ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে রাজনীতি থেকে বের হতে সহযোগিতা করে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।









আসসালামু আলাইকুম






যারা আমাকে লালন পালন করেছেন বড় করে তুলেছেন।









আমার জন্ম 1990 সালের পহেলা জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের তারটিয়া কমলাই গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে।
চার ভাই বোন ও মা বাবা নিয়ে আমাদের পরিবার।
আমরা সবাই তখন খুব ছোট যখন আমার বাবা ঢাকার শাহবাগে বিসিএস একাডেমিতে চাকরি করতেন ভালোই চলছিল তখন সংসার।
হঠাৎ করে নেমে আসে দুর্যোগ আমার বাবা রোড এক্সিডেন্ট করে সে একসিডেন্টে পা ভেঙ্গে যায় দুঃখের আর শেষ নেই। পরিবারে একজন ই রোজগার করতেন।
মানুষ কতটা নির্দয় হতে পারে বিপদে পড়লে বুঝা যায়।
আমার দাদা-দাদী চাচারা এক সময় এত ভালোবাসতো অথচ এই বিপদের সময় তারা পাশে আসেনি।
তখন আমরা সবাই নানা বাড়ি চলে যাই কিছুদিন থাকি সেখানে বাবার সুস্থ হতে অনেকটা সময় লেগে যায়। দিন যায় তো যায় না, খেয়ে না খেয়ে দিন যায় সবার।


এখন কি করবে ঠিক তখন আমার বাবা ঠিক করেন বুক বাইন্ডিং এর কাজ করবেন।
অনেক কষ্টে বসে থাকতে পারে না বসতে কষ্ট হয়। পা সেরে গেলে কি হবে ব্যাথা তো ঠিকই আছে।
এরকম অবস্থাতেও কাজ করতে হয় কারণ সবার মুখে তাকেই খাবার জোগাড় দিতে হবে।
যাক কিছুটা শান্তি ফিরে আসলো এরপর আমরা বড় হতে থাকি স্কুলে যাই খরচের চাহিদা আবারো বেড়ে যায়।
স্বপ্ন ছিল প্রাইমারিতে বৃত্তি পরীক্ষা দিব কথায় আছে সবার ভাগ্যে সব হয়না ক্লাস করতে থাকি ঠিক সেই সময় এত অসুস্থ হই এক মাস স্কুলে যেতে পারিনি স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।
মোটামুটি নাম্বার নিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই
ক্লাস করতে থাকি কিন্তু প্রাইভেট পড়ার ক্ষমতা হয় না।
এমনও সময় গেছে স্কুল ড্রেস বারবার সেলাই করে তারপর পড়ে যেতে হয়েছে। খাবারই খাব না ভালো পোশাক পরবো।
কারণ একসঙ্গে তিন ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ একা মানুষ চালানো অনেক কষ্ট হয়ে যেত।
মনে পড়ে সেই দিনের কথা আমার বাবা মিষ্টি খাওয়ার জন্য দোকানে যায় তখন চিন্তা করে একটা মিষ্টির দাম তিন টাকা একটা কলমের দামও তিন টাকা সেটা মনে করে সে মিষ্টি খায় না
বাড়ি চলে আসে।
অভাবের সংসারে মনে চাইলেই সব কিছু সম্ভব না।
আবার কিছুদিন পর সংসারে অভাব চলে আসে। প্রতিনিয়ত এভাবেই যুদ্ধ করে যেতে হয়।
এক সময় প্রেসে কাজ থাকেনা বাবা বাড়ি চলে আসে।
তখন সরকার থেকে ত্রাণ দিল শুধু গম
এক মাসে কয়দিন ভাত খেয়েছি মনে পড়ে না। বেশিরভাগ দিন রুটি ও আটার যাও খেয়ে দিন যাইত।
এভাবেই ২০০৬ সালে ফোর পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি কমপ্লিট করি।
সিদ্ধান্ত নেই বসে থাকবো না তখন ছুটে চলে যাই গ্রামে সেই প্রাইমারি স্কুলে স্কুল কমিটির সাথে কথা বলি স্যারদের সাথে কথা বলি কথা বলার পর আমি সেখানে পড়াতে থাকি।






