবং প্রাণের প্লাটফর্মের সবাই।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের মত একটা পরিবার পেয়েছি যেখানে সব ভাইয়া আপু একজন আরেকজনকে কোন সমস্যা পরলে এগিয়ে আসে।
স্বার্থহীন এ বন্ধন আমি অন্য কোন প্লাটফর্ম এ পায় নি।
পরিশেষে,আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানী, বাবা-মার দোয়া, সকলের ভালোবাসা আর অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে যেকোনো কঠিন বিষয়ও জয় করা সম্ভব।আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্লাটফর্মের সবার প্রতি।সবাই আমাকে দোয়ায় রাখবেন!স্যার যেমন বলেছেন ধরাবাঁধা একটা কাজ করার জন্য কারও জন্ম হয়নি,নিজের অন্তত তিনটি পরিচয় যাতে গড়ে তুলতে পারি!
স্যাটাস অফ দ্যা ডে- ৯৭১
তারিখ : ০৮-১২-২০২৩
রিয়াদুল হাসান রানা
ব্যাচ২০
রেজিষ্ট্রেশন নং:১০৮৭৫৬
নিজ জেলা:টাঙ্গাইল।
বর্তমান অবস্থান :মাদারগঞ্জ, জামালপুর।