ধৈর্য, পরিশ্রম, সততাই বয়ে আনে সফলতা অর্গানিক খাঁটি পন্য নিয়ে পাশে আছে " বেলতা"
মো: মেহেদী হাসান।
সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা তরুন যুবক এই সোনার বাংলাদেশের। বাসা: খালিশপুর, খুলনা।
উদ্যোক্তা শব্দটি আমার কাছে অলিক স্বপ্নের মত ছিলো।কখনো উদ্যোক্তা হবো ভাবিই নি।
ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা করেছি, বাবা-মা স্বপ্ন দেখিয়েছেন ভালো করে পড়ালেখা করে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। সেই জন্যই লেখাপড়া করেছি।
আমি যখন আমার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ সপ্তম সেমিস্টারে তখন ইউটিউব এর মাধ্যমে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে দেখি। স্যারের স্লোগান ছিল চাকরি করব না চাকরি দেব। তখন ভেবেছি এটা আবার কিভাবে সম্ভব? পরবর্তীতে স্যারের সবগুলো ভিডিও দেখা শুরু করলাম। একটা সময় স্যারের অনেক বড় অনুসারী হয়ে গেলাম।
যুক্ত হয়ে গেলাম নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন,উদ্যোক্তা তৈরীর কেন্দ্র প্লাটফর্মে। স্যারের ৯০দিনে সেশন শুরু করে খুলনা জেলার বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারিং কাজের সাথে যুক্ত থাকলাম। এছাড়াও সরকারি চাকরির জন্য জব কোচিং এ ভর্তি হয়ে কন্টিনিউ করলাম। একটা সময় মনে হচ্ছিল একটা চাকরি করলে ভালো হয় বেকার থাকা ভালো লাগছিল না।
ঢাকার নামিদামি বেশকিছু প্রাইভেট কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেই। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিও পাই। কিন্তু চাকরিতে জয়েন করার পরে কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না কারণ সকাল ৯ টা থেকে বিকাল পাঁচটা ডিউটি করতে হতো এবং মাঝে মাঝে ওভারটাইম করতে হতো ৯-১০টা পর্যন্ত। এরই মাঝে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে গেল। করোনার কারণে সদ্য নতুন পাওয়া চাকরিটি হারিয়ে ঢাকা শহর ত্যাগ করে খুলনাতে চলে আসি।
বেশ কিছুদিন যাবত ঘরে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগত না। প্রিয় মেন্টারের শিক্ষা কলেজ লাইফ থেকে বুকে ধারণ করে আসছি। স্যারের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে একটা উদ্যোগ গ্রহণ করি সুন্দরবনের মধু নিয়ে কাজ শুরু করি। যেহেতু আমি খুলনা অঞ্চলের ছেলে সুন্দরবনের মধু নিয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল। শতভাগ খাঁটি প্রোডাক্ট এর সার্ভিস দেশের মানুষকে দেয়ার সুযোগ তৈরি করেছি। শুধু দেশব্যাপী নয় সুন্দরবনের মধুর চাহিদা পুরো বিশ্বব্যাপী। দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে বিশ্ববাজারে তুলে দেখতে চাই আমার দেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সুন্দরবনের মধু। বেশ সুনামের সাথে তিনটি বছর পার করেছি। কেউ কোনদিন আমার পণ্যের খারাপ কোন কথা বলতে পারেনি। কাস্টমারদের সুন্দরবনের মধুর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার পরবর্তী সময়ে সংযুক্ত করি আমার স্পেশাল গাওয়া ঘি এবং তেতুল কাঠের ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেল, নারকেল তেল, কালোজিরা তেল , সিজনাল যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়। প্রত্যেকটি পণ্য রুট লেভেল থেকে কাজ করতেছি। আমাদের প্রত্যেকটি পণ্য সারাদেশে পাইকারি এবং খুচরা দিচ্ছি।
করোনা কালিন সময়ে আমার সেই দুর্বিসহ বেকারত্ব জীবন থেকে আজকের এই সফলতার দৌড়গোড়ায় পৌছানোর চাবিকাঠি ছিলো নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন, উদ্যোক্তা তৈরী কেন্দ্র ও আমাদের সকলের প্রিয় আইডল " জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার"।এই প্লাটফর্মের মাধ্যমেই মানবিক এবং ভালো মানুষ হতে পেরেছি। ব্যবসার প্রধান কাজ হচ্ছে কোয়ালিটি নিশ্চিত করা। কাস্টমার কমিউনিকেশন, কাস্টমার রিলেশনশিপ, আইটি সহ বিভিন্ন স্কিল শিখতে পেরেছি প্রিয় প্ল্যাটফর্ম থেকে।
মাত্র ৫০০০ টাকা দিয়ে আমার উদ্যোগ " বেলতা অর্গানিক বিডি" এর পথচলা, যা এখন ১৫ লক্ষ টাকায় রুপান্তরিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার মাসিক সেল ৫ লক্ষ টাকা।
৩ বছরের পথচলায় অনেক অভিজ্ঞতা অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি প্রিয় প্লাটফর্ম থেকে। যা দরুণ আমার উদ্যোগের ৯০% সেল হয় এই প্লাটফর্ম থেকেই। খাঁটি ও নির্ভরতার পন্যের আস্থা ও বিশ্বাসে প্লাটফর্মের সকলেই আমার থেকে পন্য নিয়ে থাকে আলহামদুলিল্লাহ।
বর্তমানে আমার পণ্যসমূহ হলোঃ
◾ মধু আইটেম :
সুন্দরবনের বুনো মধু , কালোজিরা ফুলের মধু , বড়ই ফুলের মধু , লিচু ফুলের মধু
সরিষা ফুলের মধু , গ্রামীণ চাকের মধু
◾ তেল আইটেম :
তেতুল কাঠের ঘানিতে ভাঙ্গানো খাঁটি সরিষার তেল ,হোমমেড নারিকেল তেল ,
কালোজিরার তৈল
◾ সিজনাল খেজুরের রসের খেজুরে গুড়
◾ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তৈরি গরুর দুধের টাটকা গাওয়া ঘি।
জীবনের সৎ ও পজিটিভ থাকার কারণে আলহামদুলিল্লাহ মানুষের ভালোবাসা এবং আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। একজন সমাজসেবক এবং মানবিক তাই নিজেকে ভালো মানুষ মনে করি।
আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আগামী ৫ বছরে সুন্দরবনের দেশীয় পণ্য মধুকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চাই। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এবং বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে আউটলেট করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই। বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি করতে চাই।
সকলের দোয়া ও সহযোগিতা একান্ত কাম্য।