২০০৭ সালের ৩০ শে জুলাই টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলায় চারাবাড়ি এলাকায় চাকলা দার বাড়ি আমার বিয়ে হয়।
চলে যাই বাবার বাড়ি থেকে শশুর বাড়ি।
দেড় বছর পর আমার একটা পুত্র সন্তান হয়। ভালোই চলতেছিল সংসার জীবন।
কিছুদিন পর শয়তান মাথায় ভর করে চলে আসলাম রাজনীতি জীবনে। যেহেতু স্বামীর টাকা আছে পাশের লোকের অভাব নেই হয়ে গেলাম আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন সভানেত্রী।
জড়িয়ে পড়ি বিভিন্ন ঝামেলায় মারামারি, হানাহানি মামলা মোকদ্দমায়।
তখন ভাবি আমি কি সত্যি ঠিক করছি একজনের উপকার করতে গেলে অন্যজনের ক্ষতি করতে হয়।
আমার মন আমাকে বলে এসব থেকে বের হতে কিন্তু পারিনা চলে আসি গাজীপুর চন্দ্রায় গার্মেন্টসে চাকরি নেই কোয়ালিটি হিসেবে কিছুদিন পর সিনিয়র কোয়ালিটি হয়ে যাই।
কিন্তু আমার স্বামী চাকরি করতে দেয় না সংসারে ঝামেলা হয় তাই চাকরি ছেড়ে দেই যে রাজনীতি থেকে বের হতে আমি চাকরি নেই আবার চলে যাই সেইখানেই তখন আমার স্বামী বলে সবকিছু বাদ দিয়ে বিজনেস করো সময় কেটে যাবে।
যেহেতু আমি টেইলার্সের কাজ জানি মহিলাদের যাবতীয় পোশাক তৈরি করতে পারি তাই তার কথা মেনে নিয়ে ছোটখাটো বিজনেস শুরু করি গজ কাপড়, থান কাপড়, থ্রি পিস, শাড়ি, ওড়না যাবতীয় আইটেম নিয়ে।
কিন্তু সমস্যা ছিল একটা মিছিল মিটিং থেকে ফোন আসলেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতাম সেখানে কোনভাবেই রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারছিলাম না।
পারলাম তখনই যখন পেলাম নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সন্ধান।




18 তম ব্যাচের শেষের দিকে 19 তম ব্যাচে যুক্ত হই।
আমাকে সহযোগিতা করে আমার ফুফাতো বোন ও তার স্বামী তারা দুজনেই ফাউন্ডেশন এর সদস্য।
তাদের হাত ধরেই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হই।
এরপর হঠাৎ একদিন আমার বাসায় এবং দোকানে আসে কোর ভলান্টিয়ার ইবনে সাইম রানা ভাইয়া, উপজেলা এম্বাসেডর সরকার মমিনুল ভাইয়া, ক্যাম্পাস এম্বাসেডর আবিরুল সোহেল ভাইয়া তারা সবাই আমাকে ফাউন্ডেশন সম্বন্ধে অনেক ধারণা দেয় তাদের কথা শুনে আমার অনেক ভালো লাগে।
তখন আমাদের টাঙ্গাইল জেলায় দ্বিতীয় মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে তা শুনে আমি একটা স্টল কনফার্ম করি।
[ ] চলে যাই সেই সম্মেলনে অনেক ভাই বোনের সাথে পরিচয় হয় স্যারের কথা শুনি।স্যারের একটা কথা হৃদয়ে গেঁথে যায়"" আপনি পারবেন আপনাকে দিয়েই হবে ""এই কথাটাই সব সময় ভাবতে থাকি।


তখন থেকে আমি প্রতিদিন সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত হই স্যারের দেওয়া সেশন থেকে প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখতে পারি।
বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি অদম্য টাংগাইল জেলার সেশন চর্চা ক্লাসের সমন্বয়কও জেলা প্রতিনিধি Kh Istiak Ahmed Shajib ভাইয়া,কোর ভলান্টিয়ার ইবনে সাইম রানা ভাইয়া,টাংগাইল জেলার প্রথম জেলা প্রতিনিধি Ashik Ahmed ভাইয়া সহ অন্যান্য জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি ও আজীবন সদস্যদের প্রতি।যারা আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।


দিন যাচ্ছে এই ফাউন্ডেশন কে এবং ফাউন্ডেশনের সকল ভাই বোনকে এতটা আপন করতে পেরেছি কখন রাত ৮:৩০ বেজে উঠবে তখন সেশন চর্চা ক্লাসে যুক্ত হতে পারব।
এ নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে এসে পেয়েছি অনেক ভালো মানুষের দেখা।
দেশ বিদেশের সবার সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।
ফাউন্ডেশনে অনেককে যুক্ত করতে পেরেছি নতুন সদস্য নিয়ে আসতে পেরেছি।
ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর নিজে সেরা উদ্যোক্তা হতে পেরেছি।
পেরেছি কিছু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।
এখন আমি স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে এগিয়ে চলছি করতে চাচ্ছি বেকার মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
স্যারের কথা মনে ধারণ করে সাহস করছি, স্বপ্ন দেখছি।
""স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন,শুরু করুন এবং লেগে থাকুন এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে"" 




Date:- ০৯/০১/২০২৩ইং
আমি
তানিয়া চাকলাদার
ব্যাচঃ১৯
রেজিষ্ট্রেশনঃ ১০৩২৭৮
উপজেলাঃ টাংগাইল সদর
জেলাঃ টাংগাইল